সাগর, ভ্রমর, আন্দামান, মেদিনীপুর, Bidisha, Narayangarh, Medinipur


সাগর এবং ভ্রমর, আন্দামান থেকে মেদিনীপুরে


Sagar and Bhramar, from Andaman to Medinipur



অরিন্দম ভৌমিক।




ছেলেটির নাম সাগর, সাগরের মতই উজ্জল গভীর চোখ তার। সদা চঞ্চল, এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়ায়। আর মেয়েটির নাম ভ্রমর, ভ্রমরের মতোই কালো ঘন চোখ তার। কিন্তু সে শান্ত লাজুক প্রকৃতির। সুদূর আন্দামান থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মেদনীপুরের একটি লোধাদের গ্রামে এসে পৌঁছেছে তারা। সম্পূর্ণ অচেনা নতুন জায়গা। কিন্তু তাদের ভালই লাগছে কারণ খোলামেলা জায়গা, প্রচুর খাওয়ার দাওয়ার এবং লোকজন বেশ যত্ন করছে তাদের।



ও আপনাদের তো বলাই হয়নি সাগর এবং ভ্রমর কিন্তু মানুষ নয় তারা হরিণ এবং হরিণী। তাদের প্রজাতি হলো চিতল (axis deer)। তারা এসেছে বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের বিদিশায়। বিদিশা হল লোধাদের উন্নয়নের জন্য তৈরি করা একটি প্রতিষ্ঠান, সঙ্গে রয়েছে নৃতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। বিদিশার প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিশ্ব বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ডক্টর প্রবোধ ভৌমিক। তিনি বিদিশায়, জঙ্গলের পরিবেশ ফুটিয়ে তুলেছিলেন। জলে রাজহাঁস, গরু-ছাগল, খরগোশ, প্রচুর পাখি ছিল বিদিশায়।


সেই সময় আন্দামানের কমিশনার ছিলেন ডঃ প্রবোধ ভৌমিকের ছাত্র। তারই উদ্যোগে ১৯৭৫ সালে সাগর এবং ভ্রমর এসে পৌঁছয় বিদিশায়। বছরখানেক পরেই তাদের বেশ কিছু বাচ্চা হয়।


সাগর, ভ্রমর, আন্দামান, মেদিনীপুর, Bidisha, Narayangarh, Medinipur
বিদিশায় সাগর এবং ভ্রমরের বংশধররা, ২০০৯ সালের ছবি।

তখন মেদিনীপুর জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন শ্রী অজয় সিনহা। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় তিনটি হরিণের বাচ্চা। পরবর্তী সময়ে সেই তিনটি থেকে হরিণের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। এখন অরবিন্দ শিশু উদ্যান এবং জেলাশাসকের বাংলোর মাঝের অংশে যে হরিণ গুলি দেখা যায় সেই হরিণ গুলি সাগর এবং ভ্রমরের বংশধর।


সাগর, ভ্রমর, আন্দামান, মেদিনীপুর, Bidisha, Narayangarh, Medinipur
বিদিশার সুন্দর পরিবেশে হরিণের প্রজনন খুব সুন্দর ভাবে বাড়তে থাকে।

সেই সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইডলাইফ ফান্ড (WWF)-এর ইস্টার্ন জোনের প্রধান ছিলেন ডঃ কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি নানান ভাবে হরিণ গুলির সেবা যত্নের ব্যাপারে সাহায্য করতেন। বিদিশার সুন্দর পরিবেশে হরিণের প্রজনন খুব সুন্দর ভাবে চলতে থাকে। ২০০২ সালে বিদিশার পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে ২৪ টি হরিণ তুলে দেওয়া হয়।


সাগর, ভ্রমর, আন্দামান, মেদিনীপুর, Bidisha, Narayangarh, Medinipur
বিদিশায় 'কুকু', ২০২৪ সালের শেষের দিকে ছবিটি তোলা হয়েছে।

২০০৩ সালে ডক্টর প্রবোধ ভৌমিক আমাদের ছেড়ে চিরকালের জন্য চলে যান। অনাথ হল বিদিশা এবং তার বন্যপ্রাণ। ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত বিদিশায় দুটি পূর্ণবয়স্ক হরিণ ছিল। তাদের কোন নাম ছিল না। আমার দুই পুত্র জিকো এবং ডোডো তাদের নাম দিয়েছিল কুকু এবং বুকু। ২০২৫ সালের শুরুতেই মারা যায় কুকু। তাদের বংশধররা অন্যান্য অনেক জায়গায় রয়েছে। কিন্তু বিদিশায় সাগর আর ভ্রমরের শেষ বংশধর একা বুকুই রয়ে গেছে ।




M E D I N I K A T H A J O U R N A L

Edited by Arindam Bhowmik

Published on 03.03.2025 (World Wildlife Day)



নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।