লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
The Story of the Rise of the Nandi Zamindaris of Palashi (Debra, Paschim Medinipur)
नमक से लक्ष्मी तक - पलाशी के नंदी ज़मींदारियों के उत्थान की कहानी
রূপেশ কুমার সামন্ত।
Home » Medinikatha Journal » Rupesh Samanta » The Story of the Rise of the Nandi Zamindaris of Palashi
ভূমিকা
কাশিজোড়ার ধান, ময়না রাজার মান।
কুচোল ঘোড়ইয়ের পাকা, দে-নন্দীর টাকা।
পলাশীর নন্দী বাড়ির অঢেল ঐশ্বর্যকে ইঙ্গিত করেই প্রবচনের আপ্তবাক্যের ‘নন্দীর টাকা’ অংশটি প্রতিষ্ঠিত। উনবিংশ শতকের গোড়ায় উদীয়মান ব্যবসায়িক পরিবার নন্দীরা লবন ব্যবসার উপর ভিত্তিক করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিল। তখন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন। শাসকের কৃপা ও অর্থ-বলের মেলবন্ধনে কিভাবে অর্থ নামক ‘চঞ্চলা লক্ষ্মী’কে বশিভূত করে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’কে উপচে ফেলতে হয়, তা নন্দীরা ভাল জানত। তাঁরা লবন ব্যবসার অর্থকে বিনিয়োগ করে জমিদারী ক্রয় করলেন।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
নন্দী পরিবারের সুযোগ্য সন্তান শ্রীনাথ নন্দী ও দীনবন্ধু নন্দী ডেবরার পলাশীতে গড়ে তুললেন জমিদারী সাম্রাজ্য। ফুলেফেঁপে উঠল জমিদারী ‘রাজকোষ’। তাঁরা গড়ে তুললেন বিরাট জমিদারী সাম্রাজ্য, বিলাসবহুল বাড়ি, রাজকীয় মন্দির, অনিন্দ্যসুন্দর রাসমঞ্চ। তৎকালীন দারিদ্র-পীড়িত সমাজের মাঝে নন্দী বাড়ির রাজকীয় বৈভব মানুষের মননে রূপকথার গল্প হিসাবে স্থান করে নেয়। আর প্রবচন হয়ে ঘুরে বেড়ায় মানুষের মুখে মুখে।
নন্দীদের জমিদারী প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৭৯৩ সালে ভারতের তৎকালীন গভর্ণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশ ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ প্রবর্তন করেন। এর ফলে বাংলার রাজস্ব বিভাগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়। নতুন এই বন্দোবস্ত অনুযায়ী, জমিদারদের সঙ্গে বার্ষিক রাজস্ব নির্ধারিত হারে স্থায়ীভাবে চুক্তি সম্পাদিত হয়। সেই রাজস্বের পরিমান পূর্ববর্তী দশসালা বন্দোবস্তের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ফলে জমিদারদের একটি অংশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করের বোঝা বহন করে জমিদারী ধরে রাখার কাজটি কঠিন ছিল। উপরন্তু, খরা, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য কর পরিশোধে কোন ছাড় ছিল না।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
ফলস্বরূপ, তাৎক্ষণিকভাবে অনেক জমিদারের কর বকেয়া পড়ে যায়। বকেয়া জমিদারির জমি নিলামে তোলার কোম্পানির নীতির ফলে জমির বাজার তৈরি হয়। বর্ধিত করের বোঝা মেনে নিয়ে কিছু প্রাচীন জমিদার তাঁদের জমিদারি রক্ষা করতে সক্ষম হন। কিন্তু অনেকে কর দিতে অসম্মত হওয়ায় বা অপারগ থাকায় তাঁদের জমিদারি বাজেয়াপ্ত হয়। ঠিক এই সময়েই গড়ে ওঠে এক নতুন শ্রেণির জমিদার—যাঁরা বিভিন্ন পেশার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সঞ্চয় করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে জমিদারি বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন। কেউ কেউ আবার জমিদার বা তালুকদারদের কাছ থেকে জমিদারী বন্দোবস্ত নিয়ে অথবা সরাসরি জমিদারি কিনে জমিদার হয়ে ওঠেন। এই নতুন জমিদার শ্রেণির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মেদিনীপুর শহরের জন্মেজয় মল্লিক, মালিঘাটির ছকুরাম চৌধুরী এবং পলাশীর শ্রীনাথ নন্দী ও দিনবন্ধু নন্দী। এই নতুন জমিদার শ্রেণি বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছিলেন।
জমিদারী প্রতিষ্ঠা
নন্দী পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর গ্রামে। সেই সময় রেশম শিল্পে উন্নতির কারণে আনন্দপুর মেদিনীপুর জেলার মধ্যে অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রেশম শিল্পের সেই রমরমা বাজারেও দূররদর্শী নন্দী পরিবার রেশম ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়নি। তাঁরা করতেন মানুষের অতি প্রয়োজনীয় ও নিত্য-ব্যবহার্য লবনের ব্যবসা। ১৮শ শতকের মাঝামাঝি থেকে ইংল্যান্ডে শুরু হয় শিল্প বিপ্লব, যা পরে পুরো ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিপ্লবের ফলে ইউরোপীয়দের প্রচুর কাঁচামাল ও নতুন বাজারের প্রয়োজন দেখা দেয়। তারা উপনিবেশ থেকে সেই কাঁচামাল সংগ্রহ করা এবং সেখানে নিজেদের তৈরি পণ্য রপ্তানি করার নীতি গ্রহন করে। সেই সময় কোম্পানি ভারতীয় লবণ উৎপাদন নিষিদ্ধ করে বিদেশ থেকে কল-কারখানায় প্রস্তুত লবণ আমদানি করার নীতি নেয়।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবণ বোঝাই জাহাজ এসে ভিড়ত কলকাতার বন্দরে। নীলামে ডাকা সেই লবণ সংগ্রহ করে, বস্তাবন্দী করে বাজারজাত করাই ছিল নন্দী পরিবারের দায়িত্ব। তাঁদের কলকাতার ব্যবসা কেন্দ্র ছিল ২ নং অহিরীটোলা স্ট্রিট। লবণ পরিবহনে সুবিধা পাওয়ার জন্য তাঁরা আনন্দপুর ছেড়ে প্রথমে চলে আসেন ডেবরার ডাররা গ্রামে। তারপর সেখান থেকে চলে আসেন কাঁটাপুকুরে। এই স্থানান্তরের মূল কারণ ছিল কলকাতা থেকে মেদিনীপুর অঞ্চলে লবণ পরিবহনের সুবিধা, যা তখন জলপথেই সবচেয়ে সহজ ছিল। পলাশী গ্রামের পাশ দিয়ে চলে গেছে মেদিনীপুর খাল। সেই সময়ের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম প্রধান পথ ছিল এই খাল। লবণ ব্যবসা থেকে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছিলেন নন্দীরা। লবন ব্যবসার সূত্রে ব্রিটিশদের সাথে যোগাযোগের সুবাদে শ্রীনাথ নন্দী ও দীনবন্ধু নন্দী অর্থ বিনিয়োগ করে তাঁদের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পলাশী গ্রামে গড়ে তুললেন স্থায়ী জমিদারী বসতি। পলাশী গ্রামটি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার অন্তর্গত। এই পলাশী গ্রামে আজও রয়েছে সেই জমিদারী বাড়ি, রাজকীয় লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির, রাসমঞ্চ ও ধ্বংসপ্রায় বিশাল নাটমন্দির।
জমিদার পরিবার
পলাশীতে (ডেবরা) জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীনাথ নন্দী ও দিনবন্ধু নন্দী। জমিদার পরিবারের বংশলতিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দুই পুরুষ আগে জমিদার পরিবারের সর্বোচ্চ পুরুষ ছিলেন গোবিন্দ চরণ নন্দী। তাঁর পুত্র ছিলেন যুগল বিহারী নন্দী। যুগল বিহারীর দুই পুত্র ছিলেন- পুরুষোত্তম ও গোলক মোহন নন্দী। পুরুষোত্তমের একমাত্র পুত্র ছিলেন শ্রীনাথ। অন্যদিকে গোলক মোহনের একমাত্র পুত্র ছিলেন দীনবন্ধু। এই শ্রীনাথ নন্দী ও দীনবন্ধু নন্দীর হাত ধরেই জমিদারী প্রতিষ্ঠা। শ্রীনাথ নন্দীর পুত্র ছিলেন নবদ্বীপ নন্দী। নবদ্বীপের দুই পুত্র ছিলেন- কিশোরী রঞ্জন ও শান্তভূষণ। কিশোরী রঞ্জন ছিলেন নিঃসন্তান। শান্তভূষণের ছিল পাঁচ পুত্র- ব্রজদুলাল, রামদুলাল, সুহৃদ কুমার, প্রণব কুমার ও প্রাণ কুমার। ব্রজদুলালের পুত্র ছিলেন দেবাশীষ নন্দী। অপর দিকে দীনবন্ধু নন্দীর দুই পুত্র ছিলেন অধরচাঁদ এবং রাইচরণ।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
এদের মধ্যে রাইচরণ ছিলেন নিঃসন্তান। অধরচাঁদের চার পত্নীর মধ্যে প্রথমা পত্নীর সন্তান ছিলেন নীরদ বরণ এবং চতুর্থ পত্নীর সন্তান ছিলেন ননীগোপাল। বাকি দুই পত্নীর কোন সন্তান ছিল না। নীরদ বরণের দুই পুত্র ছিলেন অমলেন্দু ও বিমলেন্দু। অমলেন্দুর তিন পুত্র ছিলেন প্রদীপ, সপ্তদীপ ও সন্দীপ। বিমলেন্দুর পুত্র ছিলেন কৃষ্ণেন্দু। অপরদিকে, ননীগোপালের পুত্র ছিলেন শুভেন্দু এবং তাঁর পুত্র ছিলেন সংলাপ।
মন্দির স্থাপন
জমিদারী বসত বাড়ির পূর্বদিকে নির্মিত হয়েছে লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির। রাজকীয় মন্দিরটি জমিদারী বৈভবের বহিঃপ্রকাশ। পূর্বমূখী মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে দালান রীতিতে। উঁচু ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত আয়তকার মন্দিরটি খিলান রীতিতে নির্মিত তিনটি প্রবেশ দ্বার যুক্ত। প্রবেশ দ্বারের পরেই রয়েছে প্রসারিত অলিন্দ। অলিন্দের পেছনে রয়েছে তিনটি কক্ষ।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
মাঝের গর্ভগৃহে রয়েছে দেবতার অধিষ্ঠান। মন্দিরের সামনের দেওয়ালে অনিন্দ্যসুন্দর নানান টেরাকোটা ফলক এখনও বিদ্যমান। টেরাকোটা ফলকে দৃশ্যমান দেবী দশভূজা, বংশীবাদন রত শ্রীকৃষ্ণ, দশাবতার, বাজনা বাদক ও নানান সামাজিক দৃশ্য। মন্দিরের শীর্ষে রয়েছে গরুড় মূর্তি।
নাটমন্দির
মন্দিরের সামনে পূর্বদিকে ছিল দোতলা-সম বিরাট নাটমন্দির। বিশাল বিশাল গোলাকৃতির থামের মাথায় সমতল ছাদ দিয়ে নাটমন্দিরটি তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। সেই নাটমন্দিরটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত গোলাকার থামের শেষ চিহ্ন গুলি এখনো দেখা যায়। চারিদিকে বিশাল উঁচু প্রাচীর এখনও বিদ্যমান।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
নাটমন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে একটি অব্যবহৃত প্রসস্থ সুড়ঙ্গ রয়েছে। বাহ্যিক ভাবে এখনও দৃশ্যমান সেই সুড়ঙ্গটি দোতলা থেকে মাটির নিচে নেমে এসেছে। সুড়ঙ্গটি নিয়ে নানান রহস্য-গল্প লোকমুখে আজও প্রচারিত।
বিগ্রহ ও পুজার্চনা
জমিদার বাড়ির লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দিরে লক্ষ্মী-নারায়ণের কোন বিগ্রহ নাই। শালগ্রাম শিলাই তাঁর বিগ্রহ হিসাবে পুজিত হন। পুজার্চনার জন্য প্রায় সমূহ জমিদারী সম্পত্তি দেবতার নামে উৎসর্গ করে দিয়েছিল জমিদার পরিবার। জমিদারীর বিপুল অর্থে একটি রাজকীয় মন্দির নির্মান করে ছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন পার্বন ও নিত্যপুজায় বিপুল অর্থ ব্যয় করত জমিদার পরিবার। ফলে প্রতিটি পার্বন হত অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। স্বাধীনতার পরে দেবত্ত্বর সম্পত্তি খাস হয়ে যাওয়ায় ভাঁড়ারে টান পড়ে।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
বর্তমানে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে না হলেও দিনে তিনবার নিত্যপুজা হয় এখানে। সকালে ফলমুলের সাথে মিষ্টান্নের বাল্যভোগ দেওয়া হয়। দুপুরে লুচি ও তিনটি ভাজা সহ ভোগ দেওয়া হয়। রাতে লুচি ও ক্ষীর ভোগ নিবেদন করা হয়। বিভিন্ন বার্ষিক পার্বনে যথা সম্ভব জাঁকজমক বজায় রাখা হয়। এখানে শ্রাবন মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী থেকে তিন দিনের ঝুলনযাত্রা হয়। ভাদ্রমাসে পালিত হয় জন্মাষ্টমী ও রাধাষ্টমী। কার্তিক মাসের পূর্ণিমায় এখানে রাস উৎসব হয়। এজন্য সুদৃশ্য ও রাজকীয় এক রাসমঞ্চও রয়েছে। এই উৎসব বিশ দিন যাবৎ চলে। রাস উৎসবের পূর্বে পালিত হয় গোবর্ধন যাত্রা। পৌষ সংক্রান্তিতে পালিত হয় মকর। এছাড়াও ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় পালিত হয় দোল উৎসব।
লবন থেকে লক্ষ্মী- পলাশীর নন্দীদের জমিদারী উত্থানের গল্প
জমিদারী উচ্ছেদ
জমিদারী উচ্ছেদ ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে কৃষকদের জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং জমিদারদের শোষণমূলক প্রথার অবসান ঘটে। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার মাধ্যমে যে জমিদার শ্রেণির উত্থান ঘটে, তা ভারতে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে চিরস্থায়ী বিলুপ্তির পথে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫৩ সালের 'Estates Acquisition Act'-এর মাধ্যমে জমিদারদের অতিরিক্ত জমি সরকার অধিগ্রহণ করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে এবং ভূমির মালিকানা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এইভাবে উনবিংশ শতকের গোড়ায় পলাশীর শ্রীনাথ ও দীনবন্ধু নন্দীর হাত ধরে গড়ে ওঠা পুরুষানুক্রমের জমিদারী স্বাধীন ভারতে উচ্ছেদ হয়ে যায়। জানা যায়, জমিদারী উচ্ছেদের ফলে বিপুল পরিমান দেবোত্তর সম্পত্তি খাস হয়ে যাওয়ায় সরকার থেকে মাত্র ১১,১৪৪ টাকা বার্ষিক ভাতা ধার্য্য করা হয়। এই অর্থে আর জমিদারী বৈভব বজায় রাখা সম্ভবপর ছিল না। ধীরে ধীরে রাজকীয়তার পলেস্তারা খসতে থাকে। ভেঙে পড়ে বিশাল নাটমন্দির। একসময় সেখানে বসত জমিদারী বিচার সভা। নাট্যমঞ্চে পরিবেশিত হত নাটক, নৃত্য, যাত্রা। তবে আজও প্রবচনের ‘নন্দীর টাকা’র জোরকে সত্য প্রমান করে দাঁড়িয়ে আছে জমিদারী বাড়ি, রাজকীয় মন্দির ও রাসমঞ্চ।
M E D I N I K A T H A J O U R N A L
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 11.05.2025)
তথ্যসূত্র -
১। লক্ষ্মীজনার্দন মন্দির, পলাশী (ডেবরা), চিন্ময় দাশ, সব্যসাচী পত্রিকা, ২১.০৩.১৬
২। নুনের ব্যবসায়ী থেকে জমিদারীঃ পলাশী, নারায়ণ রুইদাস
৩। পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রূপেশ কুমার সামন্ত
৪। ক্ষেত্রসমীক্ষা- ১৪.০৪.২৫
নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।