দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur

দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ

डोलग्राम विरासत गांव | Dol Gram Heritage Village

চৈতালি কুণ্ডু নায়েক।


বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে প্রায় উড়িষ্যার কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যমন্ডিত গ্রাম হল দোলগ্রাম। আরও ভালো ভাবে বললে বলা যায় গ্রামটি ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামের সীমান্তে অবস্থিত। খড়্গপুর কেশিয়াড়ি হয়ে নয়াগ্রাম যাওয়া যায়। নয়াগ্রাম থেকে দোলগ্রাম। গ্রামটির জে.এল.নম্বর ৩০১। দোলগ্রাম থেকে উড়িষ্যার বালেশ্বরের রাইবনিয়া গড় কাছেই। দোলগ্রাম হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগে স্থানটির নাম ছিল দেউলগাঁ। এই দেউলগাঁ-এর নির্জন কঠিন পাথুরে ভূমির ওপর অতীতে একটি দুর্গ গড়ে উঠেছিল। দেউলগাঁ দুর্গ। এই দেউলগাঁ দুর্গটি অবস্থিত ছিল বালেশ্বরের রাইবনিয়া গড় ও দেউলগাঁর খুব কাছে নয়াগ্রামের চন্দ্ররেখা গড়ের মাঝখানে। ষোড়শ শতকে চন্দ্ররেখা গড়টি নির্মাণ করেছিলেন নয়াগ্রাম রাজবংশের চতুর্থ রাজা চন্দ্রকেতু। এই চন্দ্ররেখা গড়ের কাছে সস্তনিতে রাজা চন্দ্রকেতু সহস্রলিঙ্গ মন্দিরও স্থাপন করেছিলেন।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
আনুমানিক ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দেউলগাঁ দুর্গের গড়খাইয়ের চিহ্ন ও প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

দোলগ্রামের বিশেষত্ব হল গ্রামটির চারিপাশে তাকালে চোখে পড়ে অজস্র পুরাতাত্বিক নিদর্শন এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে গ্রামটি উল্লেখযোগ্য তার পুরাতাত্বিক নিদর্শনের জন্যই। এই নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দোলগ্রাম গড়প্রাচীর, পক্ষীরাজ মূর্তি, জীর্ণ দোলমঞ্চ বা রাসমঞ্চ, গড়কুঁয়ো, পাশাপাথর, পদ্মপুকুর, জগন্নাথ-দধিবামন মন্দির, শিবমন্দির, পুরাণপ্রসিদ্ধ ভাগবত মন্দির, নাগা ঢিপি সব মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের যেন এক মিশ্র আর্ট গ্যালারি। তাই দোলগ্রাম নিঃসন্দেহে এক হেরিটেজ ভিলেজ। দেউলগাঁ দুর্গটি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কে নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা হয়ে চলেছে। গবেষণা চলছে বিভিন্ন পুরাতাত্বিক নিদর্শনগুলি নিয়েও।



কোনও কোনও ঐতিহাসিক ও গবেষকের মতে এই দুর্গটি আনুমানিক ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁদের মতে রাইবনিয়া গড়ের শেষ রাজা নরসিংহ দেব এই গড়টি নির্মাণ করেন। বাইরের শত্রুদের আক্রমণ থেকে মহারানীকে রক্ষার জন্য ও অবসর সময় কাটানোর জন্য নরসিংহ দেব এই গড়টি নির্মাণ করেন। আবার কারও মতে চন্দ্ররেখা গড়ের রাজা চন্দ্রকেতু এই দেউলগাঁ দুর্গ ও দোলমঞ্চটির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন অবসর বিনোদনের জন্যই। অবসর সময়ে এসে পাশা খেলতেন। পাশাপাথরটি এখনও দেখা যায়। ৩ফুট/৫ফুট আকারের পাথরের ওপর পাশা খেলার ছক কাটা আছে। রাজা চন্দ্রকেতুই দোলযাত্রার প্রচলন করেন বলেই গ্রামের নাম দেউলগাঁ থেকে দোলগ্রাম হয়েছে। আবার কারও মতে দোলগ্রামের রাজা ছিলেন বৃষকেতু। তিনিই প্রতিবেশী রাজা চন্দ্রকেতুর সঙ্গে পাশা খেলতেন। কিন্তু কে এই বৃষকেতু তাঁর সঠিক ইতিহাস এখনও জানা যায়নি।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

এই গড়টি পুরোপুরিভাবে মাকড়া পাথরে নির্মিত ছিল। তবে গড়টি আকারে খুব একটা বড় ছিল না। গড়টি প্রাচীরদ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। প্রাচীরের ভেতরে গড়খাইয়ের চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। গড়ের ভেতরে একটি মন্দির ছিল। অনুমান করা হয় এটি জগন্নাথ দেবের মন্দির। সম্ভবত মোগল আফগান আমলে কালাপাহাড় অথবা বর্গী আমলে বর্গীদের দ্বারা গড়সহ মন্দিরটিও ধ্বংস হয়ে যায়। বহুবছর আগে গড় সংলগ্ন জমিতে এক কৃষক দারুনির্মিত জগন্নাথ দেবের মূর্তি দেখতে পায়। হয়তো মন্দির ধ্বংসের সময় মন্দির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দেবমূর্তি ধানজমিতে চাপা পড়ে। গ্রামের 'কর' পরিবার আনুমানিক ১৫০-২০০ বছর আগে জগন্নাথ দেবের মন্দির পুনরায় নির্মাণ করেন এবং উদ্ধার হওয়া জগন্নাথ দেবের মূর্তির পুজোর দায়িত্ব নেন। এর পেছনেও একটি ছোট্ট ইতিহাস আছে।



কোনও কোনও ঐতিহাসিক ও গবেষকের মতে এই দুর্গটি আনুমানিক ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁদের মতে রাইবনিয়া গড়ের শেষ রাজা নরসিংহ দেব এই গড়টি নির্মাণ করেন। বাইরের শত্রুদের আক্রমণ থেকে মহারানীকে রক্ষার জন্য ও অবসর সময় কাটানোর জন্য নরসিংহ দেব এই গড়টি নির্মাণ করেন। আবার কারও মতে চন্দ্ররেখা গড়ের রাজা চন্দ্রকেতু এই দেউলগাঁ দুর্গ ও দোলমঞ্চটির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন অবসর বিনোদনের জন্যই। অবসর সময়ে এসে পাশা খেলতেন। পাশাপাথরটি এখনও দেখা যায়। ৩ফুট/৫ফুট আকারের পাথরের ওপর পাশা খেলার ছক কাটা আছে। রাজা চন্দ্রকেতুই দোলযাত্রার প্রচলন করেন বলেই গ্রামের নাম দেউলগাঁ থেকে দোলগ্রাম হয়েছে। আবার কারও মতে দোলগ্রামের রাজা ছিলেন বৃষকেতু। তিনিই প্রতিবেশী রাজা চন্দ্রকেতুর সঙ্গে পাশা খেলতেন। কিন্তু কে এই বৃষকেতু তাঁর সঠিক ইতিহাস এখনও জানা যায়নি।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
পদ্মপুকুর। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

সেইসময়ে নয়াগ্রাম রাজার আমন্ত্রণে উড়িষ্যার জাজপুর থেকে খোশলনাথ কর নামে এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ নয়াগ্রাম রাজপরিবারে দুর্গাপূজা করতে আসতেন। পরবর্তীসময়ে দোলগ্রামের সেইসময়ে যে জমিদার ও নায়েব ছিলেন তাঁদের সিদ্ধান্তে ইনি নিয়মিত পুরোহিত হিসেবে দোলগ্রামে বসবাস করেন। ওনার পরবর্তী প্রজন্মরাই এখনও এই পুজোর দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করে চলেছেন।



গড়ের ভেতর অনেক চিত্রিত পাথরও পাওয়া যায় যা আসলে মন্দিরের চূড়া বা আমলক বলে মনে করা হয়। গড়ের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে গড়টির পাথর দিয়ে গড়ের ওপরেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে থেকে গেছে গড় প্রাচীর। স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য স্থায়ী নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মাটি খনন করার সময় প্রায় ১০০ টি শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়। এর থেকে অনুমান করা হয় রাজা চন্দ্রকেতু প্রতিষ্ঠিত সস্তনির কাছে সহস্রলিঙ্গ মন্দিরের মতোই দোলগ্রামেও সহস্র শালগ্রাম শিলার পূজার প্রচলন ছিল।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

এখানকার আর একটি পুরাতাত্বিক নিদর্শন হলো মাকড়া পাথরে নির্মিত প্রাচীন দোলমঞ্চ। যদিও দোলমঞ্চটির এখন আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই শুধুমাত্র বেদীটুকুই ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। শোনা যায় দোলমঞ্চের দেওয়ালে পঞ্চরথের কারুকাজ ছিল। গ্রামের অন্যতম একটি প্রাচীন উৎসব হল দোল পূর্নিমার দিন দোল ও চাঁচর উৎসব যা অতীত ঐতিহ্যকে বহন করে নিয়ে চলেছে। ওই দিন জগন্নাথ মন্দির থেকে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি এনে দোলযাত্রা করা হয় এখনও। সৈন্যসামন্ত, পাইক বরকন্দাজ নিয়ে দেউলগাঁ দুর্গে যখন রাজপরিবারের চাঁদের হাট ছিল সেই সময় এই দোল পূর্ণিমার দিন বাইশগড়ের মতান্তরে আঠেরো গড়ের রাজারা দুর্গের পাশে আবীরখেলায় মেতে উঠতেন। নয়াগ্রামের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় অতীতে সুবর্ণরেখার দক্ষিণতীরে বাইশটি কোনোও কোনোও ঐতিহাসিকের মতে আঠেরোটি জমিদার বংশ গড়ে উঠেছিল।



ওই সময় মেদিনীপুরের ওই সমস্ত অঞ্চল ময়ূরভঞ্জ অর্থাৎ উড়িষ্যার অন্তর্ভুক্ত ছিল। উড়িষ্যার রাজাদের সামন্ত হিসেবেই এই জমিদার বংশগুলো গড়ে উঠেছিল। তবে এঁরা স্বাধীন ছিলেন এবং নিজেদের রাজা বলে পরিচয় দিতেন। শুধুমাত্র যুদ্ধের সময় উড়িষ্যার রাজাদের সাহায্য করতেন এঁরা বিনিময়ে অর্থ সাহায্য পেতেন। এই সমস্ত স্বাধীন রাজারা নিরাপত্তার জন্য নিজেদের এলাকায় এক বা একাধিক গড় নির্মাণও করেছিলেন। এর মধ্যে নয়াগ্রাম রাজবংশের খেলার ও চন্দ্ররেখা গড়, জামিরাপাল রাজার জমিরাপাল গড়, রাইবনিয়া রাজাদের রাইবনিয়া গড় ছিল উল্লেখযোগ্য। যদিও পরে বৃটিশ রাজত্বে জামিরাপাল রাজাদের জামিরাপাল গড় নয়াগ্রাম রাজবংশের সিকমি তালুক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। অবিভক্ত মেদিনীপুরের মধ্যে যতগুলি গড় তখন গড়ে উঠেছিল চন্দ্ররেখা গড়টিই সবচেয়ে বড় ও সুরক্ষিত ছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই সুরক্ষিত গড়ও বহিঃশত্রুর আক্রমণে এককালে ধ্বংস হয়ে যায় এবং রাজপরিবার সুড়ঙ্গপথে কুলটিকরি গড়ে চলে আসে। তবে যেটুকু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় দোলগ্রামের সঙ্গে চন্দ্ররেখা গড়েরই যোগাযোগ বেশী ছিল।

পক্ষীরাজ

দোলগ্রাম গড়ের ভেতরে গ্রানাইট পাথরে খোদাই করা পক্ষীরাজ ঘোড়ার ওপর এক বীরযোদ্ধার মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। মূর্তিটি ধাবমান অশ্বের ওপর উপবিষ্ট। মূর্তির মুখমন্ডল সূঁচালো ধরণের, দাড়ি ও গোঁফ যুক্ত এবং মাথায় টুপি। মূর্তির দুপাশে দুটি ছোটো তলোয়ার। ডানদিকের তলোয়ারটি জানুর নীচে চাপা।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
পক্ষীরাজ ঘোড়ার ওপর এক বীরযোদ্ধার মূর্তি। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

যদিও বর্তমানে মূর্তিটির অনেকটা অংশই ভাঙা। এই রকম আরও একটি মূর্তি নয়াগ্রামের বাণী বিদ্যাপীঠের কাছে যুবপাঠাগারে সংরক্ষিত আছে। সম্ভবত এই দুটি মূর্তি দোলগ্রাম গড়ের সিংহদুয়ারে স্থাপিত ছিল। কেউ কেউ মনে করেন রাজা তাঁর বিজয় স্মারক রূপে পক্ষীরাজ মূর্তি নির্মাণ করেন। কারও মতে মূর্তিটি এক মুসলমান যোদ্ধার মূর্তি। যাই হোক এই পক্ষীরাজ মূর্তির নামেই বর্তমানে দোলগ্রাম 'দোলগ্রাম পক্ষীরাজ' গড় নামে পরিচিত হয়।



পদ্মপুকুর

এই গড়ের সামনে আছে একটি বেশ বড় চৌকো আকারের পদ্মপুকুর। এই পুকুরে ফুটে থাকতো লাল পদ্ম। এই পদ্মপুকুরটির বিশেষত্ব হল এর মাঝখানে একটি দেউল আছে যা রাজদেউল নামে পরিচিত। গ্রীষ্মকালে যখন জল কমে যায় রাজদেউলের চূড়াটি তখন জলের ওপর জেগে ওঠে। এই জলমগ্ন দেউলটি নানা কারুকাজ যুক্ত এবং ওড়িশি স্থাপত্য রীতিতে তৈরি।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
পদ্মপুকুরের মাঝখানে অবস্থিত দেউল। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

আসলে মেদিনীপুরের বেশিরভাগ অঞ্চল একসময় কলিঙ্গ অর্থাৎ উড়িষ্যার অন্তর্ভুক্ত ছিল তাই ওড়িশি শৈলির ছাপ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। স্থানীয় মানুষের মতে এটি পুকুর প্রতিষ্ঠার জন্য হরিপূজা বা জলহরি। এমন জলহরি মেদিনীপুরের বহু গ্রামে দেখতে পাওয়া যায়। তবে পদ্মপুকুরে ১৯৭৬ সালে পাইলট প্রোজেক্ট সংস্কারের সময় পুকুর থেকে টেরাকোটার এক বিশেষ ধরণের হাঁড়ি উঠে আসে যা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভোগের হাঁড়ির সঙ্গে এই হাঁড়ির মিল পাওয়া যায়। স্থানীয়দের অনুমান রাজার আমলেও দোলগ্রামে জগন্নাথ মন্দিরে ভোগ হত।

শিবমন্দির

গড়ের অদূরেই রয়েছে এক প্রাচীন শিবমন্দির। এই মন্দিরটি পুনরায় নির্মান করেন গ্রামবাসীরাই।এই বালকেশর শিবের পঞ্চরথ দেউলটি ১০০ বছর আগে উড়িষ্যার মিস্ত্রি দ্বারা নির্মিত। পঞ্চরথ বিন্যাস যদিও আছে তবে প্রচলিত ওড়িশি শৈলির দেউল নয় এটি। প্রতিবছর চৈত্রমাসে রাজাদের আমল থেকে চড়কমেলা হয়ে আসছে।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

চড়কের সময় রাজা চন্দ্রকেতু নির্মিত সহস্রলিঙ্গ শিব মন্দির থেকে অর্ঘ্য আনেন চড়ক সন্ন্যাসীরা, যা কিনা গৌড়কলস নামে পরিচিত।



তিনটি প্রাচীন মূর্তি

গ্রামে বিভিন্ন সময়ে উৎখনন করে বেশ কিছু মূর্তি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি মূর্তি সন্তান কোলে মা। মা সন্তানকে স্তন পান করাচ্ছেন। এটি গ্রামে বিষহরির থানে আছে। সম্ভবত মূর্তিটি হারিতিদেবীর।


দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ  | Dol Gram Heritage Village, Nayagram, Paschim-Medinipur
দোলগ্রাম- এক হেরিটেজ ভিলেজ। ছবিঃ অরিন্দম ভৌমিক (২০১১ সাল)।

আর একটি বীর স্তম্ভ এবং অন্যটি একটি জৈনমূর্তি। তিনটি মূর্তিই মাকড়া পাথরে তৈরি।

নাগা ঢিপি

গ্রামের আর একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নক্ষেত্র হলো নাগা ঢিপি। গ্রামের মধ্যে অবস্থিত একটি উঁচু ঢিপি এই নামেই পরিচিত। একসময় সম্ভবত জৈনদের দিগম্বর সম্প্রদায়ের মানুষেরা এখানে থাকতেন। আর আছে চৌকো আকারের বড় একটি গভীর ও বিশাল কুঁয়ো 'গড়কুঁয়ো'। গড়ের মধ্যেই আছে এবং এটি রাজ আমলের। দোলগ্রামের আর একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হল ভাগবতপুরাণ মন্দির। ওড়িয়া লিপিতে তালপাতার উপর লেখা দ্বাদশ ভাগবতপুরাণ পুঁথি মন্দিরে সংরক্ষিত আছে, নিয়মিত পুজোও হয়। দোলগ্রাম গড়ের কাছেই সাহু পরিবারে সংরক্ষিত এই প্রাচীন তালপাতার দ্বাদশ ভাগবতপুরাণ পুঁথি পশ্চিমবঙ্গে সচরাচর দেখা যায়না।



যা কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন দোলগ্রামেতে ছড়িয়ে আছে তা দেখে বোঝা যায় নিঃসন্দেহে এটি একটি হেরিটেজ গ্রাম। তবে ওই অঞ্চলের অতীত সম্পর্কে আরও বিশদে জানতে নিরন্তর গবেষণার প্রয়োজন। নাগা ঢিপি সহ গ্রামের অন্যান্য অঞ্চলে আরও উৎখনন প্রয়োজন। হয়তো উৎখনন করলে এখনও যা কিছু অনালোকিত বা অন্ধকারে আছে তা একসময় আলোতে আসবে। জানা যাবে ইতিহাসের অনেক অজানা কাহিনি। সেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি আমরা।


midnapore.in

(Published on 20.06.2021)
তথ্যঋণ:
১. মেদিনীপুরের ইতিহাস -যোগেশচন্দ্র বসু।
২. মেদিনীপুরের গ্রামের কথা (চার)।
৩. গুগল।
৪. দোলগ্রাম পক্ষীরাজ ট্রাস্ট।