MEDINI ACHARYA, 2024, Manju Maity, Sailendra Maity, মেদিনী আচার্য, ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি, मेदिनी आचार्य, २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

মেদিনী আচার্য ২০২৪


মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি



"ওই দেখ, চোরেদের মা যাচ্ছে।..."


"খেয়েদেয়ে কাজ নেই, বাড়িতে কতগুলো চোর পুষেছে।..."


রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত শুনতে হত এইসব কথা। প্রথমদিকে খারাপ লাগলেও, ভেঙে পড়েননি মঞ্জু মাইতি।


সুনিষ্ঠানন্দজী মঞ্জুদেবীকে বুঝিয়েছিলেন—


"ঠাকুর বলতেন, ‘লোক না পোক’। এ কি বললে, ও কি বললে—তাই শুনে বুঝি চলতে হবে? ছিঃ ছিঃ!


সৎকার্য করে যাব, যারা criticize (সমালোচনা) করবে তাদের দিকে দৃকপাতও করব না।"


সুনিষ্ঠানন্দজীর সেই কথা শুনে নিজেকে আরো শক্ত করেছিলেন মঞ্জুদেবী। যেভাবেই হোক এই ছেলেগুলিকে মানুষের মত মানুষ করবেন। পাশে ছিলেন স্বামী শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি।


সেই ছেলেগুলির কেউ সাঁওতাল, কেউ জেলে আবার কেউ বা লোধা। তাদের নিয়েই সংসার মঞ্জু-শৈলেন্দ্রর।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

প্রতিদিন ভোর হলেই শুরু হয় তাঁদের যুদ্ধ। সবগুলি ছেলেকে পড়তে বসানো। বাড়িতে জায়গা খুবই কম তাই কিছু বসে বারান্দায়, কিছু ভেতরের ঘরে আবার কেউবা সিঁড়ির ওপরে ঠাকুরঘরে। বিভিন্ন দিন আলাদা আলাদা মাস্টারমশাই বা দিদিমনিরা আসেন পড়াতে। শৈলেন্দ্রবাবু ঘুরে ঘুরে দেখেন কার পড়া বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। অসুবিধা হলেই সেই ছাত্রের কাছে বসে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নয় তাঁরা তাই রান্নার জন্য লোক রাখতে পারেন নি। মঞ্জুদেবী নিজেই সকাল থেকে লেগে পড়েন রান্নাঘরে। রান্নার মাঝেই লক্ষ রাখেন ছেলেদের দিকে, কেউ ফাঁকি দিচ্ছেনাতো ? রোজ প্রায় ২০ জনের জন্য বিভিন্ন সবজি কাটতে হয়। তারই মাঝে একদিকে হয়তো কড়ায় মাছভাজা চলছে, অন্যদিকে কুকারে হচ্ছে ডাল সিদ্ধ। সব ছেলেদের সময়ের মধ্যে স্নান করিয়ে খাইয়ে স্কুল পাঠাতে হবে তো।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

সেই চোরেদের মায়ের দুই সন্তান আজ বেলুড় রামকৃষ্ণমিশন থেকে এম.এ ও এম.এস.সি করছে। আজ আর কেউ চোরেদের মা বলে না।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

শৈলেন্দ্রবাবু বয়সে বড় তাই তাঁর কথা প্রথমে বলছি। ১৯৫০ সালে মেদিনীপুর শহরের নূতনবাজারের মাটির বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা গোষ্ঠবিহারী মাইতি এবং মা প্রমোদাবালা মাইতি। গোষ্ঠবিহারী নদীর তীরে চাষবাস করতেন। ৫ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার। শৈলেন্দ্রবাবু পড়াশুনার শুরু হয় নিত্তবাবুর পাঠশালায় (এখন প্রাইমারি স্কুল)। এরপর কিছুদিন মহাতাবপুর স্কুল হয়ে ভর্তি হন টাউন স্কুলে। ক্লাস ৮ থেকেই তিনি স্কুলের ক্রিকেট, ফুটবল ও হকি টিমের ভালো প্লেয়ার ছিলেন। সেই সময় স্কুলগুলিতে খেলাধুলা ও পড়াশুনার রেজাল্টের উপরে ভিত্তি করে "বেস্ট বয়" নির্বাচন করা হত। ১৯৭২,১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ এই তিন বছর পর পর তিনি বেস্ট বয় নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছিলেন। সেই রেকর্ড পরে আর কেউ ভাঙতে পারেনি। স্কুল জীবন থেকেই তিনি বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েন। কোথাও অন্যায় দেখলেই সবাইকে সংঘবদ্ধ করে প্রতিবাদ করতেন।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

স্কুল জীবনের পরে কমার্স নিয়ে ভর্তি হন কৈবল্যদাইনি (K.D. College of Commerce and General Studies) কলেজে। পরে রথিমোহন সিনহা-র উপদেশে মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন। জেলায় আয়োজিত বিভিন্ন ৫ মাইল ও ১০ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতায় তিনি পদক পেয়েছেন। প্রথম দিকে ফ্রন্টিয়ার ও অনিক পত্রিকার এজেন্সি নিয়েছিলেন। পরে একটি সংস্থার হয়ে রুরাল ডেভলপমেন্টের কাজে যোগ দেন। নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি এবং সাঁকরাইলের বিভিন্ন গ্রামে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন।


ইতিমধ্যেই তাঁর হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে (VSD, ventricular septal defect)I অপারেশন করতে যান ভেলোরে (CMC)। সেখানে হসপিটালে থাকাকালীন লক্ষ করলেন যে, খাওয়ার চার্ট অনুযায়ী খাওয়ার দেওয়া হচ্ছেনা। তিনি সমস্ত বেডে গিয়ে সবাইকে ব্যাপারটা বললেন এবং বোঝালেন যে চার্ট অনুযায়ী না খেলে রোগীদেরই ক্ষতি। পরের দিন প্রতিবাদ জানিয়ে ৪৫০ বেডের রোগীরা খাওয়ার বয়কট করলেন। কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিয়ে পরের দিন থেকেই চার্ট অনুযায়ী খাওয়ার দেওয়া শুরু করলেন। ডিরেক্টর নিজে এলেন শৈলেন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর এই কাজে খুশি হয়ে CMC-র ডিরেক্টর অপারেশনের পরে তাঁকে ৪০০০ টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। এই ধরণের ঘটনা ভেলোরের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথম হয়েছিল।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

তাঁর কাজ দেখে IIT খড়্গপুরের রুরাল ডেভেলপমেন্ট শাখা তাঁকে IIT-র হয়ে কাজ করতে অনুরোধ করে। IIT-র হয়ে নায়াগ্রামে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি লক্ষ করেন যে ঠিকাদার রেট চার্ট অনুযায়ী লেবারদের মজুরি দিচ্ছেনা। তিনি ব্যাপারটা শ্রমিকদের বোঝাতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করে এবং ঠিকাদার রেটচার্ট অনুযায়ী মজুরি দিতে বাধ্য হয়। সেইসময় তিনি "সঞ্জীবনী" নামে একটি NGO তৈরী করেন। এরপরে তিনি IIT-র হয়ে পুরুলিয়াতে কাজ করেছিলেন। মেদিনীপুরে APDR-এর শাখা প্রতিষ্ঠায় তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তাঁর উদ্যোগেই বিনপুর, ঝাড়গ্রাম ও বান্দোয়ানে APDR এর ইউনিট খোলা হয়। তিনি APDR-এর রাজ্য কমিটিতেও ছিলেন। এইসবের পাশাপাশি একসময় তিনি জাগরী পত্রিকা নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করতেন।শৈলেন্দ্রবাবু যখন কেশিয়ারিতে কাজ করছিলেন সেই সময় আলাপ হয় মঞ্জু নন্দী-র সঙ্গে। মঞ্জুদেবীও সেখানে রুরাল ডেভলপমেন্টের কাজে যুক্ত ছিলেন। পরে তাঁরা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

মঞ্জু মাইতির জন্ম হুগলির কুতুলপুরের কোয়ালপাড়া গ্রামে। বাবা মহাদেব নন্দী এবং মা স্বরস্বতী নন্দীর একমাত্র কন্যা মঞ্জু। মঞ্জুদেবীর এক দাদা এবং এক ভাই। তাঁর গ্রাম থেকে জয়রামবাটি এবং কামারপুকুর খুব দূরে নয়। তাই খুব ছোট থেকেই শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা এবং স্বামীজীর আদর্শে বড় হয়েছেন। পড়াশুনা দেওপাড়া চম্পামনি হাইস্কুল থেকে। তারপর কামারপুকুর কলেজ। ক্লাস ৭ থেকেই তিনি সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেইসময় শিশির মহারাজ, মহেশ মহারাজের সঙ্গে বেলুড় মঠ আয়োজিত বিভিন্ন ক্যাম্পে সেচ্ছাসেবক হয়ে গিয়েছেন।


১৯৯৪ সালে তাঁদের পুত্র সন্তান হয়। নাম সায়ন । বেশ চলছিল সব কিছুই। কিন্তু ২০০৭ সালে সায়নের যখন ১৩ বছর বয়স হঠাৎই সবকিছু বদলে গেল। সায়নের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ল। সেই বছরই ১৬ই নভেম্বর মাত্র ১৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিল সায়ন। দুজনের জীবনেই অন্ধকার নেমে এলো। মঞ্জুদেবীর খাওয়াদাওয়া বন্ধ হল। সারাদিন ঠায় বসে থাকেন আর চোখের জল ফেলেন। এইভাবেই নভেম্বর-ডিসেম্বর কাটলো। শৈলেন্দ্রবাবু দেখলেন যে ভাবেই হোক মঞ্জুদেবীকে স্বাভাবিক করতেই হবে।


রামকৃষ্ণমিশনের পেছনের গেটের উল্টোদিকের গলিতেই তাঁদের বাড়ি। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি শৈলেন্দ্রবাবু বাড়ি থেকেই শুনতে পেলেন রামকৃষ্ণমিশনের বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে মাইক লাগিয়ে একটি স্কুল উদ্বোধনের অনুষ্ঠান চলছে। শৈলেন্দ্রবাবু একরকম জোর করেই মঞ্জুদেবীকে সেখানে নিয়ে যান। সেখানে রামকৃষ্ণমিশনের ম্যানেজিং কমিটির প্রেসিডেন্ট রতিমোহন সিনহা তাঁদের দেখে প্রশ্ন করেন, ছেলে কোথায়? কেঁদে ফেলেন মঞ্জুদেবী। শৈলেন্দ্রবাবু তাঁকে অনুরোধ করেন যাতে তিনি মঞ্জুদেবীকে রামকৃষ্ণমিশনের কোন কাজে যুক্ত করে দেন। সব শুনে তিনি তাঁদের সেক্রেটারি মহারাজের কাছে যেতে বলেন।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

সব শুনে শ্রুতিসারানন্দ জী মহারাজ বলেন— "আমি নিরুপায়, ৩ জন শিক্ষক নেওয়ার ছিল, নেওয়া হয়ে গেছে।"


শ্রুতিসারানন্দ জী তাঁদেরকে তৎকালীন এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মায়াধীশানন্দজী মহারাজ এবং হেডমাস্টার - সুনিষ্ঠানন্দজী মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে বললেন।


মায়াধীশানন্দজী এবং সুনিষ্ঠানন্দজী মহারাজের কাছে শৈলেন্দ্রবাবু অনুরোধ করেন— "পয়সা লাগবেনা, ওকে বাচ্চাদের যে কোন কাজে লাগিয়ে দিন।


মহারাজরা চিন্তা করে বললেন— "আবৃতি-গান কিছু জানেন?"


শৈলেন্দ্রবাবু উৎসাহের সঙ্গে বললেন—"আবৃতি এবং গান দুটোতেই ডিপ্লোমা করা আছে।"


মহারাজরা আরো একটু চিন্তা করে বললেন— "দাতব্য চিকিৎসালয়েও একজন মহিলা এটেন্ডেন্ট দরকার।"


শৈলেন্দ্রবাবু আরো উৎসাহের সঙ্গে বললেন—"১ বছরের হেলথের ট্রেনিংও নেওয়া আছে।"


মহারাজরা রামকৃষ্ণমিশনের প্রেসিডেন্ট শংকর পণ্ডা-র সঙ্গে আলোচনা করে জানালেন যে মঞ্জুদেবী পরের দিন থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন।" মায়াভিসানন্দজী ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুর মত মিশতেন তাই মঞ্জুদেবীর ছেলে সায়ন তাঁকে 'বন্ধু' বলে ডাকতো।


যেহেতু সায়নকে ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তাই সুনিষ্ঠানন্দজী মঞ্জুদেবীকে রামকৃষ্ণমিশনের হয়ে ক্যান্সার পেশেন্টদের পরিষেবাতেও যুক্ত করলেন।


মায়াধীশানন্দজী, সুনিষ্ঠানন্দজী এবং শংকর পণ্ডা এই তিনজন ঈশ্বরের আশীর্বাদরূপে মঞ্জুদেবীর জীবনে এসেছিলেন। আজও এই তিনজনের কথা বলতে গেলেই মঞ্জুদেবীর চোখে জল আসে।


বাচ্চাদের পেয়ে নতুন জীবন পেলেন মঞ্জুদেবী। সারাদিন তাদের নিয়ে মেতে থাকলেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেন মঞ্জুদেবী।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

কিছুদিন পরে দেখা গেল যারা বেতন পান তারা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে কিন্তু মঞ্জুদেবী সারাদিন ধৈর্য সহকারে বাচ্চাদের গান-আবৃতি শেখাচ্ছেন।


মহারাজরা তাঁর কাজে খুশি হয়ে বললেন— "৬ টি বাচ্চার দায়িত্ব নাও, তাদের স্কুল-কলেজে পড়াশুনার দায়িত্ব আমাদের।"


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

মঞ্জুদেবী ও শৈলেন্দ্রবাবু চিন্তা করলেন যে দায়িত্ব তো নিলেন কিন্তু বাচ্চাগুলো ঠিকমতো খেতে পায়না। সেই ব্যাপারে কি করা যায়?


মহারাজ শুনে বললেন— "আপনাদের বাড়িতেই ওদের খাওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমরা খাওয়া বাবদ ৫০০ টাকা এবং রান্নার লোকের জন্য ৩০০ টাকা দেব।"


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

মঞ্জুদেবী ও শৈলেন্দ্রবাবু আরো চিন্তা করলেন যে, বাচ্চাগুলি তাঁদের কাছে বিকেল পর্যন্ত থাকবে, তারপর তারা বাড়ি চলে যাবে। বাড়ি গিয়েতো আর পড়বে না। আবার অনেকের বাড়িতে বাবারা মদ খেয়ে এসে গন্ডগোল করে, সেক্ষেত্রে তাদের ঘুমও ঠিকমত হবে না। শৈলেন্দ্রবাবু বাচ্চাদের বাবা-মায়েদের ডেকে এনে ব্যাপারটা বললেন এবং বললেন যে। যদি তাঁরা সম্মতি দেয় তাহলে বাচ্চারা রাত্রেও তাঁদের বাড়িতেই থাকবে। সবাই এককথায় রাজি হয়ে গেল।


দুজনে মিলে ৬ টি বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে পড়াতে শুরু করলেন। বছর শেষে পরীক্ষার সময় এল। পরীক্ষার শেষে রেজাল্ট বেরোলো।


রেজাল্ট দেখে সবাই অবাক। প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছে সেই ৬ টি বাচ্চা।


গণেশ মুর্মু

বিরু হাঁসদা

শিবসুন্দর হাঁসদা

অর্জুন সোরেন

দেবরাজ দাস

সুমন কাঁড়ার


রামকৃষ্ণমিশন খুশি হয়ে ২০০৯ সালে ১৭ টি বাচ্চাকে পাঠালেন তাঁদের কাছে।


এই বাচ্চাদের বাড়িতে রেখে পড়ানোর বিষয়টা কিন্তু অন্যান্য বাচ্চাদের পড়ানোর মতন নয়। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। হারাধন মুর্মু নামে একটি ছেলে তখন ক্লাস ৫-এ পড়ে। সে কিছুতেই পড়বেনা এবং স্কুল যাবেনা। তাকে পাওয়াও যায়না। কোথায় ঘুরে বেড়ায়, কোথায় থাকে কেউ জানেনা। তার বাবা-মাও কোন খোঁজ নেয়না। মঞ্জুদেবী তার ছবি প্রিন করে রিক্সাওয়ালাদের দিয়ে বললেন কোথাও দেখতে পেলে যেন জানায়। একদিন এক রিকশাওয়ালা অরোরা সিনেমার সামনে থেকে ফোন করে জানালো যে হারাধন সেখানে বসে খাচ্ছে। মঞ্জুদেবী তাকে বললেন যে— "হারাধনকে লক্ষ রাখো আমি এক্ষুনি আসছি।" রামকৃষ্ণমিশনের সঙ্গে যুক্ত তিনজন চন্দন মাইতি, সুধাংশু মাইতি এবং প্রভাতী কুন্ডু মঞ্জুদেবীকে নানা ভাবে সহযোগিতা করতেন। সেই চন্দন মাইতির বাইকে করে কিছুক্ষনের মধ্যেই নিমতলায় পৌঁছলেন মঞ্জুদেবী।


মঞ্জুদেবীকে দেখেই হারাধন কাঁদতে শুরু করে দিল। লোকজন জড়ো হয়ে গেল, সবাই ভাবলো মঞ্জুদেবী হয়তো ছেলে চুরি করেন। মঞ্জুদেবী সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন SDO অমিতাভবাবুকে ফোন করে সব জানালেন। অমিতাভবাবু সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে গাড়িতে করে হারাধনকে মঞ্জুদেবীর বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। সেই হারাধনের এখন ছেলে হয়েছে। সে তার ছেলেকে মঞ্জুদেবীর কাছে রেখে পড়াতে চায়।


মঞ্জুদেবীর সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন আরো অনেকেই। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিন ডাক্তারবাবু— ডঃ দেবাশীষ মজুমদার, ডঃ দিবাকর সামন্ত এবং ডঃ সুভাষরঞ্জন মন্ডল। এই তিন জন ডাক্তারবাবু প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত নিয়মিত বাচ্চাদের চিকিৎসা করে চলেছেন।


মঞ্জুদেবীর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে এগিয়ে এলেন বেশ কিছু শিক্ষক— রামকৃষ্ণমিশনের অশোক মুহুরী, নতুনবাজারের হিল্লোলি মুখার্জী, সুবিমল জানা এবং বিকাশ সিনহা। কেশপুরের একটি স্কুলের শিক্ষক অরিন্দম ভৌমিক, নীলাদ্রি জানা, মোহনানন্দ স্কুলের তন্ময় চ্যাটার্জী, সিজুয়া স্কুলের গোপাল খাটুয়া, দীপাঞ্জলি অধিকারী। এছাড়াও অল্প পরিশ্রমকে পড়াতে এলেন নীলাঞ্জনা, বাঁকুড়ার রায়পুরের সম্রাট মাইতি, অরূপ ঘোষ, দেবনারায়ণ মুহুরী।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

শুধু পড়াশুনাই নয় বাচ্চাদের অনেককিছুই শিখিয়েছেন মঞ্জুদেবী ও শৈলেন্দ্রবাবু। ২০১২ সালে বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দিরে একটি অনুষ্ঠানে বাচ্চারা স্বামীজীর শিকাগো বক্তৃতা বাংলা ও ইংরেজিতে অনর্গল বলে সবাইকে অবাক করে দেয়। সেখানে উপস্থিত তৎকালীন মহকুমা শাসক অমিতাভ দত্ত অনুষ্ঠান শেষে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন যে তোমাদের জন্য আমি কি করতে পারি? শৈলেন্দ্রবাবু বলেন যে এদের আধার কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট, জাতি শংসাপত্র কিছুই নেই, যদি তিনি করে দেন তাহলে খুবই উপকার হয়। অমিতাভবাবুর উদ্যোগে ৫০ জন বাচ্চার আধার কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট, জাতি শংসাপত্র এক মাসের মধ্যে তৈরী হয়ে যায়।


২০২০ সালে উচ্চমাধমিকের পরে করোনার জন্য লকডাউন শুরু হয়। বেলুড় মঠের প্রিন্সিপ্যাল একচিত্তানন্দজী মহারাজের (ভার্গব মহারাজ) সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমেই এডমিশান হয় ছেলেদের। তারা এখন মাস্টার ডিগ্রিতে পাঠরত।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

মায়াধীশানন্দজী এখন কাঁথি রামকৃষ্ণমিশনের অধ্যক্ষ। কাঁথি থেকে কেউ মেদিনীপুর এলেই তিনি মঞ্জুদেবীর ছেলেদের জন্য কখনো নতুন জামাকাপড় আবার কখনো কাজুবাদাম পাঠিয়ে দেন। সায়নের সেই 'বন্ধু' মহারাজ সুনিষ্ঠানন্দজী এখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন রামকৃষ্ণমিশনের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এখনো ছেলেদের খবর নেন এবং নানা ভাবে সাহায্য করেন।


রামকৃষ্ণ মিশণ আজও মঞ্জুদেবীর সঙ্গে রয়েছে। তাঁরা অবিভাবকদের মাধ্যমে নিয়মিত আর্থিক সাহায্য পাঠান।


মঞ্জুদেবী ও শৈলেন্দ্রবাবুর কাহিনীটা অনেক বড়ো। আমি সংক্ষেপে বললাম। যারা আগ্রহী তাঁরা সময় করে একদিন ঘুরে আসুন মঞ্জু-শৈলেন্দ্রর বাড়ি। বাচ্চাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসুন।


MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति
MEDINI ACHARYA 2024, Manju Maity, Sailendra Maity | মেদিনী আচার্য ২০২৪, মঞ্জু মাইতি, শৈলেন্দ্রনাথ মাইতি | मेदिनी आचार्य २०२४, मंजू माइति, सैलेन्द्रनाथ माइति

যারা একদিন 'চোরেদের মা' বলত। তারাই হাঁসিমুখে আপনাদের মঞ্জু-শৈলেন্দ্রর বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দেবে।



অরিন্দম ভৌমিক।


midnapore.in

Published on 26.09.2024 (205th Birthday of Pandit Iswar Chandra Vidyasagar)
From 2020 onwards ‘Midnapore-Dot-In’ is celebrating Vidasagar’s English & Bengali birthday as ‘TEACHERS DAY’ of undivided Medinipur District.




নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।