দীপঙ্কর দাস।
ইয়ার শব্দটা ফার্সি য়ার বা য়্যার থেকে এসেছে, শব্দার্থ বন্ধু কিন্তু বাংলায় চটুল অর্থে ব্যাবহার হয়; এমন বন্ধু যার সঙে লঘু ঠাট্টা বা ফাজলামো করা যায়। ঐ অর্থে ইয়ারকি। ফাজিল শব্দটা আরবি, অর্থ বিদ্বান কিন্তু বাংলায় ব্যঙ্গার্থে গৃহিত হয়েছে; বাচাল, ডেঁপো। বার ইয়ারের কাণ্ড, বার ইয়ারি থেকে বারোয়ারি কিন্তু বাংলায় রুঢ়ি প্রয়োগ হয় বহুজন বা সর্বজন অর্থে। সেই অর্থে বারোয়ারি পুজো মানে সর্বজনীন পুজো।
২০১৭ সালে মেদিনীপুর শহরের একটি স্বরস্বতী পূজামণ্ডপের বারোয়ারি।
মেদিনীপুর শহরে বারোয়ারি শব্দের আরো একটা রুঢ়ি প্রয়োগ হয়, যে কোনো পূজা বা পার্বণ উপলক্ষ্যে মাটির পুতুলের প্রদর্শনীকে বলা হয় বারোয়ারি। মেদিনীপুর শহরে রাস-দোল-জন্মাষ্টমী-বাসন্তী পুজো উপলক্ষ্যে এই রকম বারোয়ারি পঞ্চাশোর্দ্ধ কাল যাবৎ প্রচলিত। ইদানিং কোনো কোনো দুর্গাপুজো মণ্ডপে এবং বেশ কয়েক বছর হল সরস্বতী পুজো উপলক্ষ্যে মেদিনীপুর কলেজের উলটো দিকে বারোয়ারি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
এই সব প্রদর্শনীত পৌরাণিক ঘটনা ছাড়াও কিছু সামাজিক ঘটনা অবলম্বনে পংতিবদ্ধ পুতুল সজ্জা দেখা যায়। পুতুলের উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
২০১৬ সালে মেদিনীপুর শহরের একটি দূর্গা পূজামণ্ডপের বারোয়ারি।
মেদিনীপুর শহরে এই বিশেষ রুঢ়ি অর্থের পুতুল প্রদর্শনীর উৎস্য সম্ভবত গাজনের সঙযাত্রা। ১৯১০ থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত গাজনের অনুষঙ্গে যে সঙযাত্রা রাস্তা পরিক্রমা করতো, তার মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গোশকটে এরকম কিছু পুতুল প্রদর্শ হিসেবে বহন করা হত। ১৯৪০ এর পর ১৯৫২ সালে মেদিনীপুরের রাস্তায় শেষ বারের মত সঙ বেরিয়ে ছিলো। তার পরে মণ্ডপ নির্ভর প্রদর্শনী দেখা দেয়।
২০১০ সালে একটি কালীপূজা মণ্ডপের বারোয়ারি।
বর্তমানে সারা বংলা জুডে় যে বারোয়ারি পুজো হয়, তা যতটা সর্বজনীন তার থেকে বেশি বারো ইয়ারি, বারোজন ইয়ার মিলে যে কোনো পুজো উপলক্ষ্যে রসিদ বই ছাপিয়ে চাঁদা আদায় করে মোচ্ছব করে, সর্ব জনের সম্মতির তারা তোয়াক্কা রাখে না। বস্তুত বারোয়ারি পুজো সামাজিক কদাচারে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ শব্দটি তৃতীয় একটি রুঢ়ি রূপ পরিগ্রহ করেছে। খবরের কাগজে চাঁদার জুলুমের খবর যেমন ছাপা হয়, তেমনি থাকে মোচ্ছবের বিস্তারিত বিবরণ, তারা বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যাবহার করে পুজোকে।
সুতরাং চলছে চলবে।
midnapore.in