বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া
Freedom fighter Bankim Chandra Khatua lost in oblivion
জ্যোতির্ময় খাটুয়া।
Home » Medinikatha Journal » Jyotirmoy Khatua » স্বাধীনতা সংগ্রামী বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া
বঙ্কিমচন্দ্র খাটুয়া ১৯২৪ সালের ১৬ই অক্টোবর বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর থানার দুবলাবাড়ী গ্রামের এক দরীদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বাবা: বিপিন বিহারী খাটুয়া ও মা: কামিনী খাটুয়া। বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এবং দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে লেখাপড়া শেখেন। অগ্নিযুগে অবিভক্ত মেদিনীপুরে যে কয়েকটি এলাকা বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিল কাঁথি তার মধ্যে অন্যতম। রামনগর রাও হাই স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বঙ্কিম স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। বাবা-মাকে এবিষয়ে বিন্দুমাত্র জানান নি। বাড়ি থেকে গোপনে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশ নিতেন। পরে একদিন বাবা সবকিছু জানতে পেরে প্রচন্ড রেগে যান এবং এই কাজ থেকে থেকে দূরে থাকতে বলেন। কিন্ত দৃড়প্রতিজ্ঞ বঙ্কিম বাবার মতের বিরুদ্ধে তাঁর বৈপ্লবিক কার্যকলাপ চালিয়ে যান। ফলে বাবা ছেলের সম্পর্কে ভাঙন ধরে।
দুবলাবাড়ী গ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়ার আবক্ষ মূর্তি।
সেইসময় বন্দেমাতরম স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। সালটা ১৯৪৫, বঙ্কিম ও তাঁর সহযোগীরা কাঁথি মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে বুকে বন্দেমাতরম পোস্টার লাগিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের ব্রিটিশ সরকার গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পর নাবালক স্কুল ছাত্র বলে তাঁকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর জেলে বন্দী রাখা হয়েছিল। বাড়ি থেকে অনেক খোঁজা খুঁজির পর জানা যায় বঙ্কিম বহরমপুর জেলে বন্দী । মা জেলে বঙ্কিমের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ছেলের কৃতকর্মের জন্য বাবা মনে এতটাই আঘাত পেয়েছিলেন যে একবারও জেলে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যান নি। দীর্ঘ ছয় মাস বঙ্কিম জেলে বন্দী ছিলেন।
বাড়ি ফিরে এসে বাড়সোলেমানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পর স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি চাকরী ছেড়ে দেন। তারপর তিনি রাজনৈতিক ভাবে প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টিতে (PSP) যোগ দেন। এখানকার স্থানীয় নেতা বালাইলাল দাস মহপাত্র ও সর্বেস্বর পন্ডার সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তাঁরাও প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির আন্দোলন করতেন।
ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তাম্রপত্র।
প্রায় ২০০ বছরের দাসত্ব, অত্যাচার ও লাখ লাখ বিপ্লবীদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরে অবশেষে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেল। স্বাধীনতার পর তাঁর পেনশন নিয়ে একটু সমস্যা হয়। যেহেতু বহরমপুর জেলে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায় নি, তারজন্য তিনি কয়েক বছর পেনশন পাননি। পরবর্তী কালে কেন্দ্র সরকার একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে যে, যদি কেউ সহ-বন্দী থাকেন এবং তিনি যদি সাংসদ বা বিধায়ক হন তাহলে তার সার্টিফিকেট দিলে পেনশন চালু হবে। তাঁর সঙ্গে জেলে ছিলেন কাঁথির রাসবিহারী পাল। উনি তৎকালীন কাঁথি বিধনাসভা কেন্দ্রে জনতা পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি সার্টিফিকেট দেওয়ার পর বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া পেনশন পান। ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর থেকে তাম্রপত্র পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি দেশের সমাজ সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামী বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া।
৬৯ বছর বয়সে তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় কাঁথি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৯৯৩ সালের ৫ই আগস্ট সন্ধ্যা নাগাদ কাঁথি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। একদিন যিনি দেশের জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন, কালের নিয়মে এখন তিনি ব্রাত্য। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী বঙ্কিম চন্দ্র খাটুয়া।
M E D I N I K A T H A J O U R N A L
Edited by Arindam Bhowmik
(Published on 30.04.2024)
নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।