Martyr's Day of Khudiram Bose at Muzaffarpur | মুজাফ্ফরপুরে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু'র বলিদান দিবস

মুজাফ্ফরপুরে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু'র বলিদান দিবস

Martyr's Day of Khudiram Bose at Muzaffarpur

অরিন্দম ভৌমিক।


ছোটবেলায় দেখেছি মঞ্চে ম্যাজিসিয়ানরা দর্শকদের মধ্যে থেকে কাউকে ডেকে এনে হিপনোটাইজ (সম্মোহন) করে দিচ্ছে। জানিনা বাস্তবে তা সম্ভব কিনা। কিন্তু তাঁর নাম বা তাঁর উদ্দেশ্যে লেখা গান শুনলে আমরা সত্যিই সম্মোহিত হয়ে যাই। কিছুক্ষনের জন্য আমরা কোথায় যেন হারিয়ে যাই। সেই অগ্নিযুগের অমর শহীদ ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে বই লিখব আমি স্বপ্নেও কোনদিন ভাবিনি। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল এইরকম।

২০১৬ সালে বলিউডে ক্ষুদিরামের ওপরে তৈরি হচ্ছিল একটি হিন্দি বায়োপিক। সিনেমাটির লেখকের অনুরোধে ক্ষুদিরাম সম্পর্কিত কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনুভব করেছিলাম যে, কোনও বইতেই তাঁর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য নেই এবং যা আছে তার মধ্যেও অনেক তথ্য বিভ্রান্তিকর। সেই চিন্তা থেকেই শুরু করেছিলাম "কে ক্ষুদিরাম"।

ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ক্ষুদিরামের স্মৃতিবিজড়িত মুজাফ্ফরপুর যাওয়ার। বই লিখতে গিয়ে জেনেছিলাম সরকারি ভাবে মুজাফ্ফরপুর জেল থেকে অমৃতবাবুকে চিঠিতে ক্ষুদিরামের শেষ চারটি ইচ্ছার কথা জানানো হয়েছিল।


প্রথম ইচ্ছা— তিনি একবার তাঁর জন্মভূমি মেদিনীপুরকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয়— দিদি ও ভাগ্নে ললিতের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।

তৃতীয়—তিনি জানতে চেয়েছিলেন ভাগ্নি শিবরানির বিয়ে হয়েছে কিনা।

চতুর্থ— সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের পাদোদক (চরণামৃত) পান করতে চেয়েছিলেন।


ক্ষুদিরামকে শুধু জানানো হয়েছিল যে শিবরানির বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু তাঁর বাকি তিনটি ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। ১৯০৮ সালের ১১ই আগস্ট মাথা উঁচু করে হাঁসি মুখে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১১০ বছর। বইয়ের জন্য মুজাফ্ফরপুর আমাকে যেতেই হত। জানিনা, মৃত্যুর পরেও মানুষের ইচ্ছা পূরণ করা যায় কিনা। তবুও ঠিক করলাম যাবোই যখন, তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণের একটা চেষ্টা করতে ক্ষতি কি।



ক্ষুদিরাম মেদিনীপুরের মাটি স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন তাই তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলি থেকে মাটি সংগ্রহ শুরু করলাম। প্রথমেই মাটি নিলাম তমলুক হ্যামিল্টন স্কুলের সেই বাদাম গাছের তলা থেকে (এই গাছেই ক্ষুদিরাম খেলতেন)। তারপর দাসপুরের হাটগেছিয়া (দিদির শশুরবাড়ি) ও কেশপুরের মোহবনী (পিতৃভিটে)। মেদিনীপুর শহরে প্রথেমেই নিলাম হবিবপুরে তাঁর জন্মভিটের মাটি। সবশেষে নিলাম কলিজিয়েট স্কুলের মাটি, মাটি তুলে দিলেন স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শ্রী হরিপদ মন্ডল। সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে সব বিস্তারিত জানাতে শ্রী হিমাদ্রি চট্টোপাধ্যায় বললেন, যাওয়ার দিন সকালে আলাদাভাবে প্রস্তুত রাখবেন মায়ের চরণামৃত।

যেহেতু মুজাফ্ফরপুরে আত্মবলিদান দিবসের মূল অনুষ্ঠাটি হয় 'কেন্দ্রীয় কারাগারের' মধ্যে তাই আমাদের রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দরকার ছিল। তখন (২০১৮ সাল) আমাদের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ ছিলেন শ্রী আলোক রাজোরিয়া। উনাকে বলতে উনি অল্প সময়ের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে দিলেন।

ক্ষুদিরামের ১১১তম আত্মবলিদান দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ৯ আগস্ট (২০১৮ সাল) রওনা দিলাম মুজাফ্ফরপুর। ট্রেন ধরেছিলাম হাওড়া থেকে, সঙ্গী পেয়েছিলাম চিন্ময় দাস বাবু ও ঝর্ণা আচার্য দিদিকে। হাওড়া-কাঠগোদাম বাঘ এক্সপ্রেস ছাড়লো রাত্রি ৯ টা ৪৫ মিনিটে। মেদিনীপুর থেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম — ১) মেদিনীপুরের মাটি, ২) দিদির ছবি ও ভাগ্নে ললিতের ছবি, ৩) সিদ্ধেশ্বরী কালীমায়ের পাদোদক (চরণামৃত)।

রাতের খাওয়ার খেয়েই উঠেছিলাম, তাই একটু পরেই শুয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো আসানসোলে, মনে হল ট্রেনে ডাকাত পড়েছে। উঠে দেখলাম প্লাটফর্মে অসংখ্য মানুষ, সবাই ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছে। একটু পরেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল, শ্রাবণ মাসে সবাই চলেছেন শিবের মাথায় জল ঢালতে। মনে মনে ভাবলাম আমরাওতো যাচ্ছি জল ঢালতে।



১০ আগস্ট ভোরবেলাতেই ঘুম ভেঙে গেল। কামরার ভেতরে কোথাও পা ফেলার জায়গা নাই। প্রত্যেকটা স্টেশনেই বহু মানুষ ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছে, সবাই জল ঢালতে যাচ্ছে। সকাল ৮ টা ৫৮ মিনিটে পৌঁছলাম সমস্তিপুর, এই স্টেশনেই প্রফুল্ল চাকী মোকামা যাওয়ার জন্য ট্রেন পাল্টেছিলেন। ঠিক করেছিলাম মুজাফ্ফরপুর যাওয়ার আগেই আমরা পুসা (ওয়েনী) স্টেশনে নামবো। এই পুসা স্টেশনেই ধরা পড়েছিলেন ক্ষুদিরাম। আমরা নাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম কারণ অনেক ভিড় ঠেলে আমাদের দরজা পর্যন্ত যেতে হবে।

ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম, ঠিক ৯ টা ২৬ মিনিটে দূর থেকে দেখতে পেলাম পুসা স্টেশন। একটু কাছে আসতেই এক অজানা অনুভূতিতে মনটা ভরে গেল - দেখলাম হলুদ রঙের উপরে কালো হরফে বড় বড় করে হিন্দি, ইংরেজি ও উর্দুতে লেখা "ক্ষুদিরাম বোস পুসা"।

স্টেশনটি ঘুরে দেখার পরে বাইরে বেরিয়ে, সেই জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে ধরা পড়েছিলেন ক্ষুদিরাম। স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা এখানে ক্ষুদিরামের মূর্তি স্থাপন করেছেন এবং নিয়মিত জন্মদিন ও শহীদদিবস পালন করেন। শ্রী বিতেন্দ্র কুমার গুপ্তা বর্তমানে এই দায়িত্বে রয়েছেন এবং তিনি আমাকে ক্ষুদিরাম সম্পর্কিত বহু তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমরা পৌঁছতেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁর দোকানে বসালেন, দোকানের কর্মচারী নিয়ে এলো সিঙ্গাড়া, মিষ্টি ও কোল্ডড্রিঙ্কস। ক্ষুদিরামের মূর্তির উল্টো দিকেই তাঁর জুতোর দোকান "পূজা সু স্টোর"। কিছুক্ষন গল্প করার পরে আমরা বিদায় নিলাম।

আবার ট্রেন ধরে মুজাফ্ফরপুর। পৌঁছতে একটু বেলা হয়ে গেল। আমাদের থাকার কথা ছিল সরকারি গেস্ট-হাউসে, কিন্তু বিশেষ কাজে CBI-র উচ্চপদস্থ অফিসাররা আগের থেকেই গেস্ট-হাউসে ছিলেন তাই আমরা একটি হোটেলে উঠলাম। হোটেলটি কল্যাণী চকে (পোখরাইরা ) অবস্থিত, নাম স্বপ্নলোক। হোটেলে পৌঁছে গেছি শুনেই আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত হলেন শ্রী সাকেত সিং এবং শ্রী শশী রঞ্জন। এদের সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া ভালো।

বইটির কাজ করতে করতে যোগাযোগ হয়েছিল "শহিদ ক্ষুদিরাম বসু চিতাভূমি বাঁচাও অভিযান সমিতি" নামে মুজাফ্ফরপুরের একটি সংগঠনের সঙ্গে। এই সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যদের ছোটবেলাটা কেটেছে ক্ষুদিরামকে যেখানে দাহ করা হয়েছিল সেইখানে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ক্ষুদিরামের কাহিনি শুনে বড় হয়েছেন। বড় হয়ে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেও ক্ষুদিরামের কাহিনি তাঁদের মন থেকে মুছে যায়নি।

১৯১১ সালে তাঁরা হঠাৎ জানতে পারেন যে ক্ষুদিরামের চিতাভূমি আর থাকবেনা, ব্যবহার হবে অন্য কোনও কাজে। শোনামাত্রই এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ান তাঁরা, গঠিত হয় "শহিদ ক্ষুদিরাম বসু চিতাভূমি বাঁচাও অভিযান সমিতি"। অনেক বাধা পেরিয়ে তাঁরা শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর চিতাভূমি সংরক্ষণ করতে সফল হন। প্রত্যেক বছর তাঁরা ক্ষুদিরামের জন্মদিন ও মৃত্যুদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করেন। এই সংগঠনের প্রধান দুই কর্মী হলেন শ্রী সাকেত সিং ও শ্রী শশী রঞ্জন।

সন্ধেবেলায় গিয়েছিলাম বুধি-গণ্ডক নদীর তীরে চিতাভূমিতে, যেখানে দাহ করা হয়েছিল শহীদ ক্ষুদিরামকে। ‘শহিদ ক্ষুদিরাম বসু চিতাভূমি বাঁচাও অভিযান সমিতি’-র সদস্যরা প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। মন্ত্রপাঠের পরে ‘‘ক্ষুদিরাম বোস অমর রহে’’ ও ‘‘বন্দেমাতরম’’ ধ্বনিতে গমগম করতে থাকে চিতাভূমি। সে এক অন্য অনুভূতি। অনুষ্ঠানের শেষে সংগঠনের সদস্যরাই আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেন। আমরা খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম কারণ ভোর রাত্রে উঠে যেতে হবে জেলখানায়।

১১ই আগস্ট ভোর ৩টার সময় জেলা প্রশাসনের গাড়িতে করে পৌঁছে গিয়েছিলাম জেলের ভেতরে। জেলের ভেতরে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হলে অনেকদিন আগে থেকেই আবেদন করতে হয়, পুলিশ ভেরিফিকেশনের পরে অনুমতি পাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও জেলের বাইরে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশাল জেল ক্যাম্পাসের বাইর থেকে ভেতর রঙিন আলোয় সাজিয়ে ফেলা হয়েছিল। প্রথমেই সবাই শ্রদ্ধা জানাতে যাই ক্ষুদিরাম যে ঘরটিতে বন্দি ছিলেন সেই ঘরটিতে। সেই ঘরটি-সহ সঙ্গের মোট ৬টি ঘরকেই জেল কর্তৃপক্ষ ক্ষুদিরামের স্মৃতিতে সংরক্ষিত করেছেন। ঘরের মধ্যে ক্ষুদিরামের একটি ছবিতে সবাই মালা দিয়ে ধূপ জ্বালাতে থাকি। এত মালা পরানো হচ্ছিল যে, এক-দু মিনিট পর পর একজন পুলিশ মালাগুলি সরিয়ে নিচ্ছিলেন। রাতের অন্ধকার, রঙিন আলো, ধূপের ধোঁয়া, ফুলের গন্ধ, সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্লাশের ক্রমাগত চিকচিক— সব মিলে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পরিবেশে বিভিন্ন পুলিশ অফিসাররা যখন ক্ষুদিরামকে মালা পরিয়ে স্যালুট করছিলেন আমার বুকটা গর্বে ফুলে উঠেছিল।

এরপরেই সবাই পৌঁছলাম ফাঁসিস্থলে। সেখানেও একই অবস্থা ক্ষুদিরামের ছবিতে মালা পরালেন জেলাশাসক, সুপারিটেন্ডেন্ট অব পুলিশ, জেলার, ডিআইজি. এবং আরও অনেকে। ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হল। খুব আস্তে বাজছিল— ‘‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি‘‘। মাল্যদানের পরে মেদিনীপুর থেকে নিয়ে যাওয়া মাটি ও চরণামৃত ঢালা হল ফাঁসিস্থলে। সবশেষে ফাঁসিস্থলের মাটি সংগ্রহ করলাম।



ফাঁসিস্থলের পরে সবাই বেরিয়ে এলাম জেলের বাইরের অংশে, যেখানে একটি উঁচু লম্বা বেদির উপরে রয়েছে ক্ষুদিরামের মূর্তি। এখানে মানুষের ভিড় ভেতরের থেকেও বেশি, কারণ যাঁরা জেলের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পাননি বা দেরিতে এসেছেন তাঁরাও ছিলেন। ক্ষুদিরামের গলায় মালা দেওয়ার জন্য একটি লম্বা লাইন করা হয়। একে একে সবাই মালা পরিয়ে ধূপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান। কেউ করছিলেন প্রণাম, কেউ করছিলেন স্যালুট আবার কেউবা আবেগে জড়িয়ে ধরছিলেন ক্ষুদিরামের মূর্তি। আস্তে আস্তে অন্ধকার সরে গিয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠছিল। ক্ষুদিরামের প্রতি মুজাফ্ফরপুরবাসীর আবেগ দেখে নিজের অজান্তেই কখন চোখের পাতা ভিজে গিয়েছিল বুঝতে পারিনি।





মুজাফ্ফরপুরে যেখানে বোমা ছোঁড়া হয়েছিল, তার কাছেই ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লর স্মৃতিতে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে, জায়গাটির নাম কোম্পানিবাগ। প্রত্যেক বছর জেলখানার অনুষ্ঠানের পরে সকাল ৮টা থেকে সেই বাগানে ক্ষুদিরামকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এখানেও একইভাবে সবাই ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লর গলায় মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুলিশ, প্রশাসন, সাধারণ জনগণ ছাড়াও এখানে উপস্থিত থাকেন বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। তাই ভিড় হয় অপেক্ষাকৃত বেশি। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এখানে বিহার পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু'কে সম্মান জানাতে গান-স্যালুট দেওয়া হয়।




এখানেই শেষ নয়, কোম্পানিবাগে অনুষ্ঠানের পরে ডিএম, এসপি-সহ সবাই পৌঁছান চিতাভূমিতে। চিতাভূমিতেও সবাই ফুল দিয়ে ক্ষুদিরামকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে বিহার পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড-অব-অনার দেওয়া হয়। চিতাভূমির অনুষ্ঠানের পরে আমরা ক্ষুদিরামের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলি দেখতে বেরোলাম। জায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন ড. মধুসুধন ঝা (তাম্রপত্র)। তাঁর কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এই বয়সেও তিনি পায়ে হেঁটে সমস্ত জায়গাগুলি আমাকে দেখিয়েছিলেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব, পুরোনো ক্লাব, কোর্ট, কিংসফোর্ডের বাংলো, ফুটবল মাঠ ইত্যাদি।

প্রথমেই মেদিনীপুর থেকে নিয়ে যাওয়া মাটি ও চরণামৃত ঢালা হল সমাধিতে। তারপর চিতাভূমির মাটি ও বুধি-গণ্ডক নদীতে গিয়ে জল সংগ্রহ করলাম, এই নদীতেই ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর চিতাভস্ম। সন্ধেবেলায় আগের দিনের মতোই ক্ষুদিরামের সমাধিতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। সবকিছুর শেষে ছিল একটি সুন্দর দেশাত্মবোধক গানের অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি, মেদিনীপুর থেকে গিয়েছি শুনে আমাদের পাসে বসেই তিনি অনুষ্ঠান দেখলেন। অনুষ্ঠানের পরে রাত্রিবেলায় অনেক্ষন বসেছিলাম তাঁর সমাধিস্থলের পাসে, কেন জানিনা সেখান থেকে আসতেই ইচ্ছে করছিল না। কি যেন একটা অদ্ভুত টান রয়েছে জায়গাটার মধ্যে। শুনেছি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও এখানে এসে বসে থাকতেন।



পরের দিন ১২ আগস্ট চিতাভূমির মাটি ও বুধি-গণ্ডক নদীর জল নিয়ে রওনা দিলাম মেদিনীপুর। ফেরার সময় আর হাওড়া না গিয়ে আসানসোলে নেবে হলদিয়া এক্সপ্রেস ধরলাম। ১৩ তারিখ সকাল ১০ টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম মেদিনীপুর।

আগেই ঠিক করেছিলাম মুজাফ্ফরপুর থেকে আনা শহীদ ক্ষুদিরামের চিতাভূমির মাটি ও বুধি-গণ্ডক নদীর জল দিয়ে বৃক্ষ রোপন অভিযান শুরু করব অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। শুরু হবে স্বাধীনতা দিবসে ক্ষুদিরামের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলিতে বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে সেই মাটি ও জল দিয়ে কলিজিয়েট স্কুলে বৃক্ষরোপণ করলেন শ্রী অলোক রাজোরিয়া (এস.পি) ও শ্রী দীননারায়ণ ঘোষ (এস.ডি.ও) মহাশয়। হবিবপুরে জন্মভিটায় বৃক্ষরোপণ করলেন সেখানকার সদস্যরা।


মুজাফ্ফরপুর শহরে "শহীদ ক্ষুদিরাম বসু কেন্দ্রীয় কারাগার" -এ তাঁর বলিদান দিবস উদযাপন।


অরিন্দম ভৌমিক।

midnapore.in

(Published on 03.12.2020)

NEWS

কিছু সংবাদপত্রের অংশ দেওয়া হল। মুজাফ্ফরপুরে ব্যাস্ত থাকার দরুন বাকি সংবাদপত্রগুলি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।