আমার এই লেখায় প্রতি টি পর্বে তোমায় নতুন নতুন করে আবিষ্কার করছি। সেই সময়ে যা বুঝিনি বা অল্প বুঝেছিলাম, তাই এখন বুঝতে পারছি নতুন আঙ্গিকে। আসলে তুমি তোমার সমসাময়িক কাল থেকে অনেক এগিয়ে ছিলে।
পোশাক আষাক, কথনভঙগী, আদব কায়দা এসবে পশ্চিমী ছোঁয়া লাগাতে পারলে আমরা ভেবে থাকি এই তো আমরা কতো আধুনিক। কিন্তু আমাদের এই ভাবনা র সাথে সত্যি কার আধুনিক মননের যে কতো দূরত্ব তা তোমার ব্যাখ্যা তেই বুঝেছি বারবার।
' রাণী ভবানী ' নিয়ে তুমি একবার আমাকে একটা অনুচ্ছেদ লিখিয়েছিলে। সম্ভবতঃ প্রিয় মহীয়সী নারী এই বিষয়ে। সেই বয়সে আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারিনি বিষয়টা । কিন্তু যখন তুমি বেশ কিছু দিন ধরে রাণী ভবানী, রাণী শিরোমণি থেকে রাণী লক্ষ্মীবাঈ , পর পর কয়েকদিন ধরে বলে গিয়েছিলে অনর্গল, বুঝি কি আগুন তোমার বুকে জ্বলত সবসময় ! আর একটা খুব বিস্ময় লাগে জানো, যখন ঐ আলোচনার সাথে সাথেই মিশিয়ে দিতে কবিগুরু র কবিতার ঐ পঙতি টা..." পায়ে পড়ি তোমার, একটা গল্প লেখো তুমি শরৎ বাবু, নিতান্ত সাধারণ মেয়ের গল্প..
“.........তাকে জিতিয়ে দিয়ো তুমি আমার হয়ে..." অথবা ঐ পঙতি টা " ইতিমধ্যে মালতী পাশ করুক এম. এ.
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ,
গণিতে হোক প্রথম ...." প্রায় বলতে এই কথা গুলো, প্রতিদিন নিত্যনতুন ব্যাখ্যা দিতে, আসলে নারী দের হার কখনো দেখতে চাও নি তুমি! সব দিন জিততে দেখতে চেয়েছো তাদের! এ্যাতো মনে প্রাণে আধুনিক মনা পুরুষ বলেই দেখেছিলে সমাজ বদলের স্বপ্ন।
চন্দ্রকোনার মুকুটহীন সম্রাট শ্রী সত্য ঘোষাল এর স্মৃতিচারণায় দৌহিত্রী।
ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ম্যাগাজিন, ছোট পত্রিকা প্রকাশ করেছো বিভিন্ন সময়ে। নিয়মিত লেখা বেরিয়েছে বিভিন্ন ছোট পুস্তিকা য় । জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে প্রকাশ করতে শুরু করেছিলে পত্রিকা ' সত্য পথে যাতিক' । এটি ছিল তোমার স্বপ্নের যাত্রা। বিভিন্ন বিভাগের সাথে শুরু করেছিলে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিভাগ ' নসট্রাদামুস '। ওনার ভবিষ্যৎ বাণীর প্রতিটি বিষয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছো প্রতিদিন। ঐ সময়ে কাগজের ঐ বিভাগটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তোমার পরবর্তীতে , দিকভ্রান্ত আমরা; তোমার কোনো আদর্শ ই বয়ে নিয়ে যেতে পারি নি আমরা। তুমি যা মন প্রাণ দিয়ে গ্রহণ করেছিলে আমরা সেগুলো সব সোকেশ-এ সাজিয়ে রেখে দিয়েছি।
আগাগোড়া কুসংস্কার বিরোধী, একটা মানুষ লাঞ্ছনা, শোষণ, অত্যাচার মানতে পারো নি বলেই বেছে নিয়েছিলে 'চোয়াড় বিদ্রোহের’ মতো বিষয়। মানুষের ক্ষোভ বৃটিশের বিরুদ্ধে, এবং সেখানে বৃটিশদের শোষণ ও রাণী শিরোমণি র আত্মত্যাগ, গোবর্ধন দিকপতির ভূমিকা নিয়ে ই নাটক লিখতে পেরেছিলে, তুমি ই প্রথম ভাবতে পেরেছিলে , নাটক হল এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনো বার্তা, সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় খুব দ্রুত। এই কথা তুমি তোমার একটি ব ই ' রবীন্দ্রনাথ ও রক্তকরবী ' তে বলেছো। সাধারণ মানুষ থেকে দূরে নয় , তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ই চলতে হয় পথ এ শিক্ষা তোমার কাছ থেকেই পেয়েছি। আর একটা বিষয় ও শিখেছি সময় পরিবর্তনের সাথে যদি মানসিকতা পরিবর্তন না করতে পারা যায় তাহলে ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে হয় বার বার! তোমার যে বিশাল রাজনৈতিক জীবন সেখানে ও সেই বার্তা তুমি দিয়েছো বারবার। (সে আলোচনা আর এক দিন)