হে বন্ধুগণ, আমি এখানে সন্মান দান করতে এসেছি, গ্রহণ করতে আসিনি । আমি সম্মানের বাহক মাত্র, বাঙ্গলা দেশের দূত। আজ এই মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিমন্দিরের দ্বারে অর্ঘ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছি।
কিন্ত প্রথমত দূত পারিতোষিক পেয়ে থাকে। “দীন যথা যায় রাজেন্দ্র সঙ্গমে”৷ এই পারিতোধিক সমস্ত অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ তার একটি অঙ্গ । সুতরাং আমাকে নত হয়ে আপনাদের কাছ থেকে নতি গ্রহণ করতে হবে। কেননা, এই প্রণাম পৌঁছাবে তার কাছে যিনি এই অনুষ্ঠানের কেন্দ্র স্থলে আছেন- সকলের প্রণম্যরূপে। সুতরাং এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করবার অধিকার আমার নেই।
আপনারা বিশ্বাস করুন, সাধারণত আমার মন অপ্রতিগ্রহী। আমি প্রণাম ও সম্মান গ্রহণ করতে অত্যন্ত কুঠিত হই। কারণ, যাঁরা কবি তাঁরা বস্তুত সর্বসাধারণের সমভূমিতে অবস্থিত-তারা একই পথের পথিক।
মানপত্রগুলির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ
যেখানে প্রাণের ধারা চলেছে সর্বজনগণের সেখানে তার সঙ্গে হয়তো তারা বাঁশীর সুর মিলিয়ে দিয়েছেন। সেই বাঁশীর সুরে তারা ক্লান্ত মনে উৎসাহ সঞ্চার করে থাকেন। কিন্তু আসনে তাদের স্থান নয়। যারা কর্মী, যারা তপস্বী, যাঁরা রাষ্ট্রনায়ক, তারা সমস্ত জনসাধারণের 'সম্মান পান। আমি কবি আমাকে যদি আপনারা প্রীতি দান করেন, তবেই আমি কৃতার্থ হব। এইটুকু আজকের দিনে আমার নিবেদন।
আমাকে যে পারিতোষিক দিয়েছেন, সেটা এই অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীনতার একটা অংশ। আমি আমার আয়ুর শেষ সীমানায় এসে উপস্থিত হয়েছি। এটা আমার শেষ কৃত্য বলে গ্রহণ করতে হবে। এ মন্দির, এ পুণ্য মন্দিরের দ্বারে আমার যে নৈবেদ্য আমি এনেছি, এটা আমার শেষ উপহার- শেষ উৎসর্গ। এই মেদিনীপুর তীর্থরূপ নিয়ে আমাকে আহ্বান করেছে। পৃণ্যক্ষেত্রে এই আহ্বান আমার পক্ষে কম আনন্দের, কম গৌরবের নয়। বঙ্গ সাহিত্যের শিখরে যে দীপ্তিমান আর্বিভূত হয়েছিলেন, অন্তদিগন্তের প্রান্ত থেকে আমি তাঁকে প্রণাম প্রেরণ করেছি।
মেদিনীপুরবাসীরা আপনারা হয়ত একথা মনে রাখবেন যে, কবির শেষ দান, কৃতজ্ঞতার দান, সম্মানের দান আপনাদের মাঝখান থেকে এই পুণ্য ভূমিতে এসে সম্পন্ন করেছি-এটা আমার পক্ষে গৌরবের বিষয়, আনন্দের বিষয় ।এই টুকুই আমার বলবার কথা। নইলে আপনাদের দেওয়া সম্মান অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে গ্রহণ করতুম | গৌরবের মূলে আছেন যিনি, তিনি চিরকালের মত আমাদের দেশে গৌরবান্বিত।
M E D I N I K A T H A J O U R N A L
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 01.06.2024)
তথ্যসূত্র:
চিঠিপত্র।
Rabindranath Tagore- A Biography, KRISHNA KRIPALANI
কিছু বনফুল, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়।
মেদিনীপুরে রবীন্দ্রনাথ, হরিপদ মন্ডল।
মেদিনীপুরে রবীন্দ্রনাথ, কবি দর্শন, আজহারুদ্দীন খান।
রবি প্রণাম, রবীন্দ্র স্মৃতি সমিতি, মেদিনীপুর।
সাহিত্যিক আজহারউদ্দীন খান! রবীন্দ্রনাথকে দেখা শেষ মেদিনীপুরবাসী :কামরুজ্জামান।