ভাতঘর ৪
Memories of Sitaram Jew Vidyamandir (Shyamchandpur)
তপন কুমার রনজিৎ।
অফিসঘরের সামনে হেডমাস্টার পরিচয় করিয়ে দিলেন লুঙ্গী শার্ট পরিহিত ৬ফুটের সুঠাম দেহী একজনের সাথে ৷ নতুন মাস্টার এসেছে শুনে মাঠ থেকে সোজা স্কুলে৷ তিনি স্কুলের সম্পাদক মহাশয় চিত্তরঞ্জন চৌঁর্যা ৷
নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে, মিটিং হয়নি ৷ স্কুল SSC থেকে চিঠি পেয়েছে ৷ আজকাল মিটিং হবে , নিয়োগপত্র ডাকযোগে পাঠানো হবে ৷
ফেরার পালা ৷পাইনবাবুর সাথে শালবনী ফিরছি , শুনছি ভিন্ন স্বাদের ভাষা৷ কিছুটা বুঝছি বাকীটা হেঁ হো ৷
ঘরে ফেরা | ভাতঘর ৪
বাবা বলেছিলেন , মৃনালের বৌ শালবনীতে থাকে ৷ ও ওখানকারই এক স্কুলের শিক্ষিকা৷ নাম অঞ্জু রায় ৷
পাইনবাবুকে নামটা বলতে এগিয়ে দিলেন শালবনী নিচু মঞ্জরী বালিকা বিদ্যালয়ের দিকে ৷ গেট ঠেলে নাম বলতে দিদিমনি বেরিয়ে এলেন ৷ অলংকার পুর বাড়ী বলতে - দাদা (মৃনাল রায়) আমাদের বাড়ীতে থেকে দীঘা বিদ্যাভবনে পড়তেন বলতে লাগলেন ৷তাঁর , তখনও আমাদের গ্রামে যাওয়া হয়নি ৷ পরিচয় হল ৷ তিনি বৌদি আমি দেওর ৷ পুরোনো সর্ম্পক আশ্রয় পেল ৷ কথা হল - স্কুলে যোগদান করার দিন যেনো উনার বাড়ীতে যাই ৷ স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ওনার ৷
শালবনী বাসস্ট্যান্ড থেকে মেদিনীপুর, I মেদিনীপুর থেকে কাঁথি | কাঁথি থেকে অলংকার পুর৷ রাত সাড়ে এগারোটা ৷ ভাতঘরের স্বপ্নে টানা ঘুম ৷
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই চা। জীবনটা দ্রুত বদলাতে লাগল ৷ বেশ পরিনত হাবভাব ৷ স্কুলটা যে কেশপুরে বাবা মা পাড়া প্রতিবেশীর কাছে বেমালুম চেপে গেলাম ৷
পাড়া প্রতিবেশী ছোটো বড় সবার কাছে কদর বেড়েছিল এক লহমায় ৷ সবাই আমার নয় চাকরীর খবর নেয় ৷ যাঁদের নালিশ শুনতে শুনতে - বাবা, বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন ৷ তাঁদের কথার বদল না বলে পরিবর্তণ চোখে পড়ার মতো ' " দেখ গংগা প্রসাদ তোর ছেলের মতো ছেলে হয় না" ৷
বদমায়েশের গাছ, বজ্জাতের ধাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাঙ্গত্মক শব্দ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা ৷ তাঁরাই স্লোগান দিতে শুরু করলেন, "পড়াশুনায় কত ভালো ছিল : এমন ভালো ছেলে দুটা পাওয়া ভার" ৷
জীবনেএকটামাত্র সুখবর "চাকরী" বদলে দিল ,' বিচ্ছিন্ন করে সংযুক্তির দিশা দেখালো ৷ বন্ধুবান্ধবের সুর পাল্টে গেল ৷ বহু রকমারী কান গরম করা কথার ফিসফি সানি শব্দ | বেশীরভাগ বন্ধু বেশ খুশী ৷ মিষ্টি আবদার মিষ্টি দিয়েই তারা চিরদিনের আপন |
আত্মীয় ঘরে ঘন ঘন ডাক। অস্থির মন ৷ কাউকে কথা দেওয়ার বদলে " যাব যাব " শব্দযুগলে মন রক্ষা ৷ বাবা, মহাভারতের বিভিন্ন পর্বে ওঠানামায় ব্যস্ত ৷ অফিস কামাই ৷ ভাইবোনের হাসিমুখ ৷ বাড়ছে প্রত্যাশার চাপ ৷
ফেব্রুয়ারীর (৬-১৮) এক একটা রাত কেটেছে ভাতঘরের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ৷ মাঝেমধ্যে ছন্দপতন মাঝরাতে _ "ভাই তুমি থাকবে তো আমাদের স্কুলে " ৷ এক অজানা আতঙ্কে আচ্ছন্ন ভাতঘর দেশের কল্পকথা ৷
সংবাদের শিরোননামের রেখা অক্ষর ভেদ করে অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখী।
midnapore.in
(Published on 11.03.2022)