কাশিজোড়া পরগনা থেকে মোঘলদের সরবরাহ করা হত সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র
The Mughals were supplied with soldiers and weapons from the Kashijora Parganas.
রূপেশ কুমার সামন্ত।
Home » Medinikatha Journal » Rupesh Samanta » The Mughals were supplied with soldiers and weapons from the Kashijora Parganas.
কাশিজোড়া রাজবৃত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন প্রতাপনারায়ণ রায়। তিনি ছিলেন কাশিজোড়া পরগনার তৃতীয় রাজা। তিনি ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনিই কাশিজোড়া পরগনায় দীর্ঘকাল রাজত্ব করেছেন। পূর্বের রাজাদের ন্যায় প্রতাপনারায়ণ রায়ও রাজধানী পরিবর্তন করেছিলেন। প্রতাপনারায়ণ কংসাবতীর প্রাচীন প্রবাহ পথের ধারে হরশংরগড়ে রাজধানী স্থাপন করলেন। এখানে তিনি ত্রি-স্তরীয় পরীখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ নির্মান করেন। এখান থেকেই তিনি রাজ্য পরিচালনা করতেন। তাঁর শাসনামলে কাশিজোড়া পরগনার সমৃদ্ধি সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল।
'কালে খাঁ' কামান
রাজা প্রতাপনারায়ণ রায় তাঁর শাসনামলে মোট তিনজন মোঘল সম্রাটের সাক্ষাৎ পান। তাঁরা হলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭), সম্রাট শাহজাহান (১৬২৭-১৬৫৮) ও সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭)। বাংলার সুবাদার দরাব খানের সুপারিশ ক্রমে ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে রাজোপাধি লাভ করেন। এরপর ১৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যা রাজের কাছ থেকে সম্মানীয় রাজটীকা ও শ্বেতছত্রাদি প্রাপ্ত হন। দিল্লীশ্বরের নির্দেশেই উড়িষ্যারাজের কাছ থেকে এই উপাধি পেয়েছিলেন। প্রতাপনারায়ণের রাজোপাধি, রাজটীকা ও শ্বেতছত্রাদি প্রাপ্তি কাশিজোড়া পরগনার ইতিহাসে আর নেই। এই ঘটনা কাশিজোড়া পরগনার ভাগ্যাকাশে অত্যন্ত সৌভাগ্যের এবং ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
'ফিতে খাঁ' কামান
রাজ্যের সমৃদ্ধির সাথে সাথে সামরিক সুরক্ষা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন পড়ে। তৎকালীন সময়ে বহিঃশত্রুর আক্রমন প্রতিরোধে এবং প্রয়োজনে মোঘলদের সামরিক সাহায্য প্রদানে প্রতাপনারায়ণ তাঁর পরগনায় বেশ মজবুত সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এরজন্য হরশংকরগড়ের পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়াচকে সেনানিবাসও তৈরি করেছিলেন। যোগেশচন্দ্র বসুর ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ‘প্রজাপালন করিয়া ও মহালের সরহদ্দ বজায় রাখিয়া, ক্ষেত্রের উৎপাদিকা শক্তি বর্দ্ধিত হইয়া যাহাতে প্রাপ্য রাজকর রীতিমত আদায় ও সরকারে দাখিল হয়, তাহাই জমিদারের প্রধান কর্ত্তব্য বলিয়া নির্দিষ্ট ছিল। নিজ নিজ অধিকারের মধ্যে রাজপথ সংস্কার ও দুষ্টের দমনও জমিদারের অন্যতম কার্য্য ছিল। তাঁহাদের দরবার, দুর্গ ও সেনাদলও থাকিত। পুর্বোক্ত কুড়িটি মহালে পনেরোটি দুর্গ ছিল এবং আবশ্যক হইলেই সাড়ে তিন হাজার তীরন্দাজ ও মশাল বাহক সৈন্য এবং দুইশত অশ্বারোহী রাজসরকারে সরবরাহ করিতে হইত’। আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’ থেকে জানা যায়, কাশিজোড়া পরগনা থেকে ২০০ অশ্বারোহী, ২৫০০ পদাতিক, বন্দুকধারী ও তীরন্দাজ সৈন্য সরবরাহ করতে হত। কাশিজোড়া পরগনার সামরিক বহরের দৃষ্টান্ত আজও মেলে। রঘুনাথবাড়ির রঘুনাথজিউ মন্দিরের সামনে ‘ফিতে খাঁ’ নামে একটি কামান ও হরশংকর গড়ে ‘কালে খাঁ’ নামে একটি কামান আজও রয়েছে। সুন্দরনগর রাজ পরিবারে প্রাচীন তলোয়ার আজও সংরক্ষিত রয়েছে।
রাজ পরিবারের তলোয়ার
রঘুনাথবাড়ির রঘুনাথ জিউ মন্দিরের বাইরের প্রাঙ্গণে ‘ফিতে খাঁ’ নামে একটি কামান রাখা রয়েছে। কামানটির দৈর্ঘ ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। কামানের উপর উর্দু ভাষায় লেখা একটি লিপি রয়েছে। এছাড়াও ইংরাজীতে ‘Matif’ শব্দ এবং ’18-1-13’ লেখা রয়েছে। আরও একটি কামান রয়েছে হরশংকরগড়ে। স্থানীয় উত্তর পল্লীর বাসিন্দারা এই কামানটি স্থানীয় ভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কামানটির নাম ‘কালে খাঁ’ কামান। লম্বা ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। পেছনের পরিধি ৩ ফুট নয় ইঞ্চি এবং সামনের পরিধি ২ ফুট ১০ ইঞ্চি। গোলা বেরনোর মুখের ব্যাস ৫ ইঞ্চি। এই কামান দুটি কাশিজোড়ার রাজা প্রতাপনারায়ণ রায় সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছিলেন। আত্মরক্ষার্থে বা বহিঃশত্রুর মোকাবিলার জন্যই কেবল কাশিজোড়া পরগনায় এই বিশাল সৈন্যবহর ছিল না, দিল্লীর দরবারে মোঘলদের প্রয়োজনেও এই সৈন্যদল সরবরাহ করা হত।
M E D I N I K A T H A J O U R N A L
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 25.05.2025)
তথ্যসূত্র -
১। মেদিনীপুরের ইতিহাস, যোগেশচন্দ্র বসু
২।পাঁশকুড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রূপেশ কুমার সামন্ত
৩। পাঁশকুড়ার পুরাকীর্তি ও উপাসনা স্থল, রূপেশ কুমার সামন্ত
৪। The Ain-I Akbari, Vol-I, Abul Fazal Allami, Translated by H. Blochmann
নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।