চিরকুমারী বোনকে ছেড়ে কংসাবতী চলেছে দয়িত মিলনে ।
Kangsabati River Kasai Cossye Cossai
ডঃ বিভাসকান্তি মন্ডল।
স'স তীর্ত্বা কপিক্ষ্যং সৈন্যবর্ধদ্বিরদসেতুভিঃ
উৎকোলাদর্শিত পথঃ কলিঙ্গাভিমুখো যযৌ।
রঘুবংশতে মহাকবি কালিদাস রঘুর দিগ্বিজয় বর্ণনা করতে গিয়ে চতুর্থ সর্গের ৩৮ সংখ্যক শ্লোকে যে নদীটির নাম উল্লেখ করেছেন সেই কপিশা হলো আমাদের প্রিয় কাঁসাই বা কংসাবতী। এই কংসাবতী রূপসী ও রোমান্টিক। তার প্রেমিকের নাম সমুদ্র। পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সোজা চলে সে মিলনের অভিসারে। মাঝে দেখা হলো বোন কুমারীর সঙ্গে। বোনকে আলিঙ্গন করে মুকুটমণিপুরে এক সুদৃশ্য জলাধার রেখে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে সে সমুদ্রের পানে। চঞ্চলা রূপসীর উচ্ছলতায় আকর্ষিত হয়ে স্বয়ং কৃষ্ণ দামোদরের বেশে আলিঙ্গন করতে এলে এস্তাহরিণীর মতো ছুটে চলে যায় সমুদ্রের কাছে। দয়িত মিলনের এই অভিসারিকা অতীতের রূপবতী চঞ্চলা, বর্তমানে কিছু বয়স্কা আমাদের পালিকা কংসাবতী।
মেদিনীপুর শহরে কংসাবতী। ছবি: অরিন্দম ভৌমিক।
পুরুলিয়ার পাথর পলাশে মুগ্ধ হয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েছেন যারা তার মুরগুমা জলাধার দেখেছেন। ঝালদা ব্লকের ৬০০ মিটার উচ্চতার ঝাবরণ থেকে নেমে এলো এক ছিপছিপে কিশোরী নদী। ধীরে ধীরে বর্ষার জলে হয়ে ওঠে যুবতী। দিনে দিনে বাড়ে তার গতি। শরীরে খেলা করে ঝর্ণার মতি। ঝর্ণা এসে মিলে তার দেহে। সাহারঝরা অযোধ্যা থেকে নেমে এসে মিলে যায় বেগুনকোদরে। বাড়ে রূপ এই ঝর্ণার রূপটানে। যৌবন বেড়ে চলে। তেলডিহি গ্রামের কাছে বন্ধু পায় সে। বান্দু বা বন্ধু নামের ছোট নদীটি একাকার হয় কংসাবতী দেহে। ছলনার আঁকা বাঁকা চলা ও ছলা কলায় চান্ডিল পার হয়ে পূর্ব দিকে চলতে থাকে।
চলতে চলতে ভেদুয়া গ্রাম পুরুলিয়ার প্রান্তে। পেরোলেই বাঁকুড়া। সেখানেই তো তার কুমারী বোনের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। হলোও। দুই জেলার সীমান্তে মুকুটমণিপুরে এই মিলনকে অন্নরূপে দিতে ১৯৫৬ তে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ৩৮ মিটার উচ্চতার ১০০৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ করে দেওয়া হয়। দুই বোনের মিলনের স্মৃতি ও স্মরণবেদী। শুধু কৃষির জন্য কৃষক কে নয় , প্রকৃতি পিপাসু মানুষের জন্য দুই বোন মেলে দিয়েছে ৮৬ বর্গকিলোমিটারের প্রসস্থ দেহ। এখানে কুমারী উৎসবে শিল্পের রসে বুদ্ হয় মান্য হন। কবি সৈকত রক্ষিত তার রক্ষক।
মেদিনীপুর শহরে কংসাবতী। ছবি: অরিন্দম ভৌমিক।
কিন্তু কংসাবতী যে বাগদত্তা, সমুদ্রের বাগদত্তা। চিরকুমারী বোনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রায়পুরের পাশ দিয়ে ঝাড়গ্রামে প্রবেশ করে। এখানে দেখা হয় ভৈরববাঁকি নামের নদীর সঙ্গে। স্বগোত্র বলে মিলে যায় তারা পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকে গেলো বিনপুর ছেড়ে। শহরকে দিলো শীতল স্পর্শ। তারপর দীর্ঘ প্রবাহ পরিশ্রমে একটু হাত পা ছাড়াতে ইচ্ছে করলো।
মেদিনীপুর শহরে কংসাবতী। ছবি: অরিন্দম ভৌমিক।
মুরগুমা জলাধার।
কেশপুরে এসে আরাম করার ভঙ্গিতে মিলে দিলো দু বাহু। পালারপাই নামের বামবাহু এগিয়ে গেলো রূপনারায়ণ নদের অভিমুখে। আর মূল সারির ঢুকে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিকে উর্বর ও সবুজ করতে করতে এগিয়ে গেলো পাঁশকুড়া ও ময়নার সীমানা হয়ে। আবারোও এক নদীর সঙ্গে দেখা। ট্যাংরার কাছে কেলেঘাই এলো। এদিকে মিলনের সময় পেরিয়ে গেলো। আর কোনো কথা না বলে চললো দয়িত সমুদ্রের কাছে।
midnapore.in
(Published on 27.02.2022)