সন্তু জানা।
বৈচিত্র্যময় মেদিনীপুর জেলার শাল মহুয়ার জঙ্গলময় প্রাচীন মৃত্তিকার কাঠিন্য এবং নীলাধার সাগর ও নদীবিধৌত পলি মৃত্তিকার নম্রতা মিলেমিশে একাকার হয়ে সৃষ্টি করেছে এক ঐতিহ্যর পথ, যার বিস্তার বৌদ্ধ তাম্রলিপ্ত থেকে শুরু করে প্রাচীন দণ্ডভুক্তি ( দাঁতন) পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অতঃপর কলিঙ্গ (ওড়িশা ) অভিমুখে যাত্রা । মেদিনীপুরের মধ্য দিয়ে উৎকল – প্রদেশ প্রবেশের একটি প্রাচীন পথ বিরাজমান ছিল । ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের এক চৈত্রমাসের প্রাতঃকালে নবদ্বীপের শ্রী চৈতন্যদেব এই ‘অহল্যাবাঈপথ’ ধরেই নীলাচলে যাত্রা করেন জগন্নাথ দর্শনার্থে । জগন্নাথ মিশ্র লিখেছিলেন -
শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য দেবনদ পার হৈঞা
উত্তরিলা তাম্রলিপ্তে সেয়াখাল দিঞা ।
অন্যত্র দাঁতন , জলেশ্বর পার হঞা
উত্তরিলা আমর্দাতে......
দীর্ঘ কয়েক ‘শ’ বছর ধরে কালে কালে এই অঞ্চলে জৈন , বৌদ্ধ ও হিন্দুদের প্রভাবে শিল্প-স্থাপত্যের অভিনব নির্মাণ হয়েছে। যুগ যুগ ধরে প্রাচীনত্বের মশাল প্রজ্বলন করে আলোকিত হয়েছে দণ্ডভুক্তির তথা দাঁতনের ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট উপাদান হল , ২০০৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে ড. অশোক দত্তের তত্ত্বাবধানে সংগঠিত খননকার্যে প্রাপ্ত মোগলমারির বৌদ্ধবিহার । মোগলমারির গর্ভে সঞ্চিত এই বিপুল ও বিশাল প্রত্ন সম্পদ প্রমান করেছে স্বর্ণাভ সুবর্ণরেখা নদীর নির্মল পবিত্র প্রবাহমান জলরাশির কল-কাকলিতে কোন এককালে মুখরিত হয়েছিল- “ বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি” । ফা হিয়েন, হিউ-য়েন সাঙ, ইৎ সিং প্রমুখ বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধির কথা লিখেছেন এবং আরও অনেকগুলি বৌদ্ধ সংঘারামের পরিচয় তাঁরা দিয়েছেন । তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের নিকটেই অবস্থিত দাঁতনের মোগলমারির বৌদ্ধবিহার অবশ্যই তাদের মধ্যে অন্যতম । সম্প্রতি আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধবিহার আমাদের দেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে নিশ্চয়ই । এই নিবন্ধে আমরা খুঁজে দেখব কিভাবে অতীত থেকে বর্তমানে ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্থান করে নিয়েছে মোগলমারির এই বৌদ্ধবিহার তথা সমগ্র দণ্ডভুক্তি প্রদেশ বা দাঁতন অঞ্চলের সুপ্ত ইতিহাস ।
অবস্থানঃ
মোগলমারি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার দাঁতন-১ ব্লকের অন্তর্গত দাঁতন শহরের নিকটবর্তী একটি ঐতিহাসিক গ্রাম। এই গ্রামটি ওড়িশা রাজ্যের সন্নিকটে অবস্থিত।
আবিষ্কারঃ
১৯৯৯ সালে প্রাচীন বঙ্গে নদী ও বাণিজ্য সংক্রান্ত পুরাতাত্ত্বিক সাক্ষের খোঁজে সুবর্ণরেখার গতিপথ ধরে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের কাজে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঐতিহাসিক দাঁতন শহরে আসেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. অশোক দত্ত। ড. দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয় দাঁতন হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, ইতিহাসপ্রেমী শ্রী নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মহাশয়ের। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে নানা আলোচনার সুত্রে শ্রী বিশ্বাস দাঁতন-১ নং ব্লকে মোগলমারি (২৫°৫৭’ উঃ অঃ / ৮৭°১৬’ পূঃ দ্রাঃ) নামে একটি গ্রামের সন্ধান দিয়েছিলেন। সেই গ্রামে ' সখিসেনা ঢিবি ' নামে একটি প্রাচীন ইটের ঢিবি রয়েছে। ঢিবিটি গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। প্রত্নসমীক্ষার দ্বারা দেখা গেছে গ্রামে অবস্থিত সুউচ্চ ঢিবিটিই শুধি নয়, বর্তমানে প্রায় সমগ্র গ্রামটি অবস্থিত একটি বিশাল প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্রের উপর। গ্রামের মধ্যে প্রত্নসমীক্ষার সময় মোগলমারি গ্রামের অভ্যন্তরে ইটের তিনটি গোলাকার স্তূপের অংশ এবং গ্রামের কতিপয় ব্যাক্তির কাছে সযত্নে সংরক্ষিত পোড়ামাটির এবং গোলাকার উৎকর্ষ ফলক, যার উপর উৎকীর্ণ খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের ব্রাহ্মী লিপিতে এবং মিশ্র সংস্কৃত-প্রাকৃত ভাষায় লেখা বৌদ্ধ ধর্মের অতি প্রাচীন বাণী ‘এ ধর্ম হেতু প্রভব-‘ এবং ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় মস্তকহীন বুদ্ধ মূর্তি ড. অশোক দত্তের বৌদ্ধ নিদর্শন সংক্রান্ত ধারনাকে যেমন সুদৃঢ় করেছিল তেমনি ড. দত্ত উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন মোগলমারি সখীসেনা ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন করার জন্য। পরবর্তীকালে প্রত্নখননের মাধ্যমে নকশাযুক্ত ইট, স্টাকো মূর্তি, স্বর্ণমুদ্রা, নামফলক, সোনার মুকুট এবং ৯৫ টি ব্রোঞ্জ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।
ক) দাঠাবংশ : (Dathavamsa)ঃ-
বৌদ্ধ সাহিত্য ব্যাতিত ভারতীয় সাহিত্য ভাবাই যায় না । পালি ভাষায় রচিত ‘ইতিহাস’ (chronicle) বা ‘বংশ’ (vamsa) গুলি তাই বৌদ্ধ সাহিত্যের আকর গ্রন্থ হিসাবে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে প্রাচীনত্ব ও মহত্ত্ব প্রদান করেছে । পালি শব্দ ‘vamsa’ কথার অর্থ হল – জাতি, বংশ, নিয়ম, ও ধর্মপ্রচারকদের ইতিহাস । প্রথম এই ‘vamsa’ গুলি রচনা করেন শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধভিক্ষুকেরা । ইতিহাসকে বহু ক্রোশ পিছনে টেনে নিয়ে গিয়ে আদি অনন্তকালকে সত্য রুপে প্রতিষ্ঠা করে যে সব বৌদ্ধ ‘vamsa’, সে গুলি হল – ‘Thupavamsa’, ‘Mahavamsa’, ‘culavamsa’, ‘Dipavamsa’, ‘Mohabodhivamsa’, ‘Dathavamsa’, ‘Viharavamsa’, এবং ‘Sasanavamsa’, প্রভৃতি । আমাদের আলোচ্য বিষয় হল ‘দাঠাবংশ’ । এই অংশটি মোট ৫ টি অধ্যায়ে বিভক্ত এবং এবং ‘বৌদ্ধদন্ত’ পরিক্রমণের রোমাঞ্চকর কাহিনী নিয়ে রচিত । তথাগত বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর একটি দাঁত কিভাবে কলিঙ্গ রাজ্যের যুবরাজ দন্তকুমার কর্তৃক সিংহলে পৌঁছল তা সত্যি বিস্ময়ের । এই কিংবদন্তি দাঁত এখনো শ্রীলঙ্কার পূজিত হয় ।
বৌদ্ধভিক্ষু ধর্মকীর্তি (Dhammakritti) কর্তৃক রচিত ‘দাঠাবংশ’ (Dathavamsa) মূল পালি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন R.D Rhys Davids ও R.Morris, JPTS, (1884) । এই ইতিহাস গ্রন্থ অনুসারে বলা যায় যে ঐতিহাসিক দন্তপুর থেকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের মাধ্যমে বুদ্ধের একটি দাঁত কলিঙ্গ যুবরাজ দন্তকুমার পৌঁছে দেন সিংহলে :
Dathavamsa “ founded on an order, and ...no longer extant Dalada-vamsa in Sinhalese, by Dhamma kritti of pulasti-pura ......in the latter part of the 12th century A.D, tells a pseudo-historical tale of the miraculous transfer of the tooth relic of Buddha from kalinga of Srilanka by Hemalata and Danta Kumar from the port of Tamralipta ." পরবর্তীকালে দন্তপুর বা দন্তপুরী শহরের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে ‘দাঠাবংশ’- এ উল্লেখিত আছে -
“ Dantapure Kalingassa Brahmadattassa rajino” । নামের মিলের জন্য বিভিন্ন ঐতিহাসিকেরা বলেছেন যে দন্তপুর হল প্রাচীন ‘দন্তভুক্তি’-র রাজধানী, যা হল আজকের আধুনিক দাঁতন । মোগলমারিতে আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার এ বিষয়ে আরও জোরালো সওয়াল করে । অনেকে অন্ধ্রপ্রদেশের ‘রাজমহেন্দ্রী’কে ‘দন্তপুর’ বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু ঐতিহাসিক যোগেশচন্দ্র বসু তার ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে মত পোষণ করেছেন যে, যদি ‘রাজমহেন্দ্রী’ ‘দন্তপুর’ হবে তাহলে নিকটবর্তী বন্দর ‘পুরী’ হতে পারতো, অবশ্যই কয়েকশো মাইল দুরের ‘তাম্রলিপ্ত’ হবে না । বরং তাম্রলিপ্তের নিকটবর্তী দাঁতন হতে পারে প্রাচীন ‘দন্তপুর’।
খ) সি-য়ু-কি (SI-YU-KI) : হিউয়েন সাঙ
চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (xuanxang,c. 596 – 664) প্রায় ৬৪১ খ্রীঃ ভারত পরিভ্রমনে এসে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বিকাশের ধারা বর্ণনা করেন ‘si-yu-ki’ গ্রন্থে। মূল চীনা থেকে বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন Samuel Beal, নাম দেন – ‘si-yu-ki’ : Buddhist Records of the western world’ (1884)। এই অমুল্য ইতিহাস গ্রন্থের vol.2 , Book-x (পৃষ্ঠা- ২০০-২০১) – “Ta-mo-li-ti” অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে প্রাচীন তাম্রলিপ্তের সমৃদ্ধি ও তৎসৎলগ্ন ১০ টি বৌদ্ধ সংঘারামের কথা। তমলুকের কাছেই অবস্থিত দাঁতনের ‘মোগলমারি’ তারই অন্যতম হতে পারে । ‘si-yu-ki’ অনুসারে-
“this country is 1400 or 1500 li in circuit, the capital about 10 li. It borders on the sea, the ground is low and rich; it is regularly cultivated... The men are hardy and brave. There are both heretics and believers. There are about 10 ‘sangharamas’ with about 1000 priests. The deva temples are 50 in number, in which various sectaries dwell mixed together. The coast of this country is formed by recess of the sea; the water and the land embracing each other. Wonderful articles of value and gems are collected here in abundance and therefore the people of the country are in general rich.
By the side of the city is a ‘stupa’ which was built by Asoka-raja by the side of it are traces where the four past Buddhas sat and walked. Going from the north west 700 li or so, we come to the country ‘kie-lo-na-su-fa-la-na (‘Karnasuvarna’)”।
গ) আইন- ই-আকবরি: (Ain – I – Akbari) : আবুল ফজল
ভারত মোগলযুগের তৃতীয় পুরুষ আকবরের রাজত্বকালের একমাত্র সরকারী ইতিহাস ‘আকবর নামা’ রচনা করেন সভাকবি আবুলফজল । এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি মোট তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। শাসনকার্য (administrative report) সম্পর্কিত তৃতীয় খণ্ডের নাম ছিল ‘আইন – ই – আকবরি । রচনাকাল ১৬ শতকের শেষভাগে এবং পরিসমাপ্তি ঘটে ১৫৯০ সালে । পরবর্তীকালে, ১৮৭৩ সালে কলকাতাস্থিত ‘Asiatic society’ –র বিখ্যাত “Bibliotheca Indica” সিরিজের প্রযত্নে Heinrich Blochmann এই ঐতিহাসিক দলিলের মূল ফার্সী থেকে সরাসরি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন । Blochmann এর লেখা ‘Ain – I – Akbari by Abul – fazl Allami’ গ্রন্থের Vol-1 (পৃষ্ঠা ৩৭৬) থেকে আমরা ‘মোগলমারির যুদ্ধ এর ইতিহাস জানতে পারি । হতে পারে, প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধিক সংস্কৃতির বিলুপ্তির কারন হিসাবে মোগলমারিতে মোগল-পাঠান যুদ্ধ ভীষণভাবে দায়ী ছিল -
“Now from the facts that the battle took place soon after the imperialists had left chittua which lies a little E.E.N of Medinipur and that after the victory Rajah Todar Mall, in a persuit of several days, pushed as far as Bhadrak, I was led to conclude that the battle must have taken place near ‘Jalesar’ (Jellasore) and probably north of it as Abulfazl would have mentioned the occupation of so large a town. On consulting the large Trigonometrical of Orissa lately published, I found on the road from Medinipur to Jalesar to village ‘Mogulmaree’ (Mughalmari i,e. Mughal’s fight), and about seven miles southwards, halfways between Mughalmari and jalesar, and two miles from the left bank of the soobanreeka river, the village of Tookaroe.
According to the map the latitude of Mughalmari is 22⁰, and that of Tookaroe, 21⁰53’ nearly. There can be no doubt that the ‘Tookaroe’ is the ‘Takarai’ of the ‘Akbar – namah’. The battle extended over a large ground. Badaoni speaks of three, four kos, i.eabout six miles and thus the distance of Takaroi from Mughalmari is accounted for”.
ঘ) রিয়াজু-স-সালাতিন: (Riyaju-s-salatin) : গোলাম হোসেন
এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি প্রাচীন বাংলার মুসলিম-শাসনের উপর আধারিত প্রথম সম্পূর্ণ ইতিহাস । পার্সীভাষায় এই রচনা করেন Ghulam Hossain Salim Zaidpuri । ১২০৪ – ০৫ খ্রীঃ বখতিয়ার খলজির বাংলা (নদীয়া) আক্রমন ও জয়লাভ থেকে ১৫৫৭ সালের সিরাজের ইংরেজ বিরোধী ‘পলাশীর যুদ্ধ’ পর্যন্ত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে এই অমুল্য গ্রন্থে । ১৯০২ খ্রীঃ ‘Asiatic Society’-র বদান্যতায় Maul Avi Abdus Salam সর্বপ্রথম এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন । বইটি থেকে, বাংলার দক্ষিণে আফগান কর্তৃত্বের অবসান ও মোগলদের রাজ্য বিস্তারে এক সন্ধিক্ষণের প্রেক্ষাপটে আমরা মোগলমারি-র কথা শুনতে পাই ( পৃষ্ঠা – ১৬ )-
“The complete defeat of the Hindus took place in 1567-68 A.C, when suleiman karrani, king of bengal, with a large army under his famous general kalapahar advanced in to Orissa and defeates the last independent Rajah Makand Deo under the walls of jaipur and katak when sebsequently inAkbar’s time the Afgan kingdom bengal was supplanted in Akbar’s time the Afgan kingdom of Bengal was supplanted by Mughals, the Afgan’s in large numbers migrated into Orissa. In 1575 A.C a great battle took place between Mughals and Afgans ( at Bajhura, Badaoni P.193) at Moghalmari, near Jaleswar in Balesore in which Daud, the last Afgan king was defeated and flanked to Orissa practically shortly aftar (1592 A.C) became a Mughal province, administered by the Mughal viceroy of Bengal.”
ঙ) ১৮৭৩ বাংলা জেলা গেজেটিয়ার্স, মেদিনিপুর –(1873 Bengal District Gazetteers): ব্রিটিশ সরকার
১৮৭৩ সালের ২০ অগাস্ট তারিখে প্রকাশিত হয় ‘Bengal District Gazetteers: Midnapore, no. 207’ । এই গ্রন্থে তৎকালীন মেদিনীপুরের জেলা কালেক্টর Harrison তার মুল্যবান তথ্যসম্বলিত লেখা ‘Report on the Archeology of the District of Midnapore’- এ দক্ষিণ মেদিনীপুরের দাঁতনে অবস্থিত ‘মোগলমারি’-র প্রাচীনত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করে লিখেছেন ,ওড়িশা সীমান্তে সুবর্ণরেখার তীরে রাস্তা তৈরি করবার জন্য দাঁতনের মোগলমারি ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় ২৬ লক্ষ ইট উদ্ধার করে ব্যাবহার করা হয়েছিল-
“On the occasion of excavating earth to get out bricks and stones for the use of Rajghat road under construction several magnificent remains of old buildings have been discovered at ‘Satadaulla’ and ‘moghalmari’ and bricks and stones, it is estimated have been dug out numbering about 23 laks and some cores yet burid under the ground. From these it appears that the above place were once the residence of the ancient Rajas and exceedingly populous”.
চ) ১৯১১ বাংলা জেলা গেজেটিয়ার্স মেদিনীপুর (Bengal District Gazetteers : 1911) : ব্রিটিশ সরকার
১৯১১ সালে কলকাতার ‘The Bengal Secretariat Book Depot’ থেকে প্রকাশিত হয় ‘Bengal District Gazetteers: Midnapore’, । রচনা করেন বেঙ্গল গেজেটিয়ার্সের প্রকৃত জনক L.S.S. O’Malley । ম্যালী গেজেটিয়ার্সের ২৯-৩০ পাতায় ঐতিহাসিক ‘Battle of Moghalmari’-র তথ্য প্রদান করেছেন এবং ২৫৬ নং পৃষ্ঠাই লিখেছেন -
“Mughalmari: a village in the Midnapore subdivision situated about two miles north of Dantan. The name means the slaughter of the Mughals …….Remains of old buildings have been found, the numerous old bricks and stones unearthed, during the excavations made for the Rajghat road.”
ছ) আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ময়ুরভঞ্জ, ১ম খণ্ড (Archeological survey of Mayurbhanja vol.1)ঃ- নগেন্দ্রনাথ বসু
১৯১১ সালে উড়িষ্যার ময়ুরভঞ্জ রাজ্যের অধিপতি প্রকাশ করলেন ‘Archaeological survey of Mayurbhanja’ vol.1 । গ্রন্থখানি রচনা করলেন ঐতিহাসিক নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় । দাঁতন সংলগ্ন অঞ্চল পূর্বে উড়িষ্যার অন্তর্গত থাকার দরুন এই গ্রন্থে ‘মোগলমারি’ প্রসঙ্গও এসেছে সূচিপত্রে ‘Ruins of Cacisena at Mughalmari’ নাম দিয়ে চিহ্নিত হয়েছে, পৃষ্ঠা নং ১১২। মোগলমারি ‘সখীসেনার পাঠশালা’ দাঁতনের ‘সাত-দেউল’ অথবা রাজা বিক্রমজিত থেকে জাগ্রত শ্যামলেশ্বর জিউ মন্দির – প্রাচীন দাঁতন ইতিহাসের পুরো প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে এই গ্রন্থ । প্রাচ্যবিদ্যা মহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর লেখা থেকে জানা যায় যে, তৎকালীন পুরী রোডের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই ‘সখীসেনার পাঠশালা কে ঘিরে ছিল তিনটি সুবিশাল দীঘি তথা পশ্চিম থেকে ‘পালদিঘী’, দক্ষিণ পার্শ্বে ‘ধনদিঘী’ এবং উত্তরপ্রান্তে ছিল ‘বড়দিঘী’ । শ্রদ্ধেয় নগেন্দ্রনাথ এক্ষেত্রে স্বীকার করেছেন যে ‘প্রাচীন ময়ুরভঞ্জ’ রাজ্যের অবস্থান ও প্রত্নক্ষেত্রে আবিস্কারের এই পর্বত প্রমান কর্মে তাকে যথাযোগ্য সাহায্য করেছিলেন তৎকালীন সময়ের ‘দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি’ মুখ্য ব্যক্তিত্ব ভাষাবিদ এ.জি.গ্রিয়ারসন এবং মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়।
‘বিস্মৃত যত নীরব কাহিনী স্তম্ভিত হয়ে বও
ভাষা দাও তারে হে মুনি অতীত, কথা কও কথা কও।‘
কালের অন্তস্রোতে বয়ে চলে ইতিহাস এভাবেই নীরব নিভৃতপ্রবাহে । প্রাচীন দণ্ডভুক্তি অঞ্চলের এই মোগলমারির গর্ভে সঞ্চিত ইতিহাসের আকরিক এভাবেই ছিল অপেক্ষমান । অতঃপর একদিন উন্মোচিত হল সেই ইতিহাস , প্রকাশিত হল অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা অতীত, কথা বলে উঠল ইতিহাসের নীরব সাক্ষী এই প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের পবিত্র মাটি।
midnapore.in