সুপাপুড়সুড়ি গ্রামের মহারুদ্র শিবের মন্দির
Maharudra Shiva Temple in Supapursuri Village
উমাশংকর নিয়োগী।
Home » Medinikatha Journal » Umasankar Neogi » Maharudra Shiva Temple in Supapursuri Village
দাসপুর থানার সুপাপুড়সুড়ি গ্রামের মহারুদ্র শিবের পশ্চিম্মুখী আনুমানিক ১৮-১৯ ফুট উঁচু পঞ্চরেখো দেউল । মন্দিরের দক্ষিণ দিকেও একটি দরজা আছে। দরজার উপরে লেখা আছে ‘ মন্দির নির্মাণ ১৩৬৪ / ২৮শে ফাল্গুন ‘ লিপি দৃষ্টে মন্দিরটি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন জানালেন এই লিপি মন্দির সংস্কারের সময়ের , প্রতিষ্ঠালিপি নয়। তারা মনে করেন এখানে চৈত্র মাসের গাজন তিশতাধিক বছর পূর্ব থেকে হয়ে আসছে। অন্তত একশো বছর পর সংস্কারের প্রয়োজন হলে মন্দিরটি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে কোনো এক সময়ে তৈরি হয়েছে বলে অনুমান করা যেতে পারে। ওই মন্দিরের ডান দিকে জীর্ণ টিনের আটচালা। মহারুদ্র কেবল সুপাপুড়সুড়ি নয় , অন্যান্য আরও সাতটি গ্রাম বলুড়ি , কাঁটাদরজা , দানিকলা, বড়মারা ,ভীমপুর, গেঁড়িকলা ,রঘুনাথপুর গ্রামেরও উপাস্য দেবতা। এক সময়ে এই গ্রামগুলির কোথাও শিব মন্দির ছিল না।
সুপাপুড়সুড়ি গ্রামের মহারুদ্র শিবের মন্দির
মহারুদ্রের সাত ভোগের মাড়ো। কারো বাড়িতে ভোগ মুদতে যাওয়া হয় না। শিবের সেবাইত ও পুরোহিত বিদ্যুৎ চক্রবর্তী প্রমুখ ব্রাহ্মণ বাড়ি থেকে সমস্ত ভোগের উপকরণ আসে। গাজনের সময় বাবার ভোগের জন্য নানা সামগ্রী বিভিন্ন গ্রামের ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছে দিয়ে যান। নারীপুরুষ, জাতি নির্বিশেষে ভক্তা থাকেন কমবেশি ৩৫০ -৪০০ জন। গাজনে থাকা সন্ন্যাসীদের নানা কঠিন আচার আচরণ পালন করতে হয়। হিঁদোলা সেবার আগে কেউ জলগ্রহণ করতে পারেন না। দাসপুর থানার আর কোথাও গাজনে এত ভক্তা থাকেন না। মহারুদ্র পাতাল ফোঁড় শিব , শক্তি সহ উঠেছেন।রাখালদের গোরু লুকিয়ে এসে দুধ দিয়ে যেত। তারাই বাবাকে প্রথম দেখে। তাদের মধ্যে কেউ কাটারি দিয়ে আঘাত করে বাবার মাথায় তাই কাটা দাগ আছে।দুর্গাপদ সাঁতরার পরিবার থেকে প্রধান ভক্তা হয়ে আসছেন পুরুষানুক্রমে। এই মন্দিরে দুজন দেউল্যা ভক্তা থাকেন। পঞ্চানন ভুঞা , দিলীপ ভূঞা বর্তমানে দেউল্যা ভক্তা হয়ে থাকেন। আগুন সন্ন্যাসী তথা চাপা ভক্তা বলে এক বিশেষ ভক্তা এখানে থাকেন। আগুন সংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত হয়।আগুন সন্ন্যাসী হন অভিজিৎ বেরা।
স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাস বাবাকে ঠিক মত ডাকতে পারলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়, দুরারোগ্য ব্যাধিও সেরে যায়। বাবা মহারুদ্র বাঞ্ছাকল্পতরু। এক বাক্যে সবাই জানালেন রাত্রি বারোটার পর বাবার মাড়োতে সমস্ত লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয় । কারণ ওই সময় বাবা সাদা ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে বেরোন। এই সময়ে আলো জ্বালিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েছে। যেহেতু বাবা সাদা ঘোড়া চড়ে বেড়াতে বেরোন তাই অনেকে মন্দিরে পোড়া মাটির ঘোড়া দিয়ে মানসিক শোধ করেন। মন্দিরের উত্তর দিকে জনৈক ভক্তের মানসিক শোধ করা দুটি দৃষ্টিনন্দন সাদা ঘোড়া আছে। গুড়ান ভোগের দিন কুল কাঁটা কাটা হয়, মূল দায়িত্বে থাকেন দেউল্যা ভক্তারা। বেতচালা,মাথাচালা , ধুনোসেবা, কাঁটাভাঙা হয়। মন্দির সংলগ্ন পাকাঘাট যুক্ত বড় শিব পুকুর থাকলেও বৃহত চড়ককাঠ ডোবানো থাকে অদূরে চড়কডাঙার পুকুরে। চড়কের দিন জিভফোঁড়া হয় প্রতি বছর। মেলের দিন মেলা বসে । পাঁচছয় হাজার পুণ্যার্থী বাবার মাথায় জল ঢালেন। পয়লা বৈশাখ সন্ন্যাসীদের অশৌচান্ত দিনে মাড়োতলায় নটি গ্রামের মানুষ সহ অন্যান্য যাত্রীরাও পাত পেড়ে প্রসাদ পেয়ে থাকেন। দশ বারোহাজার মানুষের প্রসাদ পাওয়ার আয়োজন থাকে।
শীতলা মন্দিরের ডান দিকে মাকড়া পাথরে খোদাই করা মূর্তি।
মন্দিরের সামনে থাকা গৌরীপট্টটি বৈশিষ্ট্য পূর্ণ। পট্টের সামনে একটি শিবলিঙ্গের ন্যায় পাথর আছে। মহারুদ্রের মন্দির প্রাঙ্গণে একটি শীতলা মন্দির ও একটি সুদৃশ্য নবনির্মিত হরি মন্দির আছে। শীতলা মন্দিরের ডান দিকে একটি মাকড়া পাথরে খোদাই করা মূর্তি আছে। স্থানীয় জনগণ পাথরটিকে ষষ্ঠী ঠাকুর বলে আরাধনা করে থাকেন। মূর্তিটিকে দেখে বসে থাকা পঞ্চানন্দ ও পাশে জরাসুর বলে মনে হয়েছে। প্রত্নগবেষক দ্বারা মূর্তি রহস্য উন্মোচিত হলে সত্য সর্বসমক্ষে আসবে।
M E D I N I K A T H A J O U R N A L
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 30.03.2025)
তথ্যসূত্র -
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, তরুণ চক্রবর্তী, শেখর চক্রবর্তী , বিজয় ধাড়া, সনৎ সামন্ত, সুকান্ত সিংহ , দেবাশিস ভট্টাচার্য প্রমুখ ।
নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।