মহেন্দ্র সিং ধোনি, খড়গপুর ও একটি সিনেমা
Mahendra Singh Dhoni, Kharagpur & Sushant Singh Rajput
অর্ণব মিত্র।
Home » Medinikatha Journal » Arnab Mitra » M S Dhoni & Kharagpur
২০২০ সালের ১৫ই জুন সকালে খবরের কাগজে হিন্দি ছবির জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত-এর মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত হয়ে যায় সারা দেশ । সে বছর মার্চ মাসে করোনা অতিমারি প্রথম বার আছড়ে পড়েছিল সারা বিশ্ব সহ ভারতেও । ততদিনে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে । শুরু হয়েছে লকডাউন । তবু এসবের মধ্যেও ৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেতার অকাল মৃত্যুর জন্য বিস্ময় ভরা সহানুভূতিময় এক শোকের আবহ তৈরি হয়েছিল সারা দেশ জুড়ে। এই শোকের আবহে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের একটি রেলশহরের অধিবাসীরাও ।এই রেলশহরটির নাম খড়গপুর।
m.s.dhoni – the untold story ছবিতে দেখা যায় মহেন্দ্র সিং ধোনি রাঁচি থেকে রেলশহর খড়গপুরে এসে টিকিট-পরীক্ষক হিসেবে যোগ দেন ।
২০১৬ সালে বলিউডি-ছবির পরিচালক নীরজ পাণ্ডের তৈরি m.s.dhoni – the untold story ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিটি জনপ্রিয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনীমূলক। ছবিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভুমিকায় অভিনয় করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। আর অনেকেই হয়ত জানেননা মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারত তথা বিশ্বের এক সফল ক্রিকেট তারকা হওয়ার আগে ছিলেন খড়গপুর স্টেশনে চাকুরিরত একজন টিকিট-পরীক্ষক। তিনি এই স্টেশনে চাকরি করেছেন ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল অবধি । আর এই রেলশহরেই হয়েছিল ‘m.s.dhoni – the untold story’ ছবিটির বেশ কিছু অংশের শুটিং।
১
মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্ম হয় ১৯৮১ সালে ঝাড়খণ্ড জেলার রাঁচি শহরে একটি হিন্দু রাজপুত পরিবারে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনা সেখানেই। এখানে স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় উইকেট-রক্ষক হিসেবে তাঁর দক্ষতা লক্ষ্য করে স্কুলের ক্রীড়া –শিক্ষক তাঁকে ব্যাটিং করার জন্য উৎসাহিত করেন। এরপর রাঁচির ডি,এ,ভি স্কুল থেকে উচ্চ- মাধ্যমিক পাস করার পর ২০০১ সালে তিনি রেলের চাকরি নিয়ে খড়গপুরে আসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র কুড়ি বছর ।তার আগে তিনি বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জন্য রঞ্জি খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ২০০৪ সালে রেলের চাকরি ছেড়ে তিনি খড়গপুর থেকে চিরতরে চলে যান ও পুরোপুরি ক্রিকেট খেলায় আত্মনিয়োগ করেন। আর সেই বছরই ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যচ খেলার সুযোগ পান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এরপরে তিনি ধীরে ধীরে খেলায় আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন ও ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৭ ও ২০১১ সালে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় দল ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয়ী হয়েছিল। ২০১৩ সালে icc champions tropy তেও তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় দল জয়ী হয়। ২০১০ ও ২০১৬ তে তাঁর নেতৃত্বে এশিয়া কাপও জয় করে ভারত ।
খড়গপুর-এ সিনেমার দৃশ্যায়ন
m.s.dhoni – the untold story ছবিতে দেখা যায় মহেন্দ্র সিং ধোনি রাঁচি থেকে রেলশহর খড়গপুরে এসে টিকিট-পরীক্ষক হিসেবে যোগ দেন ।খড়গপুর স্টেশনে প্রথম দিন চাকরিতে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে তাঁকে পাঠানো হয় রেলযাত্রীদের টিকিট -পরীক্ষা করতে। এই কাজে তাঁর কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি ক্রিকেট-দুনিয়া থেকে এসেছেন। তাঁর বয়সও কম। পূর্বে বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের হয়ে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতার জন্য রাজ্য কোটায় তিনি খড়গপুরে এই চাকরিটি পান বলে জানা যায়।দিনের বেলা চাকরি করার সময়টুকু ছাড়া বিকেলবেলা ও ছুটির দিন স্টেশনের কাছে শেরশা স্টেডিয়াম-এ ক্রিকেট অনুশীলন করতেন। এ ব্যপারে খড়গপুরে তাঁকে উৎসাহ দেন সেই সময়ের ডি,আর,এম প্রয়াত অনিমেষ গাঙ্গুলি। তিনি ছিলেন একজন ক্রিকেট-উৎসাহী ব্যক্তি ও তিনি নিজেও শেরশা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট অনুশীলন করতেন ।
খড়্গপুরে টিকিট কালেক্টর মহেন্দ্র সিং ধোনি।
সিনেমায় দেখা যায় কাজের নতুন পরিবেশে অন্যভস্ত ও চাকরির প্রথম দিনের পরিশ্রমের পর ক্লান্ত ধোনি ও তাঁর আর এক সহকর্মী সত্যপ্রকাশ ফিরে আসেন একটি ছোট্ট একতলা কোয়ার্টারে।সত্যপ্রকাশ ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ও আগে থেকেই খড়গপুরে চাকরি করতেন। রঞ্জি খেলে ধোনির সঙ্গে চাকরি করতে রেলশহরে এসেছিলেন দীপক সিংহ।আর জয়েশ ও রবিন প্রথম থেকেই নিযুক্ত ছিলেন খড়গপুরে, টিকিট-পরীক্ষকের চাকরিতে। এখানে দুটি ছোট ঘরে এই চারজন টিকিট-পরীক্ষকের সাথে ধোনির থাকার ব্যবস্থা হয়। ঘরদুটি বেশ ছোট। এই কোয়ার্টারটি খড়গপুরে ডি,আর,এম বাংলোর পিছনদিকে একটি আউট-হাউস। খড়গপুরে প্রথম তিন বছর সহকর্মী সত্যপ্রকাশের কোয়ার্টারেই ছিলেন ধোনি। ডি,আর,এম অনিমেষ গাঙ্গুলি ক্রিকেট ভালোবাসতেন বলে এখানে, নিজের বাংলোর মধ্যেই কংক্রিটের পিচ তৈরি করে দিয়েছিলেন তরুণ খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য।তবে এই পিচ বা এই পিচে খেলার কোনও দৃশ্য সিনেমাতে দেখানো হয়নি।
সদ্য কিশোর বয়স পেরনো একজন টিকিট-পরীক্ষক। নিজের বাড়ি থেকে দূরে এসে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করছেন এই রেলশহরে। কাজের ফাঁকে অনুশীলন করেন ও স্বপ্ন দেখেন বাইশ গজকে বশ করার। চাকরিটা কতদিন করবেন? ভাবতে ভাবতে কয়েকবছর পেরিয়ে যায়। সামনে ক্রিকেট কেরিয়ারের হাতছানি।শেষে একদিন এই রেলশহর ছেড়ে চলে যান তিনি। সিনেমায় দেখানো হয় এক বৃষ্টির দিনে খড়গপুর স্টেশনের এক প্লাটফর্মে বসে আছেন বিষণ্ণ মহেন্দ্র সিং ধোনি। একটি ট্রেন বৃষ্টির মধ্যে প্লাটফর্মে ঢুকছে। সেই ট্রেনটিই সেদিন আগামীর রাস্তা দেখিয়েছিল খড়গপুরের চাকরি ছেড়ে যাওয়া ধোনিকে। সিনেমা পরিচালক এভাবে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন ।কিন্তু বাস্তবে হয়েছিল অন্যভাবে। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় ক্রিকেট দলের ‘এ’ তালিকায় স্থান হয় তাঁর। সে মাসেই তিনি গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতরে গিয়ে টিকিট – পরীক্ষকের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসেন।
২
২০১৫ সালের জুন মাস।খড়গপুর স্টেশনে টিকিট চেকারের সাজে দেখা যায় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত-কে। স্টেশন থেকে শেরশা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস। পুলিশ সুপারের বাংলো পেরিয়ে সাউথ ইন্সিটিউট ভবনের সামনে থমাসের দোকানে চা খেতে যেতেন ধোনি। সুশান্তও সেখানে চা খেতে যেতেন। ধোনির মতই, বড় বড় চুল। প্রায় একইরকম দেখতে। চা-ওয়ালা থমাসও অবাক হয়ে যেতেন। পরে ভুল ভাঙত। বুঝতেন, ধোনির বায়োপিকের শ্যুটিং হচ্ছে।দু’মাস খড়গপুর আই,আই,টির গেস্ট হাউসে ছিলেন সুশান্ত। ধোনির প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন।এইভাবে ক্রিকেটারের আদবকায়দা নিপুণভাবে রপ্ত করেছিলেন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।
খড়্গপুরের বন্ধুর সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনি।
বন্ধু সত্যপ্রকাশের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ওঁর কোয়ার্টার ছেড়ে কয়েক মাস শেরশা স্টেডিয়ামের ভিতরে দুটি ঘরে ও কয়েক মাস খড়গপুর স্টেশনের কাছে গোলখুলির একটি রেল কোয়ার্টারে ছিলেন ধোনি। গোলখুলির দশ-বাই বারো ফুটের এক চিলতে ঘরে তিনি থাকতেন সহকর্মী দীপক ও রবিন ও তামিল বন্ধু সোমা রাও-এর সাথে। তবে সিনেমাতে তা দেখানো হয়নি।
একদিন সাপের উপদ্রবে সত্যপ্রকাশের কোয়ার্টার থেকে মাঝরাতে ধোনি ও জয়েশ ঘুমচোখে পালিয়ে এসে সারারাত কাটিয়েছিলেন খড়গপুর স্টেশনের যাত্রী প্রতিক্ষালয়ে।শেরশা স্টেডিয়ামে থাকার সময় ধোনি, দীপক ও জয়েশ কাকতাড়ুয়ার মতো সেজে রাতে স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে সাইকেল যাত্রীদের ভয় দেখাতেন। মনে হয় এই নাটকীয় ও মজার অংশগুলো চিত্রনাট্যে থাকলে সিনেমাটি আরও আকর্ষণীয় হতো।
m.s.dhoni – the untold story চলচিত্রে, খড়্গপুরের SERSA Stadium-এর দৃশ্য।
টিকিট-পরীক্ষকের চাকরি করার সাথে সাথে খড়গপুরের শেরশা স্টেডিয়াম, গোলখুলির দুর্গা স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ, খ্রীষ্টান কবরখানার পিছনের মাঠ, বি,এন,আর গ্রাউন্ড ইত্যাদি জায়গাগুলিতে ধোনি টেনিস বলের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলতেন স্থানীয় দলের হয়ে। সিনেমায় দেখা যায় ডি,আর,এম অনিমেষ গাঙ্গুলি-র কাছ থেকে ধোনি অনুমতি চাইছেন খড়গপুরে টেনিস বলের মাধ্যমে ক্রিকেট খেলবার জন্য। জানা যায় সেই সময় খড়গপুরের উত্তরে গোলখুলির ‘দুর্গা স্পোর্টিং’-ক্লাব ধোনিকে টেনিস ক্রিকেটে আনায় কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল। তবে সিনেমায় শেরশা স্টেডিয়ামে ধোনির ক্রিকেট অনুশীলন দেখানো হলেও খড়গপুরের স্থানীয় দলের হয়ে টেনিস-ক্রিকেট খেলার অংশটি কাহিনির মধ্যে রাখা হয়নি ও স্থানীয় ক্লাবের হয়ে টেনিস ক্রিকেট খেলার কোনো দৃশ্য দেখানো হয়নি।
পরিচালক নীরজ পাণ্ডে জানতেন খড়গপুরের মাটিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির দিনগুলি কিভাবে কেটেছে। টানা ন’মাস সুশান্ত সিং রাজপুতও সেই পরিশ্রমে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন।অনুশীলন করতেন দিনরাত। সিনেমার দৃশ্য দেখে অনেকের মতামত, কোনটা আসল ধোনি চেনা যেত না। এই সিনেমাটি বহন করছে ধোনির খড়গপুরের কাহিনি।
খড়্গপুরের বন্ধুদের সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনি।
খড়গপুর স্টেশনে একটি ট্রেন এসে দাঁড়িয়েছে। বসে আছেন এক টিকিট-পরীক্ষক। উঠবেন কি উঠবেন না ভাবছেন। না, ‘মাহি’ বা মহেন্দ্র সিং ধোনি ট্রেনটি ছাড়েননি সেদিন । ধোনি সেই ফিরে যাওয়ার ট্রেনটি মিস করেননি।এই দৃশ্যটির শুটিং হয়েছিল খড়গপুর স্টেশনের আট-নম্বর প্লাটফর্মে। খড়গপুর ছেড়ে চলে গেছিলেন ২০০৪ সালে । তার ১১ বছর পরে ২০১৫-র জুন মাসে খড়গপুর-এ সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত ধোনির জীবনভিত্তিক ছবিটির দৃশ্যায়ন হয়। একবছর পরে ২০১৬ তে ছবিটি মুক্তি পায়। খড়গপুরবাসী সিনেমার পর্দায় দেখেন তাঁদের প্রিয় শহরের প্রিয় মানুষটিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের চেহারায়।
৩
সালটা ২০০৪। এই রেলশহর থেকেই জাতীয় ক্রিকেট দলের যাত্রা শুরু করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০০১ সালে রেলের টিকিট পরীক্ষকের চাকরি করতে এসেও ক্রিকেটে বিভোর মাহিকে দেখে এই মফস্বল শহরের অনেকেই বুঝেছিলেন— ‘এই ছেলে ক্রিকেট দুনিয়ার লম্বা রেসের ঘোড়া’! তার পরের ইতিহাসটা অজানা নয়।তবে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনোর পর মাহি ২০১৪ সালের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ও কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও অবসর নিয়েছেন তিনি।
খড়্গপুর প্লাটফর্মে চিন্তামগ্ন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
তাঁর কর্মজীবনের শুরু এই বাংলায়। তাই এ রাজ্যের সঙ্গে বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির যোগাযোগটা বেশ অনেক বছরের। খড়্গপুর রেল স্টেশনের টিকিট পরীক্ষক হিসেবে কাজের দিনগুলিতে বাঙালি যাত্রীদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিত্য ওঠাবসা। প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মহেন্দ্র সিং ধোনি ধীরে ধীরে বাংলা ভাষাটা বুঝতে থাকেন ও কয়েক বছর এই রেলশহরে থেকে বাংলার সংস্কৃতিকে নিজের করে নেন তিনি । ২০০৪ সালের পর ধোনি আর খড়্গপুরে না এলেও, তাঁর সঙ্গে কাটানো দিনগুলি, m.s.dhoni – the untold story ছবিটির শুটিং-এর দিনগুলি ও ধোনির ভূমিকায় অকালপ্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতকে কোনদিন ভুলতে পারবেনা এই রেলশহর।
Medinikatha Journal
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 09.07.2023)
তথ্যসূত্র -
খড়গপুরের টিকিট কালেক্টার থেকে ভারতীয় দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি – অলোক দাশগুপ্ত,খড়গপুরের কথা।
The Telegraph
আনন্দবাজার পত্রিকা