সত্য ঘোষাল, Satya Ghosal, Chandrakona, Medinipur


চন্দ্রকোনার মুকুটহীন সম্রাট শ্রী সত্য ঘোষাল এর স্মৃতিচারণায় দৌহিত্রী (তৃতীয় পর্ব)


Granddaughter reminisces about the uncrowned emperor of Chandrakona, Shri Satya Ghoshal


দেবলীনা মজুমদার।




Home » Medinikatha Journal » Debalina Mazumdar » চন্দ্রকোনার মুকুটহীন সম্রাট শ্রী সত্য ঘোষাল এর স্মৃতিচারণায় দৌহিত্রী



দাদা,


কয়েক দিন তোমাকে নিয়ে লিখতে লিখতে, অনেক কথা মনে ভিড় করে আসছে জানো!! মাননীয় সত্য ঘোষাল, একজন সুবক্তা, খুব বড়ো মাপের রাজনীতিবিদ, লেখক, এগুলো তো খুব সত্যি কথা! কিন্তু একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে তুমি কেমন মানুষ!! পারিবারিক জীবনে এ্যাতো সাধারণ জীবন যাপন সচরাচর দেখি না গো!! একেবারে ছোট বেলায় তোমার সাথে একটা খেলা খেলতাম!! মনে আছে এখনো। তোমাকে প্রতি বছর অনেক মানুষ অনেক ডায়েরি দিয়ে যেতেন। ওগুলো আমার খুব প্রিয় ছিল। সবসময় ঘাঁটাঘাঁটি করতাম । কিন্তু আমি তখন এ্যাতো ই ছোট ডায়েরি দিয়ে কি আর করবো? সবাই বলতো " এ্যাই , তুই দাদার ডাইরি কি করবি" ? দ্যাখো, এটা তোমার মনে আছে, সবার ওপর রাগ হলে, আমি ঠোঁট ফুলিয়ে তোমার কাছে ই যেতাম! সবার নামে নালিশ করতাম ! ছোট দের নালিশ, তুমি অবলীলায় শুনতে, আর আমাকে কোলে বসিয়ে, এমন করে সবাইকে বলতে, ভাবতাম বেশ মজা!! কেমন সবাই বকুনি খাচ্ছে!! কিন্তু আমাকে আস্তে করে বলে দিতে,' রাগ করে না ! যখন রাগ হবে , আমার কাছে চলে আসবে, ! আমি সবাইকে বকে দেব ! " আমি কতো বোকা ছিলাম বলো!! আমি ভাবতাম, সবদিন তুমি থাকবে আমাকে ভোলানোর জন্য ! তুমি কি ভাবো, এখন কি রাগ হয় না আমার! ক ই, তোমার স্নেহের হাত তো আমি আর পাই না! সেই যে, আমি ডায়েরি ভালোবাসতাম বলে, হঠাৎ করেই একদিন রাতে তুমি আমাকে ডেকে ছোট্ট একটি লাল ডায়েরি উপহার দিয়েছিলে , বিশ্বাস করো, এটা পেয়ে আমার কি অহঙ্কার হয়েছিল!! ভেবে ছিলাম তুমি আর আমি এক ই মাপের মানুষ। তারপর দুপুর বেলায়, তুমি যখন গভীর মনোযোগে ডায়েরি তে পাতার পর পাতা লিখতে, আমি তো তোমার কাছে ই ঘুরঘুর করতাম, কি বিরক্ত লাগতো আমার ! ভাবতাম তুমি কেন এইসব লিখছো!! আমার সাথে গল্প করো ! একদিন তুমি ই আমাকে বলেছিলে " যা দেখি , ডায়েরি টা নিয়ে আয় , আমি একছূটে নিয়ে এসেছিলাম, তুমি বলেছিলে, আমাদের ঘরের দেওয়ালে, তুমি যে ঘরটায় থাকতে, সেখানে মা য়ের হাতে সেলাই করা পুরোনো আমলের, অনেক কবিতা ফ্রেম আকারে বাঁধানো ছিল বেশিরভাগই রবি ঠাকুরের, বলেছিলে, চার লাইন করে ডায়েরি তে লেখ। আমি লিখতাম রোজ , তোমার সাথে, " মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদের ই লোক" " উদয়াচলের সে তীর্থ পথে আমি..." আমি বুঝতে ই পারি নি, কখন যে কবিতা গুলো মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল!! তার ও পরে রাশি রাশি ডায়েরি তে , রাত জেগে, দিন জেগে, আমার জন্য লেখা নোটস , প্রতিদিন আমি ঘুমিয়ে যেতাম , তুমি রাতে জেগে আমার পরীক্ষা র জন্য নোটস লিখতে!! কোনো চিন্তা না করেই তোমাকে দিয়ে চলে আসতাম, এটা করে দাও, ওটা করে দাও যেদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো, ২৭ শেষ ফেব্রুয়ারি দুপুরে (, ২০০০ সাল ) সেদিনেও তুমি আবদার রেখেছো আমার!! পড়িয়েছো , লিখিয়েছো!! এখন কি তুমি জানো, আমি আর আবদার করি কিনা!! অতোগুলো ডায়রি তোমার লেখা, তোমার হাতের ছোঁয়া, দুজনে একসাথে মিলে দেখতাম, তুমি বোঝাতে, আমি শুনতাম, এখন তো সেগুলো থেকে ই গেছে , আলমারি ভর্তি!! আমি একা ! তুমি নেই! একবার " খুধিত পাষাণ " নাটক টা তুমি পড়েছিলে একটা অনুষ্ঠানে, আমাকে কিছু টা অভিনয় করিয়ে ছিলে , সেই যে তোমার গলায় সেই কথা " তফাৎ যাও " এ্যাতো তফাতে তুমি আমার কাছ থেকে, ডাকলেও শুনতে পাও না! তোমার আর একটা ঘরোয়া কথা, রান্নার প্রতি আসক্তি, ডায়েরি তে রান্না লিখে রাখা! সব থেকে গেছে! আর প্রতি বছর আমার জন্মদিনে আমার প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়ানো ! বাড়িতে লোক জন এলে তোমার হাতে র রান্না আর বিশেষ রান্নার পদ , সব দিন গুলো হারিয়ে গেছে দাদা!! জন্মদিন টা আমার এখনও আসে!

(ক্রমশ ...)





M E D I N I K A T H A J O U R N A L

Edited by Arindam Bhowmik

(Published on 14.01.2023)




নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত জানান।