মলয়ারাণী দাসমহাপাত্র , Malaya Rani Das Mahapatra, मलयारानी दास महापात्र, Ramnagar, Purba Medinipur

মলয়ারাণী দাসমহাপাত্র।

Malaya Rani Das Mahapatra | मलयारानी दास महापात्र

নন্দগোপাল পাত্র।


একে একে কমছে অগ্নিযুগের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর। ১৬ মে রবিবার সকাল দশটায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন প্রত্যক্ষদর্শী মলয়ারাণী দাসমহাপাত্র। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মলয়াদেবী হলেন বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং রামনগরের চারবারের বিধায়ক প্রয়াত বলাইলাল দাসমহাপাত্রের স্ত্রী।



বর্তমানে কাঁথির সুশান্ত সরণী’র বৃন্দাবন মাইতি ও কাদম্বিনী মাইতির কন্যা বলাইবাবুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫৭য়, তখন বলাইবাবু রামনগর থেকে কিষাণ মজদুর প্রজা পার্টির নির্বাচিত বিধায়ক। এর পর বলাইবাবু ১৯৬২, ১৯৬৯, ১৯৭৭-এ রামনগরের বিধায়ক ছিলেন।



প্রকাশিতব্য ‘বিপ্লবী বলাইলাল দাসমহাপাত্র, আত্মত্যাগে দেশাত্মবোধে বরেণ্য’ গ্রন্থে মলয়াদেবী লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষের চারজন মহান মানুষ তথা দেশনেতা- জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের স্নেহ শুভেচ্ছা লাভ করেছিলেন আমার স্বামী বলাইলাল দাস মহাপাত্র। এক অমূল্য প্রাপ্তি আমাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ক্ষেত্রে’। মলয়াদেবী বৈবাহিক জীবনে বহু কৃতী মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ ঘটেছিল। তিনি গর্বিত ছিলেন তাঁর নির্লোভ স্বামীর জন্য।


স্বাধীনতা সংগ্রামী বলাইলাল দাসমহাপাত্র (ছবি সংগ্রাহকঃ অরিন্দম ভৌমিক)।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বলাইলাল দাসমহাপাত্র (ছবি সংগ্রাহকঃ অরিন্দম ভৌমিক)।

প্রকাশিতব্য গ্রন্থে লিখেছেন , ‘ সবচেয়ে আমার কাছে আশ্চর্য লাগত কোনও পদের মোহ ছিল না। লোভ ছিল না অর্থের। আমাদের সম্পত্তি ভাগচাষীদের দিয়ে গেছেন স্বেচ্ছায়। গান্ধী আদর্শে অত্যন্ত সহজ সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। পিছাবনীতে ‘রামুর চা দোকান’-এ বিধায়ক হিসাবে বহুজনের উপস্থিতিতে চা খাওয়ার তৃপ্তিবোধ করতেন। সারাটা জীবন ঘর সংসার বিমুখ হয়ে দেশের দশের এক নিবেদিতপ্রাণ আমার একান্ত আপনজন। এটি এক দুর্লভ প্রাপ্তি আমার জীবনে’।



পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার প্রতিবাদে ২০০৭ সালে হরিপুর থেকে জুনপুট পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের মশাল পদযাত্রা হয়েছিল। মহিলা ও শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ঐ পদযাত্রায়। জুনপুটে সমবেত মানুষদের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার একনায়কী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চরম আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ বাক্য পাঠ করান মলয়ারাণী দাস মহাপাত্র।


মলয়ারাণী দাসমহাপাত্র (ছবি সংগ্রাহকঃ নন্দগোপাল পাত্র)।
মলয়ারাণী দাসমহাপাত্র (ছবি সংগ্রাহকঃ নন্দগোপাল পাত্র)।

দেশপ্রাণ ব্লকের বসন্তিয়া মক্তব শিক্ষকতার পাশাপাশি এক পুত্র ও চার কন্যাকে বড় করার দায়িত্ব নিপুনভাবে সামলেছেন মলয়াদেবী। মলয়াদেবীর সুযোগ্য সহমর্মিতায় রামনগরবাসী পেয়েছিলেন স্বাধীনতা উত্তরকালে সুসংগঠক, উদারচেতা বলাইলাল দাসমহাপাত্রকে। তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়ে করোনাকালেও গুণমুগ্ধ বহু মানুষ বাড়িতে এসে কোভিড বিধি মেনে অন্তিম শ্রদ্ধা জানান। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় খড়্গচণ্ডী মহাশ্মশানে। বলাইবাবুর জন্মভিটা রামনগর ২ ব্লকের লালপুরে প্রয়াণ সংবাদ পৌঁছানোর পর শোকের ছায়া নেমে আসে।


midnapore.in

(Published on 20.05.2021)