রাকেশ সিংহ দেব।
Home » Medinikatha Journal » Rakesh Singha Dev » Russell's Viper of Medinipur
২০০৮ সাল, মেদিনীপুরে মেস জীবন। একদিন হঠাৎ টিউশন থেকে মেসে ফিরে পরিচিত এক ফোন পেয়ে আবার দ্রুত বেরিয়ে পড়তে হলো মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। খোঁজ করে নজরে এল পুরুষ বিভাগের এক বেডের উপর বসে আছেন আমারই এক পরিচিত। মেসোমশাই এর মাথার উপর স্যালাইনের বোতল আর পায়ের নীচে ক্যাথেটার। জানতে পারলাম খড়ের গাদা থেকে গরুকে দেওয়ার জন্য খড় টানার সময় কামড়েছে চন্দ্রবোড়া । সময় অপচয় না করে মেসোমশাইকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। যথারীতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালু হয়। ২৪ ঘন্টা পেরোনোর পরেও বিশেষ শারীরিক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। ক্রমশ ওনার দুই পা অস্বাভাবিক রকমের ফুলতে শুরু। এভাবে কাটে আরও ২৪ ঘন্টা। ৪৮ ঘন্টা পরে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করলে মেদিনীপুর হাসপাতাল থেকে কলকাতা পিজি তে রেফার করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীতে সেখানেই তিনি মারা যান।
২০২০ সাল জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি। এক দুপুরে ঝিটকা থেকে অনুজপ্রতিম বাপ্পা মাহাত’-র ফোন। ‘দাদা আমার পরিচিত একজনকে মাঠে কাজ করার সময় চন্দ্রবোড়া কামড়েছিল। মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। AVS চলেছে, এখন ভালো আছে। তবে রিলিজ পায়নি। নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছে এবং ডাক্তারেরা রক্ত পরীক্ষা করছে। সে খুব চিন্তা করছে তাই আমি জানতে চাইছি।’ আমি রিপোর্ট চাইতে পাঠাল, দেখলাম ভদ্রলোকের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্র স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশী। তাকে বুঝিয়ে বললাম, চন্দ্রবোড়ার কামড়ে আমাদের কিডনি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। বাপ্পাকে বললাম ভদ্রলোক যেন চিন্তা না করেন, কয়েকদিন হাসপাতালে ডাক্তারবাবুদের পর্যবেক্ষণে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেই ওনাকে ছেড়ে দেবে। যথারীতি তার কয়েকদিন পর সেই সাপকাটা ভদ্রলোক সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
আমার জানা এই দুটি ঘটনা ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ‘চন্দ্রবোড়া’। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা বাদ দিয়ে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এদের অবাধ বিচরণ। এশিয়ার ‘BIG 4’ গ্রুপের এই ঘাতক সদস্য কোথাও ‘উলুবোড়া’ নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম - Russell's Viper। বিজ্ঞানসম্মত নাম - Daboia russelii। চন্দ্রবোড়া ‘ভাইপারিডি’ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। আমাদের আশেপাশে যেমন ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার মানুষ দেখা যায়, সাপেদের জগতেও তাই। আপনি যদি কোনও নিরীহ মানুষের পা মাড়িয়ে দেন তাহলে তিনি চুপচাপ সরে দাঁড়াবেন। সচেতন মানুষের পা মাড়ালে কপালে বাছাই করা গালিগালাজ বাঁধা। আর ভুলেও পাড়ার মস্তান দাদাটির পা মাড়ালে এক ঘুষিতে সে আপনার নাক ফাটিয়ে দেবে। কারণ এনারা মুখে নয়, হাতে কথা বলে থাকেন। সেইরকম অন্যান্য সাপ মানুষকে এড়িয়ে চললেও এই সাপের স্বভাব ঠিক উল্টো। এরা সচরাচর পালিয়ে যায়না নিজেদের বিপন্ন মনে করলে মস্তানদের মতো গা ফুলিয়ে হুংকার ছাড়ে। প্রতিবছর আমাদের রাজ্যে বহু সংখ্যক মানুষ এর কামড়ে মারা যায়। আমাদের অবিভক্ত মেদিনীপুরের বাৎসরিক মোট সাপকাটা রোগীর সিংহভাগ চন্দ্রবোড়ার দংশনের শিকার। মাঠ ঘাট, চাষের জমি, ঝোপঝাড়, বসত বাড়ি সর্বত্র এই সাপের অবাধ বিচরণ। আক্রমণের ক্ষিপ্র গতি ও বিষের তীব্রতার কারণে ‘কিলিংমেশিন’ হিসেবে বদনাম কুড়িয়েছে এই সাপটি।
চন্দ্রবোড়া মূলত নিশাচর। তবে আজকাল দিনের বেলাতেও চন্দ্রবোড়ার দেখা মিলছে এবং কামড়ের প্রচুর খবর আসছে। খোলা মাঠ, কাঁটা ঝোপঝাড়, জঙ্গলের ধারে, পাথরের মাঝে এদের দেখা মেলে। ইঁদুর এদের প্রধান খাদ্য বলে লোকালয়েও এদের মাঝেমধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। চন্দ্রবোড়া সাপের চলাফেরা খুব ধীর। বিরক্ত হলে প্রেসার কুকারের মতো হিস্হিস্ শব্দ করে। রেগে গেলে সারা শরীর পেঁচিয়ে ‘S’ আকৃতির মতো আকার ধারণ করে এবং শরীরের প্রথম ভাগের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তুলে ধরে। একেবারে শেষে বাধ্য হয়ে কামড়াতে প্রবল বেগে আঘাত হানে। পরিসংখ্যান বলছে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে আঘাত হানতে পারে চন্দ্রবোড়া। এরা ‘ওভোভিভিপেরাস’(Ovoviviparous), অর্থাৎ মা ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে। বছরের প্রথম দিকে যৌনসঙ্গম করার পরে স্ত্রী চন্দ্রবোড়া মে-জুলাই মাসে একসাথে প্রায় ৩০-৪০টি বাচ্চা প্রসব করে।
লেজ সহ দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯ ইঞ্চি থেকে ৭১ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। দেহ মোটাসোটা কিন্তু লেজ ছোটো এবং দেহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে সরু। মাথার উপরের আঁশ দেহ অপেক্ষা ছোট। বড় আঁশের জন্য চামড়ায় খসখসে ভাব লক্ষ্য করা যায়। মাথা চ্যাপ্টা ত্রিকোণাকার। মাথার তুলনায় ঘাড় অনেকটাই সরু। নাসাছিদ্র বড়ো। মাথার ওপরের দিকে সাদা সরু তীর চিহ্ন এবং একজোড়া ত্রিকোণ বা গোলাকার বাদামী দাগ আছে। চোখের তারা লম্বালম্বি,চোখের পাশে দুটো গাঢ় ত্রিকোণ আকৃতির দাগ চোখে পড়ে। শরীরের রঙ বাদামী, হলদে বাদামী অর্থাৎ কাঠ রঙের এরফলে শুকনো পাতার মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। ঠোঁটের আঁশ বাদামী রঙের। জিহ্বার রঙ বাদামী বা কালো। সারা গায়ে স্পষ্ট বড়ো গাঢ় বাদামী গোলগোল দাগ আছে, এই দাগগুলোর মাথা ছুঁচালো। অনেকসময় দাগগুলো একসাথে দেখতে শিকলের মত লাগে। গোলাকার দাগগুলো দেখতে অনেকটাই চাঁদের মতো, এই কারণেই হয়তো সাপটির এরূপ নামকরণ হয়েছে। দাগগুলির চারপাশে কালো রঙের বর্ডার থাকে, তার মধ্যে সাদা বা হলুদের ছিটে লক্ষ্য করা যায়। পেটের দিকের আঁশ এর রঙ সাদা। এদের বিষদাঁত লম্বা এবং চোয়ালের পিছনের হাড়ের সাথে লাগানো থাকে যাতে ব্যবহার না করার সময় ভাঁজ করে রাখা যায়। ভাইপারদের বিষের থলি অন্যান্য সাপেদের তুলনায় বড়ো হয়, যেকারণে এদের মাথা চওড়া ও ত্রিকোণ আকৃতির। এদের তীব্র ‘হেমোটক্সিন’ বিষে রক্ত ধ্বংসকারী উপাদান বর্তমান। এদের বিষদাঁতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫-১৬ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বিষদাঁত পৃথিবীতে দ্বিতীয় সবচেয়ে বড়।
চন্দ্রবোড়ার কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়। কামড়ের জায়গা দ্রুত ফুলতে থাকে, দংশনের স্থান থেকে চুঁইয়ে রক্ত বের হতে পারে। এর পরে চোখের কোণ, দাঁতের মাড়ি, নাক বা যে কোন কাটা অংশ থেকে, থুতুর সাথে, বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত আসতে পারে। চোখ লাল হয়ে যায়, কোমরের দিকে ও পাঁজরের নিচের দিকে ব্যাথা শুরু হয়। সারা শরীর বিশেষ করে পা ফুলতে থাকে। চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিন প্রকৃতির। এদের বিষদাঁত বড় এবং ভেতরের দিকে গোটানো থাকে বলে Dry Bite এর পরিমান যথেষ্টই কম। এদের মাত্র ৪২ মিগ্রা পরিমান বিষ পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। চন্দ্রাবোড়ার বিষ মানুষের শরীরের রক্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এর প্রভাবে রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট যা রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, সেগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। এই বিষের প্রভাবে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হতে থাকে, এরফলে রক্তজালিকা ফেটে গিয়ে আভ্যন্তরীন রক্তপাত ঘটে থাকে। রোগী হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে বা অরগ্যান ফেলিয়োরের কারণে মারা যেতে পারে। ধীরে ধীরে প্রসাবের সাথে রক্ত আসতে থাকে। এই লক্ষ্মণ দেখা গেলে বুঝতে হবে রোগীর কিডনি বিকল হতে শুরু করেছে। একসময় মূত্রত্যাগ বন্ধই হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হতে শুরু করে, রক্তে ইউরিয়া আর ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায় এমতাবস্থায় রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই অংশটুকু ছাড়া বাকি চিকিৎসা যে কোন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতালে পাওয়া সম্ভব। উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে কামড়ের একদিন থেকে চোদ্দো দিনের মধ্যেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
চন্দ্রবোড়ার কামড়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকেরা Whole Blood Clotting Test বা WBCT20 নামক একটি পরীক্ষার সাহায্য নেন। এতে কাঁচের তৈরী পরিষ্কার এবং শুকনো একটি টেস্টটিউব এর মধ্যে সাপের কামড় খাওয়া রোগীর রক্ত নিয়ে তা ২০ মিনিট স্থির ভাবে রাখা হয়, যদি রক্ত তার মধ্যে সম্পূর্ণ জমাট না বাঁধে তবে বুঝতে হবে রোগীকে চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়েছে। এমতাবস্থায় দ্রুত ১০ ভয়েল AVS স্যালাইন এর সাথে রোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে হবে। এরপর আবার নতুন করে WBCT20 টেস্ট করে দেখতে হবে, যদি তাতেও রক্ত না জমে তখন আবার ১০ ভয়েল AVS চালু করতে হবে। এই সাপ কামড়ালে ওঝা গুনীনের বুজরুকিতে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব সাপে কাটা রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সাপের কামড়ের আধুনিক এবং একমাত্র ওষুধ ANTI VENOM SERUM বা AVS যত দ্রুত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো যাবে তত বেশী বাড়বে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা। যেহেতু চন্দ্রবোড়ার কামড়ে রোগীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তাই রোগীকে সবসময় এমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ যেখানে ডায়ালাইসিসের সুব্যবস্থা রয়েছে। ডাক্তারবাবু সাপের কামড়ের উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করেন তাই রোগীর সাথে সাপ নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসবার কোনও প্রয়োজন নেই। NATIONAL HEALTH PROFILE 2019 এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে সর্পদংশনের মোট ৩৬২২৯ টি ঘটনা নথীভুক্ত হয়েছিল, মারা যায় ২০৩ জন। এরমধ্যে সিংহভাগই ছিল চন্দ্রবোড়ার কামড়। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয় দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করলে সর্পাঘাতে মৃত্যুর হার আমরা অনায়াসে কমিয়ে ফেলা যাবে।
বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে "কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা"। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে কোনও প্রজাতির অত্যধিক সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আজ রাজ্যজুড়ে চন্দ্রবোড়ার বাড়বাড়ন্তের পেছনে রয়েছে প্রকৃতি নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ উপায়ের উপর মানব হস্তক্ষেপ। বছর দশেক আগেও আমাদের রাজ্যের জলাভূমি, ঝোপঝাড়, বাঁশবন, এমনকি বাড়ির চারপাশে অবাধে ঘুরে বেড়াত বন বিড়াল, নেউল ও গোসাপের মত সর্পভুক প্রাণীরা। চন্দ্রবোড়া সহ অন্যান্য বিষধর সাপ থাকত এদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায়। কিন্তু দ্রুত বাসস্থানের সংকোচন এবং অবৈধ শিকারের ফলে এই সমস্ত প্রাণীরা আজ কোনঠাসা। এদের সংখ্যা দ্রুতহারে কমছে, এর ফলে তরতরিয়ে বাড়ছে সাপের বংশবিস্তার। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা বাদ দিলে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই আজ চন্দ্রবোড়ার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
চন্দ্রবোড়ার প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে সবচেয়ে পরিচিত হল শাঁখামুটি। সর্পভুক শাঁখামুটি বা ব্যান্ডেড ক্রেইট এর খাদ্যতালিকার প্রধান উৎস হলো বিভিন্ন সাপ। অত্যন্ত বিষধর কিন্তু স্বভাব লাজুক এই সাপ মানুষের সংস্রব এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। শাঁখামুটির প্রিয় খাবার চন্দ্রবোড়া ও তার বাচ্চা। স্বাভাবিকভাবেই যেখানে শাঁখামুটির সংখ্যা বাড়বে, সেখানে চন্দ্রবোড়ার সংখ্যা তত কমবে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শাঁখামুটি দেখলেই আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ তাদের মেরে ফেলছে। "কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা"-র যে নিয়ম প্রকৃতি নিজেই করে দিয়েছিল, মানুষ নিজের অপরিণামদর্শিতার ফলে তা নষ্ট করে আজ খেসারত দিচ্ছে। আটকানো যাচ্ছেনা বিষধর চন্দ্রবোড়ার বাড়বাড়ন্ত। শাঁখামুটির মত বন্ধু সাপ মেরে চন্দ্রবোড়ার সংখ্যা বাড়িয়ে মানুষ নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে, আজ সময় এসেছে সেটা বোঝার।
তুতুর ( Common Sand Boa ) যেটি সম্পূর্ণ নির্বিষ সাপ। এর সাথে চন্দ্রবোড়ার গায়ের রঙ এবং প্যাটার্নের কিছুটা মিল থাকার কারণে বেঘোরে মারা পড়ে, কিন্তু ভালো করে পর্যালোচনা করলে সহজেই সাপ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করা যায়। নির্বিষ ময়াল (Indian Rock Python) এর সাথে চন্দ্রবোড়াকে গুলিয়ে ফেলে অনেকে মেরে ফেলেন। এমনই এক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানার অন্তর্গত রাঙ্গিয়াম গ্রামে। গত ২১ জুলাই ২০১৯, চন্দ্রবোড়া মনে করে একটি প্রায় ৮ ফুটের ময়াল সাপকে মেরে ফেলেন গ্রামবাসীরা।
সাধারন বাংলা নাম – চন্দ্রবোড়া, উলুবোড়া।
ইংরেজি নাম – Russell’s Viper
বৈজ্ঞানিক নাম – Daboia russelii (Shaw & Nodder, 1797)
আয়তন –৩৯ ইঞ্চি থেকে ৭১ ইঞ্চি ।
সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য – দেহ মোটাসোটা কিন্তু লেজ ছোটো এবং দেহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে সরু। মাথা ত্রিকোণাকার। সারা গায়ে লম্বালম্বি স্পষ্ট বড়ো গাঢ় বাদামী গোলগোল দাগ আছে, এই দাগগুলোর মাথা ছুঁচালো। অনেকসময় দাগগুলো একসাথে দেখতে শিকলের মত লাগে। গোলাকার দাগগুলো দেখতে অনেকটাই চাঁদের মতো, এই কারণেই হয়তো সাপটির এরূপ নামকরণ হয়েছে।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য – নিশাচর। দিনের বেলায় চুপচাপ থাকে। গভীর রাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বাসস্থান – ইঁদুরের গর্ত, বাঁশ বাগান, ছায়াঘেরা ঝোপঝাড়, ঘরের ফাটল বা গর্ত।
খাদ্য – ইঁদুর।
প্রজনন – সরাসরি বাচ্চা দেয়।
বিষের প্রকৃতি – এদের বিষদাঁত সবচেয়ে বড় এবং তীক্ষ্ণ। তীব্র রক্ত ধ্বংসকারী বিষ বা হেমোটক্সিন।
বিষের লক্ষণ – কামড়ের স্থানে তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা হয়। হেমোটক্সিন বিষের প্রভাবে দংশন স্থানের আশেপাশে ফোস্কা বা ঘা দেখা যায়। চামড়া , দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বেরোতে পারে। লালা বা মূত্রের সাথে রক্ত আসে। এই বিষ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই রোগীর ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে।
সংরক্ষণ – তফশিল ২ (Wildlife Protection Act 1972)
বিপদ - ওষুধ প্রস্তুতিতে বিষের ব্যবহার, চামড়ার জন্য চোরাশিকার এর জন্য এরা বর্তমানে বিপন্ন|
সাপ আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। বাস্ততন্ত্রে সাপের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সাপ মারবেন না। সাপ বাঁচান। বাড়িতে বা এলাকায় সাপ ঢুকে পড়লে সাপ না মেরে সাহায্য নিন এলাকার সাপ উদ্ধারকারী সর্পমিত্রদের।
মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য - দেবরাজ চক্রবর্তী (যোগাযোগঃ ৮৯৭২১৭৪০৯৩)
খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য - কৌস্তভ চক্রবর্তী (যোগাযোগঃ ৯৪৭৫৫৯৯৩২২)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর এলাকার জন্য – মেহেবুব আলম (যোগাযোগঃ ৯৪৭৪৬২৩৬২০/৯৭৩৫৭৩৮৫৩৩)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর (দাসপুর) এলাকার জন্য – গৌর মাজী (যোগাযোগঃ ৯৬০৯১১৯১১৪)
ঘাটাল, পশ্চিম মেদিনীপুর (ক্ষীরপাই) এলাকার জন্য – মলয় ঘোষ (যোগাযোগঃ ৯৬৩৫৯৩৫০২৮)
রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – উমেশ গুঁই (যোগাযোগঃ ৯৮০০৮০০৫৮৯)
এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – অর্ধেন্দু দাস মহাপাত্র (যোগাযোগঃ ৭৫৫১০০৭৩৩৬/৭৯০৮৫১৩৪৯৬)
পটাশপুর/এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর এলাকার জন্য – সোমনাথ দাস অধিকারী (যোগাযোগঃ ৯৭৩৫২০৩৬২৪)
midnapore.in