ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকারের করা প্রথম রাজদ্রোহের মামলা ।
खुदीराम के खिलाफ ब्रिटिश सरकार द्वारा दर्ज किया गया पहला राजद्रोह का मुकदमा।
The first treason case filed by the British government against Khudiram Bose
অরিন্দম ভৌমিক।
Home » Medinikatha Journal » Khudiram Bose » The first treason case filed by the British government against Khudiram Bose
১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেদিনীপুর শহরের মারাঠা কেল্লার পুরাতন জেল প্রাঙ্গনে (বর্তমান ভবঘুরে আবাস) একটি কৃষি ও শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র বিতরণের জন্য প্রদর্শনীর শেষে জেলের মধ্যে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। কলিজিয়েট স্কুলের ছেলেরা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলো এবং তাদের পরিচালনা করছিলেন রামচরণবাবু। এই সভায় ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা জজ, পুলিশ সাহেব, সরকারী ও বেসরকারী বহু গণ্য মান্য ব্যাক্তি যোগদান করেছিলেন। অনুষ্ঠানে সবার মনোরঞ্জনের জন্য কবি-গান, পুতুল-নাচ ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকায় এতো ভিড় হয়েছিল যে ভেতরে আর জায়গা ছিলো না। জেলখানার গেটেও বহু লোক ভেতরে যাওয়ার আসায় ভিড় করেছিল।
জেলা মেজিস্ট্রেট ডি. ওয়েষ্টন যখন পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র দিচ্ছিলেন তখন ক্ষুদিরাম জেলখানার গেটে দাঁড়িয়ে 'সোনার বাংলা' নামে একটি প্রচারপত্র বিনামূল্যে সবাইকে দিচ্ছিলেন। মেদিনীপুর-গুপ্ত-সমিতি থেকে ক্ষুদিরামকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রচারপত্রটিতে অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে নানা রকমের প্ররোচনা মূলক লেখা ছিল, এমনকি তাদের প্রাণে মারার কথাও লেখা ছিল।
কিছু কিছু জায়গায় ওই প্রচারপত্রটির নাম 'বন্দেমাতরম' উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন মেদিনীপুর বোমা মামলায় ও সরকারী কাগজে প্রচারপত্রটির নাম 'বন্দেমাতরম' উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হেমচন্দ্র কানুনগো তাঁর বইতে বলেছেন প্রচারপত্রটির আসল নাম ছিল 'সোনার বাংলা' । আসল প্রচারপত্রটি মেদিনীপুর শহরে ছিলোনা, প্রচারপত্রটির ইংরেজী অনুবাদ 'pioneer' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং তা ইউরোপিয়ানদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। 'pioneer' পত্রিকায় প্রকাশিত ‘No Compromise’ শীর্ষক প্রবন্ধটি সত্যেন্দ্রনাথ বসু বাংলা অনুবাদ করে কিছু প্রচারপত্রের নাম দিয়েছিলেন 'সোনার বাংলা' আবার কিছু প্রচারপত্রের নাম দিয়েছিলেন 'বন্দেমাতরম' এবং ইংরেজি প্রচারপত্রটির নাম ‘No Compromise’ রেখেছিলেন। প্রচারপত্রগুলি হাজার খানেক ছাপিয়ে ক্ষুদিরামকে বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাই আদালতে তিন ধরণের প্রচারপত্র জমা করা হয়েছিল এবং সেই কারণেই এই নামের বিভ্রান্তি।
আলিপুর বোমা মামলার সরকারী সাক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর পূর্ণচন্দ্র লাহিড়ীর বয়ান থেকে জানা যায় যে, "দৈনিক সন্ধ্যা" পত্রিকার সহকারী সম্পাদক বাসুদেব ভট্টাচার্য ছিলেন প্রচারপত্রটির আসল লেখক। ৭নং শান্তিরাম ঘোষ লেনে কেশবচন্দ্র গুপ্তের 'কেশব প্রিন্টিং ওয়ার্কস' প্রেসে সেগুলি ছাপা হয়েছিল। শ্রীমন্তলাল চৌধুরী সেখানে ছাপার কাজ করতেন। বিনা অনুমতিতে প্রচারপত্রটি প্রকাশ ও প্রচারের জন্য এই তিনজন অভিযুক্ত হন।
ক্ষুদিরাম প্রচারপত্রটি বিলি করতে করতে হটাৎ সামনে ব্যায়াম শিক্ষক রামচরণ সেনকে দেখতে পেয়ে তার হাতেও একটি প্রচারপত্র দিয়ে দেন। রামচরণ বাবু প্রচারপত্রটি পড়ে ভয়ে শিউরে উঠলেন এবং ক্ষুদিরামকে সরকার বিরোধী এই প্রচারপত্রটি বিলি করতে বারন করলেন। ক্ষুদিরাম তার কথায় বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে আরো উৎসাহের সঙ্গে প্রচারপত্র বিলি করতে লাগলেন। রামলালবাবু রেগে গিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা কনস্টেবল রামলাল উপাধ্যায়কে বলেন প্রচারপত্র সহ ক্ষুদিরামকে ধরতে। কিন্তু কনস্টেবল, রামচরণ বাবুর কথায় ক্ষুদিরামকে ধরতে চাইলেন না। এতে রামচরণবাবু আরো রেগে গিয়ে কনস্টেবলকে বললেন সে যদি ক্ষুদিরামকে না ধরে তাহলে তার নামে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সাহেবের কাছে অভিযোগ করবেন। চাকরী হারানোর ভয়ে কনস্টবল ক্ষুদিরামকে ধরেন। ক্ষুদিরামকে ধরা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, কিন্তু প্রচারপত্রগুলি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই ক্ষুদিরাম ধৈর্য হারিয়ে কনস্টেবলের নাকে ও মুখে এলোপাথাড়ি ঘুষি চালাতে থাকেন। এর ফলে কনস্টেবল রামলাল উপাধ্যায়ের নাক দিয়ে প্রচুর রক্ত বেরোতে লাগলো। রক্ত বেরোলেও কনস্টেবল ক্ষুদিরামের হাত ছাড়েনি। ক্ষুদিরামের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসু সেখানে হাজির হন এবং ক্ষুদিরামকে ছাড়ানোর জন্য বুদ্ধি করে কনস্টেবলকে জিজ্ঞেস করেন - "তুম কাহে ডেপুটি বাবুকা ল্যাড়কে কো প্যকড় রাখ্যা হ্যায় ?" সত্যেন্দ্রনাথ বসু তখন কালেক্টরী অফিসে কাজ করতেন এবং কনস্টেবল রামলাল উপাধ্যায় তাঁকে চিনতেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কথা শুনে কনস্টেবল ভয় পেয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদিরামকে ছেড়ে দেয়। ক্ষুদিরাম ছাড়া পেয়ে নিমেষের মধ্যে প্রচারপত্রগুলো নিয়ে পালিয়ে গেলেন। কনস্টেবল রামলাল কিছুক্ষন পরেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে অন্যান্য কনস্টেবলদের জড়ো করে ক্ষুদিরামকে খুজতে লাগলো। কিন্তু বহু খোজ করেও ক্ষুদিরামকে পাওয়া গেলো না।
এই ঘটনা জেলা মেজিস্ট্রেট ওয়েষ্টন সাহেবের কানে যেতেই তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে ডেকে পাঠান এবং মিথ্যে কথা বলে ক্ষুদিরামকে কেন ছাড়িয়েছেন তা জিজ্ঞেস করেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু হাসতে হাসতে উত্তর দেন - "আমি কনস্টেবলের সঙ্গে ইয়ার্কি করছিলাম। আগে যে এতো ঘটনা হয়েছে তা আমি জানতাম না।"
ক্ষুদিরামকে গ্রেপ্তারের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ইন্সপেক্টর নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে। নগেন্দ্রনাথবাবু বহু চেষ্টা করেও ক্ষুদিরামকে ধরতে পারলেন না। ক্ষুদিরাম যে কোথায় লুকিয়েছিলো তা পরেও জানা যায়নি। শোনা যায় রানী বিষ্ণুপ্রিয়া তাঁর মলিঘাটি জমিদার বাড়িতে ক্ষুদিরামকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিছুদিন পরে গুপ্ত সমিতি সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষুদিরামকে আত্মসমর্পণ করিয়ে আইনি লড়াই লড়া হবে। সেইমতো তাঁকে আইনের ধারা বোঝানো হয়।
হেমবাবু তাঁর বইতে লিখেছেন - "আত্মসমর্পণের পূর্বে রাজদ্রোহিতা সম্পর্কীয় আইনের বিধানগুলি ক্ষুদিরামকে অতিরঞ্জিত করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া হইয়াছিল এবং আরও বুঝান হইয়াছিল যে, ধরা পড়িলে পুলিশের হাতে তাঁর দারুন নির্যাতন ঘটিবে, এবং অপরাধ প্রমাণিত হইলে বিচারের ফলে তাঁহাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। তাঁহার তরুণ বয়স, অপরাধের গুরুত্ব ও আইনের কঠোর বিধানের কথা চিন্তা করিয়া অনেকের মনে সন্দেহ হইয়াছিল যে, বালক ক্ষুদিরাম হয়ত পুলিশের নির্যাতন বা প্রলোভনে গুপ্ত সমিতির সমূহ রহস্য প্রকাশ করিয়া ফেলিবেন। কিন্তু যখন তিনি ভালোভাবে বুঝিয়া সুজিয়া ধরা দিলেন তখন গুপ্ত সমিতির সভ্যগণ নিশ্চিন্ত হইলেন যে তাঁহার নিকট কোন তথ্য সংগ্রহ করা পুলিশের সাধ্যাতীত।"
পরিকল্পনা মতো ক্ষুদিরাম ধরা দিতে চান খবর পাওয়ার পরে প্যারীমোহন ঘোষের অলিগঞ্জের বন্দেমাতরম তাঁতশালায় ৩০ মার্চ গভীর রাত্রে পুলিশ ইন্সপেক্টর নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও সাব-ইন্সপেক্টর যোগেশচন্দ্র মুখার্জী ১০ জন সশস্ত্র কনস্টেবল সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ক্ষুদিরামকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁতশালের কাছেই ছিল প্যারীমোহন ঘোষের বাড়ী। ক্ষুদিরামের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তিনি রাত্রি ৩ টার সময় থানায় ছুটলেন জামিনের জন্য। জামিন অগ্রাহ্য হল। ক্ষুদিরাম থানার হাজতে থাকলেন। পরের দিন ৩১ মার্চ মাসের শেষ শনিবার হওয়ায় কোর্ট বন্ধ। ১ এপ্রিল ছিল রবিবার, কোর্ট এমনিতেই বন্ধ। সোমবার ২ এপ্রিল ক্ষুদিরামকে আদালতে হাজির করা হল। প্যারীমোহন বাবু হাকিমের কাছে জামিনের দরখাস্ত করলেন। ৫০০ টাকার জামিনে ক্ষুদিরাম আবার তাঁতশালায় ফিরে এলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে জেলা-ম্যাজিস্ট্রেট ওয়েস্টন ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের IPC ১২৪A ও ৫০৫ ধারায় পরোয়ানা বের করেছিলেন। হাজতে থাকা কালীন পুলিশ নানা রকমের লোভ দেখিয়ে, শাস্তি ও অত্যাচারের ভয় দেখিয়েও তাঁর কাছ থেকে কিছুই জানতে পারেনি। ক্ষুদিরামের একটিই উত্তর - "আমি কিছুই জানি না।" বন্দী ক্ষুদিরামের সঙ্গে দেখা করতে হাজতে গিয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি ক্ষুদিরামের জন্য বাড়ীতে তৈরি খাওয়ার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন শুনে ক্ষুদিরাম সরাসরি না বলে দিয়েছিলেন। ক্ষুদিরাম বলেছিলেন অন্যান্য বন্দিরা যে খাওয়ার নিঃশব্দে খেয়ে চলেছে তা খেতে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না।
৯ এপ্রিল ক্ষুদিরামের অপরাধের তদন্ত শুরু হল। সরকার পক্ষে থেকে প্রথম সাক্ষী ছিলেন পুলিশ সুপার। তিনি রাজদ্রোহের মামলা দায়ের করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র দাখিল করলেন।
দায়রা জজ ক্ষুদিরামকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, কে তাঁকে ওই প্রচারপত্র বিলি করার ভার দিয়েছিলো এবং সে আদালতে উপস্থিত আছে কিনা। ক্ষুদিরাম চারদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখলেন এবং হেঁসে বললেন সেই ব্যাক্তি সেখানে উপস্থিত নাই এবং ক্ষুদিরাম তার নামও জানেনা। সত্যেন্দ্রনাথ বাবু ক্ষুদিরামের সামনেই বসেছিলেন এবং আদালতের উপস্থিত অধিকাংশ লোকই জানতো সত্যেন্দ্রনাথ বাবুই সেই ব্যাক্তি।
১৭ এপ্রিল সরকার পক্ষের সমস্ত সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হলে হাকিম আসামিকে দায়রা সোপর্দ করলেন। ১০ মে সেসন জজ আদালতে ক্ষুদিরামের বিচার চলে। ১৬ মে ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য প্রমানের অভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং ক্ষুদিরামকে মুক্ত করা হয়।
এই মামলায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেও জোর করা হয় ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য। কিন্তু বুদ্ধিমান সতেন্দ্রনাথবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিভিন্ন সময়ে একই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেন, ফলে তাঁর দেওয়া প্রমানে ক্ষুদিরামেরই সুবিধা হয়। কিন্তু এর ফলে সরকারি চাকরি থেকে সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে বরখাস্ত করা হয়।
ক্ষুদিরামের মুক্তির দিনটি ছিল মেদিনীপুর শহরের একটি চিরস্মরণীয় দিন। শহরের তরুণ ও ছাত্ররা ক্ষুদিরামকে প্রচুর ফুলের মালা পরিয়ে মিঃ কে. বি. দত্তের ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ীতে বসিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। তাঁরা স্বদেশী গান গাইতে গাইতে নিজেরাই ঘোড়ার গাড়িটি টানছিলেন এবং শহরের প্রধান রাস্তাগুলি দিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে গেছিলেন। তখনকার মেদিনীপুরের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী গোষ্ঠচন্দ্র চন্দ এই শোভাযাত্রায় স্বদেশী গান গেয়েছিলেন এবং হাজার হাজার লোক তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন। গানের মাঝে মাঝে ছাত্ররা একসঙ্গে জোর গলায় বলছিলেন "বন্দেমাতরম"। শহরের বহু জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ক্ষুদিরামকে ফুলের মালা পরানো হয়েছিল।
সেইদিন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুর শহরে। ক্ষুদিরামের গাড়ী টেনে নিয়ে যাওয়া হয় অরবিন্দ ঘোষের কাছে। শ্রী অরবিন্দ ঘোষ প্রানভরে আশীর্বাদ করেছিলেন ক্ষুদিরামকে।
'মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানী' নামে একটি কৃষি-সামগ্রীর কোম্পানি ছিল মেদিনীপুর শহরে। কোম্পানির মালিক ছিল ইউরোপীয়। এই শোভাযাত্রা চলাকালীন কোনো এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যাক্তি ওই কোম্পানির কাছারী বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেইদিন সন্ধেবেলায় মেদিনীপুরের আকাশে দেখা যায় নানান রকমের আতসবাজির খেলা। সেই দিনটা মেদিনীপুরবাসীর মন ছিল উন্মাদনায়, উত্তেজনায় চঞ্চল।
তাঁর বিরুদ্ধে করা এই মামলাই বাংলা দেশে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকারের করা প্রথম রাজদ্রোহের মামলা।
এই মামলা ফলে ক্ষুদিরামের এবং গুপ্ত সমিতির যা যা লাভ হলো -
● ক্ষুদিরামের নাম সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো।
● শহরে-গ্রামে, স্কুল-কলেজে, বাজারে-অফিসে, আড্ডায়, রাস্তা-ঘাটে, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় ক্ষুদিরামের বীরত্বের কাহিনী চলতে লাগলো।
● শহরে-গ্রামে বহু বাড়ী থেকে তাঁর নিমন্ত্রণ আসতে লাগলো।
● গুপ্ত-সমিতির কাজে এলো নতুন জোয়ার।
● গুপ্ত-সমিতির সদস্য সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে বেড়ে গেল।
● গুপ্ত-সমিতির অর্থ সংগ্রহের রাস্তা সহজ হলো।
এই ঘটনার দু মাস পরে ব্যায়াম শিক্ষক রামচরণবাবু ক্ষুদিরামকে ধরিয়ে দেওয়া ও তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার শাস্তি পান। একদিন সন্ধে বেলায় এক ব্যাক্তি রামচরণ সেনের হাতে মিঃ কে. বি. দত্তের সই করা একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে লেখা ছিল তিনি যেন একবার মিঃ কে. বি. দত্তের সঙ্গে দেখা করেন। মিঃ কে. বি. দত্ত ছিলেন স্কুল কমিটির অন্যতম সদস্য। রামচরণবাবু সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যাক্তির সঙ্গে মিঃ কে. বি. দত্তের বাড়ীর দিকে রওনা দেয়। কিছুদূর যাওয়ার পরেই আরো দু-তিন জন ব্যাক্তি হাজির হয় এবং সবাই মিলে রামচরণবাবুকে মারধর করে।
শহীদ ক্ষুদিরাম বসু অমর রহে।
জয় হিন্দ।
অরিন্দম ভৌমিক।
midnapore.in
(Published on 16.05.2021)
প্রবন্ধটি "কে ক্ষুদিরাম" পুস্তকের অংশ বিশেষ।