সুখেন্দু দাশ।
An Artiste in west Midnapore excelling in wood - engraving has done miraculous creations totally with wood .
All his works speak of innovative ideas which will simply make spellbound the viewers .
A Kalabhavan Shantiniketan graduate P. S. Mukherjee now in his seventies still find pleasure in wood engraving in his rural studio at Rajnagar.
And for this he brings and uses indigenous wood with natural colour from Australia , Malayasia, Jharkhand etc.
নিষ্প্রাণ কাঠে প্রাণের সজীবতা আনেন তিনি । টুকরো কাঠের নিখুঁত শিল্পকর্ম একত্রে জড়ো হয়ে জীবনের কলকাকলিতে ভরে ওঠে তাঁর হাতের ছোট্ট ছেনি বাটালি করাতের পরশে ! কাঠেরা প্রাণ ফিরে পায় । কলকলিয়ে ওঠে জীবনের জয়গানে !
কাঠের ক্যানভাসে কখনো ফুটে ওঠে সামগ্রিক গ্রামীণ জীবন তো কখনো ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী , মহাভারত, রামায়ণ ! কখনো পুরাণ কাহিনী ! কখনো অদ্ভূত নিপুণতায় কাঠেই খোদিত হয়ে ওঠে খেলোয়াড় সৌরভ, বিদ্যাসাগর , মা সারদা ,আস্ত একটা বই , দোয়াত, নিবের কলম , বাঘের হুঙ্কার দেওয়া ভয়ানক মুখ, তো আবার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধভূমিতে ভগবান কৃষ্ণের মুখে গীতার ললিত বাণী !
পার্থ বাবুর এই কাঠের কাজে কোথাও এক বিন্দুও কৃত্রিম রঙ ব্যবহার হয় না। সমস্ত রঙীন কাঠই তার সম্পূর্ণ নিজস্ব রঙ নিয়ে হাজির। লাল কাঠের ব্যবহারে লাল রঙ ফুটে ওঠে তো হলদেতে হলুদ। সাদাতে সাদা তো বাদামীতে বাদামী। এমন কী চোখের মণি ফোটাতে দেশীয় তেঁতুল কাঠের ব্যবহার করেন শিল্পী পার্থ সারথী মুখার্জী ।
এ সব কাঠের জন্য বিদেশ থেকে কাঠ আনান শিল্পী । লাল কাঠ আসে মালয়েশিয়া থেকে। বাদামী হলুদ কাঠ ঝাড়খন্ড থেকে । বাদামী কাঠ আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে । সাদাটা এই বাঙলায় মেলে সোঁয়া চালতা থেকে । বাদামী কাঠ ঘোড়া নিমেও মেলে ।
শিল্পী এমন কী কাঠের জালি ও বানিয়েছেন। এ সবই ধৈর্য্য ধরে দিবারাত্র একটু একটু করে কাঠ কেটে কেটে, খোদাই করে । আত্মমগ্ন শিল্পী পার্থ সারথী মুখার্জীর কাষ্ঠপ্রেমের ফসল । সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও নিরলস । সৃষ্টির নেশায় মশগুল হয়ে রয়েছেন তাঁর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার চেতুয়া রাজনগর গ্রামে বাড়ীর লাগোয়া স্টুডিওতে । সেখানেই সাড়ে চারকাঠা জমির ওপর দাঁড়িয়ে তাঁর ওয়ার্কশপ ।
আদপে শান্তিনিকেতন কলাভবনের স্নাতক । সব মাধ্যমে কাজ করার ঘনিষ্ঠ পাঠ নিয়েছেন প্রথিতযশা শিল্পী কৌশিক দিনকর , শর্বরী দাশগুপ্ত , সনত কর, সোমনাথ হোড় প্রমুখের কাছে । শিল্পী রামকিংকর বেইজের সহযোগী হিসেবে তাঁর সাথে কাজের সুযোগ পেয়েছেন নেপালের একটি শিল্পকর্ম গড়ে তোলার সময় ।
সেই সময়ই ব্যবহারিক জীবনে কাঠ দিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠার বাসনা তাঁকে পেয়ে বসে । মনে মনে যেন বলে উঠলেন --- 'তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা । ' অত্যন্ত স্বচ্ছল সফল শল্য চিকিৎসকের পুত্র পার্থ সারথী দিল্লীকে বেছে নিলেন নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে । ললিত কলা এ্যাকাডেমীর সঙ্গে সম্পর্ক হল দৃঢ়তর। জীবনের সিংহভাগ কেটে গেল দিল্লিতে। লিনটাস, হ্যাভেলস এবং কটেজ ইন্ডাস্ট্রির কাজে চৌদ্দ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর অসংখ্য ছাত্র তৈরীতে মন দিলেন । আজ তারা ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে । দিল্লিতেই আরও সাত বছর কাঠ নিয়ে গবেষণা এবং গভীর অধ্যয়ন তাঁর ঝুলিতে ! দু হাজার এক সালে ভগ্ন স্বাস্হ্যের কারণে ফিরে এলেন নিজ ভূমে নিজ গ্রামে । গড়ে তুললেন দু হাজার চারে আজকের এই স্টুডিও এবং ওয়ার্কশপ । সেই থেকে প্রচারবিমুখ পার্থ সারথী বাবু তিন বিঘের চব্বিশ রকমের ফলের গাছের বাগান দিয়ে ঘেরা পৈতৃক বসতবাটীতে মনের শান্তিতে বাস করছেন । বড় ছেলে দিল্লিতে ব্যাঙ্ক কর্মী । ছোট ছেলে এখানে এ বাড়িতে তাঁর কাজের সাথী । মেদিনীপুরে দুজন যুবক এগিয়ে এসে তাঁর কাছে এই শিল্পের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ।
রাজ্য এবং জেলা পর্যায়ে অনেক পুরস্কার এলেও লোকে বিশেষত এ রাজ্যে কাঠ দিয়ে শিল্প - সৃষ্টির বিষয়টিতে একই সঙ্গে উদাসীন এবং উন্নাসিক --আক্ষেপ ঝরে পড়ে বর্ষীয়ান শিল্পীর কন্ঠে ! অথচ এই শিল্প - সৃষ্টি যথেষ্ট সম্ভাবনাময় ! ভারতবর্ষের সমস্ত বড় শহরে শিল্পমেলায় পার্থ সারথী বাবুরা অংশ নিয়েছেন । এখনো নিচ্ছেন । তবে এখন কনিষ্ঠ পুত্র যায় । পার্থবাবু আর অত ধকল নেন না । তবে নিজের স্টুডিওয় তিনি এখনো তেমনি প্রাণচঞ্চল , তেমনই সৃষ্টিশীল ! দেখে মনে হয় -- বয়স তাঁর কাজের কাছে , তাঁর সৃষ্টিশীলতার কাছে নিশর্ত হার মেনেছে !
midnapore.in