পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami

পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া (পড়ুআঁ) অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী

Poura Ashtami | Poduan Ashtami | Poduan Ashtami

অরিন্দম ভৌমিক।


এখন সব জায়গায় Women's empowerment বা নারী অধিকারের কথা শোনা যায়। অর্থাৎ মেয়েদের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার বা সম্মান দিতে হবে। এই নিয়ে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে, প্রচার করা হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে। নানা ধরনের সরকারি প্রকল্প হচ্ছে, এই বিষয়ে বিভিন্ন পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
মায়েরা স্নান করে তুলসী মঞ্চ ধুয়ে সুন্দর করে সাজান।

অথচ এই সমান অধিকারের ব্যাপারটা বহু দিন থেকেই আমাদের জেলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ছিল। তার উদাহরণ হল এই পৌড়া অষ্টমী। এই উৎসবে ছেলে মেয়ের কোন বিভেদ কোন দিনই ছিল না। পরিবারের প্রথম সন্তান সে ছেলে হোক বা মেয়ে, তাকে নিয়েই এই উৎসব।

ব্যাপারটা শুধু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী এবং লক্ষীর মধ্যে সব থেকে বড় হলেন লক্ষী। সেইজন্য এই অনুষ্ঠানে লক্ষীকেও পুজো করা হয়।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
মায়েরা স্নান করে তুলসী মঞ্চ ধুয়ে সুন্দর করে সাজান।

সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বাড়ির গৃহপালিত পশুও বাদ যায় না এই উৎসব থেকে। সেখানেও একই নিয়ম। গোয়াল ঘরের বড় বাছুরকে নিয়ে পালন করা হয় পৌড়া অষ্টমী।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
উপকরণ - ধানের শিষ, দূর্বাঘাস, কুলের পাতা, মূলোর চারা, আখ, গরুর প্রথম সন্তান-এর গোবর, চন্দন, সিন্দুর, ধুপ, আতপ চাল বাটা, হলুদ বাটা, আবাটা (1), মেথি, তিল, পানিফল, বিউলির ডাল, কলা, খেজুর, সুজি, পালো, কষাফল (হরিতকি), গোটা সুপারি, আমাডালা, কলাপাতা, হলুদ গাছের পাতা, ফুল।

আজকাল আমরা অন্য রাজ্যের বা অন্য দেশের উৎসব পালন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি। অথচ এমন সুন্দর একটি উৎসব যা চিরকালই আমাদের শিখিয়ে এসেছে ছেলে হোক বা মেয়ে সবাই সমান, সেই উৎসব নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই। আমরা কেন গর্ব করব না মেদিনীপুর জেলার এমন সুন্দর একটি উৎসব নিয়ে ?


আসুন দেখে নেওয়া যাক এই উৎসবের রীতিনীতি।


নাম - পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী।

দেব-দেবী-মন্দির - ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গোবর্দ্ধন, তুলসী মঞ্চ।

সময় - অগ্রহায়ন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় (শীতকাল)।

উপকরণ - ধানের শিষ, দূর্বাঘাস, কুলের পাতা, মূলোর চারা, আখ, গরুর প্রথম সন্তান-এর গোবর, চন্দন, সিন্দুর, ধুপ, আতপ চাল বাটা, হলুদ বাটা, আবাটা (1), মেথি, তিল, পানিফল, বিউলির ডাল, কলা, খেজুর, সুজি, পালো, কষাফল (হরিতকি), গোটা সুপারি, আমাডালা, কলাপাতা, হলুদ গাছের পাতা, ফুল।

উপহার - নতুন জামা কাপড় (হলুদ রঙের), লাল বা কালো ঘুমসি, তুলসী কাঠির মালা (কোথাও বা বেল কাঠির মালা)।

নিষেধ - যাদের অষ্টমী তাদের এই দিন “ভুজা” (মুড়ি) খাওয়া বারণ। মায়েরা এই অষ্টমী না গেলে বিউলির (বিরি) বড়ি, মুলাশাক ও মুলো খান না। কোথাও আবার এই তিথি না গেলে মায়েরা পোড়া জিনিস খান না, যেমন আলু পোড়া, বেগুন পোড়া, ভুট্টা পোড়া ইত্যাদি।

মন্ত্র - কোন মন্ত্রের ব্যবহার হয় না।

পুরোহিত - সাধারণত মা, দিদা বা মাতৃস্থানীয়রা করেন। বিশেষ ক্ষেত্রে বাবারাও করেন। কোন পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না।


অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অঞ্চল বিশেষে এই উৎসবকে পৌড়া, পড়ুঁয়া (পড়ুআঁ) বা পড়ুয়ান এই তিন প্রধান নামে পরিচিত। উচ্চারণ যেমনই হোক না কেন, এর অর্থ হল 'বড় সন্তান'। বাড়ির প্রথম সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালন করা হয় এই উৎসব। ওড়িশার প্রথমাষ্টমী থেকেই পড়ুআঁ অষ্টমী নামটি এসেছে। ওড়িয়া অভিধানে পড়ুআঁ শব্দটি প্রথমার অপভ্রংশ বলা হচ্ছে। (4) একজন নারী যার মুখ থেকে প্রথম 'মা' ডাক শোনেন তাকে ঘিরেই এই উৎসব। উৎসবটা বড় সন্তানকে নিয়ে হলেও এই দিন সকাল থেকেই আনন্দে মেতে ওঠে ছোটরা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পৌড়া সন্তানের বয়স যতই হোক না কেন তার জন্যও পালন করা হয় পৌড়া অষ্টমী।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
কলাপাতা তোলা হচ্ছে।

অগ্রহায়ন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অর্থাৎ প্রতি বছর রাসপূর্ণিমার পরের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয় পৌড়া অষ্টমী। প্রায় সমস্ত রাঢ় (2) বাংলা সমেত ওড়িশা সংলগ্ন সমস্ত অঞ্চলে এই প্রথা প্রচলিত হয়ে আসছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওড়িয়া সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে এই পৌড়া অষ্টমীতে।



মায়েরা সকাল বেলায় স্নান করে প্রথমে তুলসীমঞ্চ ধুয়ে নেন। তারপর সুন্দর করে সাজানো হয় তুলসীমঞ্চ। বাগান থেকে নিয়ে আসা হয় কলাপাতা। এরপরে গোবর দিয়ে ছোট ছোট গোলাকার ঠাকুর বানিয়ে বসানো হয় সেই কলাপাতায়। এরপরে গোবর দিয়ে ছোট ছোট গোলাকার ঠাকুর বানিয়ে সাজানো হয়। এই গোবর দিয়ে ঠাকুর সাজানোটি অবিভক্ত মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা ধরণের হয়। যেমন কাঁথি অঞ্চলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে কল্পনা করে কলা পাতার উপরে তিনটি গোবরের মূর্তি তৈরী করে তার মাথায় নতুন ধানের শিষ লাগানো হয়। আবার সুবর্ণরেখা তীরবর্তী অঞ্চলে পিঁড়া বা পিঁড়ি রাখা হয় মঞ্চে তার উপর বিছানো হয় হলুদ গাছের পাতা। গোবর দিয়ে বানানো হয় গোবর্দ্ধন ঠাকুর। ছোট ছোট গোলা আকার দেওয়া হয়। সংখ্যায় পাঁচ,সাত,আট বা তারও বেশি করা হয়। তারপর সেই ছোট্ট গোবরের উপর লাগানো হয় ধানের শিষ, দূর্বাঘাস, ছড়ানো হয় কুলের পাতা, মূলোর চারা। কোন কোন জায়গায় কলাপাতার উপরে গোবরের ডেলার একটিকে নারায়ণ ও অন্যটিকে লক্ষী হিসেবে পুজো করা হয়। নারায়ণকে চন্দন ও গোটা সুপুরী এবং লক্ষীকে সিঁদুর ও হরীতকী দেওয়া হয়। কোথাও আবার এই গোলাকার ঠাকুরের সংখ্যা ১১ বা তারও বেশি হয়। কেউ আবার বিরির ডালের বড়ি বসান।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
হলুদ বাটা হচ্ছে।

পূর্ণচন্দ্র দাস তাঁর কাঁথির লোকাচার বইতে লিখেছেন -

"পড়িয়ন উৎসবের ঠিক সাতদিনের মধ্যেই পড়ুঁয়া অষ্টমী। শারদ বর্ষ গণনা কালে এটি ছিল বছরের প্রথম অষ্টমী। পড়ুঁয়া শব্দের অর্থ প্রথম। বাপ-মায়ের প্রথম সন্তানের এই তিথিতে জন্মোৎসব পালন করে। জাতকের গায়ে হলুদ মাখিয়ে মাথায় চন্দনের ফোঁটা দিয়ে হলুদ রঙের জামা কাপড় পরিয়ে সাজানো হয়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে কল্পনা করে তিনটি গোবরের মূর্তি তৈরী করে তার মাথায় নতুন ধানের শিষ গুঁজে দেওয়া হয়। এদিনও লক্ষী পূজা হয়। নৈবেদ্য হয় পরমান্ন।"


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
মায়েরা এই অষ্টমী না গেলে বিউলির (বিরি) বড়ি, মুলাশাক ও মুলো খান না।

অগ্রহায়ণ মাসের লক্ষীপূজোর সঙ্গে পৌড়া অষ্টমীর সংযোগ আছে। লক্ষ্মী বড়ো তাই তাঁকেও পৌঁড়া অষ্টমী পালনের রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এই বিশেষ পূজোতে লাগে মূলো, আখ, দূর্বা ঘাস, বাড়ির গোয়ালের গরুর প্রথম বাছুরের গোবর, চন্দন, সিন্দুর, ধুপ, আতপ চাল। হলুদ বেটে ঠাকুর কে মাখানো হয় হলুদ। তাতে মেথি, তিল, চাল, হলুদ থাকে। দেওয়া হয় ধান গাছ। চাল বেটে ঘি দিয়ে পিঠে করা হয়। দেওয়া হয় পানিফল, কলা, খেজুর ইত্যাদি নানান ফল। ঘটে কষাফল, আমডালা, সিন্দুর দেওয়া হয়। মাতৃস্থানীয় যে কেউপূজো করতে পারেন। একই সাথে পূজিতা হন গৃহলক্ষী, হাতি, পায়রা, ঘট, ময়ূর ইত্যাদি বিগ্রহ কাঠের সিংহাসনে বা 'ঠাকুর খেটিয়ালি' তে। 'ঠাকুর খেটিয়ালি' হল কাঠের তৈরী বিশেষ ধরনের একটি আসন যাতে মা লক্ষ্মী সহ অন্য সমস্ত বিগ্রহ থাকেন। এই লক্ষ্মী ঠাকুরের পূজো অগ্রহায়ন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়, মকরের সময় মকর খাইয়ে ঠাকুর মাটির হাঁড়িতে রাখা হয়, যদিও অঞ্চল ভেদে এই গৃহলক্ষ্মীর পজোর সময় ভিন্ন, দূর্গা পূজার পর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর সময় আবার সেই বিগ্রহ বের করে আবার পূজা হয়, তেঁতুল দিয়ে ধুয়ে, তেল হলুদ মাখাতে হয় ঠাকুর কে। তবে প্রত্যেক বছর অগ্রহায়ন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার পৌড়া অষ্টমীর আগে হয় না, কোন কোন বছর পৌড়া অষ্টমীর পরেও হয়। অর্থাৎ হাঁড়ি থেকে লক্ষী ঠাকুর বেরোনোর আগেই হয়ে যায় পৌড়া অষ্টমী।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
যাদের অষ্টমী তাদের এই দিন “ভুজা” (মুড়ি) খাওয়া বারণ।

পৌড়া অষ্টমীতে সাধারণত মামা বাড়ি থেকে নতুন পোষাক ও অন্যান্য সামগ্রী আসে। আবার নিজের বাড়িতেও কেনা হয় নতুন জামাকাপড়। বিয়ের পর অবশ্য মামাবাড়ি থেকে জামাকাপড় আসাটা আর বাধ্যতামূলক থাকে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে বাবার বাড়ি থেকে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ের পর মামাবাড়ি থেকেও অষ্টমীর সামগ্রী আসে।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
নানা রকমের গ্রামীণ মিষ্টান্ন দেওয়া হয়।

পৌড়া অষ্টমীর দিন সকাল থেকেই কিছু না খেয়ে থাকেন মায়েরা। সদ্য ঘরে তোলা ধান ভেঙে তা দিয়ে রাঁধা হয় পরমান্ন। নানান রকম পিঠে পুলি সহ পৌড়াদের জন্য করা হয় ভুরিভোজের আয়োজন। মায়েরা এই অষ্টমী না গেলে বিউলির (বিরি) ডাল, মুলাশাক ও মুলো খান না। যাদের অষ্টমী তাদের এই দিন “ভুজা” (মুড়ি) খাওয়া বারণ। প্রথমে বড় সন্তানকে কাঁচা হলুদবাটা এবং আবাটা (আবাঠা) মাখানো হয়। আবাটা হল আমলকী, হরিদ্রা প্রভৃতি মিশ্রনের বাটা যা অঙ্গপরিষ্কারক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। এর পরে স্নান করানো হয়। স্নানের পর নতুন বস্ত্র পরানো হয়। সাধারণত হলুদ রঙের বস্ত্র দেওয়া হয়। অনেকে আবার নতুন বস্ত্র তুলসীমঞ্চের কাছে রাখেন পুজোর জন্য। পাশে রাখা হয় কাঁসার ঘট, যাতে দেওয়া হয় আমডালা, কষাফল, আতবচাল, দূর্বা, সিন্দুর, চন্দনের ফোঁটা। সুবর্ণরেখা তীরবর্তী অঞ্চলে আরো একটি বিশেষ জিনিস লাগে পূজোতে, সেটি হল চুয়া, যা বেনে দোকান থেকে আনতে হয়, খানিকটা চন্দনের মতো, নরম আঠালো পদার্থ যা ঘট, ঠাকুর সহ পড়ুয়াদের মাথাতে টিকা হিসেবে দেওয়া হয়, এর সাথে দেওয়া হয় আঁউলা নামের একটি হলুদ তরল পদার্থ, যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোবর্দ্ধন ঠাকুর সহ সমস্ত জায়গায়।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
পৌড়াকে নানান পদ সাজিয়ে খেতে দেওয়া হয়। শুধু বড় সন্তানের জন্যই নয়, এই ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকে বাড়ির সমস্ত সদস্যদের জন্য।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী

অন্যদিকে গোয়ালঘরের যে সব বাছুর বড় বা পৌড়া তাদেরও স্নান করানো হয়, তারপর শালুক ফুলের দিয়ে মালা তৈরী করে তার গলায় পরানো হয়, এবং কপালে লাগানো হয় চন্দন ও সিন্দুর।


পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে কল্পনা করে কলা পাতার উপরে তিনটি গোবরের মূর্তি তৈরী করে তার মাথায় নতুন ধানের শিষ গুঁজে দেওয়া হয়।




পৌড়া অষ্টমী, পড়ুঁয়া  অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী  | Poura Ashtami, Poduan Ashtami or Poduan Ashtami
পাশে রাখা হয় কাঁসার ঘট, যাতে দেওয়া হয় আমডালা, কষাফল, আতবচাল, দূর্বা, সিন্দুর, চন্দনের ফোঁটা।

এরপর পৌড়াদের তুলসীতলায় নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। তাদের মঙ্গল কামনা করে কোমরে বাঁধা হয় লাল বা কালো ঘুনসি বা রেশম। গলায় পরানো হয় তুলশীকাঠির মালা (কোথাও বা বেল কাঠির মালা)। বাড়ির সমস্ত গুরুজনরা মাথায় দূর্বা, ফুল, আতব চাল ইত্যাদি দিয়ে আশীর্বাদ করেন। প্রদীপের আলো, শঙ্খধ্বনি ও ধূপের সুগন্ধে ভরে ওঠে চতুর্দিক। প্রদীপের আলোয় মা তাঁর প্রথম সন্তানকে আশীর্বাদ করেন কাঁচা হলুদ বাটার ফোঁটা দিয়ে।


পড়ুঁয়া অষ্টমীর ভিডিও দেখুন | Watch the video of Fall Ashtami

এর পরে পৌড়াকে নানান পদ সাজিয়ে খেতে দেওয়া হয়। শুধু বড় সন্তানের জন্যই নয়, এই ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকে বাড়ির সমস্ত সদস্যদের জন্য। পৌড়া অষ্টমী আমাদের জেলার এক অন্যতম গ্রামীণ উৎসব। এই উৎসব সমাজের জন্য শিক্ষণীয় বার্তা দেয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তিক ও সামাজিক যোগাযোগ বেড়েছে। মানুষ নিজেকে চেনা-জানার সুযোগ পেয়েছে। নিজস্ব কৃষ্টি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারছে। গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এসব উৎসব-আয়োজন খুবই তাৎপযর্পূণর্। এসব উৎসব-আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য টিকে থাকুক, সেটাই প্রত্যাশা।


অরিন্দম ভৌমিক।

midnapore.in

(Published on 16.11.2022)

(1) আবাটা হল আমলকী, হরিদ্রা প্রভৃতি মিশ্রনের বাটা যা অঙ্গপরিষ্কারক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
(2) রাঢ় হল ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অঞ্চল। এটি পশ্চিমে ছোটোনাগপুর মালভূমি ও পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত। রাঢ় অঞ্চলের সীমানা সম্পর্কে প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলেও, বোঝা যায় যে মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেই এই অঞ্চলের অবস্থিতি ছিল। অঞ্চলের কয়েকটি অংশ আধুনিক ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্তর্গত।
(3) পৌড়া অষ্টমী বা পড়ুয়ান অষ্টমী, পবিত্র পাত্র (Medinikatha Journal by Midnapore.in)
(4) ওড়িয়া অভিধান।