উপেন্দ্রনাথ পাত্র।
(প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কলেজে পঢ়ার সময় বালিপাল গাঁয় মামুঘর যাই করি বুঢ়াবুঢ়িয়েঁকার পাশে শুনা কাহানির সাঁগে নানা গবেষক জনের মতামত একজোট করি,তার ঝাড়েই বাছেই করি প্রকৃত ইতিহাসের কাছাকাছি যাবার প্রয়াস।)
কোন অতীত কালে বিরাট রাজকন্যার সাঁগে ময়ুর ভঞ্জ রাজকুমারের বাহাঘর হি থিলা।বিরাট রাজের প্রথা মতন অন্য যৌতুকের সাঁগে একশ দুধালো গাই আর দশজন গোরক্ষক সেনা(গোর্খা?) দিয়া হি থিলা।
সে কালে বিষ্ণুপুর মল্লরাজ আর বারিপদার ভঞ্জ রাজ্যের মাঝে, কাঁসাই আর সুবর্ণরেখা নদীর মাঝের এলাকা, জনবিরল আর ঘন বনে ভরা থিলা।ডোলং নদীর দুপাশরু সুবর্ণরেখা পর্যন্ত চিয়াড়া পরগণায় শুধু চাষ বাস থায়।বালিপাল গাঁয়ের পাশে সীমান্ত রক্ষার আর খাজনা আদায় কারণে গটায় দুর্গ থায়,যার নাম গড়বন দুর্গ।
ময়ুরভঞ্জরাজ গোরক্ষক সেনার দরকার নাই দেখি তানকে চিয়াড়া পরগণায় জায়গির দি বসেই দিলান।কিন্তু তারা নঢ়িয়ার জাত,চাষবাসে মন নাই দি তারমানে দস্যুতা শুরু করলা।আদিবাসী ঘররু জবরদস্তি করি কন্যাহরণ করি বাহা হিলা।তানকার বংশধরমানে মাল বা মল্ল নামে পরিচিত হিলান।মল্ল সর্দারের ভিতরে দহতমলের(লোধাশুলীর পাশে) মনি মল্ল আর ঝাড়গাঁর রণ মল্ল খুব দুদ্ধর্ষ হি উঠলান।
অন্যদিকে পাঠান আক্রমণে ওড়িশার জাজপুর রাজ হরিকৃষ্ণদেব মারা যাইতে যুবরাজ সুরঙ্গদেব রাণী ইন্দুমতী,পুরোহিত গজপতি,তার মেয়ে শর্মিষ্ঠা সহ পালেই আসি ময়ুরভঞ্জ রাজার শরণ নিলান।
ময়ুরভঞ্জ রাজ তানকে গড়বন দুর্গে পাঠেই দিলান।
দহতমলের ডাকাত সর্দার একদিন গড়বন দুর্গ লুট করি শর্মিষ্ঠাকে নি গেলা।সুরঙ্গদেব রাতে গোপন অভিযান করি তাকে উদ্ধার করেন।
ইন্দুমতীর সন্তান নাই হিতে সে নিজে সুরঙ্গদেবের সাঁগে শর্মিষ্ঠার বাহা দেন।শর্মিষ্ঠা এক কন্যাসন্তান জন্ম দেয়,তার নাম রাখা হয় সাবিত্রী। আবার দহতমলের মনি মল্ল গড়বন দুর্গ আক্রমণ করে।সুরঙ্গদেব,ইন্দুমতী আর গজপতি মারা যান।মনি মল্ল শর্মিষ্ঠাকে হরণ করে।রাস্তায় নি যাবার পথে শর্মিষ্ঠাভি মারা যায়।মনি মল্ল সাবিত্রীকে নিজের মেয়ের মতন পালা পুষা করে।
অন্যদিকে ওড়িশার আর এক যুবরাজ বলবন্ত পাল রাজ্যচ্যুত হি করি অনুচর সহ পালেই আইলান।তারা ঘুরতে ঘুরতে চিয়াড়া পরগণায় আসেন।ততদিনে পুরা এলাকারু মনি মল্লের ডরে লোক পালেই যাইছে।চাষের জমি বনে ঢাকা পড়ি যাইছে।শুধু নদীর ধারে ধারে অল্পকিছু লোক চাষবাস করে।
বলবন্ত ডোলং নদীর ধারে সাঁগীমানেকে হারেই একা হি গেলান।পুরা দিনটা খালি নদীর জল ছাড়া কিছু পেটে পড়েনি।নদী পার হিলান,কারো দেখা নাই পাই বেদম থকি গটায় কেঁদু গাছের ছায়ায় ঘুমেই গেলান।নিদরু উঠলান,কিন্তু চলার শক্তি নাই।হঠাৎ দেখেন গাছে ঢের কেঁদু পাকি রহিছে, তলেভি পড়িছে।কেঁদু খাই নিজের জীবন বাঁচেইলান।অনুচরমানে ঘুরতে ঘুরতে ভাঙা গড়বন দুর্গে আইলান।আশেপাশে খুজতে খুজতে কেঁদু গাছের তলে যুবরাজকে খুজি পান।তারা সব আসি ভাঙা দুর্গে আশ্রয় নেন।
(অখনও বালিপাল গাঁয়ের পাশে গড়বন দুর্গের চিহ্ন আছে আর যে কেঁদুতলে বলবন্ত আশ্রয় নি থিলান,বর্তমানে সেটা "কেঁদুয়া বুঢ়ির থান" নামে পরিচিত।বলবন্ত পালের নামরু গাঁয়ের নাম হিছে বালিপাল।)
স্থানীয় লোকজনের পাশরু বলবন্ত জানি পারলান যে এটা ময়ুরভঞ্জ রাজার রাজ্য হিনেভি বহুকাল এঠে কোন খাজনা আদায় করা হয়নি।বলবন্ত মুয়ুরভঞ্জ রাজার পাশ যাই এঠে বসবাসের প্রার্থনা জানান।বার্ষিক খাজনার ভিত্তিয়ে রাজা তানকে পুরা পরগণার ইজারা দেন।
ক্রমে বলবন্ত তার শক্তিবৃদ্ধি করি মনি মল্লকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করেন।সৈন্য সংখ্যা বাঢ়েই এক রাতে মনি মল্লের ডেরা আক্রমণ করেন।মনি মল্ল প্রাণ বাঁচেইতে পালেই যায়।সে সাবিত্রীকে উদ্ধার করি পরে তাকে বাহা হন।সাবিত্রীর এক পুত্রসন্তান জন্মে,তার নাম রাখা হয় সর্বেশ্বর।
চিয়াড়া পরগণারু যারা পালেই থিলা,তারা সব ঘুরি আসে।পুরা এলাকা চাষবাস শুরু হয়।এদিকে মনি মল্ল তার অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঝাড়গাঁর
রণ মল্লের সাঁগে জোট বাঁধি একযোগে গড়বন আক্রমণ করার ফন্দী আঁটে।বলবন্ত গুপ্তচর মারফত সেকথা জানি পারি হঠাৎ আক্রমণ করি প্রথমে দহতমল ঘাঁটি ধ্বংস করেন,মনি মল্ল মারা যায়।তারপর ঝাড়গাঁ ঘাঁটি আক্রমণ করি সেটাও দখল করেন।যুদ্ধে রণ মল্ল মারা যায়।
যুদ্ধে বলবন্ত আহত হন,ধীরে ধীরে অসুস্থ হি পড়েন।সাবিত্রীর খুব সাহস আর কূটবুদ্ধি থিলা।
মনিমল্ল আর রণমল্ল মারা যাইতে অন্য মল্ল সর্দারমানে একজোট হিতে চেষ্টা করেন।কিন্তু সাবিত্রীর কূটবুদ্ধিয়ে তারা বলবন্ত আর সাবিত্রীকে তানকার ঝি-জামাই বলি মানি নি করি বশ্যতা স্বীকার করেন।ইতিমধ্যে আহত বলবন্ত মারা যান।
নাবালক পুত্র সর্বেশ্বরকে সাবিত্রী রাজা ঘোষণা করেন।সর্বেশ্বর সাবালক হি করি উগালষণ্ড মল্লদেব উপাধি নি করি স্বাধীন রাজা হন।
রাজমাতা সাবিত্রী মারা যাইতে সর্বেশ্বর মায়ের স্মৃতি মন্দির করেন।পরে সোউ জাইগায় বর্তমানের সাবিত্রী মন্দির গড়ি উঠে।
midnapore.in
উপেন্দ্রনাথ পাত্র - গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কালিঞ্জা গ্রামে ১৯৪২ সালের ২০ এপ্রিল জন্ম। উপেন পাত্র নামে বেশি পরিচিত। মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠ -এর প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। লোকভাষা,লোকসংস্কৃতি ও স্থানীয় ইতিহাস চর্চা নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন। উপেন্দ্রনাথ বাবু 'মিডনাপুর-ডট-ইন' -এর সম্মানীয় সদস্য ও উপদেষ্টা।