দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক

Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak

সন্তু জানা।


শূন্য মন্দির প্রাঙ্গণ । তবু যেন মনে হয় পোরলদা গ্রামের প্রাচীন রাধা-গোবিন্দ মন্দিরের শ্যাওলাগন্ধি সিঁড়িতে বসে গৃহ দেবতার পদতলে নিবেদিত ফুলের মালা একটি একটি করে গেঁথে চলেছেন তিনি । এখনও । শৈশবে ঠাকুমা কাননবালার কোলের কাছে বসে থাকা কৌতুহলী নাতিটি আজকের অশিতিপর বৃদ্ধ সুখেন্দু । অশ্রুসজল চোখে অপলক চেয়ে থাকে শুধু। ঠাকুমার যে একটা ছবি পর্যন্ত নেই ! শুধু স্মৃতি টুকুই ছবি ! ওইটুকুই সম্বল ! কিন্তু ,কে এই ঠাকুমা ?

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak
এই মন্দিরে নিত্য পুজো করতেন বিপ্লবী কাননবালা । মন্দিরের সামনে সপরিবারে কাননবালা দেবীর পৌত্র সুখেন্দু । পোরোলদা , দাঁতন - ২ । চিত্র - সন্তু জানা ।

দক্ষিণ-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন ২ ব্লকের পোরলদা গ্রামে বসবাসকারী বৃদ্ধ নাতির স্মৃতিপটে আঁকা শৈশবের অনন্ত উজ্জ্বল এক মৃত্যুহীন মুহুর্তে যিনি বেঁচে আছেন এখনও, তিনি বীরাঙ্গনা কাননবালা পট্টনায়ক । মেদিনীপুরের ইতিহাসের ধূসর পাতায় উপেক্ষিত , অনুচ্চারিত এক মহীয়সী নারী-বিপ্লবী। পূর্বের হোগলা যদি দাঁতনের পলাশিয়া গ্রাম হয় ,তবে নিশ্চিতরূপে কাননবালা হলেন পশ্চিমের মাতঙ্গিনি হাজরা । নির্ভীক, পরাক্রমী, স্বাধীনচেতা এক স্বপ্নসন্ধানী নারী ছিলেন কাননবালা । স্বামীকে হারিয়ে অল্প বয়সে বৈধব্যের খোলস ত্যাগ করে তিনি মেতে গিয়েছিলেন দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে : 'ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে / মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে '।



মহীয়সী কাননবালা পট্টনায়ককে জানতে গেলে ইতিহাসের পাতা উল্টে পিছিয়ে যেতে হবে ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে । তখন বিপ্লবের সূতিকাগার মেদিনীপুর জেলা জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী আগুনের তীব্রতা গগনচুম্বী । জেলার বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগুনের আঁচ লেগেছে সুবর্ণরৈখিক দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার ঘরে ঘরে । দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদিত প্রাণ তরুণ সমাজের মনে উৎসাহ ছড়িয়ে দিতে, সেই লেলিহান আগুনের যজ্ঞকুন্ডে জাতীয়তাবাদের ঘৃতাহুতি দিতে দাঁতন থানার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ-বাতাস কম্পিত করে বজ্রকণ্ঠে আবির্ভূত হলেন বিপ্লবী কাননবালা পট্টনায়ক । তৎকালীন দাঁতন থানার গ্রামে গ্রামে সঙ্গী সাথী জুটিয়ে মেঠো পথে পদযাত্রার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেন বিপ্লবের অমোঘ বাণী ।

গ্রামের হাটগুলিকে কেন্দ্র করে সেকালে বহু মানুষের জমায়েত হতো । কাননবালা হাটের মাঝে গাছের তলায় জনসভা করে উত্তেজক ভাষণ দিলেন । বৈপ্লবিক কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করতে জেলার একবারে প্রান্তদেশে এক মহিলার এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে । পরিস্থিতির উত্তেজনার মাঝেই ১৯৩০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রংসুটিয়া গ্রামে এক বিশাল জনসভা আয়োজিত হয় । সভায় অভ্যর্থনা সমিতির সম্পাদক ছিলেন সীতানাথ আচার্য্য । ব্যবস্থাপক ছিলেন নিমপুর বরঙ্গী গ্রামের যোগেন্দ্র নাথ মহাপাত্র । কাননবালা ছিলেন সভানেত্রী । কিন্তু ব্রিটিশের বেতনভুক পুলিশ সভার কাজ ভন্ডুল করে দেয় । তৎকালীন দাঁতন থানার দোর্দন্ডপ্রতাপ দারোগা জিতেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত লাঠিয়াল বাহিনী লেলিয়ে জনতার উপর নির্বিচারে লাঠি চালাতে থাকে । প্রবল প্রহারে বহু মানুষ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে ।

গ্রেফতার হন কাননবালা সহ সীতানাথ আচার্য্য ও যোগেন্দ্র মহাপাত্র প্রমুখ । তাঁদের বন্দী করে নিয়ে আসা হয় জেনকাপুর ফাঁড়িতে । তারপর প্রায় ১৫ কিমি দূরে দাঁতন থানায় চালান করে দেওয়া হয় । বিচারে প্রত্যেকের তিন মাস করে কারাদণ্ড হয় । কিন্তু সাজা দিয়ে ভয় দেখানো যায়নি দাঁতনের 'মাতঙ্গিনি' কাননবালাকে । কারামুক্তির পরে পুনরায় জুলাই মাসে বেলদার নিকট রানীসরাই হাটে ট্যাক্স প্রদান বিরোধী বিশাল জমায়েতে হাজির থেকে জনগণকে উৎসাহিত করেন তিনি । উদ্দীপক ভাষণ দেন সেদিন । ' বন্দে মাতরম ' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে হাট প্রাঙ্গণ । সেদিন তিনিই ছিলেন সভানেত্রী । উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের কংগ্রেসনেত্রী চারুশীলা গোস্বামী । শোষক ইংরেজ সরকারকে আর একটিও ট্যাক্স নয়, এই প্রতিজ্ঞা করে অনুপ্রাণিত জনগণ।

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak
কাননবালা দেবীর ভাই বিপ্লবী পুলিন বিহারী মহাপাত্র ।

চারুচন্দ্র মহান্তি , প্রসন্ন গিরি , নগেন্দ্র নাথ মাইতি , পতিত পাবন ব্রহ্ম, রাধাকৃষ্ণ মিশ্র প্রমুখ প্রভাবশালী আঞ্চলিক কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কাননবালা দেবী ও চারুশিলা দেবীর মতো নারী-বিপ্লবীদের সংযুক্তির কারণে এলাকার সাধারণ মানুষের মন উদ্বেলিত করে তোলে । বছর দু-একের মধ্যেই কাননবালার কাজের পরিধি বাড়তে থাকে । নীরবে ব্রিটিশের চক্ষুশূল হওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করতে থাকেন তিনি । ১৯৩২ সালে কেদার গ্রাম নিবাসী রজনী চক্রবর্তীর কন্যা সাবিত্রী চক্রবর্তী সহ আরও জনা দশেক স্বাধীনতাকামী মহিলা ও কয়েকজন প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে সঙ্গী করে শুরু হয় 'মিশন মেদিনীপুর ' । ১৯৩২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে কাননবালার নেতৃত্বে উদ্দীপ্ত নারী-বাহিনী মেদিনীপুর সদরের জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার প্রচেষ্টা করে । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে বটে । কিন্তু, জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয় । এবারে যেন লাস্ট ওয়ার্নিং ! কয়েকদিন পরে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে দাঁতন মুন্সেফ কোর্টে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়।



কেদার গ্রামের সাবিত্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দেশের পতাকা নিয়ে কাননবালারা চলে মুন্সেফ কোর্ট অভিমুখে । স্বাধীনতার ডাক সাড়া দিয়ে এই দুঃসাহসিক মিছিলে যোগদান করেন অমিয় কুমার মহান্তি সহ এলাকার বহু বিশিষ্ট নেতা । কেদারের সাবিত্রী চক্রবর্তী ব্যতীত দাঁতন গঞ্জের সরাই বাজারের ত্রৈলোক্যনাথ পালের কন্যা অম্বিকাবালা পাল, বড়মোহনপুর গ্রামের ত্রৈলোক্যনাথ দে-র কন্যা সুশীলাবালা দে এবং সাউরি গ্রাম নিবাসী মদনমোহন দাস অধিকারীর কন্যা সত্যভামা দাসী তখন নেত্রী কাননবালা পট্টনায়কের অন্যতম শক্তি। উদ্দীপ্ত নারীবাহিনী দাঁতনে অবস্থিত ব্রিটিশ সরকারের খাজনা আদায়ের অন্যতম কেন্দ্র মুন্সেফ কোর্টে পৌঁছে যায় । চোখে মুখে মুক্তির স্বপ্ন লেগে থাকে দৃপ্ত প্রমীলা- বাহিনীর । ব্রিটিশ বিরোধী শ্লোগান দিতে দিতে কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রোথিত করে তেরঙ্গা ঝান্ডা । সেই প্রথম দাঁতন জেনেছিল সাহসের সংজ্ঞা । নারী শক্তির অজেয় পরাক্রম। মেদিনীপুরের মাটি পেয়েছিল প্রান্তিক প্রদেশের এক নির্ভীক বীরাঙ্গনা কাননবালাকে । পূর্বের মাতঙ্গিনি হাজরা , সৌদামিনী পাহাড়ির মতই তিনি যে মেদিনীপুরের পশ্চিমাংশের নারীদের প্রজ্ঞা,ইচ্ছাশক্তি ও দেশপ্রেমের প্রতীক ছিলেন একথা সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় ।

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak
বিপ্লবী পুলিন বিহারী মহাপাত্রের বাড়িতে অশিতিপর পুত্র মানসের সঙ্গে লেখক । সঙ্গে অতুল রায় ।

১৯৩২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি কাগজ amrit bazar Patrika - র পাতায় লেখা হল দাঁতনের এই বীরগাথা : Police lathicharged the violent mob led by Kananbala Pattanayak in Dantoon . They tried to hoist indian flag in the munsef court premises . কাননবালাদের সমর্থনে বিশাল মিছিল জুড়ে নেতৃত্ব দিলেন নিমপুরের যোগেন্দ্র মহাপাত্র, পলাশিয়া গ্রামের বৈকুণ্ঠ মহাপাত্র, গঙ্গাধর জানা , ললিতাপুরের সুরেন্দ্র আচার্য্য প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ।



২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে কাঁথি থেকে প্রকাশিত ' নীহার ' সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হল দাঁতনে কাননবালা দাস পট্টনায়ক ও পাঁচ সহযোগীদের তিন মাসের জেল হাজতের দুঃসহ সংবাদ । এই প্রসঙ্গে অধ্যাপিকা ড. রিনা পাল বিভিন্ন সূত্র উদ্ধৃত করে বর্ণনা করেছেন বিপ্লবী নারীদের কারাদণ্ডের কথা । তাঁর বক্তব্য অনুসারে, IPC section 143/447 section 5 of ordinance iv of 1932 ধারায় কাননবালা সহ অম্বিকা, সুশীলা, সাবিত্রী, সত্যভামা দাসীর সশ্রম কারাদণ্ড হয় । পরবর্তীকালে, কাননবালাকে তো জেলা থেকে বহিষ্কারের জন্য নোটিশ জারি করে ভীত ইংরেজ সরকার । অতপর, আইন-অমান্য আন্দোলনে কারাদণ্ডিত হয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের ৪৩ জন নারী-বিপ্লবীর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের কাননবালা পট্টনায়ককে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর জেলে স্থানান্তরিত করা হয় । দাঁতন থানার দিকে দিকে মহীয়সী কাননবালার শাস্তি লাভের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জনমানসে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয় । পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির আশ্বাস খোঁজে মানুষ । ' নীহার ' সংবাদপত্রের পাতায় ৮ মার্চ তারিখের খবর অনুসারে, দাঁতনে জনা সাতেক মহিলা ও পুরুষ কর্মী ক্ষোভে, রাগে কংগ্রেস ভবনের শীলমোহর ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন । তাঁদের দাবি, অতি সত্ত্বর নেত্রী কাননবালার জামিনের বন্দোবস্ত করতে হবে । তবে এখানেই শেষ নয় । এখানেই নেভেনি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ।

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak
সাক্ষাৎকার কালে কানন বালা দেবীর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র মানস ও সরোজ মহাপাত্র । চিত্র - সন্তু জানা ।

সীমানা বাংলার যে মাটিতে কানন বালা বুনেছিলেন নতুন স্বপ্নের বীজ , ধীরে ধীরে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছিল বৈকি । অবশেষে, কয়েক মাস পরে বহরমপুর জেল থেকে জামিন মিলল ।তবে, লক্ষ্যে রইলেন অবিচল। পুনরায় ১৯৩৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলার মাটিতে বিপ্লবী কার্যকলাপের দায় আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন 'পশ্চিমের মাতঙ্গিনি ' । এইভাবে স্বাধীনতার সকালের পথে এগিয়ে ছিল এক দুঃসাহসী অগ্রপথিক । নিজের জীবন দর্শনে দীক্ষিত করেছিলেন ভাই পুলিন বিহারী মহাপাত্রকে । পোরোলদার বাড়িতেই ভাইকেও রেখেছিলেন । পুলিন পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্থানে বীরেন্দ্র নাথ শাসমলের সঙ্গে বিপ্লবী কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন । অশিতিপর প্রবীণ পুলিন-পুত্রদ্বয় সরোজ ও মানস মহাপাত্র অতীতের যতটুকু স্মৃতি লেগে আছে মনে , সবটুকু উজাড় করে দিলেন । বড় মনে পড়ে আজ পিসিমার কথা ! স্বাধীন দেশে আনুমানিক ১৯৫৫ সালের এক রক্তিম গোধূলি বেলায় এই মহান বিপ্লবীর দেহান্তর ঘটে । তিনি সশরীরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন ঠিকই, তবে ফেলে রেখে গিয়েছেন এক অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্পগাথা । এক অকৃত্রিম দেশভক্তির রূপকথা । একাকী বিধবা নারীর অসীম সাহস ও অনন্ত ধৈর্য্যের চিরকালীন এক আত্মকথা ।



এ প্রশ্ন স্বাভাবিক যে, কাননবালা দাস পট্টনায়ক মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দীর্ঘ তালিকায় একটি বিশিষ্ট নাম হলেও আজকের প্রজন্মের কতজন তাঁকে চেনেন ! উত্তর বড়ই বেদনার ! এমনকি কাননবালার পোরলদার বাড়িতে দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করেও বীরাঙ্গনার সামান্য একটি আলোকচিত্রের হদিসও মেলেনি । কবি রবার্ট ব্রাউনিং তো ঠিকই বলেছেন বিপ্লবীরা সমগ্র জীবন জুড়ে আত্মত্যাগের পরিবর্তে কেবল একটি পতাকা আর একটিমাত্র সমাধি-সৌধ লাভ করতে পারেন , আর কিছুই নয় । কিন্তু, হা ঈশ্বর ! নিজের জীবন বাজি রেখে যিনি দেশের প্রতি আমৃত্যু নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন ,সেই কাননবালার ভাগ্যে তো একটি সমাধিও জোটেনি !

দাঁতনের বীরাঙ্গনা বিপ্লবী কাননবালা দাস পট্টনায়ক | Freedom fighter Kananbala Das Pattanayak
স্বাধীনতা সংগ্রামী কাননবালা পট্টনায়কের পৌত্র সুখেন্দু ( ডান দিকে বসে ) । চিত্র - সন্তু জানা ।

মেদিনীপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দাঁতনের সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অখ্যাত গ্রাম পলাশিয়ার বর্ধিষ্ণু মহাপাত্র পরিবারে আনুমানিক ১৯০১ সালে কাননবালার জন্ম । বাবা শ্রীকান্ত মহাপাত্র পারিবারিক কারণে সপরিবারে কাঁথি মহকুমার দেশপ্রাণ ব্লকের বসন্তিয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন । এখানেই কন্যা কাননবালার বেড়ে ওঠা । তবে অল্প বয়সে অবিভক্ত দাঁতনের পোরোলদা গ্রামের জমিদার গজেন্দ্র দাস পট্টনায়কের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় । তাঁদের একমাত্র পুত্র সুধীর । নাবালক পুত্র ও একাকী সহধর্মিনিকে ফেলে রেখে অকস্মাৎ মৃত্যুর দেশে পাড়ি দেন কাননবালার স্বামী গজেন্দ্র । প্রিয়জনকে হারিয়ে সমাজের চোখে নির্যাতিতা বিধবার খোলস পরিত্যাগ করে আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে দেশমাতৃকার পরাধীনতার শৃঙ্খল গুঁড়িয়ে দেওয়ার নেশায় মেতে উঠেছিলেন যিনি, তিনি আর যাই হোক না কেন একজন সামান্য নারী অবশ্যই ছিলেন না । তিনি তো দেশের মা , দেবীতুল্য জননী । অতীতের ইতিহাস অনুভব করতে করতে চোখের সামনে সবকিছু ধীরে ধীরে কেমন আবছা হয়ে আসে ! ভিজে যায় স্বপ্নমন !


midnapore.in

(Published on 15.08.2021)

তথ্যসূত্র:
● স্বাধীনতা সংগ্রামে মেদিনীপুর । বসন্ত কুমার দাস । প্রথম খণ্ড । ১৯৮০ । পৃষ্ঠা : ১২৪ ।
● উইমেন অফ মিডনাপুর ইন ইন্ডিয়ান ফ্রিডম স্ট্রাগল । ড. রিনা পাল । রত্না প্রকাশন । কলকাতা। ১৯৯৬ । পৃষ্ঠা : ৮৬-৮৮ ।
● স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী । কমলা দাস গুপ্ত । রেদিক্যাল ইম্প্রেশন । ২০১৯ সংস্করণ । কলকাতা । পৃষ্ঠা : ২৫১ ।
● দাঁতনের ইতিহাসের আলোকে ঐতিহ্যের স্কুলবাড়ি : এক ঐতিহাসিক অনুসন্ধান । সন্তু জানা । উত্তরণ পাবলিশার্স । পরিবেশক : দে বুক স্টোর ( দীপু ) । কলকাতা। ২০২০ । পৃষ্ঠা : ১১৫-১১৭ ।
● অমৃত বাজার পত্রিকা । ২১ ফেব্রুয়ারি , ১৯৩২ । সংগ্রহ : সন্তু জানা ।
● সেকালের দাঁতন : অনালোকিত ৩০০ বছরের কথা ও কাহিনী । সন্তু জানা । তপতী পাবলিশার্স । কলকাতা । ২০২০ । পৃষ্ঠা : ৮৩-৮৪ ।
● ' নীহার ' সাপ্তাহিক সংবাদপত্র । ফেব্রুয়ারি -মার্চ , ১৯৩২ একাধিক সংখ্যা । সংগ্রহ : সন্তু জানা ।
● সাক্ষাৎকার : ক ) সুখেন্দু পট্টনায়ক , বিপ্লবী কাননবালা দেবীর পৌত্র ( ৮১ ) , পোরলদা , দাঁতন -২ । খ ) মানস মহাপাত্র ( ৮৪) ও সরোজ মহাপাত্র ( ৮০) ,কাননবালা দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্রদ্বয় , পোরলদা । তাং - ২২/০২/২০২০ ।

চিত্রাঙ্কন:
শুদ্ধসত্ত্ব মান্না ।