চৈতালি কুণ্ডু নায়েক।
'প্রত্নক্ষেত্রের এক নাম কিয়ারচাঁদ' - আজ থেকে প্রায় তিরিশ-পঁয়তিরিশ বছর আগে নিঃসন্দেহে এই আর্টিকেলটির হেডিং হতে পারতো। খড়্গপুর থেকে কেশিয়াড়ি যাওয়ার রাস্তায় পড়ে হাতিগেড়িয়া নামে একটি ছোট্টো জনপদ। এই হাতিগেড়িয়া থেকে ডানদিকে বাঁক নিয়ে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে মসৃণ পিচের পথের দুপাশে শাল, সোনাঝুরি, কিছু কাজু, কুরচি, কেন্দুর ছোটোখাটো এক জঙ্গল। হাতিগেড়িয়া থেকে কিয়ারচাঁদ যাওয়ায় পথে এক জায়গার নামই তো কেন্দুবনি। নিশ্চয়ই এক সময় ওখানে কেন্দুগাছের নিবিড় জঙ্গল ছিল। বর্ষায় এখন জঙ্গলের রঙ ঘন সবুজ। গাড়ি বাতাস কেটে ছুটে চলার সময় নাকে আসে সবুজ বনজ গন্ধ। জঙ্গলের টাটকা বাতাস বুক ভরে নিতে নিতেই পৌঁছে যাওয়া যায় কিয়ারচাঁদ।
কিয়ারচাঁদ গ্রামটি বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত এবং কুলটিকরি থেকে প্রায় এক মাইল পুর্বদিকে অবস্থিত। আজ থেকে বেশ কয়েকবছর আগেও প্রধান রাস্তার বামদিকের অসমতল ভূমি, পাথরডাঙ্গা চত্বরের উপরে দেখা যেত প্রায় কয়েকশো পাথরের স্তম্ভ। রাজা জহর সিংয়ের পাথুরে সৈন্যসামন্ত, 'পাথুরে সৈন্য'র দল। 'পাথুরে সৈন্য' বা 'মায়া সৈন্য'র অতীত জানতে গেলে একটু পিছিয়ে যেতে হয়।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি দিপাকিয়ারচাঁদ বা দ্বিপাকিয়ারচাঁদ, বর্তমানে কিয়ারচাঁদ রাজ্যটির রাজা ছিলেন জহর সিং। এটি সুবর্ণরেখার উত্তর তীরে অবস্থিত। জহর সিং ছিলেন ছোটোখাটো এক সামন্ত রাজা। এই সামন্ত রাজার গড় ছিল কুলটিকরিতে। কুলটিকরি বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার অন্তর্ভুক্ত একটি সমৃদ্ধ গ্রাম। সেই সময় উপর্যূপরি মারাঠা-বর্গীদের আক্রমণে ওই সমস্ত অঞ্চলের রাজা প্রজা সকলেই ছিল ব্যতিব্যস্ত, আতঙ্কিত। নদীর দক্ষিণ পারে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বর্গীরা অতর্কিতে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যে! তারপর শুরু করছে লুন্ঠন ও অত্যাচার। রাজা জহর সিং চিন্তিত। ওই সমস্ত ছোটোখাটো সামন্ত রাজার তেমন সৈন্যসামন্তও ছিল না যে অতর্কিতে ধেয়ে আসা এই সমস্ত বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করবেন। এই সামন্ত রাজার রাজ্যপাট ছিল বর্তমান সাঁকরাইল থানার কুলটিকরি, লতা , রক্ষনি, আহিরা, আসনবনি, কুড়চিবনি, পাটাশোল এদিকে কেশিয়াড়ির থানার পশ্চিম প্রান্তে বেহারাসাই রনবনিয়া পর্যন্ত। তিনি তাঁর প্রজাদের ও আত্মীয়স্বজনদের রক্ষার জন্যে কুলটিকরির প্রায় একমাইল পূর্বে দিপাকিয়ারচা়ঁদ প্রান্তরে একহাজার মতো পাথরের স্তম্ভ স্থাপন করলেন। পাথরের স্তম্ভগুলি ছিল ল্যাটেরাইট পাথরের, আড়াই ফুট থেকে প্রায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার। পাথুরে স্তম্ভগুলি দেখতে অনেকটা মানুষের আকৃতির। উপরে গোলাকার মাথা তারপর গ্রীবাদেশ যেমন হয় অবশেষে ধড়।
এই পাথরের স্তম্ভগুলি সম্পর্কে পুরাতাত্ত্বিকেরা যে মতামত ব্যক্ত করেছেন তা হল, এক - সাধারণত এই রকম স্তম্ভাকৃতি পাথর আদিবাসীরা তাদের মৃত আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে ও স্মরণে তৈরি করে। অসম, মেঘালয়ের গারো, খাসি, নাগা পর্বত ও ছোটোনাগপুরের কিছু জায়গায় এমন পাথরের স্তম্ভ দেখতে পাওয়া যায়। কুলটিকরির জঙ্গলের আশেপাশে হয়তো এমন পাথর ছড়িয়ে ছিল। দুই - ওই পাথরের স্তম্ভগুলো শিখর-দেউলের আকৃতি বিশিষ্ট। ওই কিয়ারচাঁদ চত্বরে বহু কাল আগে সম্ভবত কোনও বিশালাকার শিখর দেবালয় বা মন্দির ছিল। প্রথাগতভাবে মানত হিসেবে ভক্তরা এইসব ছোটো ছোটো শিখর দেউল সংস্করণ এই স্থানে গড়ে ওঠা মন্দিরের বিগ্রহের কাছে নিবেদন করতেন। দেবতার কাছে কোনও মনস্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে এমন ছোটো ছোটো মন্দির প্রতিকৃতি নিবেদন করার রীতি উড়িষ্যার বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত। জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও মন্দিরের ক্ষুদ্রাকার প্রতিকৃতি নিবেদন করার রীতি যে ছিল তার উদাহরণ তো দেখা যায়। ভুবনেশ্বরের কাছে খন্ডগিরিতে জৈন মন্দিরের চত্বরে আর পুরুলিয়া জেলার মানবাজার এলাকার টুইসামা গ্রামের এক মন্দির চত্বর, যেখানে একই রকম ছোটো ছোটো দেউলাকার স্তম্ভ দেখতে পাওয়া যায়।
পুরাতাত্ত্বিকেরা অতীতে তাঁদের ক্ষেত্রসমীক্ষার সময় দেখতে পেয়েছিলেন ওই পাথর ডাঙ্গা চত্বরের কাছেই দুটি বেশ বড় আকারের আমলক শিলা। এছাড়াও এই আমলকশিলার কাছেই পাথরের ধ্বংসস্তুপের ভেতরে মাকড়াপাথরে তৈরি একটি মূর্তির ভাঙ্গা অংশ পড়ে থাকতেও দেখেন। মূর্তিটি বিষ্ণুমূর্তি বলে তারা অনুমান করেন। এই সমস্ত পুরাবস্তুগুলি দেখে তারা অনুমান করেন যে অনেক আগে ওই পাথরডাঙ্গা চত্বরের কাছে যে বিশাল কুসমাদিঘি, সেই দিঘির উত্তরদিকে একটি বেশ বড় মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। তবে সত্যিই যে কোনও দেবালয় বা মন্দিরের অস্ত্বিত্ব একদিন ছিল তা বোঝা যায়, কারণ এমন এখনও অনেক নিদর্শন গ্রামের আশেপাশে কোনও গাছতলায়, কারও বাড়ির কাছে বেড়ার ধারে, কোনোও আদিবাসী বাড়ির বাগানে দেখতে পাওয়া যায়। খগেন মুর্মুর বেড়া দেওয়া বাগানের ভেতরে এমনই একটি বিশালাকার আমলক পড়ে থাকতে দেখা যায় যা সাধারণত মন্দির বা দেবালয়েই দেখা যেত। এছাড়া আরও একটি একই রকম পাথরের আমলক কিয়ারচাঁদের বাস রাস্তার ধারে আর একটি আদিবাসী বাড়ীর উঠোনে এখনও দেখতে পাওয়া যায়।
যাইহোক রাজা জহর সিং করলেন কি, প্রায় একহাজারটি এমন পাথরের স্তম্ভ সংগ্রহ করে দিপাকিয়ারচা়ঁদ প্রান্তরে সারিবদ্ধ ভাবে বসিয়ে দিলেন। কারণ নদীর দক্ষিণে ওপার থেকেই তো বর্গীরা মার মার কাট কাট শব্দে ছুটে আসবে। অবাধে লুন্ঠন ও অত্যাচার চালাবে। রেহাই পাবেন না পুরস্ত্রীরাও। তাই শত্রু পক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে সন্ধে হলেই স্তম্ভগুলির মাথায় আলো জালিয়ে দেওয়া হত, যাতে মনে হয় সারি সারি অশ্বারোহী সৈন্য দিপাকিয়ারচা়ঁদ রাজ্য পাহারা দিচ্ছে। রাত্রিতে যখন এই আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত তা চাঁদের আলোকেও হার মানাত। হরিসাধন দাস তাঁর 'মেদিনীপুর ও স্বাধীনতা' বইটিতে উল্লেখ করেছেন দীপের আলোর জন্যেই নাম দ্বিপাকিয়ারচাঁদ। আবার কারও মতে দীপা ও কিয়ারচাঁদ নামে দুটি গ্রামের নামেই দিপাকিয়ারচাঁদ রাজ্যটি। রাজা জহর সিংয়ের এই 'মায়া সৈন্য' রা তখন বর্গীদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল রাজ্যপাট।
শুধু এই 'পাথুরে সৈন্য' ই এখানকার একমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়। কিয়ারচাঁদ, বেহেরাসাই, রনবনিয়া, রানা, মৎনগর, মরা দিঘি প্রভৃতি পাশাপাশি গ্রামগুলিতে অথবা একই গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় কারও বাড়ির উঠোনে, বেড়ার গায়ে অথবা কোনো গাছের তলায় অথবা পুকুর পাড়ে অজস্র পাথরের মূর্তি দেখা যায় এখনও। কোনও মূর্তি মুগনি পাথরের। কোনওটি মাকড়া পাথরের আবার কোনওটি স্লেট পাথরের বা বেলে পাথরের তৈরি। তবে বেশিরভাগ মূর্তিই মাকড়া পাথরের। হয়ত এই সমস্ত অঞ্চলের ভূমিরূপ ল্যাটেরাইট পাথর দ্বারা গঠিত বলেই বেশিরভাগ মূর্তি তৈরির উপাদানে ল্যাটেরাইট পাথর বা মাকড়া পাথরের আধিক্যই দেখা যায়। এই মূর্তিগুলোর বেশিরভাগই পুকুর খনন করার সময় অথবা মাটি খননের সময় অথবা জমি থেকেই পাওয়া গেছে।
বেহারাসাই বাস স্টপেজ থেকে ডানদিকে লাল মোরামের পথ ধরে কয়েক পা হেঁটে গেলেই চোখে পড়বে একটি বটগাছ। এই বটগাছের গোড়ায় একটি পাথরের সূর্যমূর্তি দেখতে পাওয়া যায় এখনও। শ্রদ্ধেয় তারাপদ সাঁতরা তাঁর 'পুরাকীর্তি ও সমীক্ষা' বইটিতে এই মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট এবং ভাস্কর্য বিচারে এটি দশ-এগারো শতকের বলে অনুমান করেছেন তিনি। এছাড়াও ওই এলাকায় বেহারাসাই গ্রামের কাছেই 'বালিবিল' নামে একটি জায়গায় ফাঁকা জমির ধারে বটগাছের তলায় সিমেন্টের বাঁধানো চাতালের ওপর একটি জৈন পার্শ্বনাথের মূর্তি এবং একটি বিষ্ণু মূর্তিও দেখা যায়।
আরও ভেতরের দিকে রানা গ্রামে একটি ছোট্টো কুটিরের পাশে একটি হিরো স্টোন বা বীর স্তম্ভ ও হারিতি দেবীর মূর্তি দেখা যায়। বীর স্তম্ভগুলি সাধারণত হয় ল্যাটেরাইট বা মাকড়াপাথরের বেদির ওপর খোদাই করা অশ্বারোহী মূর্তি, হাতে কৃপাণ অথবা পদাতিক মূর্তি, হাতে উদ্যত কৃপাণ। কোথাও কোথাও মাথার ওপর ছাতা ধরে সেবক বা অনুচর থাকে। দুই ধরনের উদ্দেশ্যে বীর স্তম্ভগুলি স্থাপন করা হত। এক- সাধারণত মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধের সময় অথবা সমাধিস্থ করার সময় তার স্মৃতিতে এই প্রস্তর স্তম্ভগুলি উৎসর্গ করা হত। যেমন আদিবাসী সমাজের কিছুজন তাঁদের সৎকার স্থান 'সাসানদিরিতে' বীর স্তম্ভগুলি স্থাপন করত। দুই- যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হত অশ্বারোহী মূর্তি আবার রাজপুরী সংলগ্ন অঞ্চলে বহিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবিলা করতে গিয়ে যাঁরা মারা যেতেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হতো উদ্যত কৃপাণ হাতে দন্ডায়মান মূর্তি।
তবে রানা গ্রামের বীর স্তম্ভের মূর্তিটি অশ্বারোহী। দেবী হারিতি এখন গ্রামবাসীদের কাছে দেবী চন্ডী হিসেবে পূজিতা হন। আষাঢ়ে শনি ও মঙ্গলবারে বড় পুজো হয়। এই মূর্তি দুটি খোলা আকাশের নিচেই লাল সিমেন্টের বাঁধানো চত্বরের ওপর বসানো আছে।
কেশিয়াড়ি থানার অন্তর্গত আর একটি গ্রাম মরাদিঘি। এই গ্রামগুলি আক্ষরিক অর্থেই গ্রাম।বেশিরভাগ গ্রামেরই ভেতরে ঢোকার সরু কাঁচা রাস্তা, রাস্তার দুপাশ থেকে পায়ে চলা পথটির ওপর ঝুঁকে আছে বিভিন্ন গাছগাছালি। ছায়া সুনিবিড় ছোটো ছোটো সব গ্রাম। এই গ্রামটিরও একটি ছোট্ট কুটিরের বেড়ার গায়ে একটি জৈন মূর্তি ও বারোটা ফনাযুক্ত বিষ্ণু লোকেশ্বরের মূর্তি চোখে পড়ে। বিষ্ণু লোকেশ্বর মূর্তিটি স্লেট পাথরের এবং মাঝামাঝি ভাঙ্গা।
রনবনিয়া গ্রামের শীতলা মন্দিরের সামনে বাঁধানো চাতালে একটি মুগনি পাথরের বিষ্ণু লোকেশ্বর (নাকি জৈন মূর্তি ?) দেখা যায়। দীর্ঘদিন এই সমস্ত মূর্তি গুলি খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকার জন্যে এদের অবয়ব অস্পষ্ট হয়ে গেছে। মূর্তিটির পাশেই আছে একটি আমলক ও বীরস্তম্ভ। এই সমস্ত মূর্তিগুলি ছাড়াও পথের দুপাশে আর়ও অনেক কারুকাজ করা পাথর, আমলক, পশুমূর্তি চোখে পড়ে।
এত বড় অঞ্চল জুড়ে এত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখলে মনের ভেতরে প্রশ্ন জাগে যে, কোথা থেকে এইসমস্ত মূর্তি এল! তার মধ্যে বেশিরভাগ মূর্তিগুলি বিশেষ করে বিষ্ণুমূর্তিগুলি ও সূর্যমূর্তিটি পুরাতাত্বিকেরা অনুমান করেছেন দশ বা এগারো শতকের। দ্বিপাকিয়ারচাঁদ রাজ্যটির অস্তিত্ব তো রাজা মানসিংহ যখন পাঠান দমন করতে এসেছিলেন অর্থাৎ ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে তখন থেকেই ছিল তা জানা যায়। দীর্ঘদিন তো এই অঞ্চলের রাজারা রাজত্ব করেছিলেন। তাহলে কি এই সমস্ত মূর্তি পূর্বতন রাজাদের আমলে আনা হয়েছিল! নাকি তারও অনেক অনেক আগে এখানে কোনও সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে উঠেছিল! বিশেষ করে বিষ্ণুমূর্তি, সূর্যমূর্তি ও জৈনমূর্তিগুলি দেখলে একথাই মনে আসে। তবে পুরাতাত্ত্বিকেরা অনুমান করেছেন এখানে এককালে বহু শিখর ও পীঢ়ারীতির মন্দির-দেবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেগুলির যদিও আজ আর অস্ত্বিত্ব নেই। তবে সেই দেবালয়গুলি না থাকলেও দেবালয়ে ব্যবহৃত বিশালাকার আমলক শিলাগুলি এখনও অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। তাই অতীতে এখানে কোনোও সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে উঠেছিল এমন অনুমান সঙ্গত।
এতগুলো গ্রাম জুড়ে এত প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের যেটুকু অবশিষ্ট এখনও আছে তা কি কোনওভাবে রক্ষা করা যায় না! এই সমস্ত মূর্তিগুলোর যে পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ব ও মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল তা পেল কোথায়! কোনওটি এমনিই অবহেলায়, অনাদরে পড়ে আছে কারও পুকুরপাড়ে কারো বা বাড়ির উঠোনে। কোনোটি গাছতলায় পুজোর প্রসাদ পেয়ে দেবতা হিসেবে স্থান পেয়েছে গ্রামবাসীদের মনে। এখনও কি উদ্যোগ নিলে এগুলির মর্যাদা ও গুরুত্ব ফিরিয়ে দেওয়া যায়না! বিষ্ণুমূর্তি, সূর্যমূর্তি, জৈনমূর্তি ও হারিতি দেবী শুধু গ্রামের মানুষজনের কাছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের পরিবর্তে দেবতা হিসেবেই থেকে যাবে!
আর রাজা জহর স়িং এর 'মায়া সৈন্যর' দল? রণডাঙার এবড়ো খেবড়ো পাথুরে চত্বরে যাদের বেশ কিছু বছর আগেও দেখা যেত সেই চত্বর আজ মসৃণ খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এই মায়া সৈন্যদের খুব সামান্য কয়েকটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে খেলার মাঠের ধারে ধারে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাখা আছে রাস্তার ধারে কেউ বা তুলে নিয়ে গিয়েছে গ্রামের বাড়িতে। মানুষের অবিবেচনায় ও অসচেতনতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র আজ প্রত্নক্ষেত্রের কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। কয়েকশ বছর আগের এই সমস্ত মাকড়াপাথরের স্তম্ভগুলি বা মায়া সৈন্যগুলির কাছে গিয়ে দাঁড়ালে তারা যেন কিছু বলতে চায়! কিছু বলতে চায় বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা জৈন মূর্তি, বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি ও দেবি হারিতির মূর্তিরাও। তাদের লুপ্ত গৌরবের কথাই বলতে চায় বোধহয়! নাকি মানুষের অপরিনামদর্শিতার কথা!
midnapore.in