তোমাকে নিয়ে লিখতে লিখতে, লেখাটা একটা অভ্যেসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে । রোজ ই মনে হয় এটা একটু লিখি। ওটা একটু লিখি ! এ্যাতো স্মৃতি তোমার সাথে জড়িয়ে আছে!
সত্য ঘোষাল এর সাথে তার মা।
নিজের পরিবারেও ছোট ছোট ঘটনায় তোমার উপস্থিতি আর দায়িত্বপালন নজর কাড়ে বৈকি! বিলাস বৈভবের ছোঁয়া কোনো দিন ছিল না পরিবারে। সারা জীবন সাইকেলেই যাতায়াত তোমার! যদি ও কর্তা দাদু শ্রী কালী কিঙকর ঘোষালের বাইরের রাজ্যে চাকরি র সুবাদে মিশনারী স্কুলে পড়া , সেখানে র আদব কায়দা, বাঙলোতে থাকা , আধুনিকতার ছোঁয়া তুমি ছোট থেকে ই পেয়েছো । একবার তুমি একটা গল্প করেছিলে তোমার ছেলে বেলায় বাইরে থাকাকালীন, তোমাদের বাসস্থানে , তখন ফ্যানের আগমন হয় নি। পাঙ্খা পুলার ( যারা পাখা টানতেন) তাদের গল্প। এদের জন্য ও সেই বয়সে ই তোমার মন ভারাক্রান্ত হয়েছে বারবার। তুমি অনেক বার বলেছো " জানিস , ওরা পাখা টানতো সারা রাত , ওদের ঘুম আসা চলতো না, কারণ ওদের ঘুম এলেই চাকরি যাবে, পাখা থেমে যাবে, ঐ ভাবনায় তোমার ঘুম আসত না" আগেই বলেছিলাম, বিপ্লব আর সেবা শিখিয়ে পড়িয়ে হয় না। বিপ্লবের ছোঁয়া তোমার মন জুড়ে! ঐ ছোট বেলায় গ্রীষ্মের দুপুরে মেয়েরা আম বিক্রি করতে বেরোলে ঐ " আম লিও" বললেই ছুটে যেতে দরজায় আর ওদের দুপুরের রোদে কষ্ট হচ্ছে বলে বাড়িতে সব আমগুলো ই কেনা করাতে তোমার মা কে ! এই ছেলে যে বড়ো হযে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখবে, তা তে কোনো বিস্ময় নেই! কি জানি হয়তো তাই একেবারে প্রাইমারি তে পড়ি এরকম বয়সে, 'ওরা চিরকাল টানে দাঁড় ...." খুব যত্ন করে শিখিয়েছিলে !
এই আমাদের কালীকুটীর।
কখনোই কারো সাহায্য নিয়ে কোনো কাজ করতে দেখি নি তোমাকে! "কমিউন " এই কথা টা বারবার বোঝাতে! সেখান থেকেই শিখেছিলাম নিজস্ব পরিবারের বাইরেও একটা বড়ো পরিবার আছে। তাদের অসুখ , তাদের কষ্ট, তাদের যন্ত্রণা, সব একাকার হয়ে মিশে যেতো আমাদের সাথে! সেই সুবাদে, বেশ কিছু মানুষের অনুপস্থিতি আজকে ও অনুভব করি ! শ্রদ্ধেয় শ্রী সুবল কারক, ( প্রিয় ঝাঁপি দা, ) শ্রী ভগীরথ মণ্ডল(প্রিয় ভগিদা),শ্রী কান্তিষ রায় , শ্রী রতন চন্দ্র মল্লিক কতো কতো মানুষ এমনভাবে ঘিরে থাকতেন যেন সবাই আমরা এক ই পরিবার।
পর পর দুদিনের দুটো ঘটনা মনে পড়ছে জানো! একদিন যীশু খ্রীষ্টের দুটো ছবি এনেছিলে । সেদিন তুমি অনেক রাত অব্দি আমাকে বুঝিয়ে ছিলে কেন যীশু খ্রীষ্ট সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিই বা সে স্বপ্ন! আর তারপরদিন এনেছিলে Charles Dickens এর "A Tale Of Two Cities," একসাথে মিলিয়ে দিয়েছিলে French Revolution , আর নতুন সমাজের ভাবনা যা তুমি মনে নিয়ে বেড়িয়েছো সব দিন । সে সমাজে থাকবে না কোনো ধর্মের বেড়াজাল, থাকবে না হিংসা, থাকবে না উঁচু নিচু জাতি,থাকবে না কোনো অর্থনৈতিক বৈষম্য ! এগুলো শুধু কোনো রচনায় পড়া শব্দ গুচ্ছ ছিল না তোমার কাছে! এগুলো তুমি ধারণ করে ছিলে প্রাণে , বিশ্বাস করেছিলে মনে! তখন অনেক মিটিং এ তোমাকে বলতে শুনেছি, খুব বেশি দূরে নেই সেইদিন, যেদিন তামাম দুনিয়া জুড়ে দেখা যাবে ধর্মের দাপাদাপি! তোমার অনুমান সঠিক।তাই্ তুমি ই লিখতে পেরেছিলে "শ্রী চৈতন্য ভিন্ন দৃষ্টিতে " । কারণ শ্রী চৈতন্য ও দেখেছিলেন সেই সমাজে র স্বপ্ন যেখানে ছিল একটাই ভাবনা মানবতা বাদের ভাবনা ।