নাম তাঁর জয়ন্তী সিং। জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ, মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার ছোট আঙ্গার কুড়িয়া গ্রামে (বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত)। পিতা বঙ্কিম সিং এবং মাতা সাবিত্রী সিং। গ্রামে তাদের মাত্র ১ বিঘা জমি ছিল কিন্তু চাষ করার কেউ ছিল না। কারণ বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী (paralysis patient)। কিছু করার মত ক্ষমতা তার ছিল না। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দুবেলা ঠিক মতো খাওয়ার জুটতো না।
পড়াশুনা করেছেন সবং-এর বিভিন্ন হস্টেলে থেকে। ৫ বছর বয়সে ভর্তি হন ঝাঁটিবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর সবং -এর উচিৎ পুর গার্লস স্কুলের হোস্টেলে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন ২০১০ সালে। ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক দেন বসন্তপুর ঝাড়েশ্বর বানী ভবন থেকে। থাকতেন স্কুলের নিবেদিতা হোস্টেলে।
আর্থিক সংকটের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেন নি। ফিরে আসেন বাড়িতে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে, খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর মন উতলা হয়ে উঠতো। পরিবারের এই রকম অবস্থা সত্ত্বেও, বাড়িতে ভিখারি এলে ফিরিয়ে দিতেন না। হাতের সামনে যা পেতেন, বাড়িতে না বলে তাই দিয়ে দিতেন। যেমন মায়ের কাপড়, চাল, ডাল। এমনো হয়েছে যে বাড়িতে সবার জন্যে রান্না হয়েছে, সেই রান্না পুরোটাই তুলে দিয়েছেন ভিখারিদের হাতে। এই সবের জন্য মায়ের কাছে মারও খেয়েছেন। এইভাবেই দিন কাটছিল বাড়িতে বসে। মানুষের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা থাকলেও, উপায় ছিল না।
হটাৎ একদিন বাড়িতে হাজির হলেন ইন্দ্রাবনি গ্রামের প্রদীপ মাহাত। তিঁনি তখন গ্রামে গ্রামে অনাথ বা অবহেলিত দুঃস্থ শিশুকন্যাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মনে সংকল্প নিয়েছেন, যেভাবেই হোক তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
Indrabani Grameen Nari Shishu Bikash Kendra | ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র | इंद्रबनी ग्रामीण नारी शिशु विकास केंद्र
জয়ন্তী সিং-এর মা কে তিঁনি প্রস্তাব দিলেন যে, জয়ন্তীকে তিনি সঙ্গে নিয়ে যেতে চান। জয়ন্তী এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। মা ভাবলেন, মেয়ে তো তাঁর এই ধরণের কাজই করতে চেয়েছিল। মন্দ কি ? ঘরে বসে থাকার থেকে যাক না প্রদীপ মাহাত'র সঙ্গে।
প্রদীপ কাকুর হাত ধরে জয়ন্তী সিং চলে এলেন ইন্দ্রাবনি গ্রামে। প্রদীপ মাহাত তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন "ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র" নামে সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান (যা আজ ইন্দ্রাবনী আশ্রম নামে বেশি পরিচিত)।
Wife Bharati Mahat at the kitchen door | রান্নাঘরের দরজায় স্ত্রী ভারতী মাহাত | रसोई के दरवाजे पर पत्नी भारती माहात
জয়ন্তী আশ্রমের ছোট ছোট মেয়েদের সঙ্গে মিশে গেলেন বন্ধুর মত। কষ্টের জীবন হলেও খুব আনন্দে কাটছিল জীবন। ভর্তি হলেন মানিকপাড়া কলেজে। কিন্তু কাজের চাপে প্রথম বর্ষের পরে আর পড়া হল না। শুরুর দিকে খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে। জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে আনা থেকে শুরু করে আশ্রম চালানোর জন্য গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করা। আশ্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পৌঁছে যেতেন ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের গ্রামে গ্রামে।
Indrabani Grameen Nari Shishu Bikash Kendra | ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র | इंद्रबनी ग्रामीण नारी शिशु विकास केंद्र
Indrabani Grameen Nari Shishu Bikash Kendra | ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র | इंद्रबनी ग्रामीण नारी शिशु विकास केंद्र
আশ্রমের ছোট ছোট মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মত থাকতে থাকতে, নিজের অজান্তেই একদিন তাদের মা হয়ে গেলেন। শুধু আশ্রমের কাজই নয়, এর সঙ্গে তিনি গ্রামের মেয়েদের স্বনির্ভর করার জন্য প্রশিক্ষণ দেন। প্রদীপ মাহাত বলেন - "এই আশ্রমে আমার যা ভুমিকা আছে, ঠিক ততটায় ভূমিকা আছে এই জয়ন্তীর।"
Indrabani Grameen Nari Shishu Bikash Kendra | ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র | इंद्रबनी ग्रामीण नारी शिशु विकास केंद्र
জয়ন্তী সিং অবহেলিত, অসহায় মেয়েদের স্বপ্ন গড়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর কর্মকান্ড অনুপ্রেরণা দেবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে। তিনি হয়ত পেশাগত ভাবে শিক্ষক নন, কিন্তু নিজের উদ্যোগে অক্লান্তভাবে শিক্ষাদান করে চলেছেন সমাজের অনাথ বা দুঃস্থ অবহেলিত পরিবারের শিশুদের (বিনামূল্যে)। সমাজের কাছে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই বছর (২০২১) 'মিডনাপুর-ডট-ইন' এর তরফ থেকে এই ব্যাতিক্রমী শিক্ষক'কে "মেদিনী-আচার্য" সম্মানে সম্মানিত করা হল।
Indrabani Grameen Nari Shishu Bikash Kendra | ইন্দ্রাবনী গ্রামীন নারী শিশু বিকাশ কেন্দ্র | इंद्रबनी ग्रामीण नारी शिशु विकास केंद्र
আপনি যদি কোনভাবে তাঁদের এই মহৎ উদ্যোগে সামিল হতে চান, তাহলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রদীপ মাহাত (৮৫৯৭৮১৩৮৭৯)
জয়ন্তী সিং (৮৩৭২৯৬৬৯৩৮)
অরিন্দম ভৌমিক।
midnapore.in
Published on 29.09.2021 (202 Bengali Birthday of Pandit Iswar Chandra Vidyasagar)
From 2020 onwards ‘Midnapore-Dot-In’ is celebrating Vidasagar’s English & Bengali birthday as ‘TEACHERS DAY’ of undivided Medinipur District.