Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা

মেদিনীপুরের দুটি ব্যতিক্রমী মেলা

Two exceptional fairs in Medinipur

শুদ্ধসত্ত্ব মান্না।


Home » Medinikatha Journal » Shuddhasattwa Manna » Two exceptional fairs


মেদিনীপুরে বিশেষ করে মেদিনীপুর শহরে সারা বছর ধরে নানা জায়গায় নানান ছোট বড় মেলা বসে। তাদের কিছু তাদের নিজস্ব বিষয় বৈশিষ্ট্যে আমাদের সকলের মনেই জায়গা করে নিয়েছে।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

দোলের সময় মেদিনীপুরের নানা জায়গায় দোল খেলা হয় এবং সেই উপলক্ষে কোথাও কোথাও মেলা বসে। এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল পাটনা বাজার অঞ্চলের দোল মেলা। এখানে দুদিন দুটি জায়গায় মেলা বসে। ছোট মেলা, কিন্তু দুটিই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র।

প্রথমটি বসে দোলের প্রথমদিন বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল। রাধাবল্লভ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। সেই হিসেবে এই দোল উৎসব প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

রাধাবল্লভের মন্দিরটিতে রয়েছে রাধাবল্লভ ও রাধারানীর অষ্টধাতুর মূর্তি, পার্শ্ব দেবতা হিসেবে আটজন সখী, নারায়ণের সাতটি শালগ্রামের শিলা, ধাতু নির্মিত ছ'টি গোপাল মূর্তি, গৌর-নিতাই এর দারু মূর্তি ও একটি অপূর্ব ষড়ভুজ চৈতন্যের মূর্তি।

দোলের দিন সুসজ্জিত সব মূর্তি গুলিকে সামনের ছোটো মাঠের মঞ্চে এনে রাখা হয়। তখন সব বিগ্রহগুলিকে খুব ভালো ভাবে দর্শন করা যায়। এই উপলক্ষে এখানে একটি ছোটো মেলাও বসে। উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, দোলের কেবলমাত্র প্রথমদিনে এখানে মূর্তি গুলিকে দর্শন করা যায় ও মেলাটি বসে।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

দোলের দ্বিতীয় দিন বকুলকুঞ্জের অদূরে সাহেব পুকুর চকে আরো একটি মেলা বসে। ছোটো বটে, কিন্তু এটি বকুলকুঞ্জের থেকেও প্রাচীন। প্রায় দুশো বছরের। এই মেলাটি সাধারণ মানুষের কাছে "গুড়সুটির মেলা" নামে পরিচিত।

এই মেলাটি শুরু করেছিলেন সাহেব পুকুর চক এলাকার তৎকালীন বাসিন্দা এক অতি বৃদ্ধা উজ্জ্বলা সাহু। তাঁর পায়ের সমস্যার জন্য লোকে তাঁকে 'নেংড়ি বুড়ি' বলে ডাকতো। জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে তাঁর একমাত্র অবলম্বন ছোট্ট নাড়ুগোপালের জন্য দোলের সময় বিশেষ পুজো করতে গিয়ে এই মেলাটি বসিয়েছিলেন। অনেকে তাই এটিকে "নেংড়ি বুড়ির দোল" বলেও ডাকেন। কালক্রমে মেলাটি জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নেংড়ি বুড়ির তিরোধান ঘটলেও মেলাটি ছেদহীন ভাবে হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, করোনাকালেও এই মেলা বন্ধ হয় নি।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

এই মেলার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা একে স্বতন্ত্র মাত্রা দিয়েছে।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

প্রথম বৈশিষ্ট্য টি হলো গুড় মাখানো কাঠিগজা - যাকে সবাই 'গুড়সুটি' বলে ডাকেন, তা এই মেলায় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গুড়সুটি কেনার জন্য লোকালয়ের মধ্যের এই ছোট্ট মেলায় ভীষণ ভিড় লেগে থাকে। এই জন্য সকলে এই মেলাকে 'গুড়সুটির মেলা' বলে চেনেন ও ডাকেন। দোলের দ্বিতীয় দিন শুধু মাত্র গুড়সুটির কারণে শহরের তো বটেই শহরের বাইরের দূর দূরান্ত থেকে লোকে এখানে হাজির হন সানন্দে।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
বকুলকুঞ্জ এলাকায় - রাধাবল্লভ মন্দিরের দোল।

এই মেলার দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য তথা আকর্ষণ পতিঙ্গা নামের খেলনা। শ্রদ্ধেয় চিন্ময় দাশ বলেছেন, বাঁশের বাখরি চেঁছে এই খেলনাটি তৈরী করা হয়। 'পতঙ্গ' শব্দটি থেকে এসেছে 'পতিঙ্গা'। আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে নেমে আসে। ছোটদের অন্যতম পছন্দের এই খেলনাটি এই মেলাতেই পাওয়া যায়।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
গুড়সুটির মেলা।

এই মেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য, এখানে বাইরে থেকে কোনো ময়রা আসেন না। এখানকার বাসিন্দারাই এক দিনের জন্য ময়রা হয়ে ওঠেন।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
পতিঙ্গা।

বর্তমানে এই মেলাতে গুড়সুটির পাশাপাশি গুড় মাখানো ছোলা, মালপোয়া, মুগের জিলিপি এমনকি তেলেভাজা, পাঁপড়ভাজা, বারোভাজাও বিক্রি হয়। নানান মানুষের কলরবে আর সন্ধ্যায় দেবতার নামগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।


Bakulkunja, Mela, Gursutirmela, বকুলকুঞ্জ, রাধাবল্লভ মন্দির, সাহেব পুকুর চক, গুড়সুটির মেলা
গুড়সুটির মেলা।

এইভাবে মেদিনীপুরের মেলার ইতিহাসে শতবর্ষ প্রাচীন এই মেলা দুটি একটি স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছে।



midnapore.in

(Published on 12.06.2023)

তথ্য সহায়তা :
● মেদিনীপুরের মেলা - শ্রী চিন্ময় দাশ
● অন্তর্জাল