রাকেশ সিংহ দেব।
Home » Medinikatha Journal » Rakesh Singha Dev » Indian Cobra
চন্দ্রকোণা রোড বাজারে বৃষ্টির মধ্যে আটকে পড়ে এক চা দোকানে চা খাচ্ছিল ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধু অরবিন্দ পাল। সেইসময় সে দুজন সাপুড়েকে সাপ নিয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে। তাদের জিজ্ঞেস করতে জানতে পারে তারা পুরুলিয়া থেকে এসেছে সাপের খেলা দেখাবে বলে। নেশায় দুজনেই অপ্রকৃতস্থ। তাদের কাছে দুটো গোখরো আর একটা ঢ্যামনা সাপ ছিল। প্রথমে সে সাপুড়েদের সাপগুলো স্থানীয় বন দপ্তরের অফিসে জমা দিতে বলে। তারা তখন ঘাবড়ে গিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকে। আশেপাশের লোকজন জড়ো হলে সে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয় এই সাপুড়েরা যেটা করছে সেটা আইনত অপরাধ। এভাবে আর কয়েকদিন বন্দী থাকলে সাপগুলো বেঘোরে মারা যাবে। অরবিন্দের কথায় এবং স্থানীয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের চাপে সাপুড়েরা রাজি হয় সাপগুলো বন দপ্তরের হাতে দিতে এবং অনুরোধ করে তাদের ছেড়ে দিতে। সাপুড়েদের বুঝিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সাপগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় চন্দ্রকোণা রোড রেঞ্জ অফিসে। সেখানে রেঞ্জ অফিসার মহাশয়ের সহযোগিতায় সাপগুলোকে কাছের জঙ্গলে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ ব্লকের সামাট গ্রামে দিবাকর বটব্যালের বাড়ির মেয়েরা শোবার ঘরে বসে টিভি দেখছিল। সেসময়ই আচমকা একটি গোখরো সাপ বেরিয়ে আসে। আতঙ্কিত মেয়েরা চিৎকার করতে করতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। দিবাকরবাবু ঘরে ঢুকে আবিষ্কার করেন মেঝেতে একটি গর্ত রয়েছে। সেই গর্ত খুঁড়তেই তা থেকে বেরিয়ে আসে একে একে ২০টি বিষধর গোখরো সাপের বাচ্চা। প্রথমে ভয় পেলেও, সাপগুলোকে না মেরে একটি বড় প্লাস্টিক জারে ভরে রাখেন দিবাকরবাবু। সাপগুলি ধরতে সাহায্য করেন দাদা শ্যামসুন্দরবাবু ও বন্ধু সঞ্জীব চন্দ। পরে ঘাটাল মহকুমা সোশ্যাল ফরেস্ট্রি রেঞ্জের থেকে বন দপ্তরের কর্মীরা এসে সাপগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বিগত কয়েকমাস ধরে লক্ষ্য করছি আমাদের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় বন দপ্তর বা সর্পমিত্রদের দ্বারা যে সাপটি সবচেয়ে বেশী উদ্ধারের খবর আসছে তা হল গোখরো। মেদিনীপুর শহরের শহরতলি এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে গোখরো। কখনও গৃহস্থ বাড়ির কুয়োর মধ্যে পড়ে যাওয়া গোখরোর বাচ্চা, আবার কখনও শহরের মাংসের দোকানের ব্যবহৃত জল ফেলার গর্ত থেকে উদ্ধার হচ্ছে বিরাট পূর্ণবয়স্ক সাপ। পরিসংখ্যান এবং পরিস্থিতির উপর নজর রেখে বোঝা যায় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গোখরোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।
এশিয়ার ‘BIG 4’ গ্রুপের এই সদস্যের উত্তর পূর্ব ভারত ছাড়া ভারতের সর্বত্র (২০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত) অবাধ বিচরণ। এলাপিডি (Elapidae) গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য গোখরো তার সুদৃশ্য ‘ফণা’-র জন্য পরিচিত। এদের চওড়া মাথায় ঘাড়ের কাছে যে হাড় থাকে প্রয়োজনে তা সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে এরা ফণা মেলে ধরে। গোখরো সাপের আঁশ মসৃন এবং চকচকে, চওড়া গলা ও মাথা বিশিষ্ট। শরীরের রং বাদামি হলুদ বা ধূসর কালো। ফণার পিছন দিকে ইংরেজি ‘U’ আকৃতির অনেকটা ‘চশমা’-র মতো বা ‘গরুর ক্ষুর’-এর মতো একটি চিহ্ন থাকে। এই চিহ্নর কারণেই সাপটির এরূপ নামকরণ হয়েছে। তবে সাপভেদে এই ফণার উপরের চিহ্নের প্রভেদ দেখা যায়। ফণার সামনের দিকে গলার নিচের দিকে কালো রঙের একটা চওড়া ব্যান্ড দেখেও সাপটিকে চেনা সম্ভব। ব্যান্ডের উপরে গলার দুপাশে কালো বর্ণের প্রায় বৃত্তাকার দুটি ছোপ লক্ষ্যনীয়। চোখের রং কালো। বুকের নিচের দিকে জোড়া রিং ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। গোখরো সাপের ইংরেজি নাম – Spectacled Cobra বৈজ্ঞানিক নাম – Naja naja (Linnaeus, 1758)। পশ্চিমবঙ্গে গোখরো সাপ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত - খরিস, দুধে খরিস, তেঁতুলে খরিস ইত্যাদি।
গোখরো দিন এবং রাত উভয় সময়েই সজাগ থাকে। এরা খুব দ্রুতগামী ও স্বভাব লাজুক। বিপদ অনুভূত হলে বা ভয় পেলে গোখরো তার স্বরূপ প্রকাশ করে, ফণা ফুলিয়ে হিস্হিস্ শব্দ করে সামনের দিকে সজোরে ছোবল মারে। প্রয়োজনে সামনের শরীর খাড়া করে দেহের এক তৃতীয়াংশ দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। খুব প্রয়োজন না পড়লে মানুষকে কামড়ায় না। দেখা গেছে এদের কামড়ের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ শুকনো কামড় (Dry Bite)। এর ফলে এরা অনেক মানুষকেই কামড়ায় কিন্তু তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক মানুষেরই মৃত্যু ঘটে। গোখরো দক্ষ সাঁতারু। হামেশাই সাঁতরে পুকুর পার করতে দেখা যায়। মাঠে, জলের ধারে, পাথরের মাঝে, শস্য ভান্ডার বা গুদাম ঘরে এদের হামেশাই দেখা যায়। ইঁদুরের গর্তে বা উইঢিপির মধ্যে এরা বাস করে। এরা বছরে একাধিকবার নিজেদের পুরোণো চামড়া বা খোলস পরিবর্তণ করে।
গোখরো ওভিপেরাস, অর্থাৎ এরা ডিম পাড়ে। মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ইঁদুরের গর্তে, মাটির গর্তে, পাথরের খাঁজে বা গাছের কোটরে একসাথে ১০ থেকে ৩০টা ডিম পাড়ে। প্রায় ৬০ দিনের ইনকিউবিশন পিরিয়ডের পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয়। বাচ্চা না বেরোনো পর্যন্ত মা গোখরো ডিম পাহারা দেয় ও ডিমে তা দেয়। এসময় এরা খুব আক্রমনাত্মক থাকে। বাচ্চাগুলো লম্বায় ২০-৩০ সেমি আকারের হয়। জন্মের পর থেকেই তাদের বিষগ্রন্থি কার্যকরী হয়ে পড়ে এবং শিকার ধরতে সক্ষম হয়।
গোখরোর কামড়ের জায়গায় জ্বালা যন্ত্রনা হবে। ক্ষতস্থান চুঁইয়ে রক্তরস বের হয়। ধীরে ধীরে যন্ত্রনা বাড়বে এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু নিউরোটক্সিন বিষের ক্রিয়াশীলতার কারণে পরবর্তীতে জ্বালা যন্ত্রনা কমতে থাকবে। কারণ স্নায়ুবিষের প্রভাবে স্নায়বিক শিথীলতা দেখা দেবে। কামড়ের জায়গা ধীরে ধীরে ফুলতে পারে। বমি অথবা বমি বমি ভাব হবে। মুখ থেকে লালা বা গ্যাঁজলা নিঃসরণের ফলে অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকা রোগীর শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গলায় ব্যাথা হবে, ফলে ঢোক গিলতে কষ্ট হবে। ধীরে ধীরে চোখের পাতা পড়ে আসবে (শিবনেত্র)। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হবে, ধীরে ধীরে রোগী অজ্ঞান হয়ে যাবে। ‘কার্ডিওটক্সিন’ এর প্রভাবে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে থাকবে। হৃদ্পেশী শিথিল হয়ে আসবে। রোগীর প্যারালাইসিস হতে পারে।
গোখরোর বিষ প্রকৃতিতে ‘নিউরোটক্সিন’ এবং ‘কার্ডিওটক্সিন’। স্নায়ুর উপর গোখরোর বিষ ক্রিয়াশীল হয় বলে পেশীর কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে যায়, পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্র এর ক্রিয়াকলাপ বন্ধ হয়ে যায়। দংশনের পরে সঠিক চিকিৎসা শুরু না হলে সাপ কামড়ের ৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে রোগী মৃত্যু হতে পারে। গোখরোর বিষের মারণ ক্ষমতা ০.২৮ মিলিগ্রাম/কেজি [*Ernest and Zug]। অর্থাৎ একটি ৬০ কেজি ওজনের পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলার জন্য মাত্র ১৫ থেকে ১৬ মিলিগ্রাম বিষ যথেষ্ট। গোখরোর বিষ বেদনানাশক ওষুধ তৈরীতে ব্যবহার করা হয় ক্যান্সার এর ওষুধ তৈরীতে গোখরোর বিষ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। গোখরোর স্পেকটাকেল চিহ্নটির জন্য ব্যাগ, জ্যাকেট প্রস্তুতির জন্য নির্বিচারে গোখরো সাপ মারা পড়ছে, যা অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জ।
গোখরো সাপের ফণা বন্ধ অবস্থায় কালো দাঁড়াশ সাপের (Rat Snake) গায়ের রং এর সাথে এর মিল থাকায় অনেক সময় ভ্রান্তি ঘটে। যদিও একটু ভালো করে লক্ষ্য করলেই ভুল ভেঙে যায়। আসলে গোখরো এবং দাঁড়াশ এর আবাসস্থলের প্রকৃতি একইরকম হওয়ার কারণে এই ধরনের ভুল হয়ে থাকে।
অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারনা রয়েছে, গোখরো নাকি দাঁড়াশ সাপের সাথে যৌনমিলন করে। এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারনা। জীবনবিজ্ঞান-এ উল্লিখিত জনন এর স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী যা অসম্ভব।
আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কল্প কাহিনীতে শুনে এসেছি সাপের মাথায় মনি হয়। কোনোভাবে তা পাওয়া সম্ভব হলে অফুরাণ ধনসম্পত্তির মালিক হওয়া যায়। এই ভুল ধারণা বহুকাল থেকে চলে আসছে। তার উপর টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নানা উদ্ভট গল্প দেখিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন বিভ্রান্ত করে চলেছে। এমনকি বেদে ও সাপুড়িয়ার দল সাপ খেলা দেখাবার সময় সাপের মনি বলে ছোট মুক্ত বা চকচকে পাথর বিক্রি করে লোকেদের বোকা বানিয়ে আসছে। গোখরো সাপের মাথায় ফনার ওপর আঠা দিয়ে এগুলোকে আটকে 'সাপের মনি' বলে ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে আসছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাপ এর মাথার দিক চিরে সেখানে লাল, হলুদ পাথর আগে থেকে রেখে পরে দর্শকের সামনে সেই পাথর বের করে বহুমূল্য দিয়ে তা বিক্রি করা হয়। যদিও এর ফলে সাপ টি অসুস্থ হয়ে মারা পর্যন্ত যেতে পারে। আসলে সাপের মাথায় মনি বা এ জাতীয় পাথুরে জিনিস কখনো তৈরী হয় না। একটু বাস্তববোধ নিয়ে ভাবলেই বোঝা যায়, সত্যিই সাপের মনি বলে কিছু থেকে থাকলে সাপুড়েরা নিজের কাছে না রেখে তা বিক্রি করে দিচ্ছে কেন?
ওঁ দেবীমম্বামহীনাং শশধরবদনাং চারুকান্তিং বদন্যাম্।
হংসারূঢ়মুদারামসুললিতবসনাং সর্বদাং সর্বদৈব ।।
স্মেরাস্যাং মণ্ডিতাঙ্গীংকনকমণিগণৈর্মুক্তয়া চ ।
প্রবালৈর্বন্দেহ হংসাষ্টনাগামুরুকুচগলাংভোগিনীং কামরূপাম্ ।।
(এর ভাবার্থ - সর্পদিগের মাতা, চন্দ্র বদনা, সুন্দর কান্তি বিশিষ্টা, বদন্যা, হংস বাহিনী, উদার স্বভাবা, লোহিত বসনা, সর্বদা সর্বঅভিষ্ট প্রদায়িনী, সহাস্য বদনা, কণক মনি মুক্তা প্রবালাদির অলঙ্কার ধারিনী, অষ্ট নাগ পরিবৃতা, উন্নত কুচ যুগল সম্পন্না , সর্পিণী, ইচ্ছা মাত্র রূপ ধারিনী দেবীকে বন্দনা করি।)
নদীমাতৃক বঙ্গভূমিতে সর্পদেবী মনসার পূজা সর্বাধিক জনপ্রিয়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা এর ব্যতিক্রম নয়। মেদিনীপুর অঞ্চলে বেশীরভাগ জায়গায় মনসার দেবীর মূর্তির পরিবর্তে মনসা গাছের ডাল বা মনসা ঘটে পূজা হয়। তবে অনেক জায়গায় মনসার মূর্তিও পূজিত হয়। এই মূর্তি ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে চতুর্ভূজা দেবীর দুই হাতে রয়েছে ফনাধর গোখরো। প্রধানত সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বা সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে মনসার পূজা করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জকপুরের বিখ্যাত শ্রী শ্রী মনসা মাতার মন্দিরে সারা বছর ধরে বিধিপূর্বক মনসা দেবীর পূজা হয়। মঙ্গল কাব্যধারার সবচেয়ে জনপ্রিয় কাব্য ‘মনসামঙ্গল’। সর্পদেবী মনসার মাহাত্ম্য, স্তুতি ও কাহিনি নিয়ে রচিত ‘মনসামঙ্গল’। গ্রাম বাংলার সর্প ভয়ে ভীত সাধারণ মানুষের কাছে ‘মনসামঙ্গল’ শ্রী চৈতন্যপূর্ব যুগ থেকেই ব্যপকভাবে সমাদৃত। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রথমা পত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর সর্পদংশনে মৃত্যু ঘটে। প্রচলিত লোকবিশ্বাস অনুযায়ী তা ছিল ফনাধর গোখরোর দংশন।
প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য এবং পুরাণে গোখরো সাপ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। হিন্দু দেবতা দেবাদিদেব মহাদেবের এর নীলকন্ঠে শোভা বর্ধনকারী নাগরাজ বাসুকী, এক গোখরো সাপ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মনে করেন যমুনায় কালীয়দমনের সূত্রে এই সাপের ফনায় শ্রী কৃষ্ণের পায়ের দাগ অঙ্কিত হয়েছে।
স্বামী বিবেকানন্দের নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এর প্রতীকে কুন্ডলীকৃত গোখরো সাপের উপস্থিতি চোখে পড়ে। এই কুন্ডলীকৃত গোখরো সাপ প্রকৃত অর্থে সনাতন ধর্মে উল্লিখিত মানবদেহের প্রধান স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে উপস্থিত কুন্ডলীনি চক্রের প্রতীক। স্বামীজি যোগবিদ্যার অনুশীলন এবং ধ্যানের মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের ‘কুলকুন্ডলীনি জাগরণ’ এর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সাধারন বাংলা নাম – গোখরো।
অন্যান্য প্রচলিত নাম – খরিস, দুধে খরিস, তেঁতুলে খরিস, গোখুরা, তঁপ ইত্যাদি।
ইংরেজি নাম – Indian Cobra, Spectacled Cobra, Asian Cobra, Binocellate Cobra
বৈজ্ঞানিক নাম – Naja naja (Linnaeus, 1758)
আয়তন –৩৯ ইঞ্চি থেকে ৮৭ ইঞ্চি ।
সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য – গোখরো সাপের আঁশ মসৃন এবং চকচকে, চওড়া গলা ও মাথা বিশিষ্ট। শরীরের রং বাদামি, হালকা হলুদ বা ধূসর কালো। ফণার পিছন দিকে ‘চশমা’-র" বা ‘গরুর খুর’-এর মতো একটি চিহ্ন থাকে, এই কারণেই সাপটির এরূপ নামকরণ হয়েছে।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য – এরা দিন ও রাত উভয় সময়েই সজাগ থাকে। এরা খুব ভালো সাঁতারু।
বাসস্থান – চাষের জমি, ইঁদুরের গর্ত, বাঁশ বাগান, ছায়াঘেরা ঝোপঝাড়, ঘরের ফাটল, পাথরের স্তূপ, জলার ধার, শহরতলি এলাকা।
খাদ্য – ইঁদুর, ব্যাঙ, অন্যান্য সাপ, পাখি ও তাদের ডিম।
প্রজনন – ডিম পাড়ে।
বিষের প্রকৃতি – গোখরোর বিষ প্রকৃতিতে নিউরোটক্সিন এবং কার্ডিওটক্সিন। সঠিক চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে প্যারালাইসিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ বন্ধ হয়ে মৃত্যু।
বিষের লক্ষণ – দংশনের পরে কামড়ের জায়গায় তীব্র জ্বালা যন্ত্রনা হবে। ক্ষতস্থান থেকে চুঁইয়ে রক্তরস বের হবে, ধীরে ধীরে যন্ত্রনা বাড়বে এবং ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু নিউরোটক্সিন বিষের ক্রিয়াশীলতার কারণে পরবর্তীতে জ্বালা যন্ত্রনা কমতে থাকবে।
সংরক্ষণ – তফশিল ২ (Wildlife Protection Act 1972)
বিপদ - ওষুধ প্রস্তুতিতে বিষের ব্যবহার, চামড়ার জন্য চোরাশিকার এর জন্য এরা বর্তমানে বিপন্ন। গোখরোর সুদৃশ্য চামড়া এবং বিশেষ করে ফণার স্পেকটাকেল চিহ্নটির জন্য ব্যাগ, জ্যাকেট প্রস্তুতির জন্য নির্বিচারে গোখরো সাপ মারা পড়ছে যা অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক। সাপুড়েদের খুব পছন্দের সাপ। এই সাপ আচরণে অনেকটাই শান্ত এবং অনেকক্ষণ ফণা তুলে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু খেলা দেখানোর আগে এরা সাপের বিষ দাঁত উপরে ফেলে দিয়ে নির্বিষ করে রাখে এরফলে অচিরেই সাপটি মারা যায়।
সাপ আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। বাস্ততন্ত্রে সাপের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সাপ মারবেন না। সাপ বাঁচান। বাড়িতে বা এলাকায় সাপ ঢুকে পড়লে সাপ না মেরে সাহায্য নিন এলাকার সাপ উদ্ধারকারী সর্পমিত্রদের।
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য - দেবরাজ চক্রবর্তী (যোগাযোগঃ ৮৯৭২১৭৪০৯৩)
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য - কৌস্তভ চক্রবর্তী (যোগাযোগঃ ৯৪৭৫৫৯৯৩২২)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য – মেহেবুব আলম (যোগাযোগঃ ৯৪৭৪৬২৩৬২০/৯৭৩৫৭৩৮৫৩৩)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর (দাসপুর) এলাকার জন্য – গৌর মাজী (যোগাযোগঃ ৯৬০৯১১৯১১৪)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর (ক্ষীরপাই) এলাকার জন্য – মলয় ঘোষ (যোগাযোগঃ ৯৬৩৫৯৩৫০২৮)
রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – উমেশ গুঁই (যোগাযোগঃ ৯৮০০৮০০৫৮৯)
এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – অর্ধেন্দু দাস মহাপাত্র (যোগাযোগঃ ৭৫৫১০০৭৩৩৬/৭৯০৮৫১৩৪৯৬)
পটাশপুর/এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – সোমনাথ দাস অধিকারী (যোগাযোগঃ ৯৭৩৫২০৩৬২৪)
midnapore.in