সীতারাম জীউ বিদ্যামন্দির , ভাতঘর, শ্যামচাঁদপুর, -তপন কুমার রনজিৎ

ঘন্টা ও হাতুড়ী | ভাতঘর ৩

Memories of Sitaram Jew Vidyamandir (Shyamchandpur)

তপন কুমার রনজিৎ।


'এই নিন , আপনাদের মাস্টার মশাইকে ' | প্রভাতবাবু , হ্যান্ড ওভার করে সোজা বেরিয়ে গেলেন - I অফিসঘর থেকে একে একে শিক্ষকগণ এলেন নারকেল তলায় ৷ ধূতি পাঞ্জাবী পরা লম্বায় পাঁচফুট দশ ইঞ্চি, বছর পঞ্চান্নের সুঠামদেহী এক শিক্ষক , "ভাই আমাদের স্কুলে থাকবে তো " বলেই - নিয়ে গেলেন স্টাফ রুমে ৷ চোখমুখ অজানা আতঙ্কে বিবর্ণ ৷ নিশ্চিত এটাই কেশপুর- যৌবনের তপোবন ৷



স্কুল বলতে নারকেল তলায় উত্তরমুখী সিঁড়ি বিহীন একতলা যুক্ত একটা অফিসঘর ৷

উত্তর দক্ষিণ মাঝ বরাবর কাঠের আলমারির সারি ৷ একদিকে স্টাফ রুম ৷ অন্যদিকে এক চেয়ার টেবিল যুক্ত হেড্ মাস্টারের মসনদ ৷ বারান্দার পশ্চিম কোনে ঝুলছে ঘন্টা ৷ কাঠের টুলে কাঠের হাতুড়ী ৷ ৪০ - ৫০ মিনিট অন্তর ঢং শব্দে মিলন ঘটে।


সীতারাম জীউ বিদ্যামন্দির , ভাতঘর, শ্যামচাঁদপুর, -তপন কুমার রনজিৎ
ঘন্টা ও হাতুড়ী | ভাতঘর ৩

দরজার মুখে,বেঁটে রোগা চর্মসার বছর বাহান্নের ধপধপে ধূতি পাঞ্জাবী পরিহিত - একমাত্র শিক্ষাকর্মী বন্ধু চিত্তদা ৷ বরাদ্দ একটা কাঠের চেয়ার ৷ ছেলে মেয়েদের চিত্ত স্যার ৷ পশ্চিম জানালার ধারে এক চেয়ার টেবিলে মুখ গুঁজে বিভিন্ন পোটলায় কাগজ ও খুচরো টাকা সুতো দিয়ে জড়িয়ে পৃথকীকরনে ব্যস্ত "বড়বাবু " _ সবার প্রিয় সত্যদা।

স্টাফ্ রুমের দক্ষিন পূর্ব পশ্চিমে হেলান দেওয়া সিট বেঞ্চ৷ মাঝে বড় টেবিল জোড়া দেওয়া ৷ জনা তেরো শিক্ষকের সংসার।



বারবার ' নির্দ্ধারিত চেয়ার 'আড় চোখে দেখছি - I শূন্যস্থান কিছুতেই পূর্ণ হচ্ছে না। পরিচয় পর্ব জমে উঠেছে ৷ সাহস নিয়ে বলে বসলাম, "আজ কী প্রধান শিক্ষক মহাশয় আসবেন না " ৷ হো হো করে উঠল হাসির রোল ৷ ভেসে উঠল ধ্বনি, "আমরা সকলেই হেড্ মাস্টার | আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে । এক বাখুলেই থাকি, মিলেমিশে কাজ করি" ৷

বুঝতে পারলাম , তিনিই মহানায়ক সাধনবাবু - হেড্ মাস্টার৷


সীতারাম জীউ বিদ্যামন্দির , ভাতঘর, শ্যামচাঁদপুর, -তপন কুমার রনজিৎ
ঘন্টা ও হাতুড়ী | ভাতঘর ৩

অফিস - ঘরের সামনে ফাঁকা মাঠ' | মাঠের উত্তর দিকে পশ্চিমা ঘেঁষা দক্ষিণমুখী দু'কামরাযুক্ত দোতলা পাকা ঘর ' ৷ সিঁড়ির নীচে শৌচালয় ৷ উত্তরের পূর্বাংশে বোল্ডারের বেড়া ৷ মাঠের পশ্চিমে পূর্বমুখী মাটির তিন কামরা ঘর ৷ বারান্দার মাথায় উত্তর দক্ষিণে মোটা রশির মেলা | মাঠের পূর্বদিকে পশ্চিমমুখী মাটির বিশাল হলঘর ৷



দক্ষিণপূর্ব কোণে ছেলেমেয়েদের শৌচালয় 'পাশেই দুটি নারকেল গাছ | উত্তর পশ্চিম পূর্বে দেবদারু গাছের সারি ৷ হোস্টেল ছিল না ৷ উত্তর দিকে স্কুলের গা ঘেঁষে গণেশবাবু , স্বদেশবাবু, চিত্তদার বাড়ী ৷ ১ টা ৪৫ এ টিফিন ৷ স্বদেশ বাবুর বাড়িতে আলু চোখা, ডাল,মাছের ঝাল দিয়ে ভাত।

ফিরছি - ডাক পড়ল রথতলার পাশের ঘরে ৷ চিত্ত দার সঙ্গে গেলাম। বেশ কয়েকজন বারান্দায় বসে। একথা সেকথা বলতে বলতে, একজন জানতে চাইলেন - স্বদেশবাবুর পূর্ব পরিচিত কী না? কেশপুরে প্রথমবার ৷ কেউই চেনা জানা নেই ৷


midnapore.in

(Published on 04.03.2022)