কাকরাজিত, অশ্বারোহী, হরিদশ্ব, Kakrajit, horseman, Haridaswa, Dantan, Medinipur

কাকরাজিতের অশ্বারোহী কি হরিদশ্ব মূর্তি ?


Is Kakrajit's horseman a statue of Haridaswa ?


সুতনু ঘোষ।



Home » Medinikatha Journal » Sutanu Ghosh » Is Kakrajit's horseman a statue of Haridaswa?



১) অশ্বারোহী সূর্যদেব - কাকরাজিত গ্রামের কুন্ডপুকুর থেকে একসময়ে উদ্ধার হয়েছিল বেশ বড়ো আকারের একটি অশ্বারোহী মূর্তির। কাকরাজিতের মূর্তিগুলির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মূর্তি এটি। যে ঘোড়ার পিঠে দেবতা বসে আছেন তার মাথা ও পাগুলি ভাঙা। দেবতার হাতদুটি ভাঙা ও মুখমন্ডল অস্পষ্ট। তবে মাথার দুপাশে দুটি সনাল পদ্ম দৃশ্যমান। দেবতার মাথায় মুকুট, কানে কুন্তল, শরীরে বর্ম দেখা যায়। বৈশিষ্ট্য সমূহ থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি একটি সূর্যমূর্তি। দুপাশে বামনাকৃতি সহচর দন্ডী ও পিঙ্গল রয়েছে।


২) রেবন্তের মূর্তি- গবেষক তারাপদ সাঁতরা মহাশয় কাকরাজিতের এই অশ্বারোহী মূর্তি সম্পর্কে লিখেছেন- " প্রথম দর্শনে এই অভিনব মূর্তিটিকে সূর্যের মূর্তি বলেই সনাক্ত করেছিলাম। কারণ সূর্যমূর্তির ভাস্কর্য অলংকরণে আরোপিত যাবতীয় লক্ষণ এ মূর্তিতে পরিস্ফুট, কেবলমাত্র তফাৎ এই যে, বিগ্রহটি অশ্বপৃষ্ঠে আসীন। সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহ জাগে, তবে কি এটি রেবন্তের মূর্তি?" রেবন্ত হলেন সূর্যের কনিষ্ঠ পুত্র ও যক্ষ গুহ্যকদের অধিপতি। পুরাণকাহিনী অনুসারে তিনি অশ্বারূঢ় এবং পরিজনসহ মৃগয়াবিহারী। কালিকাপুরাণের মতে সূর্যপুজা বিধানের দ্বারাই রেবন্তের পুজা কর্তব্য। ঘোড়ায় চড়া এই মূর্তিটিকে অনেকেই রেবন্তের মূর্তি বলে দাবি করেছেন।


তবে বাংলায় প্রাপ্ত রেবন্তের মূর্তিগুলির সাথে এই মূর্তির সাদৃশ্য কম। বিভিন্ন জায়গায় যে সব রেবন্তের মূর্তি ভাস্কর্য আছে সেখানে রেবন্তকে তাঁর অনুচর গুহ্যকদের সঙ্গে শিকাররত অবস্থায় দেখা যায়। ধনুক, তরবারি ইত্যাদি গ্রন্থে বর্ণিত অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও কোনও কোনও ভাস্কর্যে তাঁর হাতে মদের পাত্রও দেখা যায়। সাথে একটি শিকারী কুকুর দেখা যায়। অর্থাৎ রেবন্তের শিকার দৃশ্য। কিন্তু কাকরাজিতের অশ্বারোহী এইরকম নয়।


কাকরাজিত, অশ্বারোহী, হরিদশ্ব, Kakrajit, horseman, Haridaswa, Dantan, Medinipur
কাকরাজিতের অশ্বারোহী (ছবি: সুতনু ঘোষ)

৩) হরিদশ্ব মূর্তি - তুলনায় প্রায় একইরকম একটি অশ্বারোহী মূর্তি দেখা যায় কোনারক সূর্য মন্দিরে। সেখানে অশ্বারোহী উত্তর পার্শ্বদেবতা হরিদশ্ব। কনকমুকুট, স্বর্ণকুন্তল, অভেদ্য কবচ, রক্তোপবীত, কটিবন্ধ দেখা যায় মূর্তিটিতে। হরিদশ্ব সূর্যেরই অপর নাম। সবুজ রঙের অশ্ব , তাই নাম হয়েছে হরিদশ্ব। হরিৎ অশ্ববাহিত রথারূঢ় সূর্য। এটি সূর্যেরই অপর ধ্যানমূর্তি। হরিদ্রাভ অস্তগামী দিনমণি - অশ্বপৃষ্ঠে হরিদশ্ব। শাস্ত্রসম্মত বিরল অশ্বারোহী দেবমূর্তি। কাকরাজিতের এই অশ্বারোহী মূর্তি হরিদশ্ব বলেই মনে হয়। কোনারকের উত্তর পার্শ্বদেবতা হচ্ছেন অশ্বারূঢ় হরিদশ্ব ।


হয়ারূঢ় হরিদশ্বের ধ্যানমন্ত্র -


"একচক্রং সসপ্তাশ্বং সসারথিং মহারথম্ !

হস্তদ্ধয়ং পদ্মধরং কঞ্চুকশ্চর্যবক্ষসম্ ॥

সর্বাভরণসংযুক্তা কেশহার সমুজ্জ্বলা ।

এবমুক্তরথস্তস্য মকরধ্বজ ঈষ্যতে ॥

মুকুটঞ্চাচি দাতব্যমন্যৎ সর্বং সমন্ডলম্।

একবক্তাঙ্কিত দণ্ডো স্কন্দস্তেজস্করাম্বুজম্ ॥

কৃত্বা তু স্থাপয়েৎ পুর্বপুরুষাকৃতরূপিণৌ ।

হয়ারূঢ়স্থ কুর্বীত পদ্মস্থং বার্চনামকম্ ॥

স দিব্যমানবপূষং সর্বলোকৈকদীপকম্ ।"



তবে কোনারকের হরিদশ্ব মূর্তিতে ব্রহ্মা বিষ্ণু ও সহচরদের মূর্তি দেখা যায়। এই পার্থক্যগুলি ছাড়া কাকরাজিতের মূর্তির সাথে এই মূর্তির অনেকটা মিল আছে। তাই প্রশ্ন জাগে কাকরাজিতের অশ্বারোহী কি হরিদশ্ব মূর্তি ?




M E D I N I K A T H A J O U R N A L

Edited by Arindam Bhowmik

Published on 01.11.2025


তথ্য সহায়তা

১) দাঁতনের কাকরাজিত গ্রামে প্রাপ্ত মূর্তি - সুতনু ঘোষ, রক্তমৃত্তিকা জুন ২০২৫ , তৃতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা। সম্পাদক - রাজীব বনু ও তথাগত সেন , বাংলার পুরাতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র।
মেদিনীপুর : সংস্কৃতি ও মানবসমাজ - তারাপদ সাঁতরা , কৌশিকী প্রকাশনী, প্রকাশক - শৈলেন ঘোষ, প্রথম প্রকাশ - ১৯৮৭
কলিঙ্গের দেবদেউল - নারায়ণ সান্যাল, শঙ্খ প্রকাশন, প্রকাশক - অমিতাভ মজুমদার, প্রথম প্রকাশ - ১৩৪৯


নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।