অভিরামের, দ্বীপচালান, মা, ক্ষুদিরামের, ফাঁসি, Who, is the, author, of, the, song, Ekbar, Biday, De, Ma, Ghure, Asi


অভিরামের দ্বীপচালান মা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি


Who is the author of the song "Ekbar Biday De Ma Ghure Asi"?


দিলীপ মজুমদার।



Home » Medinikatha Journal » Dilip Majumdar » অভিরামের দ্বীপচালান মা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি





১৯০৭ সাল । মুরারীপুকুরে বারীন ঘোষের বাগান বাড়িতে গঠিত হল যুগান্তর বিপ্লবী দল । এই দল অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । নিরাপত্তার কারণে কিংসফোর্ডকে কলকাতা থেকে বদলি করা হয়েছিল বিহারের মজঃফরপুরে। প্রথমে কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সুশীল সেন ও প্রফুল্ল চাকিকে । কিন্তু সুশীল সেনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর পরিবর্তে পাঠানো হয় ক্ষুদিরাম বসুকে । ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল মজঃফরপুর যান ।


১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল । রাত আটটা । ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে গাছের আড়ালে তাঁরা দুজন অপেক্ষা করছিলেন । একটা গাড়িকে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে তাঁরা বোমা ছোঁড়েন । গাড়িতে ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তাঁর মেয়ে । তাঁরা নিহত হলেন । প্রফুল্ল চাকি নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন । ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন ওয়েইনি স্টেশনে । ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ।


অকুতোভয় ক্ষুদিরাম ফাঁসির আদেশ শুনে ভীত হন নি । তাঁর শেষ ইচ্ছা কি সে কথার উত্তরে তিনি বলেন যে তিনি বোমা বানাতে পারেন , অনুমতি দিলে তিনি দেশবাসীকে তা শিখিয়ে দিতে পারেন ।


১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ১৮ বছরের ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয় । তাঁর ফাঁসি উপলক্ষে বাঁকুড়ার এক লোককবি পীতাম্বর দাস একটি গান রচনা করেন । গানটি দেশে খুবই জনপ্রিয় হয় । ১৯৬৬ সালে ‘সুভাষচন্দ্র’ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং গানটি গীত হয় লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে । সে গানের পূর্ণ বয়ান :


একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি ।

হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী ।


কলের বোমা তৈরি করে

দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তার ধারে মাগো,

বড়লাটকে মারতে গিয়ে

মারলাম আর এক ইংলণ্ডবাসী ।


হাতে যদি থাকতো ছোরা

তোর ক্ষুদি কি পড়ত ধরা মাগো

রক্ত মাংস এক করিতাম

দেখতো ভারতবাসী ।


শনিবার বেলা দশটার পরে

জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো

হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি ।


বারো লক্ষ তেত্রিশ কোটি

রইলো মা তোর বেটা বেটি মাগো

তাদের নিয়ে ঘর করিস মা

মোদের করিস দাসী


দশ মাস দশ দিন পরে

জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো

তখন যদি না চিনতে পারিস

দেখবি গলায় ফাঁসি ।


এতদিন এ গানের রচয়িতা হিসেবে প্রচলিত ছিল বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাসের নাম । কেউ কেউ আবার চারণ কবি মুকুন্দ দাসকে এই গানের রচয়িতা বলে মনে করেন । কিন্তু মুকুন্দ দাসের গীতসংকলনে এই গান নেই । পীতাম্বর দাসের কোন গীতসংকলন নেই । তাঁর অন্য কোন গানের কথাও আমাদের জানা নেই । কেন বাঁকুড়ার মানুষ মনে করে এই গানের রচয়িতা পীতাম্বর দাস , তারও কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই । হেমচন্দ্র কানুনগোর রচনা সংকলন করেছিলেন ড. স্বদেশরঞ্জন মণ্ডল । তাঁকে ‘বাঁকুড়াজনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থের লেখক রথীন্দ্রমোহন চৌধুরী জানিয়েছেন , ‘ বাঁকুড়ার পীতাম্বর দাস নামে কোন কবির রচনা বলে যদি কোন অভিমত কেউ ব্যক্ত করে থাকেন , তার কোন বাস্তব ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নেই । ’


স্বদেশবাবুর অভিমত এই গানের রচয়িতা বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো ।


তাঁর এ রকম অনুমানের পরোক্ষ প্রমাণ অছে ।


অভিরামের, দ্বীপচালান, মা, ক্ষুদিরামের, ফাঁসি, Who, is the, author, of, the, song, Ekbar, Biday, De, Ma, Ghure, Asi
অভিরামের দ্বীপচালান মা, ক্ষুদিরামের ফাঁসি।

হেমচন্দ্র কানুনগোর ‘বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা’ বইতে ক্ষুদিরামের সঙ্গে পরিচয়ের বর্ণনা আছে । সেই বইএর ৮ম পরিচ্ছেদে হেমচন্দ্র বলেছেন মেদিনীপুর শহরের পথে ক্ষুদিরামের সঙ্গে তাঁর আকস্মিক পরিচয়ের কথা , ইংরেজ হত্যার জন্য তাঁর কাছে রিভলবারের প্রার্থনার কথা । ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল মজঃফরপুরের ইউরোপীয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছোঁড়েন ক্ষুদিরাম । রিভলবার সমেত স্টেশনের কাছে ধরা পড়েন ১৯০৮ সালের ২ মে । হেমচন্দ্র লিখেছেন ,’ বোমা ফাটলে রিভলবার ফেলে দেবার কথা ছিল , তা ও (ক্ষুদিরাম) দেয় নি । উভয়ের বিশেষ করে ক্ষুদিরামের ওই জিনিসটার ওপর অত্যধিক অনুরাগ ছিল । একটা রিভলবার পাবার জন্য সে বহুবার সাধ্য-সাধনা করেছিল । পাছে অপব্যবহার হয় এই ভয়ে দেওয়া হয় নি । মজঃফরপুরে যাবার দিন দুজনেই দুটো নিয়েছিল । অধিকন্তু আর একটা সে (ক্ষুদিরাম) না বলে হস্তগত করেছিল । দুটো রিভলবার পাতলা জামার দু-পকেটে ঝুলছে আর দুহাতে খাবার খাচ্ছে , এ হেন অবস্থায় বোমা ফাটার পরদিন সে রেল স্টেশনে ধরা পড়ল । ’ (সপ্তদশ পরিচ্ছেদ)


১৯০৮ সালের ২ মে ক্ষুদিরাম ধরা পড়লেন ; আর এই দিনই ৩৮/৪ রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট থেকে অন্যান্যদের সঙ্গে ধরা পড়েন হেমচন্দ্র কানুনগো । ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসি হয় ক্ষুদিরামের ; আর ১৯০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর হেমচন্দ্র কানুনগোর দ্বীপান্তরযাত্রা । তার মানে ক্ষুদিরামের ফাঁসি ও হেমচন্দ্রের দ্বীপান্তরযাত্রা সমসাময়িক ঘটনা ।


প্রসঙ্গত আরও একটা কথা বলা দরকার । হেমচন্দ্র কানুনগো প্রথম যুগের বিপ্লবী । তিনি ভারতের জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার । মাদাম কামার অনুরোধে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের সম্মেলনে তিনি এই পতাকার স্কেচ অঙ্কন করেন এবং মাদাম কামা সম্মেলনে সেই পতাকা উত্তোলন করেন । হেমচন্দ্র নিজের জমি-জমা বিক্রি করে ইউরোপ গিয়েছিলেন বিপ্লবের কলা-কৌশল ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কৌশল শেখার জন্য । দেশে ফিরে তিনি বোমা তৈরি করেন । তাঁর তৈরি বোমা নিয়ে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি মজঃফরপুর গিয়েছিলেন ।


‘অভিরাম’ যে হেমচন্দ্র কানুনগো, তার আর একটা পরোক্ষ প্রমাণ হেমচন্দ্রের সংগীতপ্রীতি । স্বদেশরঞ্জন মণ্ডল তাঁর হেমচন্দ্র রচনাবলিতে হেমচন্দ্রের কয়েকটি গান সংকলন করেছেন । [ লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক]।


দুঃখের বিষয়, দেশপ্রেমিক , আত্মত্যাগী , যুক্তিবাদী হেমচন্দ্র কানুনগো আজ বিস্মৃতির অন্তরালে চাপা পড়েছেন । আন্দামান থেকে ফিরে আসার পর কোন অভিমানে তিনি স্বেচ্ছা-নির্বাসন নিয়েছিলেন , সে সত্য উদ্ধার করা প্রয়োজন ।





M E D I N I K A T H A J O U R N A L

Edited by Arindam Bhowmik

(Published on 20.12.2025)



নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।