CORONA & AMPHAN | UNDIVIDED MEDINIPUR


(১৫এপ্রিল ২০২০) বন্ধুরা, করোনা ভাইরাসের প্রকোপে আজ সারা দেশ প্রবল উৎকণ্ঠায় দিন গুনছে। লক ডাউন পরিস্থিতিতে সব চাইতে বড় অসুবিধার সম্মুখীন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা। বিভিন্ন সূত্র মারফত আমরা জানতে পেরেছি, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহল অঞ্চলের আদিবাসী জনজাতিভূক্ত বেশ কিছু প্রান্তিক এলাকায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জঙ্গলাকীর্ন ও দুর্গম পথের কারনে এইসব এলাকায় এখনও কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পৌঁছাতে পারেনি। আমরা midnapore.in -এর পক্ষ থেকে সেইসব এলাকার দুঃস্থ মানুষদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে শুরু করেছি। এই কর্মযজ্ঞে আপনারাও সামিল হতে পারেন।

(২৩ মে ২০২০) আমফান বিধ্বস্ত এলাকাতেও কাজ শুরু করেছি আমরা। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো। আপনারাও সাহায্য করতে পারেন -

Name: MIDNAPORE DOT IN
Account No.: 39040963931
IFSC: SBIN0000132
Bank: State Bank of India, Midnapore

Phonepe: 9681945794
Paytm: 9681945794
Google Pay: 9681945794 (Jotirmay Khatua)

COVID-19 (CoronaVirus) Updates of Jhargram, Purba Medinipur and Paschim Medinipur

First trip with relief supplies | ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে প্রথম যাত্রা


কাল রাত্রেই সবকিছু তার নিজের ছোট্টো ট্রাকে বোঝাই করে ফেলেছিল জ্যোতির্ময়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার একপ্রান্ত সমুদ্রের তীর থেকে একেবারে শেষপ্রান্ত জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়খন্ড ও বাঁকুড়া লাগোয়া গ্রামগুলি পর্যন্ত যাবে আমাদের ট্রাক। অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর হয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত।

রামনগর থেকে জ্যোতির্ময় ও ড্রাইভার, আলংগিরি থেকে রাজকুমার দাস, তমলুক থেকে পার্থ দে, মেদিনীপুর থেকে আমরা দুজন - মিলিত হলাম চৌরঙ্গীতে। এরপর গন্তব্য জামবনি - রাস্তায় যতটা খালি হবে ট্রাক ঠিক ততটাই ভরে নেওয়া হবে জামবনিতে, যোগ দেবে আমাদের আরেক সদস্য নবকুমার মাহাত। জামবনি থেকে সোজা জুজরধরা, বাগডোবা, জাবলা, ওরালি, জরাম ইত্যাদি গ্রামে গিয়ে পৌঁছাবে আমাদের ছোট্টো ট্রাক এবং দুটি বাইক, কমবেশি ২৪০ কিলোমিটার। একটু এগোলেই ঝাড়খণ্ডের Tetlakocha (तेत्लाकोचा), Budhraysai (बुध्रय्सी), Chekam, Kanimahuli ইত্যাদি গ্রাম। প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাক থাকতে সঙ্গে দুটি বাইক কেন ? কারণ আমরা যে গ্রামগুলিতে যাবো তার অনেকগুলোতেই বাইক ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়। আর্থিক সাহায্যের জন্য এর সমস্ত সদস্যদের জানাই ধন্যবাদ।

First Distribution | প্রথম বিতরণ

বিনপুর-২, ঝাড়গ্রাম | Binpur-2, Jhargram


১৬ তারিখ ভোর ৪ টার সময় পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থেকে শুরু হয়েছিল যাত্রা। প্রথম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় রামনগরের দুবলাবাড়ি গ্রামে। পশ্চিম মেদিনীপুর পেরিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনির ছোটগং গ্রামে আরো কিছু ত্রাণসামগ্রী তুলে নেওয়া হয় (যতটা খালি হয়েছিল)।

এরপর সোজা বেলপাহাড়ি পুলিশ স্টেশন। থানা থেকে বেরিয়ে দুপুর বারোটার সময় আমরা পৌঁছাই জুজারধারা গ্রামে। গ্রামের সবাই খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে আমাদের সহযোগিতা করেন। তাঁরাই বলে দেন কাদের প্রয়োজন বেশি? গ্রামবাসী খুশি হয়ে আমাদের এঁচোড় ও তরমুজ উপহার দেন (অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও পয়সা নেননি)। এই গ্রামেই আলাপ হয় তারাস সরেনের সঙ্গে।

সহজ-সরল-পরোপকারি তারাস আমাদের নিয়ে যায় ময়ূরঝর্ণা গ্রামে। ময়ূরঝর্ণায় ত্রাণ বিতরণের পরে গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন রাস্তা ধরে তারাস আমাদের তেলিঘানা গ্রামে পৌঁছে দেয়। তেলিঘানা গ্রামে সবগুলি পরিবারই সবর, আমরা তাদের গ্রামে পৌঁছে গেছি দেখে বেশ অবাকই হয়েছিল তারা। তেলিঘানায় বিতরণের পরে আমরা পৌঁছাই জবলা গ্রাম, রাস্তায় বেশকিছু জায়গায় সবাই মিলে আমাদের গাড়ি ঠেলে তুলতে হয়েছিল। জবলায় গ্রামবাসীরা ছাড়াও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে আগত JCB চালকদের ত্রাণ বিতরণ করি আমরা (লকডাউনে আটকে পড়েছেন / নতুন রাস্তা তৈরী হচ্ছে)।

জবলাতেই সন্ধে হয়ে গেল, এবারে ফেরার পালা (গ্রামবাসীদের সাহায্যে কল্লডাবর, পাতাঘর ও লালজলের কিছু সবর পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়)। কিন্তু সবাই বলল মালাবতী জঙ্গলে ৬০-৭০ টি হাতি বেরিয়েছে তাই কোথাও একটা থেকে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। স্থানীয় মানুষের সাহায্যে বিনপুরে একটি ফাঁকা ঘরে থাকার ব্যবস্থা হয়। আজ সকালে ফিরে এসেছে টিম midnapore.in

ধন্যবাদ জানাই বেলপাহাড়ি থানা সহ সমস্ত পুলিশ প্রশাসনকে। নানা ভাবে সাহায্য করেছেন ডঃ সুমন রানা। তারাস সরেনের কথাতো আগেই বলেছি। জঙ্গল মহলের মানুষ যেমন সৎ, সহজ, সরল ছিল তেমনই আছেন। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য midnapore.in এর সদস্যদের জানাই ধন্যবাদ। উল্লেখযোগ্য যে একটি ময়ূর (পোষা নয়) আমাদের সব ক্লান্তি দূর করে দিয়েছিল।

সব জায়গাতেই আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম, কারুর হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়নি। মূলত লোধা/সবর পরিবারগুলোকেই দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

আপনাদের আশীর্বাদে আমরা পৌঁছে গেছিলাম অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সবথেকে দুর্গম প্রান্তে (ঝাড়খন্ড সীমান্ত)। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো।


NEWS LINK | Click here [যুগশঙ্খ ] »

NEWS LINK | Click here [আনন্দবাজার পত্রিকা] »

NEWS LINK | Click here [বর্তমান পত্রিকা] »

NEWS LINK | Click here [The Kharagpur Post] »

NEWS LINK | Click here [এই সময়] »

NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »


Second Distribution | দ্বিতীয় বিতরণ

বড়ুয়া - ১, শিরোমনি গ্রাম পঞ্চায়েত, পশ্চিম মেদিনীপুর | Barua-1, Siromoni Panchayat, Paschim Medinipur


আশিষ রায় ও কাঞ্চন নায়েক বাবুর অনুরোধে শিরোমনি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়ুয়া - ১ অঞ্চলে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করল midnapore.in। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো। আপনারাও সাহায্য করতে পারেন।

Third Distribution | তৃতীয় বিতরণ

দক্ষিণ-পুরুষোত্তমপুর, রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর | Dakshin-Purusottampur, Ramnagar, Purba Medinipur


সুনিদৃষ্ট খবর পেয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে আজ midnapore.in এর পক্ষ থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র সংলগ্ন গ্রাম দক্ষিণ-পুরুষোত্তমপুরের খাদ্যসঙ্কটে থাকা মৎস্যজীবী পরিবারগুলির হাতে ত্রান সামগ্রী তুলে দেওয়া হলো। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল - চাল, বিস্কুট, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, সোয়াবিন, লঙ্কা, হলুদ গুঁড়া ইত্যাদি। সমস্তকিছুর দায়িত্বে ছিলেন আমাদের অন্যতম সদস্য জ্যোতির্ময় খাটুয়া মহাশয়। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো। আপনারাও সাহায্য করতে পারেন।

Fourth Distribution | চতুর্থ বিতরণ

ডিহিবীরকুল-পাটনা, রামনগর, পূর্ব মেদিনীপুর | Dihibirkul Patna, Ramnagar, Purba Medinipur


পরিকল্পনা মত সকাল বেলাই বেরোনোর কথা ছিল ডিহিবীরকুল-পাটনা'র উদ্দেশ্যে কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াল ঝড়-বৃষ্টি। ওড়িষ্যা'র সীমান্ত সংলগ্ন এই গ্রামটির জনসংখ্যা ২৪৩০, যার মধ্যে ১১১ জন তফসিলি জাতি ভুক্ত। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আমরা খাদ্যসংকটে আছে এমন পরিবারগুলির তালিকা তৈরী করেই রেখেছিলাম।

সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল ঝড়-বৃষ্টি থামার নাম নাই, সঙ্গে বজ্রপাত। বাধ্য হয়েই প্রতিকূল পরিবেশে বিকেলের আগে বেরিয়ে পড়তে হল। সন্ধেবেলায় ডিহিবীরকুল গ্রামে পৌঁছে খাদ্যসংকটে থাকা পরিবারগুলির মুখে হাঁসি ফোটাল midnapore.in -এর সদস্যরা। রাতের অন্ধকারেই বিতরণ করা হয় ত্রাণসামগ্রী। সমস্তকিছুর দায়িত্বে ছিলেন আমাদের অন্যতম সদস্য জ্যোতির্ময় খাটুয়া মহাশয়। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো। আপনারাও সাহায্য করতে পারেন।

CORONA Relief team of UNDIVIDED MEDINIPUR

Fifth Distribution | পঞ্চম বিতরণ

বালিসাই থেকে চাঁদপুর রাস্তার মাঝে, পূর্ব মেদিনীপুর | Balisai to Chadpur Road, Purba Medinipur


কাজ বন্ধ বহুদিন। কিন্তু ভাত বন্ধ হলে কি চলবে ?

পূর্ব মেদিনীপুরের বালিসাই থেকে চাঁদপুর রাস্তার কাজ চলছিল জোর কদমে। হঠাৎ লকডাউন, সব বন্ধ - বাড়ি ফেরারও কোন উপায় নেই। যারা কাজ করছিলেন তারা সবাই বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে আগত ২৪ টি শ্রমিক পরিবার, সঙ্গে ছোট ছোট বাচ্চাও রয়েছে। টিম midnapore.in -এর পক্ষ থেকে ত্রান সামগ্রী তুলে দেওয়া হলো প্রত্যেকটি পরিবারের হাতে। সমস্ত কিছুর দায়িত্বে ছিলেন আমাদের সক্রিয় সদস্য প্রদীপ সামন্ত।


NEWS LINK | Click here [আজকাল ] »


Sixth Distribution | ষষ্ঠ বিতরণ

বিনপুর-২, ঝাড়গ্রাম | Binpur-2, Jhargram


।। বডডাঙা ও কেশমার ।।

তোর খরগোশটা দিবি ? বাড়ি নিয়ে যাবো ?

ঘরের সামনে মাটির উঠোনে বসে ছোট্ট 'নিধা' তার খরগোশকে আদর করছিল। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আগে তড়িঘড়ি তার খরগোশকে লুকোতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল সে। 'নিধা'-র বাড়িটাই গ্রামের প্রথম বাড়ি, গ্রামের নাম কাশমার। যদিও আমরা এই গ্রামে বেশিক্ষন দাঁড়ায়নি, শবর পরিবারগুলির নামের তালিকা দিয়ে চলে গেছিলাম বডডাঙার দিকে। বলে গেছিলাম ফেরার সময় সবাইকে উপস্থিত থাকতে।

সকালবেলায় বেলপাহাড়ির পরে আরো ২৩ কিঃমিঃ ড্রাইভ করে পৌঁছোই কেশমার। মাঝে তামাজুড়ি গ্রামে একটি বিশাল আমগাছের ছায়ায় কিছুক্ষন আড্ডা। আড্ডার বিষয় ছিল তামাজুড়ীর তাম্রকুঠার। ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনো এক সময় তামাজুড়ী গ্রাম থেকে তাম্রযুগের কুঠারের (Axe-Ingot) আবিষ্কার মেদিনীপুরের নামকে রাতারাতি সারা বিশ্বের সংবাদ শিরোনামে এনে দিয়েছিল।

কেশমারে খবর দিয়ে বডডাঙা পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের প্রায় ১১ টা বেজে যায়। বডডাঙা গ্রামের শবরদের তালিকা আমাদের কাছে ছিলই (ওই অঞ্চলের সমাজসেবী মাস্টারমশাই বানিয়ে দিয়েছিলেন)। সেইমত গ্রামের একটি ফাঁকা জায়গায় ত্রাণসামগ্রী সাজিয়ে দিলাম আমরা। তালিকা অনুযায়ী সবাই একে একে তুলে নিয়ে গেলেন। গ্রামের দুই বয়স্ক মানুষ বিতরণ করলেন ছোটদের জন্য নিয়ে যাওয়া চকলেট ও বিস্কুট।

বডডাঙা থেকে বেরিয়ে আবার এলাম কাশমারে। নিধা তার খরগোশকে বাড়ির ভেতর লুকিয়ে রেখে এসে নিশ্চিন্তে মিটি মিটি হাঁসছে। তালিকা অনুযায়ী সবাই উপস্থিত ছিলেন তাই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে বেশি সময় লাগেনি আমাদের। ছোটদের চকলেট ও বিস্কুট রেখে দেওয়া হয়েছিল একটি খোলা জায়গায়, তারা নিজেরাই ইচ্ছেমতো নিয়ে নিয়েছিল। হটাৎ চোখ পড়ে একটি মরে যাওয়া তালগাছের গুঁড়ির ওপর হয়ে থাকা সুন্দর অর্কিড-ক্যাকটাসের উপর। যেভাবেই হোক নিতে হবে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিধা তার বাড়ি থেকে একটা কাটারি ও বস্তা এনে দিল। বেশকিছু চারা তুলে নিলাম আমরা। শহরের যে কোন নার্সারিতে এই অর্কিড-ক্যাকটাসের দাম আগুনছোঁয়া।

জঙ্গলকে কিছু দিলে, জঙ্গলও প্রতিদানে কিছু দেয়। ফেরার সময় বাইকের Rear View Mirror -এ দেখলাম নিধা হাত নেড়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছে।


NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »


Seventh Distribution | সপ্তম বিতরণ

থানা: বেলপাহাড়ি, ব্লক: বিনপুর-II, জেলা: ঝাড়গ্রাম | PS: Belpahari, Block: Binpur-2, Dist: Jhargram


।। চৌরিমারা, কাশিডাঙা, মনিয়াদি ।।

দেখে মনে হবে কোন অঙ্কন প্রতিযোগিতায় আঁকা গ্রামের ছবি। যার সঙ্গে বাস্তবের খুব একটা মিল নাই।

কিন্তু না, সত্যি সত্যিই রয়েছে এমন একটা গ্রাম। নাম চৌরিমারা, গ্রামের লোক বলে ছুরিমারা। প্রত্যেকটি বাড়িতে সুন্দর রং করা মাটির দেওয়াল। রাস্তায় একটাও প্লাষ্টিক বা আবর্জনা নাই। খালি ইলেক্ট্রিকের তারগুলোই যা বেমানান। রোজ সকালে এখানে মিউনিসিপ্যালিটির বা কর্পোরেশনের লোক রাস্তা পরিষ্কার করতে আসেনা। আসেনা কোন NGO, যত্র-তত্র প্লাস্টিক ফেলার অপকারিতা বোঝাতে। তবুও সবকিছু পরিষ্কার-পরিছন্ন, সাজানো-গোছানো।

আমরা আগেই খবর পাঠিয়েছিলাম যে ছুরিমারা, কাশিডাঙা ও মনিয়াদি গ্রামের সমস্ত শবর পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিতে আসছি। না, আমাদের গ্রামে গ্রামে যেতে হয়নি। আমরা পৌঁছনোর অনেক আগেই সবাই তিনটি গ্রামের মাঝে অবস্থিত একটি মাঠে নিদৃষ্ট দূরত্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে অপেক্ষা করছিল। আমরা খাদ্যসামগ্রী মাঠের ধারে সাজিয়ে দিয়ে, দূরে এসে বসলাম। একে একে সবাই খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গেল। কোন তাড়াহুড়ো নেই, আগে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা নাই। সবাই নেওয়ার পরে একটিও প্যাকেট কম পড়লো না বা বেশিও হল না। হটাৎ মনে হল আমাদের আগেই সত্যজিৎ রায় এসে প্রত্যেকটা সট বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, তারই শুটিং হল। একবার বলতে হল না "কাট"।

আরেকটি ব্যাপার না বললেই নয়। অন্যান্য গ্রামের মত এখানেও আমরা ছোটদের জন্য বিস্কুট ও চকোলেট রেখে দিয়েছিলাম। একটি ছোট্ট মেয়ে (নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি) নিজের বিস্কুট ও চকোলেট নিয়েই দৌড়ে চলে গেল তার গ্রামের দিকে। একটু পরেই ফিরে এলো, সঙ্গে তার ছোট্ট ভাই। ভাইকে সে বিস্কুট ও চকোলেট তুলে দিল। মেয়েটি চাইলেই ভাইয়ের জন্য বিস্কুট ও চকোলেট নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু সে যে কোন অন্যায় করছেনা তা বোঝানোর জন্যই কষ্ট করে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এল।

মা-মাসি-দিদিমাদের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় বার বার ঘুরে দেখছিল নাম না জানা মেয়েটি। একটা ছবি তুললাম। CRPF এর কাঁটাতারের আগে ডানদিকে বাঁকতেই আর দেখা গেলনা তাদের।


NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »


Eighth Distribution | অষ্টম বিতরণ

কাডুগুডি, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক | Kadugudi, Bengaluru, Karnataka


মূলত ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়খন্ড সীমান্ত সংলগ্ন দুর্গম গ্রাম গুলির কথা ভেবেই ত্রাণকার্যে নেমেছিল টীম মিডনাপুর ডট ইন (midnapore.in)। জঙ্গলমহলের ওই দুর্গম গ্রামগুলি ছাড়াও সুনিদৃষ্ট তথ্য পেয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এই তিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। কখনো পশ্চিম মেদিনীপুরের শিরোমনি গ্রাম পঞ্চায়েতে, আবার কখনো বা পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র সংলগ্ন গ্রাম দক্ষিণ-পুরুষোত্তমপুরের খাদ্যসঙ্কটে থাকা মৎস্যজীবী পরিবারগুলির কাছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে যেমন পৌঁছে গেছি ওড়িষ্যা'র সীমান্ত সংলগ্ন ডিহিবীরকুল-পাটনা গ্রামে, তেমনই পৌঁছে গেছি বালিসাই-চাঁদপুর রাস্তার কাজে এসে আটকে পড়া বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে আগত শ্রমিক পরিবারগুলির কাছে।

কিন্তু এইবারে midnapore.in খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিল ২০০০ কিঃমিঃ দূরে বেঙ্গালুরুতে আটকে থাকা মেদিনীপুরবাসীর কাছে। মেদিনীপুরের বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য সারা বছর ধরেই বেঙ্গালুরু যান। পশ্চিম মেদিনীপুরের হাতিহলকা গ্রামের টিংকু খান, সুধীর পাঠানরা মহিলা ও শিশু সহ মোট দশ জন বেঙ্গালুরুর সাঁই বাবা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে আটকে পড়েন। ঘর ভাড়া এবং খাবার মতো টাকাও শেষ হয়ে গেছিল। তাদের দিন কাটছিল BBMP (Bruhat Bengaluru Mahanagara Palike) -র ক্যান্টিনের খাওয়ার খেয়ে। উল্লেখযোগ্য যে বেঙ্গালুরু শহরের সমস্ত জায়গায় BBMP তৈরী করা খাওয়ার বিতরণ করছে। কিন্তু টিংকু খানরা এই খাওয়ার খেতে পারছিলেন না কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী।

এদিকে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছিলাম যে বেঙ্গালুরুতে আটকে থাকা মেদিনীপুরবাসীকে সাহায্য করতে চাই। সেই বিজ্ঞপ্তি দেখে কবির পুরস্কারপ্রাপ্ত ইয়াসিন পাঠান মহাশয় যোগাযোগ করেন midnapore.in এর সঙ্গে, জানান তাঁরই গ্রামের টিংকু খান, সুধীর পাঠানদের অসুবিধার কথা।

ইতিমধ্যেই আমরা বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধব ও 'মৈত্রী বন্ধন' নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। ইয়াসিন বাবুর কাছে খবর পেয়েই 'মৈত্রী বন্ধন' এর মাধ্যমে চাল, ডাল, আঁটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, নুন, বিভিন্ন মসলা, বিস্কুট, চা, সাবান ইত্যাদি পৌঁছে যায় টিংকু খানদের কাছে। নিয়মিত সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার টাকা সরাসরি পাঠাবার জন্য টিংকু খানদের একাউন্ট লিংক করেছি আমরা। এছাড়াও বাড়ি ফেরার জন্য কর্ণাটক সরকারের অনলাইন ফর্মে টিংকু খানদের নাম নথিভুক্ত করেছি আমরা। আমাদের বিশ্বাস খুব শীঘ্রই সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে আসবে টিংকু খান'রা।


NEWS LINK | Click here [যুগশঙ্খ] »

NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »

NEWS LINK | Click here [The Kharagpur Post] »

NEWS LINK | Click here [Mansai News] »


Ninth Distribution | নবম বিতরণ

থানাবেড়্যা, খেজুরী-২, পূর্ব মেদিনীপুর | Thanaberiya, Khejuri-2, Purba Medinipur


গ্রামের নাম থানাবেড়্যা। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে খেজুরী যখন সমৃদ্ধশালী বন্দরে পরিণত হয় তখন জাহাজের গতিপথ নির্দেশের জন্য ১৮১০ খ্রীষ্টাব্দে খেজুরীতে একটি লাইট-হাউস বা বাতিঘর নির্মিত হয়। ঐ বাতিঘরটি থানাবেড়্যা গ্রামে অবস্থিত হলেও কাউখালী বাতিঘর নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৬৮৮ খ্রীষ্টাব্দে জর্জ হীরোন ও ১৬৮৭ খ্রীষ্টাব্দে থমাস বৌরি'র মানচিত্রে কাউখালীর অবস্থান দেওয়া আছে। থানাবেড়্যা গ্রামটি বেশ বড় এবং মাঝে অবস্থিত মাঠ গ্রামটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে - দক্ষিণ থানাবেড়্যা ও উত্তর থানাবেড়্যা।

সুনিদৃষ্ট খবর পেয়ে এই দক্ষিণ-থানাবেড়্যা গ্রামেই পৌঁছে গেছিল টিম মিডনাপুর ডট ইন (midnapore.in) - এই অঞ্চলের দুঃস্থ মৎসজীবী পরিবারের প্রবীন বিধবা মহিলাদের হাতে চাল-ডাল-আলু-সোয়াবিন-হলুদ-লঙ্কা -তেল-মুড়ি ইত্যাদি খাদ্যসামগ্ৰী তুলে দেওয়া হলো। সমস্ত কিছুর দায়িত্বে ছিলেন midnapore.in -এর সক্রিয় সদস্য সুদর্শন সেন মহাশয় এবং সাহায্য করেছেন আশীষ কুমার দত্ত ও গৌতম দাস মহাশয়।

যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো। আপনারাও সাহায্য করতে পারেন।


NEWS LINK | Click here [যুগশঙ্খ] »

NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »

NEWS LINK | Click here [Mansai News] »

NEWS LINK | Click here [Dainik Aabeshbhumi] »


Tenth Distribution | দশম বিতরণ

থানা: বেলপাহাড়ি, ব্লক: বিনপুর-II, জেলা: ঝাড়গ্রাম | PS: Belpahari, Block: Binpur-2, Dist: Jhargram


।। আমলাশোল ।।

"জঙ্গলের নিস্তব্ধতা চিরে এগিয়ে চলেছি"

না, আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। জঙ্গলে পোকামাকড়ের এত আওয়াজ যে আমাদের গাড়ির শব্দ ছাপিয়ে যাচ্ছিল (মূলত ঝিঁঝিঁ পোকা)। মাঝে মাঝে ময়ূরের আওয়াজ ভেসে আসছিল। এই জঙ্গলে বুনো শূয়োর, হাতি, বাঘরোল, হায়না, শিয়াল, খরগোশ, ভল্লুক, ময়ূর ও নানা ধরণের পাখি দেখা যায়।

যে রাস্তা বাঁকুড়ার দিক থেকে ঝাড়গ্রাম জেলায় ঢুকে ময়ূরঝর্ণা হয়ে ঘাটশিলার দিকে গেছে, আমরা চলেছি সেই রাস্তায়।

গন্তব্য - "আমলাশোল"।

নামটা মনে আছে? ২০০৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর (এখন ঝাড়গ্রাম) জেলার ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন, শবর-মুন্ডা (মুড়া) অধ্যুষিত যে অখ্যাত গ্রামটি পাঁচ জন মানুষের ‘অনাহার মৃত্যু’র জন্য সংবাদপত্রের শিরোনামে চলে এসেছিল?

আমলাশোল নিয়ে ডেনমার্কের গবেষক অলিভার রুবেন গবেষণা-নিবন্ধ (২০১১) লেখেন; ২০১৩ সালে প্রকাশ পায় দীপক কুমার বড় পন্ডা-র ‘জঙ্গলমহলের আদিবাসী জীবন: আমলাশোলের দিনলিপি’ ও চন্দন সিংহের ‘কিন্ডলিং অব অ্যান ইনসারেকশন: নোটস্ ফ্রম জঙ্গলমহলস্’।

রাজ্য-রাজনীতির পালাবদলে এখন অনেকটাই উন্নত হয়েছে গ্রামটি। দীপক বাবুদের চেষ্টায় কলকাতায় পড়াশুনা করে মাধ্যমিক দিয়েছে শবর ছেলে-মেয়ে। তবুও অভাব পিছু ছাড়েনি আমলাশোলের।

আমরা আমাদের সঙ্গী চাকাডোবার সমাজসেবী মাস্টারমশাই ও দীপক কুমার বড় পন্ডা-র অনুরোধেই পৌঁছে গেছিলাম আমলাশোল। প্রথমেই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হল স্কুলপাড়া'য়। পাশেই সবুজ মাঠে ছেলেরা ক্রিকেট খেলছিল, আমরাও কিছুক্ষন খেললাম তাদের সঙ্গে। এরপরের পাড়া কেন্দগোড়া। আমরা পৌঁছতেই হাঁসিমুখে এগিয়ে এলেন লক্ষী-দা, তিনিই সবাইকে খবর দিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করে দিলেন। কেন্দগোড়ার পরে একটি পাড়ায় (নাম মনে নাই) বিতরণ করেই আমরা পৌঁছে গেছিলাম আমাদের শেষ গন্তব্য উত্তরপাড়ায়।

আমলাশোল সম্পর্কে আগ্রহী ব্যাক্তিরা পড়ে দেখতে পারেন দীপক বাবুর বইটি (ছবি দিলাম)।

বইটি সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবী লিখেছিলেন -

"এই বই মন দিয়ে পড়লে পাঠক বুঝবেন, শুধু আমলাশোল নয়,'ভারতবর্ষ' নামটির কাছে পৌঁছবার পথনির্দেশও এই বইয়ে আছে।"


NEWS LINK | Click here [যুগশঙ্খ] »

NEWS LINK | Click here [The Bengal Post] »


Eleventh Distribution | একাদশ বিতরণ

খেজুরী-২, পূর্ব মেদিনীপুর। | Khejuri-2, Purba Medinipur


।। আমফান ঘূর্ণিঝড় ।।

বানান অনুযায়ী আমফান কিন্তু উচ্চারণ অনুযায়ী উমপুন ("Amphan", pronounced as "Um-pun", means sky) যার অর্থ আকাশ। ২০০৪ সালে থাইল্যান্ডে নামকরণ হয়েছিল যে ঘূর্ণিঝড়ে'র তার খবর আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু আপনারা যেটা জানেন না সেটা হল - এই ঘূর্ণিঝড়ে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরী-২ ব্লকের গ্রামগুলি।

টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া সারাদিন কলকাতা ও ২৪ পরগনার কাহিনী শোনাচ্ছে। সবাই খালি একটাই জিনিস বোঝে পূর্ব মেদিনীপুর মানে দীঘা। দীঘার ক্ষতি হয়নি মানে জেলার বাকি অংশেও ক্ষতি তেমন হয়নি এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

পূর্বে হুগলি নদী, পশ্চিমে রসলপুর নদী এবং দক্ষিণে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা খেজুরী-২ ব্লকের - ওয়াশীলচক, পাঁচুড়িয়া, মেইদিনগর, উত্তর ও দক্ষিণ থানাবেড়্যা, ঝাটিয়ারী, বনবাসুড়িয়া , দ: কলাগেছিয়া, লক্ষনচক, গরানিয়া, কাদিরাবাদচর, খেজুরী, সাতলিমলী, অরকবাড়ী, চক অরকবাড়ী ইত্যাদি গ্ৰামগুলি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সাংবাদিক এই অঞ্চলে পৌঁছতে পারেন নি (ছবিগুলি ঘূর্ণিঝড়ের ৮ দিন পরে তোলা)।

মূলত ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়খন্ড সীমান্ত সংলগ্ন দুর্গম গ্রাম গুলির কথা ভেবেই ত্রাণকার্যে নেমেছিল টীম মিডনাপুর ডট ইন (midnapore.in)। জঙ্গলমহলের ওই দুর্গম গ্রামগুলি ছাড়াও সুনিদৃষ্ট তথ্য পেয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এই তিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।

গত দুদিন midnapore.in -এর সদস্যরা খেজুরী-২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে সার্ভে করেছে। এইসব অঞ্চলে সমুদ্র বা নদীর তীরে অস্থায়ী ঘরে মূলত মৎসজীবি পরিবারের বসবাস। ওই অস্থায়ী ঘরগুলিকে একত্রে ' খটি ' বলা হয়, যা বর্তমানে নিশ্চিহ্ন। প্রাথমিক পর্যায়ে আজ আমরা এই খটিগুলির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলাম। আজকে যে গ্ৰামগুলির খটিগুলিতে বিতরণ করা হল সেগুলি হল - অরকবাড়ী, চক অরকবাড়ী, সফরচটা, বনবাসুড়িয়া, উত্তর থানাবেড়্যা, দক্ষিন থানাবেড়্যা, ওয়াশীলচক। সমস্তকিছুর ব্যাবস্থাপনায় ছিলেন আমাদের সদস্য দিনেন্দু মান্না (হেঁড়িয়া, খেজুরী), সাহায্য করেছেন সদস্য সুদর্শন সেন (পাঁচুড়িয়া, খেজুরী), অনুপম বেরা, অভিজিৎ দোলই ও আরজু খাঁন। খটিগুলির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছেন গৌতম বেরা (থানাবেড়্যা, খেজুরী)। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো।


NEWS LINK | Click here [আনন্দবাজার পত্রিকা] »


CORONA Relief team of UNDIVIDED MEDINIPUR

Twelfth Distribution | দ্বাদশ বিতরণ

খেজুরী-২, পূর্ব মেদিনীপুর। | Khejuri-2, Purba Medinipur


।। আমফান ঘূর্ণিঝড় - ২ ।।

কিছু অসুবিধার কারণে গতকাল খেজুরী-২ অঞ্চলে দ্বিতীয় বারের জন্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছতে আমাদের সন্ধে হয়ে যায়, বিতরণ করে বাড়ি ফিরতে হয়ে যায় অনেক রাত্রি। অন্ধকারের মধ্যে ছবিও বেশি তোলা যায় নি। প্রথম পর্যায়ে আমরা এই অঞ্চলের - অরকবাড়ী, চক অরকবাড়ী, সফরচটা, বনবাসুড়িয়া, উত্তর থানাবেড়্যা, দক্ষিন থানাবেড়্যা ও ওয়াশীলচক গ্রামের খটিগুলিতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছিলাম।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা যে খটিগুলিতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করলাম তার অধিকাংশই অবস্থিত পাঁচুড়িয়া গ্রামে। যেমন - পূর্ব পাঁচুড়িয়া খটি, পাঁচুড়িয়া দত্ত খটি, পশ্চিম পাঁচুড়িয়া প্রধান খটি ইত্যাদি। তাই এই পাঁচুড়িয়া গ্রাম সম্পর্কে আপনাদের একটু বলি।

আমাদের সদস্য সুদর্শন সেন (এই গ্রামেরই বাসিন্দা) জানিয়েছেন গ্রামের নামকরণ সম্পর্কে গ্রামবাসীদের মধ্যে নানা মত প্রচলিত রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি মতের উল্লেখ করলাম। আগে সমুদ্রের দিক থেকে এই গ্রামে আসতে গেলে পরপর পাঁচটি আড়িয়া বা আড়ি কিংবা বাঁধ পেরিয়ে আসতে হত বলে গ্রামটির নাম হয়ে যায় 'পাঁচুড়িয়া'। অন্য মতে - একসময় এই গ্রামের সকলের খুব 'খোসা-প্যাঁচড়া রোগ হত, সেই থেকেই লোকমুখে গ্রামটি পরিচিতি পায় 'প্যাঁচড়া' রূপে। প্যাঁচড়া থেকে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে পাঁচুড়িয়া নামটি আসে।

গ্রামটির দক্ষিণে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান হলেও আগে সমুদ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল। ৮০-৯০ বছর আগেও গ্রামের দক্ষিণে আরো দুটি গ্রাম ও জঙ্গলের অস্তিত্ব ছিল যা এখন জলের তলায়। সেই জঙ্গলে হরিণ, বনশুয়োর, চিতাবাঘ প্রভৃতির দেখা মিলত। ওপারে সুন্দরবন থেকে সাঁতরে এপারে চলে আসত। আমাদের সদস্য সুদর্শনের বাড়িতে ৮০ বছর আগে ঐ জঙ্গল থেকে শিকার করা হরিণের মাথা সযত্নে রাখা আছে। এছাড়াও কেয়া-জঙ্গলের ধারে গর্তে থাকত খেঁকশিয়াল ও নদীর চরে অসংখ্য লাল-কাঁকড়া। এছাড়াও বিলুপ্ত হয়ে গেছে সমুদ্র তীরবর্তী গরান, হেঁতাল, হিজল। এই অঞ্চলের প্রধান উৎসব গঙ্গাপূজা যা মৎসজীবীরাই আয়োজন করেন।

গ্রামের গল্প শুনতে শুনতেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হল - নানকার গোবিন্দপুর খটি, পূর্ব পাঁচুড়িয়া খটি, পাঁচুড়িয়া দত্ত খটি, পশ্চিম পাঁচুড়িয়া প্রধান খটি ও অরকবাড়ী খটিতে। মৎসজীবি ছাড়াও অন্যান্য দুঃস্থ পরিবারদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়, এছাড়াও শতাধিক শিশুকে বিস্কুটের প্যাকেট বিতরণ করা হয়। সমস্ত কিছুর আয়োজনে ছিলেন জ্যোতির্ময় খাটুয়া, সুদর্শন সেন ও প্রদীপ সামন্ত। খটিগুলির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করেছেন গৌতম বেরা।

ছবিতে যে বিশাল আকৃতির টায়রটি দেখছেন সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ভেসে এসেছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আপনারা অবশ্যই আসবেন এই অঞ্চলের গঙ্গাপূজা দেখতে। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, আমরা এই পরিষেবা চালিয়ে যাবো।


Thirteenth Distribution | ত্রয়োদশ বিতরণ

খেজুরী-৩, পূর্ব মেদিনীপুর। | Khejuri-3, Purba Medinipur


।। আমফান ঘূর্ণিঝড় - ৩ ।।

১৫ জুন ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় আমাদের কর্মকান্ড। রান্নার জিনিসপত্র আগের দিনই কেনা হয়েছিল, বাকি ছিল মাছ। দিনেন্দু ভোর পাঁচটায় হেঁড়িয়া বাজারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, সমস্ত মাছ কাটিয়ে অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে ট্রাকে তুলে দেন (এই বিবরণ সুদীর্ঘ হওয়ার কারণে এই ওয়েব-পেজের মধ্যে না দিয়ে একটি অতিরিক্ত পেজে দেওয়া হল।) Click here »


আমাদের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই সংবাদ মাধ্যম গুলিকে।