তোমাকে নিয়ে লিখতে লিখতে, আমি আবার আমার পুরানো পরিবার, সেখানের মানুষ জন দের ফিরে পাচ্ছি জানো। খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আমি একা নই। কিন্তু তোমার অভাব! তোমার কিনে আনা Macbeth ব ইটা এখন মিঃ রুমন বাবুর হেফাজতে। কয়েক দিন ধরে একটা কথা খুব মনে পড়ছে। একদিন নারী শিক্ষা র প্রসার এই বিষয়ে পড়াচ্ছিলাম আমাদের বাড়ির খুদে সদস্যকে। বারবার তোমার উজ্জ্বল চোখ গুলো ভেসে উঠছিল! যখন তুমি বলতে " মানুষ যখন নূতন কিছুর স্বপ্ন দ্যাখে, তখন সেখানে নূতন উদ্যম দেখা যায়, সেই উদ্যম কে সহজে হারিয়ে দেওয়া যায় না " । কথা টা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি । তুমি সেটা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে পূরণ করে দেখিয়েছো। আমি শুধু শুনেই গেছি। পারি নি তোমার মনের মতো হতে!! আমাদের চন্দ্রকোণা, তোমার স্বপ্নের চন্দ্র কোণা নিয়ে তুমি স্বপ্ন দেখেছো অনেক। আমার চোখে আধুনিকতম পুরুষ তুমি!! সমাজের কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম তুমি মানো নি কখনো!! " বাঁধ ভেঙে দাও গান টা" আমরা শুধু গেয়ে ই থাকি, কিন্তু জীবনে গ্রহণ করেছিলে তুমি...সকলের প্রিয় সত্য দা। জানো, অন্য সকল জায়গার মতো, তোমার স্বপ্নের চন্দ্র কোণায় সব মেয়েরা ই এখন স্কুলে যায়। কিন্তু তুমি ই প্রথম ভেবেছিলে এখানে মেয়েদের জন্য একটা স্কুলের খুব দরকার।
তখন সেই সময়ে, মেয়েদের গণ্ডি কম বয়সে বিয়ে সংসারের মধ্যে ই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এই গার্ল স স্কুল এই ধারণা আমাদের চন্দ্রকোণার জন্য এটা তো তোমার ই প্রথম!! এটা করতে তোমাকে কি লড়াই করতে হয়েছে, কি প্রবল আর্থিক সমস্যার মধ্যে যেতে হয়েছে সেটা অনুভব করতে পারি বৈকি!! যখন তুমি বলতে, তখন গল্প শুনতাম,আর এখন অনুভব করি!! তখন তো এ্যাতো সরকারি Grant এর ব্যাপার ছিল না। কিন্তু তোমার চোখে ছিল স্বপ্ন! নূতন কিছু করার স্বপ্ন!! সঙ্গে পেয়েছিলে আরো কিছু স্বনামধন্য মানুষ কে ! বালা গ্রাম থেকে প্রণম্য শ্রী কৃষ্ণ কারক , মানপুর অঞ্চলের জনপ্রিয় ডাক্তার বাবু শ্রী মৃণেন্দ্রনাথ সিংহ আর একজন ডাক্তার বাবু শ্রী রামক্ষয় দত্ত, বাবু র মতো মানুষদের। স্কুলের প্রতিনিয়ত খরচ খরচা চালাতে, জ্যোতিশ্রী সিনেমা হলে, নিজে থিয়েটার পর্যন্ত করেছো , কোলকাতা থেকে মহিলা অভিনেত্রীদের এনেছো ! বাইরে থেকে অনেক শিক্ষিকাদের এনেছো , রেখেছো ওনাদের যতোটুকু পেরেছো পারিশ্রমিক দিয়েছো !! এ্যাতো মনোবল তুমি কোথা থেকে পেয়েছিলে জানি না , সেই ১৯৫৮ ৫৯ সালে! আমার চোখে স্বপ্নের রাজকুমার তুমি!! অনেক প্রতিবন্ধকতা তুমি সহ্য করেছো এই সময় , সেটা ও তুমি বলেছো ! সেইজন্য ই বোধহয় চন্দ্রকোণায় প্রথম ম্যাট্রিক পাস করেছিল যে সব ছাত্রীরা, আমার মা ও তাদের মধ্যে একজন, তারা সবাই তোমার স্কুলের ই ছাত্রী। এটা ও জানি পরে তোমার প্রতিষ্ঠা করা স্কুল মান্যতা পায় নি। তবে গার্ল স স্কুল চন্দ্র কোণায় হয়েছে। তোমার সেই স্বপ্নের স্কুলের সাক্ষ্য আজো বয়ে নিয়ে চলেছে আমাদের বাড়ির পাশে পুরানো জিরাট হাইস্কুলের ভগ্নপ্রায় বাড়ি টা। তোমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নূতনের আহ্বান তুমি ই করেছিলে !! চন্দ্রকোণায় " নূতন যৌবনের দূত তুমি! " আর তোমার বক্তৃতা শুনলে বুঝতে পারি, বোধহয় গোটা ভারতবর্ষের তথা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তুমি অনেক দিন আগে ই অনুধাবন করেছিলে , তাই কি বলতে " ২০০০ সাল আমি দেখবো না!! ০০ আমি দেখতে চাই না! " আজ এখানেই থাক। সে কথা আবার একদিন!