সমাজের পিতৃমাতৃহীন, পরিচয়হীন, লাঞ্ছিত অবহেলিত অনাথ ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন গড়ার কারিগর বলরাম করণ। একসময় যাদের ঠিকানা ছিল প্ল্যাটফর্ম, ফুটপাথ কিংবা কোনও আস্তাকুঁড়। আজ তারাই তাঁর অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম-এর বাসিন্দা। আমরা নিজেদের একটি দুটি সন্তান কে ঠিকমত লালন করতে গিয়ে কত সময় ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। কিন্তু উনি এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। প্রতি মুহূর্তে অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি অসম্ভব ধৈর্যশীল, নিরহংকারী, বিনয়ী। অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মিডনাপুর-ডট-ইন এই মহান ব্যাক্তিত্বকে "মেদিনী-আচার্য" সম্মানে ভূষিত করতে পেরে গর্বিত।
১৯৬৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁউসি গ্রামে এক সাধারণ দরিদ্র পরিবারে জন্ম। পিতা স্বর্গীয় খগেন্দ্রনাথ করণ এবং মা স্বর্গীয় রেবতীবলা করণ। তিন ভাই ও তিন বোনের সংসারে খুবই কষ্টে বড় হয়েছেন বলরাম। মাধ্যমিক পাস করার পরে বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নাচিন্দা জীবন কৃষ্ণ হাই স্কুলে ভর্তি হন। হস্টেলে থাকার পয়সা না থাকায় তিনি নিজেই রান্না করে খেতেন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে পয়সার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করতে হয়।
সংসারের হাল ধরতে পড়াশুনার আশা ছেড়ে উপার্জনের দিকে মনোযোগ দেন। চাকরির কোন সম্ভাবনা না দেখে তিনি নিজেই ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। কাজের প্রতি মনোযোগ এবং কঠোর পরিশ্রম কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে এই ব্যাবসায় সাফল্য এনে দেয়। ভালোই চলছিল জীবন। একদিন দোকানের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি দেখেন একটি অনুষ্ঠানবাড়ির পাশে রাখা আস্তাকুঁড় থেকে খুঁজে খুঁজে খাওয়ার খাচ্ছেন একটি ছোট্ট ছেলে। বলরামের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে, চোখে জল জল আসে। খবর নিয়ে জানতে পারেন বাচ্চাটি অনাথ। অন্য কোন চিন্তা না করেই বুকে তুলে নেন শিশুটিকে। নিয়ে আসেন নিজের বাড়িতে।
সেই শুরু, তারপর থেকে তিনি যেখানেই অনাথ-অসহায় শিশু দেখতে পেতেন নিয়ে আসতেন নিজের বাড়িতে মানুষ করতেন নিজের সন্তানের মত। এইভাবেই শুরু হয় বলরামের 'অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম'। কিন্তু শুরু হয় অন্য একটি সমস্যা, বাচ্চাদের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা চালাতে গিয়ে শেষ হয়ে যায় সমস্ত পুঁজি। উপায় না দেখে বিক্রি করে দেন নিজের ধান চাষ করার জমি। কিছুদিন পরে বিক্রি হয়ে যায় তাঁর উপার্জনের শেষ সম্বল ওষুধ দোকানটিও। এদিকে আশ্রমে তখন ২৮ জন ছেলে-মেয়ে।
একদিন এমন অবস্থা এল যে ভিক্ষে করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকল না। এইরকম দুর্দিনেও একটি অভিনব পদ্ধতি বের করলেন বলরাম। গ্রামের ১৩৬ টি পরিবারের বাড়ির সামনে মাটির হাঁড়ি রেখে এলেন। বাড়ির মায়েদের অনুরোধ করলেন ঐ হাঁড়িতে সাধ্যমত চাল দিতে। বাড়ির মায়েরা ভাত বসানোর আগে একমুঠো চাল দিতেন হাঁড়িতে। দুবেলা দুমুঠো মিলিয়ে মোট ২৭২ মুঠো চাল সংগ্রহ হত হাঁড়িতে। সেই চাল মাসের ৫ তারিখের মধ্যে সংগ্রহ করে আনতেন বলরাম। মাথার উপর ঠিকমত ছাদ নেই তবুও ফেন-ভাত ও আলুসিদ্ধ খেয়ে কোনক্রমে চলছিল তাঁদের আশ্রম। আশ্রমের জলের সমস্যা মেটাতে তৎকালীন স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী কিরণময় নন্দ একটি মিনি ডিপ টিউবওয়েল ও ১০,০০০ টাকা দিয়েছিলেন। এছাড়াও 'কাজলা জনকল্যাণ সমিতি' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাসে মাসে কিছু টাকা সাহায্য করতেন।
তখন ২০০৪ সাল, পৌষ সংক্রান্তির কিছুদিন আগে বলরাম তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ঠিক করলেন যে পৌষ সংক্রান্তির দিন তাঁরা দিঘা যাবেন আশ্রমের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করতে। কারণ ঐ দিন কলকাতা ও অন্যান্য শহর থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন দীঘাতে। নিদৃষ্ট দিনে ৫,১০,১৫,২০ ও ২৫ টাকার কুপন ছেপে নিয়ে পৌঁছে গেলেন দীঘা। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ছিল অন্যরকম, অধিকাংশ পর্যটক তাঁদের কথাই শুনলেন না। দিনের শেষে প্রায় কিছুই সংগ্রহ হল না কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আলাপ হল সুব্রত গুহ নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে। যদিও বলরামরা তখন জানতেন না যে সুব্রত গুহ একজন সাংবাদিক। আশ্রমের কাহিনী শুনে কৌতূহলী সুব্রত বাবু ঠিকানা লিখে নেন।
কিছুদিন পরে হঠাৎ একদিন আশ্রমের ঠিকানা খুঁজে পৌঁছে যান সুব্রত গুহ। সবকিছু দেখে শুনে মনের কষ্ট চেপে সেদিনের মত ফিরে যান সুব্রত বাবু। কথায় আছে না, "কলমের জোর" - সেই কলমের জোরই দেখালেন সুব্রত বাবু। ২০০৪ সালের ১৪ ই জুন আনন্দবাজার পত্রিকায় বেরোল তাঁর প্রতিবেদন -"ঘরে ঘরে লক্ষীর ভাঁড় পেতে ভিক্ষার চালে বলরামের অনাথাশ্রম"।
সুব্রত গুহ'র লেখায় সাড়া পড়ে যায়। বহু মানুষ যোগাযোগ করেন বলরামের সঙ্গে। অনেক সংবাদপত্রে লেখা হয় তাঁর কথা। এর কিছুদিন পরে ঐ প্রতিবেদনটি ছোট আকারে প্রকাশিত হয় 'প্রবাসী আনন্দবাজার' পাতায়। সেই প্রতিবেদন দেখে এক প্রবাসী বাঙালি বিমল রায় যোগাযোগ করেন জার্মানি থেকে। বিমল বাবু'র জীবনও ছিল খুব কষ্টের। শ্রমিকের কাজ করতে চলে গেছিলেন জার্মানি। দেশে একে একে মারা গেছেন তাঁর বাবা, মা ও দিদি, তিনি আসতে পারেন নি। বাবা, মা ও দিদি'র স্মৃতির উদ্দেশে তিনটি বিল্ডিং বানিয়ে দিলেন তিনি। মাথার উপর শক্ত ছাদ পেল ছেলে-মেয়েরা। অন্যান্য আরো অনেকের সাহায্যে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে সুন্দর রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর, নিকাশি ব্যবস্থা, স্কুল, দাতব্য চিকিৎসালয় আরো কত কি, সেই সব কিছুই উল্লেখ করব 'অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রমের কর্মকাণ্ড' অংশে। এই সমস্ত কিছুতে বলরামের সঙ্গে সবসময় ছিলেন তাঁর স্ত্রী ছবি করণ এবং মেয়ে ময়না করণ।
আজ থেকে ২৫ বছর আগে স্থানীয় একটি অসহায় শিশুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন বালারামবাবু। আজ বহু শিশুর ভবিষ্যত তৈরী হচ্ছে এই আশ্রমে। এখনো পর্যন্ত ১৫৬ জন শিশুকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে দিয়েছে এই আশ্রম। বর্তমানে ৭২ জন অনাথ/অসহায় শিশু রয়েছে এই আশ্রমে। ১৯৯৫ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁউসি গ্রামে আশ্রমটি তৈরী হয় এবং ২০০৪ সালে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। শুধু পড়াশুনা নয়, গুরুত্ব দিয়ে সেখান হয় গান, নাচ, আঁকা ইত্যাদি। অনেকেই শিখছেন পেশাভিত্তিক হাতের কাজ। মেধাবী ছাত্ররা এগিয়ে যায় উচ্চতর শিক্ষার দিকে। আশ্রমের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ, পরিস্কারপরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ লক্ষ দেওয়া হয়।
আশ্রমের সুন্দর ব্যাবস্থাপনায় খুশি হয়ে আশ্রমের মধ্যেই Child Welfare Committee (CWC) তাদের স্থানীয় শাখা খুলেছেন। খাওয়ারের গুণমান ভালো রাখতে L&T -র সাহায্যে বানানো হয়েছে সুন্দর পরিচ্ছন্ন রান্নার ও খাওয়ার জায়গা। আশ্রমের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে Dept. of Indirect Taxes & Customs, Govt. of India -র সহায়তায় বানানো হয়েছে ভূগর্ভস্থ নালা এবং নিকাশী ব্যবস্থা। রোজ খেলাধুলা ও শরীরচর্চা করতে হয় সবাইকে। পাঠক্রমের বাইরের বই পড়তে সবাইকে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়াও রয়েছে কুইজ, ডিবেট, সারাবছর মনীষীদের জন্মদিন পালন ইত্যাদি। প্রাণী ও পরিবেশ সম্পর্কেও শিক্ষা দেওয়া হয় প্রতিনিয়ত। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সমস্ত ধরণের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 'The Women & Child Development and Social Welfare Department' এই আশ্রমের মধ্যে একটি 'চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট' বানানোর স্বীকৃতি দেয়। নাম দেওয়া হয় 'স্নেহছায়া', যেখানে আশ্রয় পাবে ৫০ জন বালিকা। এখনো পর্যন্ত ১৫৯ জন বালিকা স্নেহছায়া'য় আশ্রয় পেয়েছে, যাদের মধ্যে ১০৪ জনকে সমস্ত রকমের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Rajiv Gandhi National Crèche স্কিমের আওতায় ২০০৬ সালে Directorate of ICDS scheme, Government of West Bengal এই আশ্রমকে পুনঃনির্বাচিত করেন Crèche পরিষেবা দেওয়ার জন্য। Crèche পরিষেবাটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শ্রমজীবী মায়েদের বাচ্চাদের (১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের) দিনের বেলায় (যখন মায়েরা কাজে যান) আশ্রয় প্রদান করে। বর্তমানে এই আশ্রম বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মচারীদের দ্বারা ৬ টি Crèche পরিচালনা করেন, যেখানে মোট ১৫৬ টি শিশুর যত্ন নেওয়া হয়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই অংশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মতো এক্ষেত্রেও বলরামবাবুরা পুরো এলাকার শিশুদের জন্য একটি নার্সারি স্কুল স্থাপন করে ফেলেছেন। ১৯৯৫ সালে স্থাপিত হওয়া নার্সারি স্কুলটি ২০০৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখনো পর্যন্ত এই স্কুল থেকে ২২০০ জন ছাত্রছাত্রী সফলতার সঙ্গে পাঠ সম্পূর্ণ করেছে। বর্তমানে ২২০ জন ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে পড়ছে।
স্থানীয় গ্রামের বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবাদির গুরুত্ব বুঝতে পেরে বলরাম বাবুর এই আশ্রম গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সাথে যৌথভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, লোকালয়ের বাচ্চাদের নিদৃষ্ট সময়সূচীতে সমস্ত ধরণের টিকা দেওয়া হয়। সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সাথে যৌথভাবে এই অঞ্চলের বাচ্চাদের / শিশুদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে এই আশ্রম। কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের খ্যাতিমান চিকিৎসকদের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তায় বাচ্চাদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
নামীদামী হাসপাতাল যেমন মিশন হাসপাতাল, দুর্গাপুর, প্রিয়জন হসপিটাল, কলকাতা ইত্যাদির সক্রিয় সহযোগিতায় অসহায় গ্রামীণ জনগণের জন্য বিনা মূল্যে পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য শিবিরগুলি সফলভাবে পরিচালনা করা হয়। এই শিবিরগুলিতে রক্তচাপ পরীক্ষা করা, ইসিজি, রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ, রক্তে সুগার টেস্ট ইত্যাদির করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অভাবীদের মধ্যে ওষুধগুলি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রের সহযোগিতায়, বৃদ্ধদের সুবিধার্থে নিয়মিত বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। চশমাগুলিও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। এখনও অবধি, এই অঞ্চলে প্রায় ২০০০ এরও বেশি চোখের অপারেশন স্থানীয় জনগণকে উপকৃত করে চলেছে।
২০০৬ সাল থেকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পিতা-মাতার দুর্দশার বিষয়টি উপলব্ধি করে, বিবাহযোগ্যা কন্যাদের বিবাহের ব্যবস্থা করার জন্য, অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম, কলকাতার আনন্দলোক হাসপাতালের সহযোগিতায়, বিনামূল্যে বিবাহ-অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যদিও কন্যাদের পরিবারের সদস্যদের উপর পাত্র সন্ধানের দায়বদ্ধতা রয়েছে, আশ্রম বিবাহ চূড়ান্ত করার আগে প্রস্তাবিত পাত্র এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক অবস্থান / পুলিশ রেকর্ড পরীক্ষা করে। থ্যালাসেমিয়া জাতীয় সমস্যার হাত থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে আশ্রম সম্ভাব্য দম্পতিদের রক্তের গ্রূপগুলিও পরীক্ষা করায়। এখনো পর্যন্ত এই উদ্যোগ ১৫৬ জন মেয়ের মুখে হাসি এনে দিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর বঙ্গোপসাগরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় অঞ্চলটি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।যার প্রভাব প্রকৃতপক্ষে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য। এ জাতীয় সংকটগুলির মধ্যেও, অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম সর্বদা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে,
● বিধ্বস্তদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ত্রাণ কেন্দ্র খোলা।
● কমিউনিটি কিচেন থেকে খাদ্য প্রস্তুত / বিতরণ করা।
● পোশাক, কম্বল এবং ত্রিপল সরবরাহ করা।
● অসুস্থদের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা / ওষুধ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
এটি আশ্রমের জন্য সত্যিই বড় সৌভাগ্যের যে তারা দেশ ও বিদেশের বহু জনহিতকর সংস্থার সাথে যুক্ত, যখনই আশ্রমের সহায়তার প্রয়োজন হয় তখনই এগিয়ে আসে। দায়বদ্ধ, অলোকবর্তিকা, সমবেত, সুজন, কুন্ডু ফাউন্ডেশন, নিমতা আত্মজন ইত্যাদি কিছু সংগঠনের সাথে আশ্রম বছরের পর বছর ধরে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে, এই সংগঠনগুলি অসময়ে সাথে দিয়েছে। তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় আশ্রম দুর্দিনে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন পোশাক, বিছানা, উলের পোশাক, কম্বল, ছাতা, বৃষ্টির আবরণ, টর্চ লাইট ইত্যাদি বিতরণ করেছে। এই সমস্ত উপকরণ একেবারে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, বুক বিক্রেতা ও প্রকাশকদের সহায়তায় আশ্রম এই অঞ্চলের সকল বয়সের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই এবং অন্যান্য সমস্ত শিক্ষাগত জিনিস বিতরণ করে।
এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও, পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রাম অঞ্চলের অনেক উজ্জ্বল শিক্ষার্থী কেবল অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে অক্ষম। এটি প্রতিভার অপরিহার্য অপচয় এবং প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনার একটি বিশাল জাতীয় ক্ষতি। এক্ষেত্রে একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য, অন্ত্যদয় অনাথ আশ্রম বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে নিরলসভাবে উভয়ের মধ্যে একটি যোগসূত্র তৈরি করার চেষ্টা করে। আশ্রমের এই প্রচেষ্টার ফলে, এই অঞ্চলের বেশ কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীরা সফলভাবে ভাল প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পড়াশোনা করছে।
নিরক্ষরতা গ্রামবাসীদের উপার্জনের সম্ভাবনা বৃদ্ধির সম্ভাবনাগুলিকে বন্ধ করে এবং তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ইত্যাদির মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির প্রাপ্যতাও এর কারণে প্রভাবিত হয়। নিরক্ষরতার অভিশাপকে নির্মূল করার জন্য অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম এই অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন জনহিতকর সংগঠন রয়েছে, যারা একসাথে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্ত্যোদয়ের সাথে হাত মিলিয়েছে। অনুদীপ ফাউন্ডেশন, উৎকর্ষ বাংলা, অ্যান ফাউন্ডেশন (আমেরিকা) এমন কয়েকটি সংস্থা এই অভিযানে অন্ত্যোদয়েকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।
বিভিন্ন গোষ্ঠীর সামাজিক বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করার জন্য উৎসবগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ অঞ্চলে এটির গুরুত্ব আরো বেশি, যেখানে মহানগরের তুলনায় বিনোদনের অন্যান্য উপায়গুলি সাধারণত কম। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রম আমাদের সমাজের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপন করে। দুর্গাপূজা উদযাপন, এক্স-মাস, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, নববর্ষ, মহান ব্যক্তিত্বদের জন্ম দিবস ইত্যাদি। বিশেষভাবে উল্লেখ করার দাবি রাখে যে অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রমের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগগুলি কার্যত এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
অরিন্দম ভৌমিক।
midnapore.in
● Bengali part of the certificate in writter by - Dr. Bibhas Kanti Mandal.
● Hindi part of the certificate in writter by - Priti Rekha Samanta.