বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি | Bankim Chandra Maity

বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি - কিছু স্মৃতি কিছু কথা ।

Bankim Chandra Maity (Researcher of folk culture and regional history).

তরুণসিংহ মহাপাত্র।


জন্মঃ ১ আগস্ট, ১৯৩৩ বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানা পাঁচরোল গ্রামে।

পিতাঃ কিশোরীমোহন মাইতি

মাতাঃ সুধাময়ী মাইতি

শিক্ষাজীবনঃ পাঁচরোল হাইস্কুল, আশুতোষ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ. ডি.

কর্মজীবনঃ নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজ (পূর্ব মেদিনীপুর) ৩৭ বৎসর অধ্যাপনা করে ১৯৯৮ সালে অবসর গ্রহণ।

প্রাপ্ত সম্মাননাঃ

● মেদিনীপুর জেলা নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি কর্তৃক, ১৯৯৯

● দাঁতন স্পোর্টস এন্ড কালচারাল এসোসিয়েশন কর্তৃক, ২০০২

● 'প্রতিকথা' সাহিত্য পত্রিকা কর্তৃক, ২০০৫

● খড়্গপুর আই. আই. টি কর্তৃক প্রত্নসম্পদ বিষয়ের অন্যতম Resource Person


'মহাভারত পড়েছ?' আমাদের বালখিল্য এক প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জিজ্ঞাসা । কিন্তু এ প্রশ্নে আমাদের নীরব ভ্যাবাচাকা অবস্থা দেখে তাঁর পরবর্তী সংযোজন- 'কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত পড়বে'। (মূল সংস্কৃত মহাভারত পাঠে যে আমরা অপারগ, তা তিনি জানতেন) তখনও অবশ্য আমরা বিস্ময়াভিভূত! আমাদের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে এবার একটু সরল হলেন- তাঁর একান্ত নিজস্ব বাক্যবন্ধে লোকসংস্কৃতি কী, শিষ্ট-সংস্কৃতিই বা কী- কোথায় তাদের সীমারেখা, কোথায় কোথায় পার্থক্য সম্পর্ক, বোঝাতে লাগলেন-মাঝো মাঝে 'কী, বুঝেছতো?'- যেভাবে কলেজে পড়াতেন- সেই অসীম আন্তরিকতায়, পরম মমতায়।

বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি | Bankim Chandra Maity
বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি | Bankim Chandra Maity ছবিঃ ভাস্করব্রত পতি।

প্রশ্ন ছিল পঞ্চক ব্রতের উৎস কোথায়? অন্য কেউ হলে হয়তো দু' একটি কথায় আমাদের কৌতুহল নিবৃত্ত করতেন। কিন্তু তিনি তো সে পথের পথিক নন! সমস্যার গভীরে গিয়ে তার মূলোৎপাটনেই যে তিনি অভ্যস্ত! বললেন, দেখ, ঐতিহ্য বলতে-আমরা কী বুঝব? যে সব আচার বিচার সংস্কার বিশ্বাস, লব্ধজ্ঞান ফল্গুধারার মতো আমাদের রক্তে প্রবাহিত হয়ে আসছে কোন্ আদিকাল হতে গ্রহণ বজর্নের মধ্য দিয়ে-তার সূত্রপাত কোথায়, তা আমরা বুঝব কেমন করে? কোন ঘটনা, বিশ্বাস, অভিজ্ঞাতার প্রেক্ষিতে - কোন্ আচার সংস্কারের জন্ম তা বলে দেবে কে? আমরা শুধু অনুমান করতে পারি, আধুনিক জ্ঞান চর্চার আলোকে তার বিচার বিশ্লেষণ চলতে পারে। নৃবিজ্ঞান যেমন এক্ষেতে আমাদের বড় সহায়ক তেমনি প্রাচীন শাস্ত্র, পুরাণ-ইতিহাস সাহিত্যও উপেক্ষণীয় নয়। এসব আমাদের চলার পথের অনেক স্মৃতিই আকারে ইঙ্গিতে ধরা আছে, সেগুলির যুক্তিসম্মত বিচার-বিশ্রেষণে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

মহাভারত একটা উদাহরণ মাত্র, আসলে তিনি বলতে চেয়েছিলেন লোকসংস্কৃতিবিদ্যা চর্চা করতে হলে আমাদের পুরাণ-ইতিহাস, প্রাীন শাস্ত্র-সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আগে দরকার।

যাঁকে নিয়ে এই বাক বিস্তার তিনি সদ্যপ্রয়াত বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি-আলোকবৃত্ত থেকে বহুদূরে থাকা, থাকতে পছন্দ করা জীবন ও কর্মে একান্ত গভীর নির্জন পথের এক পথিক । সেই জীবন-কর্ম বা পথের মূল্যায়নের অধিকারী নই ৷ তবুও বর্তমান লোকসংস্কৃতি চর্চার নিরিখে বাংলা লোকসংস্কৃতি বিদ্যা চর্চার জগতে তাঁর ভূমিকাটি চিহ্নিত হওয়া দরকার বলে মনে করি।

আমাদের লোকসংস্কৃতি চর্চার জগতটিকে মোটামোটি চারটি স্তরে বিভক্ত করে দেখা যেতে পারে - প্রথমস্তরে খ্রিষ্টান মিশনারি এবং ইংরেজ প্রশাসকদের হাতে এদেশে লোকসংস্কৃতি চর্চার সূত্রপাত। দ্বিতীয়স্তরে উনবিংশ শতাব্দের নব আলোকপ্রাপ্ত জাতীয়তাবাদ ও রবীন্দ্রপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ কিছু মানুষের হাত ধরে সে চর্চার বিস্তার। তৃতীয়স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক নিগঢ়ে আবদ্ধ থেকে বিদ্যায়তনিক লোকসংস্কৃতি চর্চা। চতুর্থস্তরে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সংস্থার অর্থানুকল্যে লোকসংস্কৃতি চর্চা।

এই চারটি স্তরের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রথমোক্ত ব্যক্তিবর্গ জ্ঞানপিপাসা চরিতার্থ করতেই হোক বা শাসনকার্যে সুবিধার জন্য এদেশের মানুষকে, তাদের সংস্কৃতিকে বুঝাতে গিয়ে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে এদেশে লোকসংস্কৃতি চর্চার খাতটি খনন করেছিলেন । দ্বিতীয় স্তরে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এদেশের মানুষকে তাদের ঐতিহ্যের শিকড়ের সাথে পরিচয় করানো । এই দুই স্তরের মানুষেরা ছিলেন মূলত সংগ্রাহক । তখনো লোকসংস্কৃতি বিদ্যার বিজ্ঞান ভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ সেভাবে শুরু হয়নি। তৃতীয় স্তরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের সূত্রে লোকসংস্কৃতি চর্চার জোয়ার এবং অতীত ও বর্তমানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ডিগ্রিমুখী তাত্ত্বিক বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হয়। চতুর্থস্তরে অর্থকামী ছদ্মগবেষকদের লোকসংস্কৃতি চর্চায় বিদূষণ ক্রিয়া ।

লোকসংস্কৃতি চর্চার এই স্তর পরম্পরায় বঙ্কিমচন্দ্র মাইতির অবস্থানটি কোথায় ? একথা ঠিক যে লোকসংস্কৃতি চর্চা করে তিনি একটি ডিগ্রি অর্জন করেছেন কিন্তু ডিগ্রি অর্জনেই তাঁর একমাত্র-উদ্দোশ্য ছিলনা । স্ব-ইচ্ছায় স্বতস্ফূর্ত প্রাণময়তায় তিনি লোকসংস্কৃতি চর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন । তাঁর নিজের কথায় -

"অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হওয়ার পর শুরু হয় আসল পড়াশোনা । ছাত্রদের লোকসাহিত্য পড়াতে লোকসাহিত্যের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তখন লোকসাহিত্যের ওপর বই বেরোচ্ছে আশুতোষ ভট্টাচার্যের। আর উপেন ভট্টাচার্য তখন বাউল সংস্কৃতি নিয়ে লিখছেন। সেসব পড়ে মনে হল বাউল তো একটা বিরাট ব্যাপার, বাউল নিয়ে গবেষণার কাজ করা যেতে পাবে। এই ব্যাপারে যখন এর তার সঙ্গে আলোচনা করছি তখন আশু বাবু (আশুতোষ ভট্টাচার্য) আমাকে বললেন- তুমি উৎ কল-বঙ্গ-বিহার (বর্তমান ঝাড়খন্ড) সীমান্ত নিয়ে কাজ কর । পরিচিত এলাকা, ভালো কাজ হবে।"

শুরু হল অধ্যাপক প্রণব কুমার ঘোষ মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে ভালো কাজ'- এর উদ্দেশ্যে পদচারণা। দীর্ঘকয়েক বৎসর চষে বেড়ালেন ওড়িশা-বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী গ্রাম-জনপদগুলি । কখনও একা কখনও বা সঙ্গী মহোদয় স্থানীয় বঙ্কিম মাইতি (বন্ধুবরের নামও একই) | অবশেষে 'দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি' নামক গবেষণা পত্রটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি অর্জন করল। এই গবেষণা পত্রটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আরও কিছু বিষয় সংযোজিত হয়ে প্রকাশিত হল তাঁর প্রথম গ্রন্থ - “দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি"।

প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক গ্রন্থটির বিশিষ্টতা কোথায় ? ড. প্রবোধ কুমার ভৌমিক গ্রন্থটির “মুখবন্ধ"-তে সে অনন্যতার দিকটি অল্প কথায় সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন-

মোদিনীপুরের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-প্রান্তিক অঞ্চলের ভাষা নিয়ে ইতঃস্তত কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও, একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অথচ সামগ্রিক দৃষ্টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল । ডঃ মাইতি তাঁর বাংলা-ওড়িয়া ভাষা ও সাহিত্যজ্ঞান নিয়ে সেই আলোচনা করে অভাবটি পুরণ করেছেন বলে আমার বিশাস । লোকসাহিত্য লোকচর্যা ও লোকধর্ম নিয়ে তাঁর ভাণ্ডারে যে প্রচুর সম্পদ রয়েছে রচনার মধ্যে তা তিনি সুচারুভাবে উপস্থাপন ও সুবিন্যস্তভাবে প্রয়োগ করেছেন-এ কথাও আমি মনে করি। সংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গ্রাম-সমীক্ষার পরিচয় প্রকাশ করে-ক্ষেত্রীয় উপাদান সংগ্রহ উপস্থাপনা ও সম্পাদনার যে আদর্শরূপটি (Model) প্রকাশ করেছেন- তা লোকসংস্কৃতি গবেষক এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীর পথ প্রদশির্কা হবে।

বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি | Bankim Chandra Maity
ডঃ বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি ও তরুণ সিংহ মহাপাত্র। ছবিঃ ভাস্করব্রত পতি।

বস্তুত ড. ভৌমিক যে স্বকীয়তার দিকগুলি উল্লেখ করেছেন, সে সব ক্ষেত্রে ড. বঞ্চিমচন্দ্র মাইতি আজও তুলনারহিত। একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, তাঁর খনিত পথেই উক্ত অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি চর্চা অগ্রসর হয়েছে । আর একটি বিষয় বিশেষ অভিনিবেশের দাবী রাখে, লোকসংস্কৃতি যে একটি বিদ্যাশৃঙ্খল আর তাই কোনো অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি চর্চার সেই অঞ্চলের ভূগোল, ইতিহাস মানুষের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, আর্থ সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে যে গভীর অনুসন্ধানের মানসিকতা, গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন সে কথা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। কিন্ত বঙ্কিমবাবু, সে দিকেই সর্বাধিক দৃষ্টি আরোপ করেছেন । সঙ্গত কারণেই ড. ভৌমিক মন্তব্য করেছেন-

ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অঞ্চলের জনজীবনের ওপর আলোকপাত করতো গিয়ে, ইতিহাস-ভূগোল-নৃ বিজ্ঞান- সমাজ বিজ্ঞান-ভাষা সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে গ্রন্থকার যে জ্ঞানের সমাবেশ ঘটিয়েছেন, তা উৎসাহী পাঠকের কেবল পাঠতৃষ্ণা নয়, মানাসিক তৃপ্তিরত্ত বিষয় হতে পারে।

অথচ এই 'জ্ঞানী' মানুষটি কোনদিনই পাঠকপ্রিয় হতে চাননি, পাঠকের মানসিক খাদ্য জোগানোর জন্য কলম ধারণ করেননি । আজীবন মনে রেখেছেন গুরুতুল্য আশুতোষ ভট্টাচার্যের নির্দেশ- পত্র পত্রিকায় লিখবে না, যতক্ষণ না নিজে বিষয়াটি সম্পর্কে সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছাও।

আর এইসন্তেষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বাসনা তাঁকে যে কতখানি তাড়িতকরত তাঁর বক্তব্যেই তার প্রমাণ মেলে -

"লোকভাষা নিয়ে কাজ করতে গিয়েই বিষয়াটি মাথায় আসে। গ্রাম / স্থানগুলির অদ্ভুত সব নাম। যেমন ধর-'কুদি'। সাধারণভাবে কোনো অর্থ পাওয়া মুশকিল। অর্থহীন স্থাননাম তো গ্রামীণ মানুষ ব্যবহার করে না । তাহলে এর উৎস কী ? বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তি দিয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা কারি।"

উত্তর সন্ধানে বাংলা, ওড়িয়া, সাঁওতালি, মুণ্ডারি এমনকি তেলেগু ভাষার অভিধানকেও আত্মস্থ করেছেন। শব্দের উৎস সন্ধানে তাঁর পরিক্রমণের পরিচয় লিপবদ্ধ আছে 'মেদিনীপুরের স্থান নাম এবং' গ্রন্থটিতে। গ্রন্থটি স্থান নাম, ও আমাদের পদবির ইতিহাস চর্চায় এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

অনন্ত জ্ঞানপিপাসা হয়তো তাঁকে বহুপ্রসূ হতে দেয়নি । কিন্ত যা লিখেছেন, যতটুকু লিখেছেন তা একান্তভাবেই মৌলিক, নিজস্বতায় ভাস্বর এবং ভাবীকালের পথ দিশারী । ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতির জীবনব্যাপী কর্মসাধনা, জ্ঞান তপস্যা আমাদের দেখিয়ে দেয় লোকসংস্কৃতি চর্চায় তাঁর অবস্থানটি। লোকসংস্কৃতি চর্চা কেবল লাইব্রেরিতে বসে 'টেবিল গবেষণা' বা এলাম দেখলাম আর লিখে ফেললাম নয়। তার জন্য প্রয়োজন গভীর নিষ্ঠা, সততা, পরিশ্রম করার মানসিকতা- প্রবল অনুসন্ধিৎসা। সুগভীর পঠন, সুনিবিড় ক্ষেত্র অনুসন্ধান আর যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণ এই তিনের সার্থক রসায়নেই সম্ভব লোকসংস্কৃতি চর্চার হরগৌরী মিলন । আজকের লোকসংস্কৃতি চর্চার এই হট্টমেলায় এটাই বোধ হয় বঙ্কিমবাবুর সবিশেষ অবদান।

কারণে অকারণে সময়ে অসময়ে আমরা তাঁর বাড়িতে হাজির হতাম। জীবনের শেষদিকে স্মৃতিভ্রংশতা তাঁকে প্রায় গ্রাস করে নিয়েছিল। কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলতেন। হাঁটতে কষ্ট হত অথচ কোনো বই দেখানোর জন্য যেভাবে টলমল পায়ে আলমারির দিকে যেতেন কিংবা লোকসংস্কৃতি বিষয়ক কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর যে আকুতি দেখেছি তা শুধু একজন শিক্ষক নয় একজন প্রকৃত লোকসংস্কৃতি দরদীকেই তুলে ধরে। অথচ যখন শুনি মহানগর লালিত কৃতবিদ্য অধ্যাপক লোকসংস্কৃতি বিষয়ক বহুগ্রন্থ প্রণেতা বঙ্কিমচন্দ্র মাইতির নামটুকুও শোনেন নি তখন মনে হয় প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বঙ্কিমবাবু হয়তো নিজেই প্রান্তিক হয়ে গেলেন - অবশ্য এটা তার পক্ষে গৌরবের হলেও আমরা এ লজ্জা কোথায় লুকোই।


midnapore.in

(Published on 02.04.2021 / প্রথম প্রকাশঃ এবং সায়ক, সম্পাদক - সূর্য নন্দী)