রাকেশ সিংহ দেব।
Home » Medinikatha Journal » Rakesh Singha Dev » Dove
এ পাখির ‘ঘুঘু-ঘুঘু বা ক্রুরর-ক্রুরর-ক্রুরর’ ডাক যখন কানে ভেসে আসে তখন শৈশব কৈশোরের সেই ফেলে আসা গ্রামের বাঁশঝাড় অথবা ঠা-ঠা রৌদ্দুরের অলস দুপুরগুলির কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে কোনো জনমানুষের সাড়া নেই কিন্তু বাজছে ‘ঘুঘু-ঘুঘু’ সুরের মূর্ছনা। এ পাখি এখনো আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। মাদকতা রয়েছে এদের মধুর কন্ঠ সুরে। সাহিত্য কিংবা গানে এরা সমান দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে যুগ যুগ ধরে। বাংলা গান, ছড়া, গদ্য ও কবিতায় ঘুঘু বারেবারে এসেছে বিভিন্ন রূপে।
- কবি জীবনানন্দ দাশ
আমাদের দেশে বহু প্রজাতির ঘুঘু পাওয়া যায়। ঘুঘুরা কলম্বিদি গোত্রের পাখি। অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যে সমস্ত প্রজাতির ঘুঘু দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হলো - তিলা ঘুঘু (Spotted Dove), লাল ঘুঘু (Red-collared Dove), রাম ঘুঘু (Oriental Turtle Dove), রাজ ঘুঘু (Eurasian Collared Dove), ক্ষুদে ঘুঘু (Laughing Dove), সবুজ বা পান্না ঘুঘু(Emerald Dove)।
ঘুঘু পাখিদের প্রিয় খাবার বিভিন্ন শস্যদানা এরমধ্যে ধান, ঘাসের বীজ, সরিষার প্রতি আসক্তি বেশি। আবার খুঁটে খুঁটে মাটিও খেতে দেখা যায়। বিশেষ করে ঘাসে ভরা জমিতে ঘুরেফিরে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়। নিজ প্রজাতির বাইরেও অন্য প্রজাতির ঘুঘুদের সঙ্গেও এরা একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়।
এই প্রজাতির ঘুঘু অবিভক্ত মেদিনীপুরের সর্বত্রই ভালো সংখ্যায় দেখা মেলে। এরা আমাদের এলাকার আবাসিক পাখি। এই পাখি আমাদের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। লম্বায় এরা প্রায় ২৮-৩০ সেন্টিমিটার। কপাল, মাথা, মুখ, গলা, বুক বেগুনি-গোলাপি। ডানার ওপর সাদা ছিট ছিট। ঘাড়ের দু’পাশে কালোর ওপর সাদা ফোঁটা থাকে। লেজ কালচে-বাদামি। লেজের তলা সাদা। ঠোঁট কালচে। চোখের চারপাশে লালচে বলয় থাকে। পা-পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল।
স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তবে আকারে স্ত্রী পাখি সামান্য ছোট। প্রজনন সময় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়াও গ্রীষ্মেও ডিম পাড়তে দেখা যায়। বাড়ীর কার্নিশে বা নির্জন কোনে, ঘুলঘুলিতে, যেকোনো গাছেই এরা বাসা বাঁধে। বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শুকনো লতা পাতা বা শুকনো দূর্বাঘাস, সরু কাঠি। ডিম পাড়ে ১ থেকে ২টি। বেশিরভাগ সময় ২টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি উভয়ে মিলেই ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন।
অবিভক্ত মেদিনীপুরের ঘুঘুদের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়। রাজ ঘুঘু বিচরণ করে ঝোপ-জঙ্গল, খোলা মাঠ প্রান্তর কিংবা কৃষিজমিতে। এরা আমাদের এলাকার আবাসিক পাখি। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়। ভোর ও গোধূলিতে খাদ্য সংগ্রহে তৎপর থাকে। রাজ ঘুঘু লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে অর্ধচন্দ্র কালো রেখার জন্য এরা কণ্ঠী ঘুঘু নামে পরিচিত। দেহের উপরি ভাগ ধূসর বর্ণের। ডানার পালক কালচে। বুক ফিকে নীলচে পাটকিলে। তলপেট ছাই ধূসর। লেজের তলার পালক গাঢ় ধূসর। লেজের বাইরের পালকের ডগা সাদা।
চোখের তারা লাল। চোখের বলয় পালকহীন ধূসরাভ-গোলাপি চামড়ায় আবৃত। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। ঠোঁট কালো। স্ত্রী-পরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। পুরুষ পাখি প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করে, ‘ক্রুরু- ক্রুরু-ক্রুরু’ সুরে ডেকে। ঝোপ জঙ্গল ঘেরা গাছের নিচের দিকে শুকনো ঘাস লতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬-১৮ দিন। এরা নিরীহ এবং শান্ত প্রকৃতির পাখি।
এরা ‘লাল রাজঘুঘু’ নামেও পরিচিত। এরা আমাদের এলাকার আবাসিক পাখি। প্রজাতিটি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা নীলাভ-ধূসর। ঘাড়ে মোটা কালো বন্ধনী। বন্ধনীর উপরে-নিচে থাকে সরু সাদা বন্ধনী। পিঠ ও ডানার পালক ইট রঙের লালচে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। লেজের নীচের দিল নীলাভ-ধূসর। বুক ও পেট হালকা গোলাপী। লেজ ধূসর। লেজের নিচের দিকটা সাদা।
স্ত্রী পাখির রঙ ভিন্ন। দেহের উপরের দিকে গাঢ় হলদে-বাদামি। নিচের দিকে হলদে-ধূসর। উভয়ের ঠোঁট কালো, পা বেগুনি-কালো। ওড়ার পালক কালো। প্রজনন সময় নির্দিষ্ট নয়। বছরের যে কোনো সময়ে এরা প্রজননে সক্ষম। বাসা বাঁধে গাছের ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে লতা ও সরু কাঠি। ডিম পাড়ে দুটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।
আমাদের জেলায় উপরে উল্লিখিত ঘুঘুদের তুলনায় কিছুটা বিরল দর্শন ‘ক্ষুদে ঘুঘু’। এরা আমাদের এলাকার আবাসিক পাখি। দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৬-২৭ সেন্টিমিটার। মাথা ও ঘাড় গোলাপি-বাদামি। পিঠ হলুদাভ মিশ্রিত বাদামি বর্ণ। লেজের বাইরের পালক সাদা। লেজের গোড়া ও কাঁধের পালক ধূসর। ডানার প্রান্ত পালক কালো। ওড়ার পালক কালো। বুক গোলাপি-বাদামি। পেট মিশ্রিত বাদামি। চোখ বাদামি কালো। ঠোঁট কালো। পা গোলাপি লাল। নখর কালো। পরিনত পাখিদের গলায় সন্নিবিষ্ট কালো ফুটকি দাগ থাকে।
দেখতে অনেকটাই তিলা ঘুঘুর মতো। কণ্ঠস্বরও সেরকম। বিচরণ করে মাঠে-ঘাটে। তবে সেটি অবশ্য শুষ্ক শস্যভূমি হতে হবে। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে এলাকা এদের একদম অপছন্দ। প্রধান খাবার শস্যবীজ, ঘাসের কচি ডগা ও মাটি। মাঝেমধ্যে উইপোকা খেতে যায়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। গাছের তেডালে অথবা দালানের ফাঁকে খড়কুটা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। শাবক সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে উড়তে শেখে।
এরা আমাদের এলাকার পরিযায়ী পাখি। আমাদের জেলায় শীতের সকাল বিকেলে বাঁশের ঝাড়ের উঁচুতে বড় পায়রার মত এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা আসলে আমাদের রাজ্যের উত্তরের পার্বত্য এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আমাদের অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটিতে রামঘুঘু (Oriental Turtle Dove) পরিযায়ী পাখি এবং শীতকালে জেলার বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ে।
প্রজাতিটি লম্বায় ৩০ থেকে ৩২ সেমি। ঠোঁট লম্বা এবং পিঠের পালক লালচে বাদামি আর মিশেল। মাথা নীলাভ-ধূসর। ঘাড়ের দুপাশে কয়েকরটি অর্ধচন্দ্রাকার দাগ থাকে। পিঠ ও ডানার পালকে ইট রঙের লালচে অর্ধগোলাকার দাগযুক্ত পালকের বিন্যাস থাকে। লেজ ধূসর। লেজের নিচের দিকটা সাদা। স্ত্রী পাখির রঙ অভিন্ন। উভয়ের ঠোঁট লালচে, পা বেগুনি-কালো। এরা দলবেঁধে ধানক্ষেতে ভিড় করে।
ফুলের মুকুলও এদের খাবারের তালিকাভুক্ত। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননের মরসুম তবে বছরের যে কোনো সময়ে এরা প্রজননে সক্ষম। বাসা বাঁধে গাছের ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে লতা ও সরু কাঠি। ডিম পাড়ে দুটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের জাড়া গ্রামে একসাথে ৩৯ টি Oriental Turtle Dove পর্যবেক্ষণ করে ফটোগ্রাফিক রেকর্ড নিতে সক্ষম হই।
এই পর্যবেক্ষণ আন্তর্জাতিক পক্ষী পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট ebird এ সংরক্ষিত রয়েছে। সারা অবিভক্ত মেদিনীপুর তো বটেই সম্ভবত সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে একসাথে এত বেশি সংখ্যক ওরিয়েন্টাল টার্টেল ডাভ এর ঝাঁক আগে দেখা যায়নি।
পাতাঝরা, চিরসবুজ, শাল ও বাঁশবনের বাসিন্দা। এরা আমাদের এলাকার অত্যন্ত বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। সচরাচর একাকি ছায়াঘেরা বনের নির্জন জায়গায় বা ঝোঁপ-ঝাড়ের মেঝেতে হেঁটে বেড়ায়। ঘুঘুর দ্বিতীয় কোন প্রজাতির এমন রঙ নেই; পুরুষ ঘুঘুর পিঠের দিক এবং ডানা ধাতব সবুজ বা পান্না রঙের; পেটের দিক গোলাপী ধূসর বা উজ্জ্বল গোলাপী। মাথা এবং ঘাড় ধূসরাভ। কপাল ভ্রু এবং কাঁধ সাদা। ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। স্ত্রীজাতীয় ঘুঘুর রঙ প্রায় পুরুষের মত তবে ফিকে, কপাল ও ভ্রু ধূসর, মাথা এবং ঘাড় বাদামী, কাঁধে সাদা পট্টি নেই বা অস্পষ্ট। পিঠের উপর সাদা ও কালো মোটা পট্টি। লেজ ও ডানার ডগা কালো। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়ের মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে। দৈর্ঘ্যে কম-বেশি ২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। বাঁচে ছয় থেকে সাত বছর।
এদের প্রধান খাদ্য ধান ও অন্যান্য শস্যদানা। মাটিতে বিচরণকালে খুঁটে খুঁটে মাটি এবং উইপোকা খায়। মাটি থেকে ৫ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে বাসা বাঁধে। সরু, নরম ও শুকনো ঘাস-লতা দিয়ে বাসা বানায়। সারা বছর প্রজনন করতে পারলেও সাধারণত বর্ষার আগে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডিম দেয় বেশি। ছোট গাছ, বাঁশঝাড় বা ঝোঁপ-ঝাড়ে কয়েকটি কাঠিকুটি জড়ো করে ছোট্ট ও অগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ঘুঘু দুটো হালকা ঘিয়ে বা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১২ দিনে। এরা খুব সতর্ক ও লাজুক স্বভাবের। কোনো রকম শব্দ পেলেই দ্রুতবেগে উড়ে যায়। বনের ভেতরে খুব কম উচ্চতায়ও বেশ দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। খুবই করুণ সুরে বিলাপের মত করে কু-উ বা হুউন করে ডাকে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় এই ঘুঘু প্রায় দেখা যায়না বললেই চলে। ওড়িশা সীমান্তবর্তী এলাগুলিতে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের কংসাবতী নদীর পাড়ে একটি পান্না ঘুঘুর ফটোগ্রাফিক রেকর্ড পেতে সক্ষম হন পক্ষিপ্রেমী অসীম গিরি। ঝাড়গ্রাম জেলার চিল্কিগড় থেকেও পান্না ঘুঘুর দেখা পাওয়ার খবর রয়েছে।
শুধুমাত্র অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় নয় সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন প্রবাদ - প্রবচন - বাগধারায় জায়গা করে নিয়েছে ঘুঘু পাখি।
সর্বাধিক জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ, ঘুঘু পাখির বিচরণ বেশ ভালো লাগে কিন্তু ফাঁদে পড়া ঘুঘুর যন্ত্রনা চোখে দেখা যায়না। প্রবাদটির প্রকৃত অর্থ হল প্রথমে কাজের ভালো অংশটুকু দেখা, কিন্তু পরে গিয়ে বিপদ বা খারাপ কিছুর আশঙ্কা। ঘুঘু দেখে আনন্দে না ভুলে অদূর ভবিষ্যতে ফাঁদের যন্ত্রণা সম্পর্কে সচেতন থাকা।
বহুল প্রচলিত এই বাগধারার অর্থ হল - বহুকাল যাবৎ গৃহে বাস করে এমন অসৎ বা দুষ্ট প্রকৃতির লোক যাকে তাড়ানো কঠিন।
ক। বাড়িতে ঘুঘুর বাসা থাকলে সংসারে দারিদ্র্য নেমে আসে। আজও অনেক জায়গায় এই ধরনের কুসংস্কার ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে। এই কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে ভিটায় ঘুঘু চড়ানো কথাটি এসেছে।
খ। ঘুঘু পাখির মাংস শরীরের জন্য বলবর্ধক এরকম কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে অনেক জায়গায়। মাংসের লোভে তাই আজও ঘুঘু পাখিদের শিকার করা হয়।
গ্রামবাংলার অতিচেনা বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু পাখিরা পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সর্বত্রই ছিল ঘুঘু পাখির অবাধ বিচরণ। উঠোনের গাছগুলোতে, বাড়ি সংলগ্ন বাঁশ ঝাড়ের ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে এই পাখিরা ঘু-ঘু ডাকে মুখর করে রাখত পরিবেশ। কিন্তু এই লাজুক চঞ্চল এই পাখি ক্রমশই কমছে। পাখিদের মধ্যে বকের পরেই এরা সবচেয়ে বেশি শিকারিদের ফাঁদে পড়ছে।
কারণ এরা সুচতুর নয়, অত্যন্ত নীরিহ গোত্রের পাখি। ফলে শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের কায়দা করে এদেরকে ফাঁদে ফেলছে। এছাড়াও শখের এয়ারগানের টার্গেটে এ পাখিই বেশি পড়ছে। আবার গ্রামগঞ্জের বিলাসি মানুষের খাঁচায় এ পাখিই বন্দি হচ্ছে বেশি। এর প্রধান কারণ ঘুঘুরা বাসা বাঁধে একেবারেই মানুষের নাগালের মধ্যে। মাঝে মধ্যে এত নিচু জায়গায় বাসা বাঁধে যে, শিশু-কিশোরদের ফাঁদে শাবকসহ বড় পাখিও ধরা পড়ে যায়। তারপর সেখান থেকে শাবক চলে যায় বন্দি জীবনে। আর প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা চলে যায় রান্নার কড়াইতে।
অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রায় সব জায়গায় সারা বছর জুড়ে কিশোর যুবকদের গুলতির প্রাথমিক টার্গেট থাকে বিভিন্ন ঘুঘু পাখি। জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রথাগত শিকার উৎসবে প্রচুর পরিমান ঘুঘু মারা পড়ে। মনে রাখতে হবে ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭২ অনুসারে সকল ঘুঘুপাখিরা Schedule IV তালিকাভুক্ত। এদের ধরা, মারা, বাসস্থান ও ডিম। নষ্টের শাস্তিস্বরূপ জেল ও জরিমানার প্রতিবিধান রয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য এত অত্যাচারের পরেও এরা সন্তোষজনক হারে আমাদের জেলায় বিচরণ করছে।
midnapore.in